প্রশ্ন: বদর যুদ্ধের গুরুত্ব ও তাৎপর্য কী?

Daily Inqilab ইনকিলাব

০৯ মে ২০২৪, ১২:১৮ এএম | আপডেট: ০৯ মে ২০২৪, ১২:১৮ এএম

উত্তর: ১৭ রমজান, ঐতিহাসিক বদর দিবস। ইসলামের ইতিহাসে প্রথম সম্মুখ সমর অনুষ্ঠিত হয় এই দিবসে। পৃথিবীতে ইসলাম থাকবে কি থাকবে না- এ ফয়সালা হয় বদরের রণাঙ্গনে, ঐতিহাসিক এক যুদ্ধের মাধ্যমে। জেহালতের তিমিরাচ্ছন্নতার অবসান ঘটিয়ে একত্ববাদের ঝা-া নিয়ে শান্তি ও সফলতার চাদরে আচ্ছন্ন ঐশী নূরের আলোকে জগদ্বাসীর জন্য ইসলামের মতো মহান পবিত্র নেয়ামতের সুশীতল ঝরনাধারা প্রবহমান থাকার বিষয়টি সুনিশ্চিত হয়েছিল বদরের প্রাঙ্গণ থেকে। এ জন্যই মানব সভ্যতার ইতিহাসে এই দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। পবিত্র কোরআনে তাই মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে বদর দিবসকে ‘য়াওমুল ফুরকান’ তথা সত্য-মিথ্যার প্রভেদকারী দিবস হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
বস্তুত মহানবী (সা.) যুদ্ধপ্রবণ মানুষ ছিলেন না। কিন্তু তৎকালীন অমুসলিম শক্তির নানামুখী ষড়যন্ত্র, নির্যাতন আর ইসলামকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে দেওয়ার অপপ্রয়াস মোকাবিলায় রাসুলে পাক (সা.)-এর হাতে যুদ্ধ ব্যতীত কোনো বিকল্প ছিল না। তাওহিদ ও রেসালতের প্রতি আনুগত্যকারী মোহাজের ও আনসারদের সমন্বয়ে অসম সাহসী সাহাবায়ে কেরামের এক প্রত্যয়দীপ্ত বাহিনী বিশ্বনবীর (সা.) নেতৃত্বে নজিরবিহীন বীরত্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে বদরের প্রান্তরে। মহানবী (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের সাথী হয়েছিল মহান আল্লাহপাক প্রদত্ত রহমত, মদদ ও সুসংবাদ সংবলিত বার্তাবলির অমোঘ শক্তিমত্তা। পবিত্র কোরআনের সুরা আলে ইমরানে আল্লাহপাক ঘোষণা করেন- ওয়ালাকাদ নাসারাকুমুল্লাহু বিবাদরিন ওয়া আন্তুম আযিল্লা। অর্থাৎ সুনিশ্চিতভাবেই মহান আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করেছেন বদরের যুদ্ধে, যেখানে তোমরা ছিলে ক্ষীণ-শক্তির দুর্বল এক পক্ষ। মূলত মুসলমানদের সংখ্যা, যুদ্ধাস্ত্র, সমর উপকরণ, শক্তিমত্তা ও সমর-কৌশলের চাইতেও অধিক গুরুত্বপূর্ণ হলো মহান প্রভুর সাহায্য ও রহমতের বিষয়; যার ওপর প্রতিটি মুমিন সর্বাবস্থায় ভরসা করবে, নির্ভরতা পাবে। আল্লাহপাক সে জন্যই বলেছেন, ‘ওয়া কানা হাক্কান আলাইনা নাসরুল মুমিনিন। অর্থাৎ মোমেনদের সহযোগিতা প্রদান করা আমি আল্লাহর জন্য অবশ্য কর্তব্য।
৬২২ খ্রিষ্টাব্দে মহানবী (সা.) মদিনায় হিজরত করেন। হিজরতের এক বছর ৬ মাস ২৭ দিনের মাথায় অনুষ্ঠিত হয় বদরের যুদ্ধ। দিনটি ছিল দ্বিতীয় হিজরির ১৭ রমজান শুক্রবার। পরিসংখ্যানগত বিশ্নেষণে দেখা যায়, মুসলিম বাহিনীর চাইতে অমুসলিম বাহিনীর সৈন্যসংখ্যা ছিল প্রায় তিন গুণ। অমুসলিমদের অন্যান্য রসদ ও উপকরণ ছিল আরও বেশি। অমুসলিম সৈন্যসংখ্যা ছিল এক হাজারেরও অধিক। সঙ্গে ছিল ১০০ ঘোড়া, শতাধিক উট, ছয় শতাধিক লৌহ বর্মসহ অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্র। পক্ষান্তরে মুসলিম বাহিনীর সৈন্যসংখ্যা ছিল মাত্র ৩১৩। সঙ্গে যুক্ত ছিল ৭০টি উট ও মাত্র দুটি ঘোড়া। কিন্তু মুসলমানদের ছিল বিশ্বমানবতার সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসুল হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর নেতৃত্ব এবং মহান আল্লাহর সাহায্য। এই অসম যুদ্ধে কল্পনাতীত পরাজয় বরণ করে মহাসত্য অস্বীকারকারী কুফর প্রতিপক্ষ এবং অবিশ্বাস্য বিজয় লাভ করেন একত্ববাদের পতাকাবাহী আল্লাহপাকের অনুগত মজলুম বান্দারা।
নবপ্রবর্তিত ইসলাম, মহানবী (সা.) ও মহান আল্লাহপাকের জন্য জীবন উৎসর্গকারী কিছু মকবুল মানুষের বিশ্বাস, কর্তব্যনিষ্ঠা ও প্রতিশ্রুতির বিস্ময়কর সমাবেশ ঘটেছিল বদরের যুদ্ধে। সম্মিলিত কুফর বাহিনী করুণ পরিণতি বরণ করে। এর ফলে শুধু মক্কা-মদিনাতেই নয়; বরং সমগ্র আরব উপদ্বীপে ইসলামের এক অভিনব শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে এবং মুসলমানদের মর্যাদাও উজ্জ্বলতর হয়, যা থেকে পরবর্তী সময়ে তারা অধিকতর উদ্দীপনা ও অনুপ্রেরণামূলক অফুরান শক্তি লাভ করেন। মহান আল্লাহ ভবিষ্যতের জন্য তাওহিদিদের এ যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে সুরা আলে ইমরানে সুসংবাদ দেন- ‘বরং তোমরা যদি সবর এখতিয়ার করো, মহান আল্লাহকে ভয় করার নীতি অবলম্বন করে চলো, তবে বিপক্ষ শক্তি তোমাদের ওপর দ্রুত হামলা করলেও আল্লাহপাক তোমাদের ৫ হাজার ফেরেশতার এক সুবিন্যস্ত বাহিনী দ্বারা সহযোগিতা করবেন।’ মহান আল্লাহ প্রদত্ত ফেরেশতা বাহিনীর এই সহযোগিতার কথা সুরা আনফালেও এসেছে- ‘যদি তুমি দেখতে ফেরেশতারা অবিশ্বাসীদের মুখম-ল ও পৃষ্ঠদেশে আঘাত করে তাদের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে এবং বলছে যে, তোমরা এবার দহন যন্ত্রণা ভোগ করো।
ইসলাম বদরের সিঁড়ি বেয়ে এভাবেই মহান আল্লাহর রহমত ও মদদে অত্যন্ত দ্রুত বেগে সম্মুখপানে এগিয়ে চলেছিল এবং পরিণত হয়েছিল জগতের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল এক জীবন-বিধানরূপে। আল্লাহপাকের বাণী- নাসুরম্ মিনাল্লাহে ওয়া ফাতহুন কারিব। অর্থাৎ আল্লাহর সাহায্য ও তোমাদের বিজয় অত্যাসন্ন, অতি নিকটে। ইতিহাস সাক্ষী, স্বল্পকালের ব্যবধানেই মহান রবের এ ঘোষণার পরিপূর্ণ সফল বাস্তবায়ন জগদ্বাসী প্রত্যক্ষ করেছিল।

উত্তর দিচ্ছেন: মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান, পাঠানপাড়া (খান বাড়ি), কদমতলী, সদর, সিলেট।


বিভাগ : ইসলামী প্রশ্নোত্তর


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

সিটির অমরত্বের রাত...

সিটির অমরত্বের রাত...

বায়ুদূষণে শীর্ষে ঢাকা

বায়ুদূষণে শীর্ষে ঢাকা

ফতুল্লায় হত্যা মামলার আসামি কেরানিগঞ্জে গ্রেপ্তার

ফতুল্লায় হত্যা মামলার আসামি কেরানিগঞ্জে গ্রেপ্তার

যৌথ বাহিনীর অভিযানে বান্দরবানে কেএনএফের ৩ সদস্য নিহত

যৌথ বাহিনীর অভিযানে বান্দরবানে কেএনএফের ৩ সদস্য নিহত

রাজশাহীতে মোটরসাইকেলের কাগজপত্র দেখতে চাওয়ায় পুলিশকে মারপিট, যুবক আটক

রাজশাহীতে মোটরসাইকেলের কাগজপত্র দেখতে চাওয়ায় পুলিশকে মারপিট, যুবক আটক

স্বাচিপ রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি ডা. জাহিদ, সম্পাদক ডা. অর্ণা জামান

স্বাচিপ রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি ডা. জাহিদ, সম্পাদক ডা. অর্ণা জামান

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রগঠনের দাবিতে সারাদেশে জেলা ও মহানগরীতে ইসলামী

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রগঠনের দাবিতে সারাদেশে জেলা ও মহানগরীতে ইসলামী

খালেকুজ্জামানের বাড়ী সরকারিভাবে পুননির্মাণের দাবি - ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ

খালেকুজ্জামানের বাড়ী সরকারিভাবে পুননির্মাণের দাবি - ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ

কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত সাবেক বিজেপি নেতা

কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত সাবেক বিজেপি নেতা

সঠিক ওজন ও পরিমাপ নিশ্চিতকরণে বিএসটিআই নিরলস কাজ করে যাচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী

সঠিক ওজন ও পরিমাপ নিশ্চিতকরণে বিএসটিআই নিরলস কাজ করে যাচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী

মানসম্মত পণ্য উৎপাদনে সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে: প্রেসিডেন্ট

মানসম্মত পণ্য উৎপাদনে সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে: প্রেসিডেন্ট

বিক্ষোভ, গাড়ি ভাঙচুর, অটোরিকশাচালকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া

বিক্ষোভ, গাড়ি ভাঙচুর, অটোরিকশাচালকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া

কিরগিজস্তানে আহত বাংলাদেশি ছাত্রদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনুন

কিরগিজস্তানে আহত বাংলাদেশি ছাত্রদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনুন

শিরোপার রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা : শেষ ম্যাচে মাঠে নামছে সিটি-আর্সেনাল

শিরোপার রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা : শেষ ম্যাচে মাঠে নামছে সিটি-আর্সেনাল

কোরবানির গোস্ত দিয়ে কোন অনুষ্ঠান করে টেবিল বসিয়ে টাকা বা উপহার নেওয়া প্রসঙ্গে।

কোরবানির গোস্ত দিয়ে কোন অনুষ্ঠান করে টেবিল বসিয়ে টাকা বা উপহার নেওয়া প্রসঙ্গে।

মানিকগঞ্জ-ঢাকা রেললাইন প্রসঙ্গে

মানিকগঞ্জ-ঢাকা রেললাইন প্রসঙ্গে

কমিউনিটি ক্লিনিক দাঁড়িয়ে আছে দোরগোড়ায়

কমিউনিটি ক্লিনিক দাঁড়িয়ে আছে দোরগোড়ায়

ব্যাংক ও আর্থিক খাতে বেপরোয়া লুটপাট

ব্যাংক ও আর্থিক খাতে বেপরোয়া লুটপাট

বেগম সুফিয়া কামাল এবং কবি ও সাহিত্য সমালোচক আবদুল কাদির নানাভাবে দেশের শিল্প-সাহিত্যকে ঋদ্ধ করেছেন : সেলিনা হোসেন

বেগম সুফিয়া কামাল এবং কবি ও সাহিত্য সমালোচক আবদুল কাদির নানাভাবে দেশের শিল্প-সাহিত্যকে ঋদ্ধ করেছেন : সেলিনা হোসেন

নগরমুখী জনস্রোত রোধ করতে হবে

নগরমুখী জনস্রোত রোধ করতে হবে