প্রিয়নবী (সা.) : উম্মতের মুক্তিই ছিল যার ভাবনা-৩
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১৩ এএম | আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১৩ এএম
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজী বলেন, কিয়ামতের দিন যিনি সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি হবেন তিনি হচ্ছি আমি। তা কী জন্যে জানো? কিয়ামতের দিন পৃথিবীর শুরু থেকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত যতো মানুষ হবে আল্লাহ তাআলা সবাইকে এক মাঠে একত্র করবেন। তাদেরকে এক শব্দে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। সবাই থাকবে চোখে চোখে। সূর্য নিকটবর্তী করা হবে। মানুষ পেরেশানীতে অস্থির হয়ে পড়বে। সেই মহা বিপদ সইবার মতো নয়। লোকেরা একে অপরকে বলবে, দেখ না আমরা কী কঠিন অবস্থায় আছি? চলো দেখি আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে কে সুপারিশ করতে পারেন? একে অপরকে বলবে, চলো আমরা হযরত আদম (আ.)-এর কাছে যাই।
তারা সবাই হযরত আদম (আ.)-এর কাছে যাবে। গিয়ে বলবে, আপনি তো সবার বাবা। আল্লাহ আপনাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন। আপনার ভেতর তিনি রূহ ফুঁকে দিয়েছেন। ফিরিশতাদের তিনি হুকুম করেছেন আপনাকে সিজদা করতে। তারা আপনাকে সিজদা করেছে। আমাদের আজ কী কঠিন অবস্থা তা তো দেখতেই পাচ্ছেন। আপনি আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য একটু সুপারিশ করুন!
আদম (আ.) বলবেন, আমার রব এতো ভীষণ রেগে আছেন, এর আগে কোনোদিন তিনি এতোটা রেগে থাকেননি এবং ভবিষ্যতেও এ রকম আর রাগবেন না। তিনি আমাকে গাছের ফল খেতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু আমি আল্লাহর হুকুম রক্ষা করিনি। নফসী, নফসী! হায়, এখন আমার কী দশা হবে!! আমার কী দশা হবে! তোমরা অন্য কারো কাছে যাও। তোমরা নূহের কাছে যাও।
হযরত আদম (আ.)-এর কথা মতো তারা হযরত নূহ (আ.)-এর কাছে যাবে। হযরত নূহ (আ.) থেকে হযরত ইবরাহীম (আ.)। হযরত ইবরাহীম (আ.) থেকে হযরত মুসা (আ.)। হযরত মুসা (আ.) থেকে হযরত ঈসা (আ.)। সবার কথা শুনে হযরত ঈসা (আ.) বলবেন, আমার রব এতোটা রেগে আছেন, এর আগে কোনোদিন তিনি এতোটা রেগে থাকেননি এবং ভবিষ্যতেও এরকম আর রাগবেন না। নফসী, নফসী! হায়, আমার কী হবে!! আমার এখন কী হবে!! বরং তোমরা মুহাম্মাদের কাছে যাও।
নবীজী বলেন, তারপর সবাই আমার কাছে আসবে। বলবে, আপনি আল্লাহর রাসূল। সর্বশেষ নবী। আল্লাহ পাক আপনার জীবনের পূর্বা-পরের সকল গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন। আমাদের জন্য আপনি আল্লাহর কাছে সুপারিশ করুন! আমাদের যে কী কঠিন মসিবত যাচ্ছে তা তো আপনি দেখতেই পাচ্ছেন।
নবীজী বলেন, তখন আমি আরশের নিচে গিয়ে আল্লাহর দরবারে সিজদায় লুটিয়ে পড়ব। আল্লাহ তাআলার প্রশংসা শুরু করব। এমন ভাষায় প্রশংসা করব, যে ভাষায় অন্য কেউ কোনোদিন আল্লাহর প্রশংসা করতে পারেনি। আল্লাহ তাআলা সেই প্রশংসার ভাষা আমার অন্তরে ঢেলে দেবেন। আমি আল্লাহর প্রশংসা করতে থাকব। আমাকে বলা হবে, মুহাম্মাদ! মাথা তোলো। তুমি যা চাইবে দেয়া হবে। তুমি সুপারিশ করবে তোমার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।
আমি বলব, ইয়া রব! উম্মতী উম্মতী!! আমার উম্মতের কী হবে! আমার উম্মতের কী হবে! আপনি আমার উম্মতের নাজাতের ফয়সালা করুন। এরপর নবীজী তাঁর উম্মতকে জান্নাতে প্রবেশ করাতে থাকবেন। (সহীহ মুসলিম : ৩২৭)।
সুবহানাল্লাহিল আযীম! ইনি হচ্ছেন আমাদের নবী, যিনি দুনিয়াতে উম্মতের জন্য হেদায়েতের ফিকির করেছেন। তাদেরকে ঈমানের দাওয়াত দিতে গিয়ে যারপরনাই কষ্ট সয়েছেন। আর হাশরের ময়দানের কঠিন সেই দুর্যোগে যখন সবাই ‘নফসী নফসী’ করতে থাকবে তখন একমাত্র সেই নবীর যবানেই উচ্চারিত হতে থাকবে ‘উম্মতী উম্মতী’। নবীজী বলেন : প্রত্যেক নবীরই একটি দুআ বিশেষভাবে কবুল হয়। সকল নবীই তা করে ফেলেছেন। কিন্তু আমি আমার সেই দুআ রেখে দিয়েছি- কিয়ামতের দিন আমার উম্মতের শাফাআতের জন্যে। (সহীহ মুসলিম : ১৯৮)।
কুরআনে কারীমের বিভিন্ন স্থানে রাব্বুল আলামীন তাঁর হাবীবের পরিচয় ফুটিয়ে তুলেছেন বিভিন্নভাবে। আল্লাহ বলেন : তোমাদের মাঝে তোমাদের মধ্য থেকেই রাসূল আগমন করেছেন, তোমাদের কষ্ট যার নিকট অসহনীয়, যিনি তোমাদের (কল্যাণের) জন্য ব্যাকুল, যিনি মুমিনদের প্রতি অত্যন্ত দয়াপরবশ, পরম মমতাবান। তারপরও যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে (হে রাসূল! তাদেরকে) বলে দাও, আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। তিনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। তাঁরই উপর আমি ভরসা করেছি এবং তিনি মহা আরশের মালিক। (সূরা তাওবা : ১২৮-১২৯)। লক্ষ্য করুন, প্রিয় হাবীবের শানে আল্লাহ তাআলার শব্দচয়ন হচ্ছে : ‘তোমাদের কষ্ট যার কাছে অসহনীয়, যিনি তোমাদের কল্যাণের জন্য ব্যাকুল, ...।’
বস্তুত নবীজীর গোটা জীবনটাই ছিল এই আয়াতের বহিঃপ্রকাশ। তিনি উম্মতের কল্যাণ কামনায় কতটা ব্যাকুল ছিলেন, উম্মতের হেদায়েত ও নাজাতের জন্য কতটা বিভোর থাকতেন তারই কিছু ছটা এখানে বিকরিত হল। নববী যিন্দেগীর পরতে পরতে সীরাত ও সুন্নাহর পাঠক যার নজীর অহরহই দেখতে পান।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান পাহাড়ের পর জয়-জাকিরকে হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ
নাটকীয় শেষ দশ মিনিটে দুই গোল শোধ করে বার্সাকে রুখে দিল সেল্তা
বিবর্ণ সিটিকে ইতিহাদেই বিধ্বস্ত করলো টটেনহ্যাম
নটিংহ্যামকে হারিয়ে চার ম্যাচের জয়খরা কাটালো আর্সেনাল
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক
পাঠ্যবই ছাপায় অনিয়মে আনন্দ প্রিন্টার্সকে সতর্কতা
দক্ষিণ লেবাননে ৬ চিকিৎসাকর্মী নিহত
জনগণের সাথে জনসংযোগ বাড়াতে হবে
আমরা যুদ্ধে বিশ্বাসী না কেউ গায়ে পড়লে জবাবের প্রস্তুতি রাখতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথের কাছে ২৭ রেফারির চিঠি
ফের বাড়লো সোনার দাম, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা
বাংলাদেশে খেলা নিয়ে অনিশ্চিয়তায় হামজা!
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই হবে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের খেলা
সিলেটে মাজিদের ফিফটি
অ্যাম্বাসেডর কাপ উশুতে সেনাবাহিনী চ্যাম্পিয়ন
মাদক শুধু ব্যক্তিকে নয় পরিবারকেও ধ্বংস করে
সাধারণ মানুষের পেটে লাথি মেরে আ.লীগ নিজেদের ভাগ্য গড়েছে : এমরান সালেহ প্রিন্স
ধর্মদ্রোহী সরকারের সময় কোনো ধর্মই নিরাপদ ছিল না
দৌলতখানে শীতকালীন সবজি পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক
সুন্দরগঞ্জে ছয় পা বিশিষ্ট বাছুরের জন্ম