প্রতিবেশী ও অধীনদের সঙ্গে সদাচরণ
১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৩ এএম
মানুষ জন্মগতভাবে সমাজবদ্ধ জীব। সমাজ ছাড়া মানুষ কখনো চলতে পারে না। সুখ-শান্তিময় একটি আদর্শ মানবসমাজ গড়ে তুলতে হলে পারস্পরিক হৃদ্যতা, সহানুভূতি ও সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। আর তা সৃষ্টি হওয়ার জন্য প্রত্যেকের অন্যের হক ও অধিকারগুলোর ব্যাপারে সচেতন থাকা অপরিহার্য। এ নিবন্ধে প্রতিবেশী ও অধীন লোকদের সম্পর্কে ইসলামের নির্দেশনা আলোচনা করতে চাই। অনেক সময় দেখা যায় যে, সমাজে আত্মীয়-স্বজনের চেয়ে প্রতিবেশী অধিক কাজে লাগে। বিপদে-আপদে, দুঃখ-দুর্দশায় প্রতিবেশীরাই প্রথমে এগিয়ে আসে। তাই প্রতিবেশীরা যেকোনো ধর্মের, যে কোন বর্ণের এবং যেকোনো আদর্শের অনুসারীই হোক না কেন, ইসলাম আমাদেরকে সর্বাবস্থায় তাদের সাথে সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছে। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন : ‘নিকট প্রতিবেশী, দূর প্রতিবেশী এবং সঙ্গী-সাথীদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে।’ (সূরা নিসা : ৩৬)।
প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়া ঈমানের দাবি। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে সে যেন প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। (সহীহ বুখারী)। অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, একদা রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি ঈমানদার নয়, আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি ঈমানদার নয়, আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি ঈমানদার নয়। প্রশ্ন করা হলো- হে আল্লাহর রাসূল! কে সেই ব্যক্তি? জবাবে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করলেন- ‘যার প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ নয়।’ (মিশকাত শরীফ)।
প্রতিবেশীর খোঁজ-খবর নেয়া এবং তাদের কেউ অভুক্ত থাকলে তাদেরকে খাবার দেয়া ঈমানী দায়িত্ব। এ সম্পর্কে তাকিদ করে হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন : ওই ব্যক্তি প্রকৃত মুমিন নয় যে তৃপ্তি সহকারে খাবার খায়, অথচ তার প্রতিবেশী তার পার্শ্বে ক্ষুধার্ত অবস্থায় পড়ে আছে। (মিশকাত শরীফ)।
পারস্পরিক মিল-মহব্বত সৃষ্টির লক্ষ্যে মাঝে মধ্যে প্রতিবেশীদেরকে হাদিয়া-তোহফা দেয়ার জন্য রাসূলুল্লাহ (সা.) বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেছেন। এ মর্মে তিনি ইরশাদ করেন- ‘তোমরা একে অপরকে হাদিয়া-তোহফা দাও, এতে পরস্পরের মাঝে মিল-মহব্বত সৃষ্টি হবে।’ তিনি অন্যত্র ইরশাদ করেন, ‘তুমি যখন তরকারী রান্না করবে তখন তাতে পানি বাড়িয়ে দিবে এবং তোমার প্রতিবেশীকে তা থেকে হাদিয়া দিবে।’ (মুসলিম শরীফ)। প্রতিবেশীর গুরুত্ব বুঝতে গিয়ে এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘জিব্রীল আমাকে প্রতিবেশী সম্পর্কে এতো বেশি গুরুত্ব দিচ্ছিলেন যে, আমার মনে হচ্ছিল, তাদেরকে পরিত্যক্ত সম্পত্তির ওয়ারিস বানিয়ে দেয়া হবে। (সহীহ বুখারী)।
অবস্থার তারতম্যে প্রতিবেশীর হক বা অধিকারেরও তারতম্য ঘটে। কখনো প্রতিবেশীর হক আদায় করা ফরজ স্তরে পৌঁছে। যেমন ক্ষুধার্ত থাকলে আহার্য দান করা। আবার কখনো সুন্নত স্তরে থাকে। যেমন স্বাভাবিক অবস্থায় ভালো খাদ্যের ব্যবস্থা হলে তা থেকে প্রতিবেশীকে হাদিয়া দেয়া। এছাড়াও অধিকার অনুসারে প্রতিবেশীদের মাঝে শ্রেণিভেদ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন যে, প্রতিবেশী তিন প্রকার : ১. এক অধিকার বিশিষ্ট প্রতিবেশী। তারা হচ্ছে মুশরিক অর্থাৎ অমুসলিম প্রতিবেশী। তাদের অধিকার কেবল প্রতিবেশী হওয়ার ভিত্তিতে।
২. দুই অধিকার বিশিষ্ট প্রতিবেশী। তারা হচ্ছে মুসলিম প্রতিবেশী। তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় প্রতিবেশী হওয়া এবং মুসলিম হওয়া এই দুই ভিত্তিতে। ৩. তিন অধিকার বিশিষ্ট প্রতিবেশী। তারা হচ্ছে মুসলিম আত্মীয় প্রতিবেশী। তাদের অধিকার প্রতিবেশী হওয়া, মুসলিম হওয়া এবং আত্মীয় হওয়া এই তিন ভিত্তিতে। (তিরমিযী শরীফ)।
একজন ব্যক্তির আশপাশে কতগুলো গৃহ পর্যন্ত তার প্রতিবেশী বলে গণ্য হবে- এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘শুনে রেখো! চল্লিশটি গৃহ পর্যন্ত প্রতিবেশী বলে গণ্য হবে।’ (তিরমিযী শরীফ)। ইসলাম প্রতিবেশীদের পাশাপাশি দাস-দাসী, চাকর-চাকরানী, গোলাম-বাদী ও অন্যান্য অধীনদের অধিকারের প্রতিও বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে এবং তাদের সঙ্গে সদাচরণ করার নির্দেশ দিয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) জীবনের শেষ মুহূর্তে ওসিয়তকালে ইরশাদ করেন- ‘তোমরা নামাযে যত্নবান হও এবং অধীনদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর।’
পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষার্থে মানুষকে বিভিন্ন শ্রেণি বা স্তরে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং একজনকে অন্যজনের অধীন করা হয়েছে। তবে মনে রাখতে হবে যে, ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় আল্লাহর নিকট মর্যাদার ভিত্তি টাকা-পয়সা, ধন-সম্পদ ও পদমর্যাদা ইত্যাদি নয়। বরং মর্যাদার ভিত্তি হচ্ছে তাকওয়া তথা আল্লাহভীতি, দ্বীনদারী ও পরহেযগারী। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন : নিশ্চয় আল্লাহর নিকট সে-ই সর্বাধিক মর্যাদাবান যে সর্বাধিক আল্লাহ ভীরু-পরহেযগার। (সূরা হুজুরাত ১৩)।
তাই অধীন লোক ও দাস-দাসীদেরকে প্রহার করা, গালি দেয়া, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা, বংশগত নীচুতার দরুণ লজ্জা দেয়া, অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানের কষ্ট দেয়া ইত্যাদি থেকে সকলকে দূরে থাকতে হবে। তাদের ভুলত্রুটি হলে তা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে হবে। নিজে যা খাবে এবং পরবে তাদেরকেও তা-ই খেতে পরতে দিবে।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
তাসকিনের ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে অল্পতেই গুটিয়ে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ,জিততে দরকার ৩৩৩
আসছে বছর গাঁটছড়া বাঁধতে চলেছে তামান্না-বিজয় জুটি
লোহাগড়ায় প্রতিপক্ষের ধারালো অস্ত্রের কোপে ৪ জন গুরুতর আহত
মাওলানা আতাহার আলীকে বাদ দিয়ে দেশের জাতীয় ইতিহাস রচিত হতে পারে না : ধর্ম উপদেষ্টা
পরিবহন খাতে বিশৃঙ্খলার চেষ্টায় আ.লীগের দোসররা
ড. মাহবুব মোল্লা কলেজ সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে
খালেদা জিয়ার সঙ্গে সৌদি রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাত
নরসিংদীর পলাশে ইটবাহী ট্রলির ধাক্কায় দুই মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু
জনসংযোগ ও বিজ্ঞাপনী সংস্থা ওপাশ কমিউনিকেশনস লিমিটেডের যাত্রা শুরু
মানুষের ‘হৃদয় স্পর্শ করার’ ট্রেনিং নিতে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পরামর্শ
মুরাদনগরবাসীর কাছে সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের খোলা চিঠি
সেনবাগ হুফফাযুল কুরআন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত
সুনামগঞ্জে আ.লীগ নেতার গ্রেফতার দাবি
কিশোরগঞ্জের ওয়ালী নেওয়াজ খানের ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত
পদ্মা রেলসেতু দিয়ে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলবে মঙ্গলবার
এদেশের মানুষ ইসলামি বিপ্লবের প্রস্তুতি নিচ্ছে : কুমিল্লায় আল্লামা মামুনুল হক
পুত্রের কুড়ালের আঘাতে প্রাণ গেল বৃদ্ধ পিতার
বন্ধ আলহাজ জুট মিল চালুর দাবিতে শ্রমিক দলের মানববন্ধন
আগাম আলু খেত ব্ল্যাক লেকে আক্রান্ত
আইডিবি-বিআইএসইডব্লিউ আইটি স্কলারশিপ ৫৯ তম রাউন্ড ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ব্যাচের ফেয়ার ওয়েল অনুষ্ঠিত