প্রশ্ন: শবেবরাত কেন গুরুত্বপূর্ণ?
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০৫ এএম

উত্তর: শা’বান মাসের মধ্যবর্তী রজনী তথা ১৪ তারিখ দিনগত রাতকে শবে বরাত বলা হয়। ‘শব’ অর্থ রাত আর ‘বরাত’ অর্থ মুক্তি। সুতরাং শবেবরাত অর্থ হলো মুক্তির রাত। এই রাতে আল্লাহ তায়ালা অবারিত রহমত বর্ষণ করেন। বান্দাদেরকে উদারচিত্তে ক্ষমা করেন। জাহান্নাম থেকে মুক্তির ঘোষণা দেন, এজন্য এই রাতকে শবেবরাত বলা হয়। হাদীস শরীফে শবেবরাতকে ‘নিসফে শা’বান’ বলা হয়েছে। মুসলিম উম্মাহর কাছে এ রাতের বিশেষ গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য রয়েছে। বিভিন্ন হাদীসে এ রাতের বিশেষ ফযিলত বর্ণিত হয়েছে। হযরত আয়শা (রা.) বর্ণনা করেন, একবার নিসফে শা’বানের রাতে রাসূল (সা.)-কে বিছানায় পাওয়া যাচ্ছিল না। খোঁজ নিয়ে দেখা গেলো তিনি জান্নাতুল বাকিতে কবর জিয়ারত করছেন। (সুহিহ মুসলিম)
হযরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূল (সা.) বলেছেন, যখন অর্ধশা’বানের রাত আসে তখন তোমরা রাত জেগে ইবাদত করো এবং পর দিন রোজা রাখো। কেননা এ রাতে আল্লাহ তা’লা সুর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন এবং বলতে থাকেন, কোন ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করবো। কোন রিজিক প্রার্থী আছে কি? আমি তাকে রিজিক দান করবো। কোন বিপদগ্রস্ত আছে কি? আমি তাকে রিজিক দান করবো। আর সুবহে সাদিক পর্যন্ত এ ডাক অব্যাহত থাকে। (ইবনে মাজাহ)
হযরত ইকরিমাসহ প্রমুখ তাফসীরবিদের মতে আল-কুরআনে সুরায়ে দোখানের প্রথম আয়াতগুলোতে শবে বরাতের ফযিলত বর্ণনা করা হয়েছে। কোন কোন বর্ণনায় এ রাতকে ‘লাইলাতুস্সফ’ নামে অভিহিত করা হয়েছে এবং এর বরকতময় হওয়া ও রহমত নাযিল হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মুসলিম উম্মাহর তিনটি স্বর্ণোজ্জ্বল যুগ তথা সাহাবা, তাবেঈন ও তবয়ে তাবেঈনের যুগেও এই রাতের ফযীলত থেকে উপকৃত হওয়ার বিশেষ গতি ও গুরুত্ব ছিলো। সেই যুগের মানুষেরাও এই রাতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ইবাদত করেছেন।
এই রাতটি ফযীলতময় ও বিশেষ গুরুত্ববহ। এই রাতে দীর্ঘক্ষণ জেগে থাকা ও ইবাদত করা সোওয়াবের অসিলা গণ্য হবে নিঃসন্দেহে। অধিক নফল নামাজ পড়া, কুরআন তেলাওয়াত করা, তাসবীহ পড়া, দোয়া করা, আত্মীয় স্বজনের কবর জিয়ারত করা এবং তাদের জন্য দোয়া করা; এসব ইবাদত এই রাতে করা যায়। কোন কোন হাদীসের আলোকে শা’বানের পনেরো তারিখে রোজা রাখা অনেক সোয়াবের কাজ।
শবেবরাতকে কেন্দ্র করে আমাদের সমাজে কিছু কুসংস্কার প্রচলিত আছে যেমনÑ হালওয়া-রুটির আয়োজন করা, ফটকাবাজি, আতশবজি, আলোকসজ্জা, স্বজনদের বাড়ীতে পিঠা বিতরণ, কবরস্থানে পু®প অর্পণ, কবরে বাতি জালানো, কবরে গিলাফ বা চাদর টানানো, মাজারে ভক্তি করা, কবরে সেজদা দেওয়া ইত্যাদি। এগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। নবী (সা.) থেকে যে কাজটি যেভাবে এবং যে স্তরে প্রমাণিত, সেটাকে সে স্তরে রাখাই বাঞ্চনীয়। সেই সীমারেখা অতিক্রম করা কিছুতেই উচিৎ নয়। এই রাতে ইবাদতের বিশেষ কোন নিয়ম নেই। নামাজের কোনো নির্দিষ্ট রাকাত সংখ্যাও নেই। যেসব ইবাদত করা হবে সবই নফল ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে। আর নফল ইবাদত নিরবে আপন আপন ঘরে একাগ্রচিত্তে করা উত্তম। তবে কোনো ধরনের আনুষ্ঠানিকতা ব্যতীত ইবাদাতের স্থান হিসেবে মসজিদে সমবেত হয়ে গেলে কোনো আপত্তির কারণ নেই।
পৃথিবী এখন দুর্যোগপূর্ণ কঠিন সময় অতিক্রম করছে। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ভুমিকম্প, সুনামি, খরা, ঝড়, বন্যা, দাবানল, পঙ্গপালের হানা সাম্প্রতিক সময়ে আগ্রাসী হয়ে ওঠেছে। পৃথিবীর মানুষ সুখে নেই। বিপর্যয় মানুষকে গ্রাস করে ফেলেছে। কোরআন এবং হাদীসের আলোকে বলা যায়, পৃথিবীতে যত বিপর্যয় আসে সবই মানুষের হাতের কামাই। মানুষই পরিবেশকে বিপর্যস্ত করে তোলে। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হলে প্রকৃতি ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। মানুষই জুলুম-অত্যাচার পাপাচারের লিপ্ত হয়। আর মানুষের অত্যাচার ও পাপাচারের কারণে আল্লাহ তায়ালা ক্ষিপ্ত হয়ে বিপর্যয় দিয়ে শিক্ষা দেন। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সুখ-শান্তি, বিপদ-আপদ, ভয়-ক্ষতি ও ক্ষুধার দ্বারা পরীক্ষা করেন। সর্বাবস্থায় যারা আল্লাহকে স্মরণ করে, সবর করে, ক্ষমা প্রার্থনা করে আল্লাহ তাদেরকে সুংবাদ দেন।
পৃথিবীর এই মহাবিপর্যয়ের সময় বিশেষ মর্যাদারর মাস শা’বান এসছে। এ মাসের বিশেষ ফযিলত ও মর্যাদা বিবেচনা করে রাসূল (সা.) সাধ্যানুযায়ী নেক আমল করেছেন এবং উম্মতগণকে এর প্রতি অনুপ্রাণিত করেছেন। রাসূল সা. বলেছেন- ‘রজব আল্লাহর মাস, শা’বান আমার মাস এবং রমজান হলো উম্মতের মাস। রজব, শা’বান মাসের অত্যাধিক গুরুত্ব ও তাৎপর্যের প্রতি লক্ষ্য রেখে রাসূল (সা.) এই দোয়াটি বেশি বেশি পড়তেনÑ “আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফী রাজাবা ওয়া শা’বান, ওয়া বাল্লিগনা রামাদ্বান।” এর অর্থ হচ্ছে, “হে আল্লাহ! আমাদেরকে রজব ও শা’বানের সকল বরকত দান করুন এবং রমজান পর্যন্ত পৌছে দিন।”
মহিমান্বিত শবেবরাত ও ইবাদাতের বসন্তকাল খ্যাত মাহে রমজান একেবারে নিকটবর্তী। মাহে রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণের পাশাপাশি গোনাহ মাফির জন্য আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করার গুরুত্বপূর্ণ সময় এটি। সুতরাং ইবাদাতের এই মোহেন্দ্রক্ষণে প্রত্যেক মুসলমানের করণীয় হচ্ছে, নিজেদের গোনাহের জন্য লজ্জিত ও অনুতপ্ত হওয়া। নতুনকরে গোনাহের কাজে লিপ্ত না হওয়া। তাওবা-ইস্তেগফার করা। কুরআন তিলাওয়াত, জিকির-আজকারসহ যাবতীয় নফল ইবাদাত বেশি বেশি করা। নিজেদের গোনাহ মাফির জন্য মহান প্রভুর দরবারে প্রার্থনা করা। আল্লাহ তা’লা যেন পৃথিবীবাসীকে ধরণের আযাব ও গজব থেকে হেফাজত করেন। আমীন॥
উত্তর দিচ্ছেন: মুহাম্মদ আবদুল হামিদ, প্রবন্ধকার ও কলাম লেখক।
বিভাগ : ইসলামী প্রশ্নোত্তর
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও






আরও পড়ুন

ঐক্যবদ্ধ জিহাদের মাধ্যমে ফিলিস্তিনকে রক্ষা করতে হবে বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদ অব্যাহত

১৩ বছর পর জমি দখলে নেয় ভুক্তভোগী, ভিন্নখাতে নিতে অপ-প্রচার

দেশের ১৩৫ কলেজে নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগ

দেশে বড় বিনিয়োগ আসতে পারে: বিডা চেয়ারম্যান

প্রতিবাদ মিছিল থেকে যারা লুটপাট করেছে তারা মানবতার কলঙ্ক : দুদু

নেত্রকোনায় চাঞ্চল্যকর আনোয়ার হত্যাকান্ডের রায়ে একজনের ফাঁসি

ড. ইউনূসের সঙ্গে পিটার হাসের সাক্ষাৎ

কিশোরগঞ্জে দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষে বাড়ি-দোকান ভাংচুর, লুটপাট অর্ধশত আহত

জিম্বাবয়ের বিপক্ষে যে কারণে শক্তিশালী দল দিল বিসিবি

দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচেও মেয়েদের বড় জয়

মহেশপুর সড়ক দুর্ঘটনায় দুইজন নিহত আহত ৪

লালমোহনে প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে সার-বীজ বিতরণ

ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে ঈশ্বরগঞ্জে ছাত্রদলের বিক্ষোভ

দেশে বিনিয়োগের এত অনুকূল পরিবেশ আগে ছিল না: ড. ইউনূস

বিশ্বের শক্তিশালী ৫০ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ

বর্ণিল আয়োজনে হাবিপ্রবিতে ২৪ তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন

এনডিবি আরও ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে

ফিলিস্তিনে গনহত্যার প্রতিবাদে সিলেটে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করলো শিবির

সৈয়দপুরে গাজায় মুসলিম জনতাকে গনহত্যার প্রতিবাদে ছাত্রদলের বিক্ষোভ ও মানববন্ধন

মির্জাগঞ্জে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির ১০ বস্তা চাল জব্দ