ঢাকা   শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ | ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

প্রশ্ন: আমার প্রিয় হযরত কী নবী কামলিওয়ালা?

Daily Inqilab ইনকিলাব

১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম

উত্তর: আল্লাহ রাব্বুলআলামিন মানব জাতিকে সঠিক পথে পরিচালনার জন্য যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রাসুল দুনিয়ার বুকে পাঠিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী-রাসুল হলেন মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। মানবতার মুক্তির মহান অগ্রদূত মহানবী (সা.)-সব মানুষের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, মানবতার মুক্তির দূত, সাইয়্যেদুল মুরসালিন খাতামুননাবিয়ীন, হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে আল্লাহতায়ালা বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ এ পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন-তোমাদের জন্য রাসুলের জীবনীর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। তাঁর প্রতিটি কথা, কাজ, অনুমোদন, নির্দেশনা, আদেশ, নিষেধ ও উপদেশ দুনিয়া-আখেরাতের কল্যাণের বার্তাবাহী। তিনি গোটা মানব জাতির শিক্ষক। তাঁর সে কালজয়ী আদর্শ ও অমিয়বাণী দ্যুাতি ছড়িয়ে পথপদর্শন করেছে যুগ যুগান্তরে, আলোকিত হয়েছে মানবমন্ডলী। হযরত মুহাম্মদ (সা.)-বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী এবং রাসূল। তিনি মানুষের আলোর দিশারী। হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আবির্ভাবের সময় সমগ্র আরব জাহানে এক চরম অরাজকতা বিরাজ করছিল। গোত্রে গোত্রে কোন্দল, মারামারি, অহেতুক রক্তক্ষয় ছিল নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। ব্যভিচার, মদ্যপান, জুয়াখেলা, খুন, চুরি, ডাকাতি প্রভৃতি অপকর্মে সমাজে এক ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছিল। নারীদের অবস্থা ছিল অত্যন্ত করণ। কন্যা শিশু হত্যা করতেও তৎকালীন আরব পিতারা পিছপা হতো না। ঠিক এরকম এক ভয়াবহ অবস্থায় জন্মগ্রহণ করেন হযরত মুহাম্মদ (সা.)। মানুষের মুক্তি,শান্তি, শিক্ষা ও কল্যানের জন্য তিনি আজীবন সাধনা করেছেন। হযরত মুহাম্মদ (সা.)-সর্বগুণে গুণান্বিত একজন শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ মহামানব হজরত মুহাম্মদ (সা.)। ব্যক্তিজীবনে সমাজ ও রাষ্ট্রে একমাত্র তাঁর অনুকরণ –অনুসরণই দিতে পারে মুক্তির দিশা। আল্লাহতাআলা বলেন আল্লাহর রাসুলের মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ। তিনি মানবজাতির সর্বোচ্চ পূর্ণতায় অধিষ্ঠিত একমাত্র ব্যক্তি। (হে রাসুল) নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী।

নবুয়্যত প্রাপ্তির পর হযরত মুহাম্মদ (সা.)-ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে শুরু করেন। ইসলাম ধর্মের মূলবাণী হলো-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুল্লাহ অর্থাৎ এক আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই মুহাম্মদ তাঁর প্রেরিত রাসূল। এই মহাসত্য তিনি প্রচার করতে থাকেন। এই সত্য প্রচারের জন্য তাঁকে অনেক নির্যাতন সহ্য করতে হয়। মক্কার একদল বিপদগামী লোক তাঁকে হত্যার চেষ্টা করে। কিন্তু মহানবী ছিলেন নির্ভীক। কোনো বাধাই তাঁকে সত্যধর্ম প্রচার থেকে বিরত রাখতে পারেনি। ধর্ম প্রচারকালে তাঁর হাতে মহিলাদের মধ্যে বিবি খাদিজা (রা.)-ও পুরুষদের মধ্যে হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.)-সর্বপ্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন। এভাবে ইসলামের আলো ক্রমশ: চারদিকে ছড়িয়ে পড়লো। মহানবীর হিজরত ইসলামের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এর মাধ্যমে ইসলাম নতুন গতি ও নতুন শক্তি লাভ করে। মহানবী (সা.)-মুহাজির ও আনসারদের ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ করেন। মুহাজির অর্থ হিজরতকারী। মক্কা থেকে হিজরত করে যাঁরা মদিনায় যান তাঁদেরকে বলা হয় মুহাজির। মুহাজিরদের মদিনায় যাঁরা আশ্রয় ও সাহায্য-সহযোগিতা দিলেন তাঁরা হলেন আনসার। আনসার অর্থ সাহায্যকারী। মহানবী (সা.)-মদিনায় হিজরত করে একটি আদর্শ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হলেন। এখানে মুহাজির ও আনসারসহ সকল মুসলমান এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বী, ইহুদি, খ্রিস্টান ও অন্যান্য মতাদর্শের লোক একত্রে মিলেমিশে সুখে-শান্তিতে নিরাপদে বাস করবে। তাদের মধ্যে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় থাকবে এবং স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্মকর্ম পালন করতে পারবে। সঙ্গে সঙ্গে মদিনার নিরাপত্তাও নিশ্চিত হবে এই উদ্দেশ্যে তিনি সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি লিখিত চুক্তি সম্পাদন করেন। এটিই মদিনার সনদ নামে খ্যাত এবং এটিই পৃথিবীর সর্বপ্রথম লিখিত সনদ। মদিনার সনদ হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, কুটনৈতিক দূরদর্শিতা, ধর্মীয় সহিষ্ণুতা এবং সুন্দর সমাজ গঠনের এক জ্বলন্ত স্বাক্ষর বহন করে।

হযরত মুহাম্মদ (সা.)-দশম হিজরীতে মক্কায় হজ্ব পালনের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এটা ছিল তাঁর জীবনের শেষ হজ্ব। তিনি এরপর আর হজ্ব করার সুযোগ পাননি। তাই একে বিদায় হজ্ব বলে। প্রায় একলক্ষ মুসলমান এতে যোগ দিয়েছিলেন। আরাফাত ময়দানে পর্বতের চূড়ার ওপর দাঁড়িয়ে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে মর্মস্পর্শী যে ভাষণ দিয়েছিলেন, ইতিহাসে তা স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। এখানে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-ঘোষণা করলেন মুসলমান সবাই একে অন্যের ভাই। ইসলাম জাতিগত, বর্ণগত, সম্পদগত বা বংশগত মর্যাদায় ছোট বড় ভেদ নেই। সংসারে নারী ও পুরুষের সমান অধিকার। তাদের একের ওপর অপরের সমান দাবি রয়েছে। দাস-দাসীদের প্রতি তাদের প্রভুদের যথেষ্ট কর্তব্য আছে। প্রভু যা খায়, দাস-দাসীদেরকেও তা খাওয়াতে হবে এবং প্রভু যেমন কাপড় পরে, দাস-দাসীদেরকেও সে রকম কাপড় পরতে দিতে হবে। প্রিয় নবীজি (সা.)-শত নামে পরিচিত। তিনি মুহাম্মদ, আহমাদ, মুজ্জাম্মিল, মুদ্দাচ্ছির, ইয়াসিন, ত্বহ্, রউফ, রহিম ও রহমাতুল্লিল আলামিন। আল্লাহ সুবহানাহুওয়াতাআলা কোরআন কারিমে ঘোষণা করেন অবশ্যই তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের নিকট এক রাসুল এসেছেন। তোমাদিগকে যাহা বিপন্ন করে তা তাঁর জন্য কষ্টদায়ক। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের প্রতি তিনি দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। অতঃপর তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে আপনি বলুন আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট তিনি ব্যতীত অন্য কোনো ইলাহ বা মাবুদ নাই। আমি তাঁরই ওপর নির্ভর করি এবং তিনি মহা আরশের অধিপতি। (সুরা-৯ তাওবাহ,আয়াত : ১২৮-১২৯)। আল্লাহর বিশেষ রহমত মহানবীর দুনিয়ায় আগমন। নবী করিম (সা.)-এর আবির্ভাবে মানুষের ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও সমগ্র বিশ্ব পরিণত হয় এক বেহেশতি পরিবেশে। তাই তো আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেনহে নবী (সা.)! আমি আপনাকে পাঠিয়েছি বিশ্বজগতের জন্য শান্তি ও রহমতস্বরূপ। (সুরা আম্বিয়া : ১০৭)

উত্তর দিচ্ছেন: ফখবুল ইসলাম নোমানী, ইসলামি গবেষক ও কলামিসট


বিভাগ : ইসলামী প্রশ্নোত্তর


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

চাচাত ভাইয়ের মেয়ে কে বিবাহ করা প্রসঙ্গে।
প্রশ্ন: যুদ্ধ যুদ্ধবন্দীদের প্রতি ইসলামের নীতি কি?
কেজির মাপে গরু কিনে সেই পশু দিয়ে কোরবানী করা প্রসঙ্গে?
সিগারেট বা মাদকদ্রব্য গ্রহণ করলে ৪০ দিনের ইবাদত কবুল না হওয়া প্রসঙ্গে।
ইসলামে পাঁঠার গোশত খাওয়া প্রসঙ্গে।
আরও

আরও পড়ুন

কর্মস্থলে অনুপস্থিত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা

কর্মস্থলে অনুপস্থিত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা

ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ৮৮৬

ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ৮৮৬

রাজশাহীর বাঘায় আম বাগানে যুবকের লাশ

রাজশাহীর বাঘায় আম বাগানে যুবকের লাশ

মতামত গ্রহণে ওয়েবসাইট চালু করেছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন

মতামত গ্রহণে ওয়েবসাইট চালু করেছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন

ওরেশনিক সমগ্র ইউরোপে হামলা করতে পারে: রুশ কমান্ডার

ওরেশনিক সমগ্র ইউরোপে হামলা করতে পারে: রুশ কমান্ডার

দানে পাওয়া কাপড়ের মনোরম ডিজাইনে ভাইরাল ভারতীয় একদল ডিজাইনার

দানে পাওয়া কাপড়ের মনোরম ডিজাইনে ভাইরাল ভারতীয় একদল ডিজাইনার

কেমন হল ভিভো ভি৪০ লাইটের অভিজ্ঞতা!

কেমন হল ভিভো ভি৪০ লাইটের অভিজ্ঞতা!

তাদের রাজনীতি করতে দেবে কি-না তা দেশের মানুষই সিদ্ধান্ত নেবে: জামায়াতে সেক্রেটারি

তাদের রাজনীতি করতে দেবে কি-না তা দেশের মানুষই সিদ্ধান্ত নেবে: জামায়াতে সেক্রেটারি

উত্তরায় হাসপাতালে সন্ত্রাসী হামলাও লুটপাটের ঘটনায় থানায় মামলা

উত্তরায় হাসপাতালে সন্ত্রাসী হামলাও লুটপাটের ঘটনায় থানায় মামলা

পাকিস্তানে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় নিহত ৩২

পাকিস্তানে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় নিহত ৩২

আল্লাহকে পেতে হলে রাসুলের পথ অনুসরণ অপরিহার্য: মাওলানা রুহুল আমিন খান

আল্লাহকে পেতে হলে রাসুলের পথ অনুসরণ অপরিহার্য: মাওলানা রুহুল আমিন খান

ঢাকাবাসীকে নিরাপদ রাখতে হবে : ডিএমপি কমিশনার

ঢাকাবাসীকে নিরাপদ রাখতে হবে : ডিএমপি কমিশনার

ভোটের মাধ্যমে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আমাদের ঐক্যবন্ধ থাকতে হবে-লুৎফর রহমান আজাদ

ভোটের মাধ্যমে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আমাদের ঐক্যবন্ধ থাকতে হবে-লুৎফর রহমান আজাদ

গফরগাঁওয়ের বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ আবদুছ ছালামের ইন্তেকাল

গফরগাঁওয়ের বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ আবদুছ ছালামের ইন্তেকাল

আওয়ামী দোসররা মানুষের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে: তানভীর হুদা

আওয়ামী দোসররা মানুষের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে: তানভীর হুদা

ফিলিস্তিনিদের জন্য কোটি টাকার সহায়তা নিয়ে মিশরে পৌঁছেছে হাফেজ্জী চ্যারিটেবল

ফিলিস্তিনিদের জন্য কোটি টাকার সহায়তা নিয়ে মিশরে পৌঁছেছে হাফেজ্জী চ্যারিটেবল

১৭টি বছর শ্রমিকদলের নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতন করেছে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা- কেন্দ্রীয় সভাপতি

১৭টি বছর শ্রমিকদলের নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতন করেছে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা- কেন্দ্রীয় সভাপতি

বিএনপি যতই চাপ দিক, সংস্কারের ওপর ভিত্তি করেই নির্বাচন: উপদেষ্টা নাহিদ

বিএনপি যতই চাপ দিক, সংস্কারের ওপর ভিত্তি করেই নির্বাচন: উপদেষ্টা নাহিদ

ছয় বছর পর স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের মুখোমুখি পাকিস্তান

ছয় বছর পর স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের মুখোমুখি পাকিস্তান

তারেক রহমান ও কায়কোবাদের মামলা প্রত্যাহার না করলে অনশনসহ কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ার হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের

তারেক রহমান ও কায়কোবাদের মামলা প্রত্যাহার না করলে অনশনসহ কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ার হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের