প্রশ্ন: রমজানে সুস্থতায় পুষ্টি পরামর্শ ও রোজা রাখার উপকারিতা কি?
২০ মার্চ ২০২৫, ১২:২৫ এএম | আপডেট: ২০ মার্চ ২০২৫, ১২:২৫ এএম

উত্তর: রমজান মাস প্রতিটি মুসলিম ধর্মাবলম্বীর কাছে একটি আদর্শ ও পবিত্র মাস। রমজান মাসে রোজা রাখাই উত্তম। কেবল ধর্মীয় দিক থেকেই নয়, রোজা রাখা স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী।
রমজান মাসে সাহরি, ইফতার ও অল্প পরিমাণে রাতের খাবারের রুটিনে বড় পরিবর্তন আসে। এই তিন সময়ে এমন খাবার নির্বাচন করতে হবে যাতে সেই খাবার থেকেই আমাদের দৈনিক ক্যালরি, ভিটামিন ও মিনারেলের চাহিদা পূরণ হয়। তাই আমাদের রমজান মাসে সুষম-পুষ্টিকর ও সহজপাচ্য খাবার খাওয়া উচিৎ।
সাহরির খাবার:
লাল চাল, লাল আটা, সব্জি, শিমের বিচি, মটরশুঁটি ইত্যাদি আঁশ জাতীয় খাবার যেগুলো ধীরে হজম হয় সেসব খাদ্য গ্রহণ করার ফলে সারাদিনে শক্তি পাওয়া যাবে এবং ক্ষুধা অনুভব কম হবে।
লাল চাল, লাল আটা, সব্জি, শিমের বিচি, মটরশুঁটি ইত্যাদি আঁশ জাতীয় খাবার যেগুলো ধীরে হজম হয় সেসব খাদ্য গ্রহণ করার ফলে সারাদিনে শক্তি পাওয়া যাবে এবং ক্ষুধা অনুভব কম হবে।
আমিষ জাতীয় খাবার খাদ্য তালিকায় রাখা- যেমন; মাছ, মাংস, ডিম, ডাল, দুধ ও দুধ জাতীয় খাবার দেহের ক্ষয় পূরণ করবে।
পানিশূন্যতা রোধে এবং সহজে হজম হয় এ জাতীয় সব্জি যেমন: লাউ, পেঁপে, চালকুমড়া, ঝিঙ্গা, পটল, চিচিঙ্গা-কে প্রাধান্য দেয়া, সেই সাথে শসা ও টমেটোর সালাত খাবারের তালিকায় রাখা যেতে পারে যা শরীরের পানিশূন্যতা রোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে।
সাহরিতে অগ্রহণযোগ্য খাবার:
চা বা কফি – যার মধ্যে থাকা “কেফেইন” তৃষ্ণা বাড়ায় এবং খাবারে পুষ্টি শোষণে বাধা দেয়।
তেল মসলা ও চর্বি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা যেমন-তেহারি, খিচুড়ি, বিরিয়ানি যা হজমে প্রচুর পরিমাণ পানির প্রয়োজন হয়, ফলে তৃষ্ণা অনুভব হয়।
ইফতারের খাবার:
ইফতারের পানীয় হিসাবে তাজা ফলের শরবত, ডাবের পানি, তোকমা, ইসবগুল এগুলো শরীরে ইলেকট্রোলাইট-এর ভারসাম্য রক্ষায় কাজ করবে।
মিষ্টি ফল যেমন; খেজুর, তরমুজ, কমলা, আনারস, কলা, পেঁপে দেহের প্রয়োজনীয় ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করে।
মিষ্টি ফল যেমন; খেজুর, তরমুজ, কমলা, আনারস, কলা, পেঁপে দেহের প্রয়োজনীয় ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করে।
ডিম বা ডিমের তৈরি খাবার গ্রহণ করা যায় যা আমিষের ভালো উৎস।
ইফতার গ্রহণ করতে হবে ধীরে ও ভালভাবে চিবিয়ে, যা হজমে সহায়ক হবে।
ইফতারে অগ্রহণযোগ্য খাবার:
অধিক মসলা এবং কৃত্রিম রংযুক্ত খাবার ও পানীয়, যা বদহজম, অস্বস্তি, শারীরিক জটিলতা বাড়াতে পারে।
ভাজাপোড়া বা গ্রিল করা মাংস, শিক কাবাব ও অন্যান্য ফাস্ট ফুড যেগুলো ট্রান্স ফ্যাট এর অন্যতম উৎস যা শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল বৃদ্ধির মাধ্যমে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
যাদের হাইপারটেসশন ও ডায়বেটিস রয়েছে তাদেরকে অতিরিক্ত লবণ ও চিনিযুক্ত খাবার যেমন চিপস, জিলাপি, সফট ড্রিং, ফ্রেন্স ফ্রাই, ক্রিম-কেক ইত্যাদি খাবার অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে।
রাতের খাবার:
অল্প পরিমাণে কিন্তু পুষ্টিনির্ভর খাবার যেমন- এক গ্লাস দুধ বা হাফ কাপ দই বা ১ স্লাইস পুডিং।
দেহে পানির চাহিদা পুরনে ইফতার এবং সেহেরির মাঝের সময়ে ২.৫ (আড়াই) লিটার পানি বা পানি জাতীয় খাবার গ্রহণ করা। কারণ, শরীরে পানির সমতা বজায় রাখতে পারলে মাথা ব্যথা, কোষ্টকাঠিন্য ও বদহজম নিরাময়ে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
রোজা রাখার শারীরিক স্বাস্থ্য উপকারিতা:
হজম প্রক্রিয়া উন্নত হয়: রোজা রাখার মাধ্যমে হজম ব্যবস্থার বিশ্রাম হয়, ফলে শরীরের অতিরিক্ত খাবার প্রক্রিয়া সঠিকভাবে কাজ করে। এই সময় খাওয়া-দাওয়ার সময়সূচি ও পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
ওজন কমানো: রোজার সময় খাবার কম খাওয়া হয় এবং অতিরিক্ত তৃষ্ণার কারণে প্রচুর পানি পান করা হয়, যার ফলে অতিরিক্ত ক্যালোরি কমানো যায়। এটা দীর্ঘমেয়াদে ওজন কমানোর জন্য সহায়ক হতে পারে।
ডিটক্সিফিকেশন: রোজা রাখলে শরীরের টক্সিন (বিষক্রিয়া) গুলো ধীরে ধীরে বের হয়ে যায় এরং শরীর ভেতর থেকে পরিষ্কার হতে থাকে, যার ফলে ত্বক ও শরীরের স্বাস্থ্য উন্নত হয়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: রোজা রাখলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং ইনসুলিনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়, যা ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য উপকারী হতে পারে।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো: নিয়মিত রোজা রাখলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমতে পারে, কারণ এটি রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
রোজা রাখার মানসিক উপকারিতা:
আত্মনিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা: রোজা রাখার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং শৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। দিনের নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়া, পানি পান করা, এবং অন্যান্য অভ্যাসগুলি নিয়ন্ত্রণে রাখা মানুষের মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করে।
মানসিক প্রশান্তি: রোজার মাধ্যমে অতিরিক্ত খাদ্য, পানীয়, এবং দৈনন্দিন চাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, যা মানসিক প্রশান্তি এবং ধৈর্য সৃষ্টি করতে সহায়ক।
আত্মবিশ্বাস বাড়ানো: রোজা রাখার মাধ্যমে নিজের প্রতি বিশ্বাস ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়, কারণ এটা এক ধরনের আত্মবিশ্লেষণ এবং আত্মশুদ্ধির প্রক্রিয়া।
অসুস্থতার জন্য যারা রোজা রাখতে ভয় পাচ্ছেন, তাদের জন্য বলব চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন, বিভিন্ন রোগের জন্য ব্যবহৃত ওষুধগুলো পরিবর্তন করে নিলেই এবং একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার গ্রহণ করে রোগ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি নিরাময় নিশ্চিত করা সম্ভব।
উত্তর দিচ্ছেন: ১। তাপসী সাহা (পুষ্টিবিদ) স্কয়ার হসপিটাল লিমিটেড, পান্থপথ, ঢাকা,
২। ড. যাকীয়াহ রহমান মনি, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, পুষ্টি ইউনিট,
বাংলাদেশ কৃষিগবেষণা কার্যালয়, ফার্মগেট।
বিভাগ : ইসলামী প্রশ্নোত্তর
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও






আরও পড়ুন

তামিমের চিন্তাভাবনাকে 'অশিক্ষিত' বললেন সালাউদ্দিন

নারায়ণগঞ্জের লাঙ্গলবন্দ স্নানোৎসব পরিদর্শন করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্রীড়া দিবস উপলক্ষ্যে বিশেষ কর্মসূচি

বাংলাদেশের মাটিতে আর কোন ফ্যাসিস্ট যেন জন্মাতে না পারে সেটাই আমাদের লক্ষ্য - খোকন তালুকদার

প্রথমবারে মিয়ানমার ফেরত নিচ্ছে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা, ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের উল্লাস

পড়ালেখা শেষে শিক্ষার্থীদেরকে দেশ ও জাতির সেবক হিসাবে কাজ করতে হবে-সোলায়মান চৌধুরী

শুল্ক আরোপ নিয়ে ট্রাম্পের নিজ দলেই বিভক্তি বাড়ছে

ফুলবাড়ী প্রেসক্লাবের দ্বি-বার্ষিক নির্বাচনে সভাপতি আবু শহীদ ও সম্পাদক ডিফেন্স

তিন ধাপ এগিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সম্পর্ক: বিশেষ দূত

প্রশাসনের সহযোগিতায় অটোরিক্সায় শৃঙ্খলা ফিরেছে

শেখ হাসিনা ভারতের সহায়তায় বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট ভূমিকা অবতীর্ণ করেছে : এ্যানি

রাজবাড়ীতে সেনাবাহিনীর অভিযানে পরিত্যক্ত অস্ত্র-গুলি উদ্ধার

নোয়াখালীর কবিরহাটে জমজ দুই শিশু ধর্ষণ, পরিবারের পাশে তারেক রহমান

যথেষ্ট খাদ্যশস্য সরকারের কাছে মজুত রয়েছে: খাদ্য উপদেষ্টা

দৌলতদিয়া ঘাটে ঢাকামুখী যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনাইয়ের স্বর্ণপদক অর্জন করলেন রাজবাড়ীর রুমি

জুলাইয়ের গণহত্যায় সরাসরি ভারতের মদত ছিল: এ্যানি

সমালোচনা সইতে না পেরে সমর্থকদের দিকে তেড়ে গেলেন পাক ক্রিকেটার

হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়ে মোদির প্রতিক্রিয়া নেতিবাচক ছিল না: প্রেস সচিব

‘ময়লার ভাগাড়সহ কোনো স্থানেই ময়লা পোড়ানো যাবে না’