সন্তান : আমার হাতে আল্লাহর আমানত-১
০২ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:৫৪ এএম | আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:৫৪ এএম
মাতা-পিতার কাছে সন্তান কত প্রিয় তা বোঝানোর যোগ্যতা সম্ভবত কোনো মানুষের নেই। ভালোবাসার চূড়ান্ত পরিসীমা বুঝাতেই মানুষ সন্তানের ভালোবাসার উপমা দিয়ে থাকে। এক আরব বেদুঈন কতইনা চমৎকার বলেছেন, ‘আমার সন্তান তো আমার নিজের কলিজাটিই, যা বক্ষ থেকে বের হয়ে যমিনে চলাফেরা করছে।’ কিয়ামত দিবসের বিভীষিকা বুঝাতে আল্লাহ তা‘আলা সন্তানের ভালোবাসার কথা দিয়েই বুঝিয়েছেন যে, সন্তান এত প্রিয় হওয়া সত্ত্বেও সেদিন পিতা-মাতার সন্তানেরও খোঁজ রাখার সুযোগ হবে না। মা তার দুগ্ধপোষ্য শিশুকে ভুলে যাবে।
আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ভালোবাসার সীমা বুঝাতেও কুরআন-হাদিসে সন্তানের এ ভালোবাসা দিয়েই বুঝানো হয়েছে যে, স্বীয় সন্তান থেকেও এঁদেরকে বেশি ভালোবাসতে হবে। জোড়াবদ্ধ হওয়ার পর প্রতিটি জোড়ার এটাই আকাক্সক্ষা থাকে যে তাদের কোল জুড়ে নতুন কেউ আসবে। ফুটফুটে চেহারায় স্বচ্ছ কোমল অন্তর নিয়ে হাসবে। একটু বিলম্ব হলে প্রতীক্ষার প্রহর যে আর শেষ হয় না। অস্থির হয়ে যায়, কখন নতুন মুখটি আসবে। আর যখন সে দুনিয়াতে আসে ঘরের সবাই তো খুশিই, তবে মাতা-পিতার যে কী পরিমাণ খুশি তা বলে বুঝানো সম্ভব নয়। সন্তানটি তাদের কলিজার টুকরা, গর্বের ধন। একে আমাদের মতো করে গড়ে তুলব।
তাকে আমরা এটা বানাব ওটা বানাব ইত্যাদি ইত্যাদি। এ হলো সন্তান নিয়ে ভাবনার এক পিঠ এবং সাধারণত এটিই দৃশ্যমান। তবে এক্ষেত্রে আরেকটি দিক আছে এবং সেটিই হলো আসল ও গুরুত্বপূর্ণ। তবে তা সাধারণত আমাদের ভাবনার বাইরে থেকে যায়। এক সময় মানুষ ছিল না, দুনিয়াও ছিল না। জান্নাত-জাহান্নামও ছিল না। আল্লাহ তা‘আলা ইচ্ছা করলেন মানুষ সৃষ্টি করবেন, উদ্দেশ্য- তারা তাঁর ইবাদত-আনুগত্য করবে, নেক কাজ করবে, মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকবে, অতঃপর তাঁর ইচ্ছা ও দয়ায় চিরস্থায়ী জান্নাতে বসবাস করবে।
তাই তিনি দুনিয়া সৃষ্টি করলেন, জান্নাত-জাহান্নাম তৈরি করলেন। তো এ মানুষ কীভাবে সৃষ্টি করবেন, তিনি চাইলে তো প্রথম মানুষ থেকে কিয়ামত পর্যন্ত সব মানুষকে একবারেই একসাথে সৃষ্টি করতে পারতেন। কিন্তু তিনি সেভাবে না করে প্রথমে একজন (আদম আ.) সৃষ্টি করলেন। এরপর তাঁর থেকে তার স্ত্রীকে। অতঃপর এঁদের থেকে মানুষ সৃষ্টি হবে। এদের থেকে যারা সৃষ্টি হবে তাদের থেকেও একইভাবে মানুষ সৃষ্টি হবে। এভাবে মানুষ সৃষ্টির ধারা অব্যাহত থাকবে এবং কিয়ামত পর্যন্ত তা চলতে থাকবে।
আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে একসাথে সৃষ্টি না করে এভাবে মা-বাবার মাধ্যমে সৃষ্টি করার রহস্য তো অনেক আছে। তবে সাদামাটাভাবে যে হেকমতটি সহজে বোঝা যায় এবং যার ফলাফল সবার সামনে, তা হলো এভাবে সৃষ্টিতে মানুষ একে অপরের সাথে সৃষ্টিগতভাবে সম্পৃক্ত হয়, ফলে তাদের মাঝে আত্মীয়তা, হৃদ্যতা, অন্তরঙ্গতা, একে অপরের সহযোগিতার সম্পর্ক ও টান তৈরি হয়। তাই কেউ কারো পিতা-মাতা হয়, কেউ সন্তান হয়, কেউ ভাই-বোন হয় ইত্যাদি। আজ পুরো মানবজগৎ এভাবে একে অপরের সাথে যুক্ত।
কিয়ামত পর্যন্ত পিতা-মাতার মাধ্যমে যে সন্তানটি দুনিয়াতে আসবে সে আল্লাহরই সৃষ্টি- মানব। মানব তাঁরই সে সৃষ্টি, যাকে ইবাদত-আনুগত্য ও জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। এ সৃষ্টি আল্লাহর, আমার হাতে সে আল্লাহর দেয়া আমানত; সে তো আল্লাহরই খলীফা, যার কথা তিনি ফেরেশতাদেরও বলেছেন। ফেরেশতাগণ নেতিবাচক কথা বললেও তিনি তাদেরকে এমন সৃষ্টির ফয়সালার কথা জানিয়ে দিয়েছেন।
আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কোরআনে বলেনÑ ‘স্মরণ করো, যখন তোমার প্রতিপালক ফেরেশতাদের বললেন, আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি সৃষ্টি করছি। তারা বলল, আপনি কি সেখানে এমন কাউকেও সৃষ্টি করবেন যে অশান্তি ঘটাবে ও রক্তপাত করবে? আমরাই তো আপনার সপ্রশংস স্তুতিগান ও পবিত্রতা ঘোষণা করি। তিনি বললেন, আমি জানি, যা তোমরা জান না।’ (সূরা বাকারা, ৩০)
আল্লাহ তা‘আলা যখন প্রথম মানবদ্বয়কে দুনিয়াতে অবতরণ করান তখন এ বলে অবতরণ করান- ‘তোমরা সকলে এখান (জান্নাত) থেকে নেমে যাও। অতঃপর যখন আমার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে কোনো হেদায়েত আসবে তখন যারা আমার হেদায়েতের অনুসরণ করবে তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না। আর যারা কুফরী করবে এবং আমার আয়াতসমূহ প্রত্যাখ্যান করবে তারা জাহান্নামবাসী, তারা সেখানে চিরকাল থাকবে।’ (সূরা বাকারা, ৩৮-৩৯)
প্রেরিত মানুষ তো এখন শুধু দু’জন, কিন্তু বলা হয়েছে, তোমরা সকলে নেমে যাও, উদ্দেশ্য এ দু’জনসহ এদের সব বংশধর। আর এ দু’জনসহ আগত সব সন্তান বা মানবকেই আল্লাহ তা‘আলা এ কথা বলে পাঠিয়েছেন যেÑ ‘দেখ দুনিয়াতে যাওয়ার পর তোমাদের নিকট আমার হেদায়েত আসবে, আর তোমরা তা গ্রহণ করে নিবে। প্রতিদানে আমি জান্নাত দেব, অন্যথা করলে তোমাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের কঠিন শাস্তি।’ তাহলে প্রতিটি সন্তান দুনিয়াতে আসার সাথে সাথে তার প্রতি এ ঘোষণা চলে আসে- সে আল্লাহর খলীফা।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
দনিয়া কলেজ ছাত্রদলের প্রীতি ফুটবল ম্যাচ
আদমদীঘিতে তালগাছের ডাল কাটতে গিয়ে বিদ্যুতের তারে জরিয়ে ১ ব্যাক্তির মুত্যু হয়েছে
সোনারগাঁওয়ে বিএনপির ৩১ দফা বাস্থবায়নে তরুণ প্রজন্মের ভূমিকা শীর্ষক আলোচন সভা
বাকৃবির বর্ষ পঞ্জিকায় ফুটে উঠেছে জুলাই বিপ্লব
জাতীয় পার্টির রাজনীতি দেশ ও জনগণের কল্যাণে: সাবেক ভিপি আবু আহমেদ
কাউখালীতে যুবলীগ নেতা গ্রেফতার
ফোফানাকে নিয়ে চিন্তিত চেলসি কোচ
ফরিদপুরে ২৪ ঘন্টা দুটি হত্যা মধুখালি সাংবাদিকের মা- বাবা- ও গৃহপরিচারিকাকে কুপিয়ে গুরতর জখম
স্বতন্ত্র পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার দাবিতে ইবির ভবনে তালা
পেকুয়ায় বারবাকিয়া টু রাজাখালী সংযোগ সেতুর নির্মাণ কাজ ফের শুরু
মোরেলগঞ্জে পার্টনার ফিল্ড স্কুলের প্রশিক্ষণার্থীরা সনদ ও ভাতা বঞ্চিত
লক্ষ্মীপুরে আন্দোলনে শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার
বাবা-চাচা-মামার রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে চাকরি থেকে বঞ্চিত করা হবে কেন, প্রশ্ন সারজিসের
ময়মনসিংহসহ চার শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে ওএসডি
অবশেষে কাজের সমাপ্তি হলো সিকৃবির নান্দনিক অডিটোরিয়ামের
শ্বশুরকে সৌদি প্রবাসীর কাফনের কাপড় উপহার, রাগ করে স্বামীকে স্ত্রীর তালাক
আটঘরিয়ায় জালসায় তুচ্ছ ঘটনায় বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ২
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে বেশি টাকা গুণলেই গোপনে মিলছে সার
ঘোড়াঘাটে পাওয়ার টিলার ট্রলি চালাতে গিয়ে শিশুর মৃত্যু
সিন্ডিকেটের প্রভাবে পেঁয়াজ চাষীদের মাথায় হাত