মাহে রমজান : ফজিলত ও করণীয়
০৭ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:১৫ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৩:০৮ পিএম
ইসলামের মূল স্তম্ভসমূহের মধ্যে ঈমান, নামায ও যাকাতের পরই রোযার স্থান। হাদীস শরীফে এসেছে- ‘পাঁচটি স্তম্ভের উপর ইসলামের ভিত্তি স্থাপিত : আল্লাহ তাআলা এক বলে স্বীকার করা, নামায কায়েম করা, যাকাত প্রদান করা, রমযানের রোযা রাখা ও হজ্জ পালন করা।’ সহীহ মুসলিম ১/৩২। সুতরাং রমযানের পূর্ণ মাস রোযা রাখা ফরয। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- (তরজমা) ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর (রমযানের) রোযা ফরয করা হয়েছে, যেভাবে তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতের উপর ফরয করা হয়েছিল। যেন তোমরা মুত্তাকী হতে পার।’ (সূরা বাকারা : ১৮৩)। শরয়ী ওযর ছাড়া যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত একটি রোযাও পরিত্যাগ করে সে নিকৃষ্ট পাপী। দ্বীনের মৌলিক ফরয লংঘনকারী এবং ঈমান ও ইসলামের ভিত্তি বিনষ্টকারীরূপে সে পরিগণিত হবে। আর এ কাজ সে রোযার যে মঙ্গল ও বরকত থেকে বঞ্চিত হবে তা কস্মিণকালেও পাবে না। এমনকি এ রোযার কাযা করে নিলেও তা ফিরে পাবে না। হাদীস শরীফে এসেছে ‘যে ব্যক্তি কোনো ওযর বা অসুস্থতা ব্যতিরেকে রমযানের একটি রোযা পরিত্যাগ করবে সে যদি ওই রোযার পরিবর্তে আজীবন রোযা রাখে তবুও ঐ এক রোযার ক্ষতি পূরণ হবে না।’ (জামে তিরমিযী, হাদীস ৭২৩)। অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় এই যে, আমাদের সমাজে অনেক সবল-সুঠাম দেহের অধিকারী ব্যক্তিও অকারণে, সামান্য ছুতায় অসুস্থ হওয়ার অমূলক আশংকায় রোযা পরিত্যাগ করে। এতে তারা আখেরাতের কত বড় ক্ষতি নিজের উপর টেনে নিচ্ছে তা একটু ভেবেও দেখে না।
রোযার অর্থ : রোযা একটি ফারসী শব্দ। এর আরবী হল ‘ছওম’। ছওম এর আভিধানিক অর্থ বিরত থাকা। শরীয়তের পরিভাষায় ‘জ্ঞানবুদ্ধি সম্পন্ন মুসলমানের উপর সুবহে সাদিক তথা দিনের একেবারে শুরু ভাগ থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোযার নিয়তে পানাহার, স্ত্রী সহবাস ও রোযাভঙ্গকারী অন্যান্য কার্যাদি থেকে বিরত থাকার নামই হল ‘সওম’ বা ‘রোযা’।’ রোযা এমন একটি ইবাদত যা বাহ্যত কষ্টকর হলেও তার প্রচলন ছিল সর্বকালে। হযরত আদম আ.-এর যুগ থেকে শেষ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত সকল নবীর উম্মতের উপরই তা ফরয ছিল। -রূহুল মাআনী ২/৫৬। অবশ্য পূর্ব যুগে রোযার ধরন ছিল বিভিন্ন প্রকৃতির। রোযা রাখার পদ্ধতির ভিন্নতা ছাড়াও ফরয রোযার সংখ্যাও বিভিন্ন রকম ছিল। প্রাথমিক অবস্থায় উম্মতে মুহাম্মদীর উপরও কেবলমাত্র আশুরার রোযা ফরয ছিল। রমযানের রোযার ফরয বিধান আসার পর আশুরার রোযা ফরয হওয়ার হুকুম রহিত হয়ে যায়। -মাআরিফুস সুনান ৫/৩২৩। উল্লেখ্য, রোযা ফরয হয় হিজরতের দেড় বৎসর পর, ১০ শাবানে। রোযা ফরয হওয়ার পর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মোট ৯টি রমযান পেয়েছিলেন। রোযার হেকমত তথা অন্তনির্হিত তাৎপর্য সম্পর্কে আলোচনার পূর্বে একটি কথা ভালোভাবে জানা থাকা দরকার। তা এই যে, মহিয়ান গরিয়ান আল্লাহ তাআলা ও মানুষের মাঝে সম্পর্ক হল মহান স্রষ্টা ও ক্ষুদ্র সৃষ্টি এবং মহা মুনিব ও সাধারণ দাসের সম্পর্ক। এ সম্পর্কের সুস্পষ্ট দাবি হল, সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী বিশ্ব প্রতিপালক স্রষ্টার যে কোনো নির্দেশ পালন করতে মানুষ সর্বদা প্রস্ত্তত থাকবে। ঐ নির্দেশের হেকমত (তাৎপর্য) তার বুঝে আসুক আর নাই আসুক। সুতরাং মহান আল্লাহ তাআলা যত প্রকার ইবাদতের নির্দেশ দিবেন সেগুলোর কোনো কারণ বা তাৎপর্যের পিছনে না পড়ে তৎক্ষণাৎ নতশিরে তা মেনে নেওয়াই হচ্ছে বান্দার দায়িত্ব। বলাবাহুল্য, শরীয়ত নির্দেশিত কোনো ইবাদতই তাৎপর্যহীন বা যুক্তিবিরোধী নয়। তবে সব কিছুর যুক্তি বা হেকমতই যে বান্দার জানা থাকবে বা বান্দার জ্ঞান-বুদ্ধি তাকে স্পর্শ করতে পারবে এমনটি ভাবা ঠিক নয়। কারণ আল্লাহ তাআলা বান্দাকে অতি সামান্য জ্ঞানই দান করেছেন। ইরশাদ হয়েছে- ‘তোমাদেরকে অতি সামান্য জ্ঞানই দান করা হয়েছে।’-সূরা আলইমরান ৮৫।
আল্লাহ রাববুল আলামীনের নির্দেশনসমূহে কত হেকমত, কত কারণ এবং কত উদ্দেশ্যই থাকতে পারে, বান্দার কত কল্যাণই তাতে নিহিত থাকতে পারে। অসীম জ্ঞানের অধিকারী সে স্বত্তার নির্দেশনসমূহ তাৎপর্য সসীম জ্ঞানসম্পন্ন মানুষ কতই বা বুঝতে পারবে! তবুও ইসলামী পন্ডিতগণ বিভিন্ন ইবাদতের বিভিন্ন ধরনের হেকমত বর্ণনা করেছেন। রোযার ব্যাপারেও বিভিন্ন হেকমতের কথা তাঁরা বলেছেন। যদিও শরীয়তের নির্দেশ মান্য করা এ সকল হেকমত বুঝে আসার সাথে সম্পর্কিত নয় তথাপি সম্মানিত পাঠকমন্ডলীর কৌতুহল নিবারণের উদ্দেশ্যে নি¤েœ রোযার দু’একটি হেকমত সম্পর্কেও আলোকপাত করা হল।
‘আল্লাহ তাআলা মানুষের স্বভাবে যে ফেরেশতা সুলভ বৈশিষ্ট্য চরিত্র গচ্ছিত রেখেছেন, তার উন্নতি ও উৎকর্ষসাধন এবং নফস ও প্রবৃত্তির দমন ও নিবৃত্তির অন্যতম মাধ্যম হল রোযা। কানা’আত, আত্মশুদ্ধি, সবর ও শোকর, তাকওয়ার মতো বৈশিষ্ট্যগুলোর উন্নতি ও বিকাশে রোযার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। উপরন্তু রোযার মাধ্যমে মানুষ উদার ও প্রবৃত্তিরথ জৈবিক তাড়না হতে সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে ঊর্ধ্ব জগৎ তথা আপন স্রষ্টার সঙ্গে সম্পর্ক ও যোগসূত্র স্থাপনে সক্ষম হয়।
তাছাড়া নিরেট চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতেও প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য বছরের কিছু দিন অবশ্যই পানাহার বর্জন করা উচিত। এটি স্বাস্থ্যের জন্য বিশেষ উপকারী। তাই হিন্দু-খ্রষ্টান সকল সকল ধর্মেই রোযার মতো উপবাস করার প্রচলন রয়েছে। (যদিও ইসলামের রোযার সাথে সেসব উপবাসের পদ্ধতিগত বহু পার্থক্য রয়েছে)। -আরকানে আরবাআ : ২৬৪। (চলবে)
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
এক সপ্তাহে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার
প্রবাসীদের যে জন্য সুখবর দিলো মালয়েশিয়া
জাবি শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, তদন্ত কমিটি গঠন, ফটকে তালা, মশাল মিছিল
মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল
"নতুন সিনেমা নিয়ে ফিরছেন গ্লোবাল তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি"
ড. ইউনূসকে নিয়ে খালেদা জিয়ার পুরোনো যে বক্তব্য ভাইরাল
নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি ইসলামী আন্দোলনের শুভ কামনা
আলোচনায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার ‘টুস করে ফেলে দেয়ার’ হুমকি
দীর্ঘ ১৫ বছর সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে পারেনি: খোকন
'ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে অভিনেতা তারিক আনাম খানের নাটক'
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
দেশের বাজারে ফের বাড়ল সোনার দাম
সবচেয়ে কম মূল্যে বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ দিচ্ছে নেপাল: নেপাল রাষ্ট্রদূত