হতাশায় করণীয় সম্পর্কে কুরআনের কয়েকটি নির্দেশনা

Daily Inqilab মুহাম্মাদ এনামুল হাসান

১২ আগস্ট ২০২৩, ১১:২০ পিএম | আপডেট: ১৩ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম

দুনিয়ার জীবন আল্লাহ বানিয়েছেন আখেরাতের জন্য। আরাম-আয়েশ ও ভোগ-বিলাসের জন্য আল্লাহ দুনিয়ার জীবন বানাননি। তাই দুনিয়ার জীবনে আল্লাহ কাউকে শুধু সুখ আর সুখ দেননি। এখানে যে সবচেয়ে সুখী তাকেও মাঝেমধ্যে দুঃখ পেতে হয়; যে সবচেয়ে সুস্থ তাকেও কখনো কখনো অসুস্থ হতে হয়। এখানে সুখের পাশে আছে দুঃখ, সুস্থতার পাশে আছে অসুস্থতা, হাসির সাথে মিশে আছে কান্না।

তবে একজন মুমিনের জীবনের মাকসাদ যেহেতু আখেরাত, তাই তার দুনিয়ার জীবনের বিপদাপদ, রোগ-শোক, দুঃখ-দুর্দশা মোটেই নিরর্থক নয়। আল্লাহ চান, দুনিয়ার এ অল্প কয়েকদিনের কষ্টের বিনিময়ে বান্দা লাভ করুক আখেরাতের অফুরন্ত শান্তি। কুরআন বারবার এদিকেই মুমিনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। যখনই কোনো বিপদ আসে, কুরআন মুমিনকে দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী ভবিষ্যতের পরিবর্তে আখেরাতের চিরস্থায়ী ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করতে বলে।

আমরা যারা বর্তমানের যান্ত্রিক যুগের মানুষ, যাদেরকে জীবনের নানা অঙ্গনে নিত্যদিনই হতাশা ও নৈরাশ্যের সম্মুখীন হতে হয়, আমাদের জন্য কুরআনের বিভিন্ন বাণী ও বার্তায় রয়েছে অনেক শিক্ষা ও হেদায়েত। এক্ষেত্রে প্রথমেই উল্লেখ করা যায় হযরত ইয়াকুব (আ.)-এর ঘটনা। সেই বহু বছর আগে হারিয়েছেন নিজের প্রিয়তম পুত্র ইউসুফ (আ.)-কে। তাঁর বিয়োগ-ব্যথায় এবং তাঁকে পাওয়ার আশায় যৌবন কেটে গেল।

বৃদ্ধকালে যখন ইউসুফ (আ.)-কে পাওয়ার আশায় আবার বুক বাঁধলেন তখন ইউসুফ (আ.)-এর অপর ভাইকেও হারালেন। বাধর্ক্যজনিত দুর্বলতা, দৃষ্টিশক্তির ক্ষীণতা, নতুন করে সন্তান হারানোর ঘটনা যেন ইউসুফ (আ.)-কে হারানোর বেদনা পুনরায় জাগিয়ে দিলো। এমন কঠিন পরিস্থিতিতেও তিনি হাল ছাড়লেন না।

আল্লাহর রহমতের প্রতি অবিচল আস্থা-বিশ্বাস নিয়ে তিনি বললেন : আমি আমার দুঃখ ও বেদনার অভিযোগ (তোমাদের কাছে নয়) আল্লাহর কাছে করছি। আর আল্লাহ সম্পর্কে আমি যতটা জানি, তোমরা ততটা জান না। ওহে আমার পুত্রগণ, তোমরা যাও এবং ইউসুফ ও তার ভাইয়ের সন্ধান চালাও। তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। জেনে রেখ, আল্লাহর রহমত থেকে কেবল তারাই নিরাশ হয়, যারা কাফের। (সূরা ইউসুফ : ৮৬-৮৭)।

এ ঘটনা থেকে বোঝা গেল, দুনিয়াবী কঠিন থেকে কঠিন বিপদেও আল্লাহর রহমত থেকে হতাশ হওয়া যাবে না; বিপদের পর বিপদের সম্মুখীন হলেও না। আল্লাহর রহমতের কাছে আশা রাখতে হবে, ইনশাআল্লাহ, সকল বিপদ কেটে যাবে। বিপদ যদি নাও কাটে, তবু চিন্তা কীসের, আল্লাহ তো এর বিনিময়ে আখেরাতে অনেক অনেক বেশি দেবেন। তাছাড়া এমনও তো হতে পারে, এ বিপদটিকে আমি মনে করছি বিপদ, কিন্তু বাস্তবে সেটি আমার জন্য কল্যাণকর।

দুনিয়ায় এমন কত কত ঘটনা রয়েছে, যেখানে আপাত দৃশ্যমান বিপদ-পরিণামে কল্যাণকর প্রমাণিত হয়েছে। সূরা বাকারায় আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন : তোমাদের প্রতি (শত্রুর সাথে) যুদ্ধ ফরজ করা হয়েছে। এটা তো খুবই সম্ভব যে, তোমরা একটা জিনিসকে মন্দ মনে কর, অথচ তোমাদের পক্ষে তা মঙ্গলজনক ও কল্যাণকর। আর এটাও সম্ভব যে, একটা জিনিসকে পছন্দ কর, অথচ বিষয়টি তোমাদের পক্ষে মন্দ ও অকল্যাণকর। আর (প্রকৃত বিষয় তো) আল্লাহ জানেন, তোমরা জানো না। (সূরা বাকারা : ২২৬)।

আয়াতটিতে দৈনন্দিন জীবনের হতাশাজনক পরিস্থিতিতে কী মনোভাব রাখতে হবেÑ এ বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। জীবন চলার পথে চিন্তা-চেতনায় এই আয়াতটিকে সামনে রাখলে আমাদের পার্থিব জীবনও বড় শান্তির হতে পারে।

হতাশা যদি আসে গোনাহের কারণে, ঈমান-আমল ও আখেরাতের প্রতি উদাসীনতার কারণে, তাহলেও হাতাশাকে মনে জায়গা দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। আল্লাহ তো অতি দয়ালু, পরম ক্ষমাশীল। তিনি তো সকল গোনাহ ক্ষমা করে দিতে পারেন। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন : বলে দাও, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজ সত্তার ওপর সীমালঙ্ঘন করেছে, আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত পাপ ক্ষমা করেন। নিশ্চয় তিনি অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা যুমার : ৫৩)।

যদি আমরা এ আয়াতগুলো ছাড়াও সূরা ইনশিরাহ’র ৫-৬ নং আয়াত, সূরা হাদিসের ২২-২৩ নং আয়াত, সূরা তাগাবুনের ১১ নং ও সূরা তালাকের ৩ নং আয়াতসমূহ সামনে রাখি এবং যে কোনো হতাশায় নিজের উস্তাদ, মুরব্বী, মা-বাবা, ভাই-বোন ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের সাহচর্য অবলম্বন করি, তাদের সাথে নিজেদের মনের দুঃখ-কষ্ট ভাগাভাগি করি, সবোর্পরি নির্জনে হাত তুলে আল্লাহর কাছে চোখের পানি ফেলি, তাহলে এই হতাশাই হতে পারে আমাদের জীবনে আশার আলো। বিপদাপদ হতে পারে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের অন্যতম মাধ্যম।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

ভালো কাজে দেরি করা উচিত নয়-১
জালেমের সামনে সত্য প্রকাশে নির্ভীক ছিলেন যারা
জালেমের সহযোগী-সমর্থকও জালেম
আল কুরআনে মানব হত্যার শাস্তি-২
আল-কুরআনে মানবহত্যার শাস্তি-১
আরও

আরও পড়ুন

ঝিনাইদহে নিখোঁজের ৭দিন পর সেপটি ট্যাংকে মিললো যুবকের লাশ

ঝিনাইদহে নিখোঁজের ৭দিন পর সেপটি ট্যাংকে মিললো যুবকের লাশ

ইসলামী আইনজীবী পরিষদের ১৩তম কেন্দ্রীয় সম্মেলন রবিবার

ইসলামী আইনজীবী পরিষদের ১৩তম কেন্দ্রীয় সম্মেলন রবিবার

কমলনগরে প্রতিপক্ষের হামলায় নারীসহ আহত ৩

কমলনগরে প্রতিপক্ষের হামলায় নারীসহ আহত ৩

কুড়িগ্রামে জেলা বিএনপির ১২টি ইউনিট বিলুপ্ত ঘোষণা

কুড়িগ্রামে জেলা বিএনপির ১২টি ইউনিট বিলুপ্ত ঘোষণা

তারাকান্দায় বাসের ধাক্কায় আহত-৪

তারাকান্দায় বাসের ধাক্কায় আহত-৪

কুয়েটে অনুষ্ঠিত হলো ন্যাশনাল আইডিয়া কেস কম্পিটিশন ‘বিজব্যাটেল’

কুয়েটে অনুষ্ঠিত হলো ন্যাশনাল আইডিয়া কেস কম্পিটিশন ‘বিজব্যাটেল’

ভারতের ড্রেসিংরুম চ্যাপেল যুগের মতো বিধ্বস্ত: হরভজন

ভারতের ড্রেসিংরুম চ্যাপেল যুগের মতো বিধ্বস্ত: হরভজন

জুনে জাফর-২ ও পায়া উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করবে ইরান

জুনে জাফর-২ ও পায়া উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করবে ইরান

আন্দোলনের ইমেজ বিশ্বকে জানাতে হবে: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব

আন্দোলনের ইমেজ বিশ্বকে জানাতে হবে: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব

সাতক্ষীরা কালিগঞ্জে বাঁশ ও বেত শিল্প প্রায় বিলুপ্ত

সাতক্ষীরা কালিগঞ্জে বাঁশ ও বেত শিল্প প্রায় বিলুপ্ত

দুই যাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ৪ সিএনজি চালকের বিরুদ্ধে- গ্রেপ্তার- ১

দুই যাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ৪ সিএনজি চালকের বিরুদ্ধে- গ্রেপ্তার- ১

হবিগঞ্জে সাড়ে ৭ কোটি টাকার মাদকদ্রব্য ধ্বংস করেছে বিজিবি

হবিগঞ্জে সাড়ে ৭ কোটি টাকার মাদকদ্রব্য ধ্বংস করেছে বিজিবি

ছাত্রদলের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি শুরু

ছাত্রদলের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি শুরু

শুরু হয়েছে 'শার্ক ট্যাঙ্ক বাংলাদেশ সিজন–২ এর রেজিষ্ট্রেশন; কি থাকবে এবারের পর্বে?

শুরু হয়েছে 'শার্ক ট্যাঙ্ক বাংলাদেশ সিজন–২ এর রেজিষ্ট্রেশন; কি থাকবে এবারের পর্বে?

‘২০ বছরের অধিক সাজাখাটা বন্দিদের অবিলম্বে মুক্তি দিন’

‘২০ বছরের অধিক সাজাখাটা বন্দিদের অবিলম্বে মুক্তি দিন’

বাংলাদেশে ঢুকে গাছের ডাল কাটল বিএসএফ, সীমান্তে উত্তেজনা

বাংলাদেশে ঢুকে গাছের ডাল কাটল বিএসএফ, সীমান্তে উত্তেজনা

নদীতে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করায় ৬ জন গ্রেফতার, ড্রেজার জব্দ

নদীতে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করায় ৬ জন গ্রেফতার, ড্রেজার জব্দ

ইরানের সুপ্রিম কোর্টের সামনে বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত দুই বিচারক

ইরানের সুপ্রিম কোর্টের সামনে বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত দুই বিচারক

কলাপাড়ায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব, প্রকল্প পরিচালকের গাড়ী বহর আটকে দিল বিক্ষোভকারীরা

কলাপাড়ায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব, প্রকল্প পরিচালকের গাড়ী বহর আটকে দিল বিক্ষোভকারীরা

সাজিদ-নোমানের ঘূর্ণিতে ১৩৭ রানেই শেষ উইন্ডিজ

সাজিদ-নোমানের ঘূর্ণিতে ১৩৭ রানেই শেষ উইন্ডিজ