সচেতনতা ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য-২
২০ আগস্ট ২০২৪, ১২:১০ এএম | আপডেট: ২০ আগস্ট ২০২৪, ১২:১০ এএম
প্রিয় নবীজী (সা.) এর দীর্ঘদিনের খাদেম হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) বর্ণনা করেছেন, এক ব্যক্তি হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করল, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি কীভাবে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করব? আমার উটনীটি ছেড়ে দিয়ে, না বেঁধে রেখে?’ রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, প্রথমে তোমার উটনীটি বাঁধ, এরপর আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল কর। (জামে তিরমিযী : ২৫১৭)। আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল ও ভরসা একজন মুমিনের ঈমানের অপরিহার্য অংশ। তাই বলে স্বেচ্ছায় ‘আল্লাহ ভরসা’ বলে আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়া তো আর ইসলামের শিক্ষা হতে পারে না। আমাদের স্থির বিশ্বাস, আল্লাহর হুকুমেই আগুন পোড়ায়, আগুনের নিজস্ব কোনো শক্তি নেই। তবে সঙ্গে এও বিশ্বাস করতে হবে, আল্লাহ তা’আলাই আগুনকে পোড়ানোর শক্তি দিয়েছেন। সেই শক্তি দিয়েই আগুন পুড়িয়ে ছাই করে দেয় সবকিছু। এটি আগুনের শক্তি নয়, আল্লাহর দেয়া শক্তি। মহান আল্লাহ কখনো সেই শক্তি হরণ করে কুদরতের কারিশমা দেখান। মানুষ অবাক হয়ে দেখে, নমরুদের জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হয়েও ইবরাহীম আলাইহিস সালাম নিরাপদ।
তবে এটা তাঁর সাধারণ ধারা নয়। স্বাভাবিকতা এটিই, আল্লাহ আগুনকে পোড়ানোর ক্ষমতা দিয়েছেন আর আগুন সেই ক্ষমতাবলে পোড়ায়। উপরোক্ত হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে এই শিক্ষাই দিয়েছেন, উটনী ছেড়ে দিলে তা চলে যাবে কোথাও, হারিয়ে যাবে, তখন তুমি অর্থহীন পেরেশানিতে আক্রান্ত হবে, এটাই স্বাভাবিক। তাই উটনীটি ছেড়ে না দিয়ে বেঁধে রাখ, এরপর আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল কর এভাবে, একমাত্র আল্লাহই পারেন উটনীটি রক্ষা করতে। বাঁধার পরও তো উটনীটি আক্রান্ত হতে পারে কোনো বিপদে। তাই তোমার সাধ্যের সচেতনতাটুকু অবলম্বনের পর তুমি আল্লাহর ওপর ভরসা কর, যেন তিনি তোমার সাধ্যের বাইরের অনাকাক্সিক্ষত বিষয়াদি থেকে তোমাকে ও তাকে নিরাপদ রাখেন।
দান-সদকা তথা দুঃস্থ-অভাবীদের অভাব মোচনে এগিয়ে আসা একটি নৈতিক গুণ। শুধু মানুষই নয়, স্বজাতির বিপদে এগিয়ে আসে বনের হিংস্র পশুও। তাই মানুষ হয়েও যে মানুষের কষ্ট বোঝে না, সে বাস্তবিকই পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট। দান-সদকার প্রতি ইসলাম আমাদের যথেষ্ট উৎসাহিত করেছে। যেমন দেখুন, হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে পেটভরে আহার করে আর তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে সে তো মুমিনই নয়। (আল-আদাবুল মুফরাদ : ১১২)।
পবিত্র কুরআন ও হাদীসে দান-সদকার ফযীলতও বর্ণিত হয়েছে বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্ন ভঙ্গিতে। এতে উৎসাহিত হয়ে কেউ তার সর্বস্ব বিলিয়ে দিতে পারে এবং আক্রান্ত হতে পারে অভাবে, এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু একজন অভাবীর অভাব মোচন করতে গিয়ে নিজেও অভাবের শিকারে পরিণত হওয়া, ইসলাম আমাদেরকে এ থেকে সতর্ক করে দিয়েছে। পবিত্র কুরআনের ভাষ্য দেখুন : তুমি (দান-সদকা করার ভয়ে) তোমার দুই হাত তোমার কাঁধে আটকে রেখো না, আবার তা পুরোপুরি বিছিয়েও দিয়ো না, (অর্থাৎ সবকিছু দান করে দিও না, বরং কিছু নিজের প্রয়োজনে রেখে দাও,) অন্যথায় তো নিন্দিত নিঃস্ব হয়ে পড়বে। (সূরা বনী ইসরাঈল : ২৯)।
আল্লাহকে গালি দেয়ার মতোই আরেকটি বিষয় লক্ষ্য করুন। হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : একটি কবিরা গোনাহ, কোনো ব্যক্তি তার বাবা-মাকে গালি দেবে। সাহাবায়ে কেরাম জানতে চাইলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কেউ কি তার বাবা-মাকে গালি দেয়? তিনি উত্তর দিলেন, হাঁ, সে আরেকজনের বাবাকে গালি দেবে। তখন দ্বিতীয় ব্যক্তি প্রথম ব্যক্তির বাবাকে গালি দেবে। সে কারো মাকে গালি দেবে। তখন দ্বিতীয় ব্যক্তি প্রথম ব্যক্তির মাকে গালি দেবে। (সহীহ মুসলিম : ৯০)।
বাবা-মাকে যদি কোনো কুসন্তান গালি দেয় তাহলে তা অতি জঘন্য, এ কথা সহজেই বোঝা যায়। কিন্তু ইসলামের সচেতনতা দেখুন, অন্যের বাবা-মাকে গালি দেয়ার পরিণামেও যেন নিজের বাবা-মা গালির শিকার না হন- সে বিষয়টি সবিশেষ লক্ষ্য রাখা হয়েছে। বলা হয়েছে, এভাবেও যদি বাবা-মাকে গালি শুনতে হয় তাহলে তাও সন্তানের জন্যে কবিরা গোনাহ!
বর্তমানের অগ্রসর পৃথিবীতে আর্থিক লেনদেন কিংবা যে কোনো বিষয়ে লিখিত চুক্তির প্রয়োজনীয়তা সর্বজন স্বীকৃত ও বহুল প্রচলিত। কিন্তু আমরা যদি দেড় হাজার বছর আগের পৃথিবীর দিকে ফিরে তাকাই দেখব, তখন চুক্তি কেবল মুখে মুখেই হতো। ইসলামে সচেতনতার শিক্ষা কত ব্যাপক দেখুন, ইসলাম আমাদেরকে সেই প্রাচীন কালেই এ শিক্ষা দিয়েছে যে কোনো মেয়াদি ঋণচুক্তি করলে তা লিখে রেখো। কুরআনের ভাষায় : হে মুমিনগণ! তোমরা যখন একে অন্যের সঙ্গে নির্ধারিত সময়ের জন্যে ঋণের কারবার কর, তখন তা লিখে রেখো। (সূরা বাকারা : ২৮২)।
ঋণচুক্তি, বাকিতে ক্রয়-বিক্রয় কিংবা যে কোনো ধরনের আর্থিক চুক্তি যদি লিখে রাখা হয়, তাহলে পরবর্তী সময়ে অনেক অনাকাক্সিক্ষত জটিলতা এড়ানো সম্ভব হয়। মৌখিক নির্ধারিত শর্ত ও চুক্তি ভুলে যাওয়া বিচিত্র কিছু নয়। যদি চুক্তিটি লিখিত থাকে, তাহলে উভয়পক্ষের জন্যেই তা নিরাপদ থাকে। সচেতনতার জন্য চাই দ্বীনের সহীহ ইলম ও সহীহ সমঝ। আল্লাহ আমাদের দ্বীনের সহীহ ইলাম সহীহ সমঝ ও সচেতনতা দান করুন।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
নাটকীয় শেষ দশ মিনিটে দুই গোল শোধ করে বার্সাকে রুখে দিল সেল্তা
বিবর্ণ সিটিকে ইতিহাদেই বিধ্বস্ত করলো টটেনহ্যাম
নটিংহ্যামকে হারিয়ে চার ম্যাচের জয়খরা কাটালো আর্সেনাল
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক
পাঠ্যবই ছাপায় অনিয়মে আনন্দ প্রিন্টার্সকে সতর্কতা
দক্ষিণ লেবাননে ৬ চিকিৎসাকর্মী নিহত
জনগণের সাথে জনসংযোগ বাড়াতে হবে
আমরা যুদ্ধে বিশ্বাসী না কেউ গায়ে পড়লে জবাবের প্রস্তুতি রাখতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথের কাছে ২৭ রেফারির চিঠি
ফের বাড়লো সোনার দাম, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা
বাংলাদেশে খেলা নিয়ে অনিশ্চিয়তায় হামজা!
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই হবে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের খেলা
সিলেটে মাজিদের ফিফটি
অ্যাম্বাসেডর কাপ উশুতে সেনাবাহিনী চ্যাম্পিয়ন
মাদক শুধু ব্যক্তিকে নয় পরিবারকেও ধ্বংস করে
সাধারণ মানুষের পেটে লাথি মেরে আ.লীগ নিজেদের ভাগ্য গড়েছে : এমরান সালেহ প্রিন্স
ধর্মদ্রোহী সরকারের সময় কোনো ধর্মই নিরাপদ ছিল না
দৌলতখানে শীতকালীন সবজি পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক
সুন্দরগঞ্জে ছয় পা বিশিষ্ট বাছুরের জন্ম
বৈষম্যের শিকার কুমিল্লার ১৫ হাজার এতিম শিশু