তারাবী রমজানের গুরুত্বপূর্ণ আমল
০৯ মার্চ ২০২৫, ১২:১৪ এএম | আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২৫, ১২:১৪ এএম

রমজান মাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল তারাবীর নামায। আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি রমজান মাসে সওয়াবের আশায় কিয়ামে রমজান আদায় করবে আল্লাহ তাআলা তার পেছনের সব গুনাহ মাফ করে দেবেন। (সহিহ বুখারী-২০০৯) আরো একাধিক হাদিসে কিয়ামে রমজান তথা তারাবীর নামাযের কথা বর্ণিত হয়েছে। সাহাবায়ে কেরাম থেকে নিয়ে এ সুন্নাতের ওপর আজও মুসলিম উম্মাহর আমল চলে আসছে। প্রায় দেড় হাজার বছর ধরে মুসলিম জনপদগুলোতে রমজান মাসে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তারাবী আদায় করা হচ্ছে। রাসূলের সুন্নাহ অনুসারী কোনো মুসলিম কখনো এ আমলকে গুরুত্বহীন বা কম গুরুত্বপূর্ণ মনে করেনি।
কিন্তু আজকাল দ্বীনের অন্যান্য বিষয়ের মতো অনেকের মধ্যে এ মহান আমলের প্রতিও গুরুত্বহীনতা ও অনাগ্রহ পরিলক্ষিত হচ্ছে। কোনো কোনো ভাইকে দেখা যায়, নিজের মনমতো যেদিন যতো রাকাত ইচ্ছা পড়ে নেয়। কেউ আবার জামাতে শরীক না হয়ে একা একা কিছু রাকাত পড়ে নেয়, কেউ তো মোটেই পড়ে না। অথচ তারাবীর নামায সুন্নাতে মুআক্কাদা।
রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা তোমাদের ওপর রমজানের সিয়াম ফরয করেছেন এবং আমি (আল্লাহ তাআলার হুকুমে) কিয়ামে রমজান (অর্থাৎ তারাবীর নামায)-এর বিধান জারি করেছি। সুতরাং যে ব্যক্তি পূর্ণ বিশ্বাসের সাথে সওয়াবের উদ্দেশে রমজানের রোযা রাখবে এবং রাতে নামায (তারাবী) পড়বে সে যাবতীয় গুনাহ থেকে নবজাতক শিশুর মতো পবিত্র হয়ে যাবে। (মুসনাদে আহমাদ-১৬৬০)
অত্যন্ত সওয়াবের এ আমলে নিজের খেয়ালখুশি মতো কম করা মূলত নামাযের প্রতিই অবহেলা-অনাগ্রহের প্রকাশ এবং এর মন্দ প্রভাবও সুদূরপ্রসারী। মুসলিম ঐতিহ্যের এ মহান আমলকে কম গুরুত্বের মনে করে এ ব্যাপারে অবহেলা করতে থাকলে আল্লাহ না করুন, আমাদের কুপ্রবৃত্তি ধীরে ধীরে আমাদেরকে এ সুন্নাত থেকে পুরোপুরিই উদাসীন করে ফেলতে পারে।
মনে রাখা দরকার, আল্লাহ তাআলা মুমিন বান্দার নেক আমলের সওয়াব এমনিতেই বহু গুণে বাড়িয়ে দেন। রমজান তো আরো মর্যাদাপূর্ণ মাস। এ মাসের ফযীলত ও আমলের সওয়াবও অন্য সময়ের চেয়ে বেশি। কাজেই আমরা আল্লাহ প্রদত্ত সওয়াব অর্জনের এ সুবর্ণ সুযোগ কাজে লাগাই এবং এর যথাযথ কদর করি।
তারাবীর নামাযের ব্যাপারে আমাদের কোনো কোনো ভাইয়ের উদাসীনতার একটা বড় কারণ হলো, তারাবীর নামাযের বিধান এবং এর রাকাত সংখ্যা নিয়ে বিগত শতাব্দী থেকে কোনো কোনো মহল কর্তৃক বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপপ্রয়াস। অথচ তাদের বক্তব্যের কোনো দালীলিক ও ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই। তারা যেসব বর্ণনা দ্বারা দলীল দিতে চেষ্টা করে, তা তাদের বোঝার ভুল। যা উলামায়ে উম্মত বিস্তারিতভাবে খ-ন করেছেন। আর ঐতিহাসিকভাবে তো তাদের কোনোই দলীল-প্রমাণ নেই। সে আলোচনা এখানে বাঞ্ছনীয় নয়। মূলত এক্ষেত্রে অযথা বাড়াবাড়িই তাদের মতবিরোধের মূল কারণ।
তাদের এমন প্রোপাগান্ডার ফলে কারো কারো কাছে তারাবীর নামাযের গুরুত্ব কমে যাচ্ছে। অথচ সালাফের যুগ থেকে অনুসৃত সব ইমামের ঐক্যমতে তারাবীর নামায সুন্নাতে মুআক্কাদা এবং তা ২০ রাকাত। হাজার বছর ধরে এর ওপরেই আমল হয়ে আসছে। (দ্র. জামে তিরমিযী-১/১৬৬)
তারাবীর নামাযের প্রচলন সম্পর্কে আপাতত কেবল এতটুকু উল্লেখ করছি, হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) পরপর তিন দিন কিয়ামে রমজান তথা তারাবীর নামায জামাতের সাথে আদায় করেছেন। চতুর্থ দিন যখন দেখলেন, তারাবীর জামাতে শরীক হতে সাহাবায়ে কেরাম প্রায় সবাই মসজিদে উপস্থিত হয়েছেন। তখন আর জামাত করেননি। পরদিন ফজর নামাযের পরে সবার উদ্দেশে বললেন, ‘আমি তোমাদের আগ্রহ বুঝতে পেরেছি। কিন্তু আমি আশঙ্কা করছি, এতে করে এ নামায তোমাদের জন্য ফরয হয়ে যাবে, তখন তোমাদের জন্য তা আদায় করা কষ্টকর হবে। (দ্র. সহিহ বুখারী, হাদিস-২০১১, ১০১২)
উক্ত আশঙ্কায় নবীজী (সা.) নিয়মতান্ত্রিকভাবে তারাবীর নামাযের সম্মিলিত জামাতের ব্যবস্থা করেননি। আবু বকর (রা.)-এর দুই বছরের খেলাফতকালেও তারাবীর সম্মিলিত জামাতের ব্যবস্থা করা হয়নি। তবে ছোট ছোট জামাতে তারাবী আদায় করা হতো।
উমর (রা.) তাঁর খেলাফতকালে সাহাবায়ে কেরামের সম্মতিতে তারাবীর সম্মিলিত জামাতের ব্যবস্থা করেন। তিনি দেখলেন, মসজিদের বিভিন্ন জায়গায় আলাদা আলাদাভাবে তারাবীর জামাত হচ্ছে। তিনি সবাইকে নিয়ে একত্রে একটি জামাতের ব্যবস্থা করতে চাইলেন। তখন উবাই ইবনে কা‘ব (রা.)-এর ইমামতিতে সবার একত্রে তারাবী আদায়ের ব্যবস্থা করলেন। (দ্র. সহিহ বুখারী- ২০১০)
ইমাম ইবনে আবদুল বার (রাহ.) (মৃত্যু : ৪৬৩ হি.) বলেন, উমর (রা.) নতুন কোনো কিছুর প্রচলন ঘটাননি। তারাবী রাসূলুল্লাহ (সা.) পড়েছেন এবং জামাতেও পড়েছেন। কিন্তু এই আশঙ্কায় নিয়মিত জামাতের ব্যবস্থা করেননি যে, তিনি জামাতের ব্যবস্থা করলে তা উম্মতের জন্য ফরয হয়ে যেতে পারে। তবে নবীজীর এটি পছন্দ ছিল। তাঁর পছন্দ অনুযায়ীই উমর (রা.) এ সুন্নাত নিয়মিত জামাতে আদায়ের ব্যবস্থা করেন। (আততামহীদÑ৮/১০৮-১০৯)
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

আছিয়ার মৃত্যু দেশ ও জাতির জন্য লজ্জাজনক : ইউট্যাব

মৌলিক ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হলে ছারছীনার বিকল্প নেই: এ এম এম বাহাউদ্দীন

শিশু আছিয়ার মৃত্যুতে কুরআনের উদ্ধৃতি দিয়ে যা বললেন পিনাকী

আশুলিয়ায় কলেজ শিক্ষক লাঞ্চিত, প্রতিবাদে মানববন্ধন

অনিয়মের অভিযোগ, জনস্বাস্থ্যের প্রকৌশলী বললেন এসব অপপ্রচার

"কক্সবাজার মেডিকেল ৫০০ শয্যায় উন্নীতকরণের দাবিতে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন"

যমুনা সেতু মহাসড়কে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ, আহত ২৫

ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হলে আছিয়াদের মৃত্যু থামবে না : ঢাবি সাদা দল

শেখ হেলাল ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির পৃথক দুই মামলা

শিশু আছিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক হেফাজতে ইসলামের

বাংলাদেশকে ১০৮ কোটি টাকা অনুদান দিলো দক্ষিণ কোরিয়া

বাংলাদেশ নিয়ে গণমাধ্যমের ভিত্তিহীন বক্তব্যের প্রতিবাদ

এনআইডি কার্যক্রম ইসির অধীনে রাখার দাবিতে মীরসরাইয়ে ‘স্ট্যান্ড ফর এনআইডি’

এবার হলের সিটের ব্যবস্থাসহ তিন দফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ তম আবর্তন

সিংড়ায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি লাচ্ছা-সেমাই, জরিমানা ১ লাখ টাকা

এবার এক দিনেই শেষ হবে লালন স্মরণোৎসব, থাকছে না মেলা

সাবেক বিজিবি প্রধান সাফিনুল ইসলামের স্ত্রীসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

বেঁচে নেই আছিয়া, ধর্ষকের বিচার দাবিতে উত্তাল সোশ্যাল মিডিয়া

কুষ্টিয়ায় পুরুষাঙ্গ কর্তনের মামলায় ৭ হিজড়া কারাগারে

নেপালের বিক্ষোভে ভারতের ‘ইন্ধন’ নিয়ে বিতর্ক