ঢাকা   শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
গত আলোচনার পর

অপচয়-অপব্যয়ে চরম অধঃপতন ও প্রতিকার

Daily Inqilab মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান

০৫ মে ২০২৩, ০৮:৩৬ পিএম | আপডেট: ০৬ মে ২০২৩, ১২:০১ এএম

ইমাম মুহাম্মদ বিন হাসান আশ-শায়বানী রহ. অপচয় ও অপব্যয়ের দৃষ্টান্ত দিয়েছেন এভাবে ‘তৃপ্ত হওয়ার পরে খাওয়া, বৈধ জিনিষ অতরঞ্জিত করা, প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার টেবিলে রাখা, রুটির সাইড বাদ দিয়ে শুধু মাঝখান থেকে খাওয়া, রুটির যে অংশ ফুলে উঠে শুধু সেই অংশটুকু খাওয়া যেমনটি অনেক মূর্খ ব্যক্তিরা করে থাকে কোন লোকমা হাত থেকে পড়ে গেলে তা না উঠানো ইত্যাদি। ইমাম আবুল হাসান আল- মাওয়াদী রহ. বলেন ‘অপচয় হল, দুনিয়াতে কোন উপকার পাওয়া যায় না, আখিরাতে ও কোন প্রতিদান পাওয়া যায় না, এমন কাজে সম্পদ ব্যয় করা। এর মাধ্যমে সে শুধু দুনিয়াতে অপমান ও আখিরাতে পাপের অংশীদার হয়। যেমন বিভিন্ন হারাম কাজে বিশেষ করে মদ পানের জন্য, অশ্লীল কাজে, নির্বোধ ব্যক্তিকে, গায়ক-গায়িকা, কৌতুক ও অভিনেতাকে টাকা-পয়সা দেওয়া। যা কবীরা গুনাহ।

অপচয় হলো প্রয়োজন ছাড়াই বাড়ী নির্মান করা। অথচ সে ঐ বাড়ীতে বসবাস করবে না। অপচয় হলো খুব দামী বিছনা ক্রয় করা, স্বর্ণ রৌপ্যের আসবাবপত্র ব্যবহার করা। বাড়ীতে বিনা প্রয়োজনে অতিরিক্ত আসবাপত্র রাখা ইত্যাদি। তিনি আরও বলেন, ‘তবে যে ব্যয়ের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট প্রতিদান পাওয়া যায়, জ্ঞানী লোকের নিকট প্রশংসা পাওয়া যায় তা দান হিসাবে গণ্য হবে, অপচয় নয়। এর পরিমান যথই বেশী হোক না কেন। পক্ষান্তরে ইসলাম বহির্ভূকাজে ব্যয় করা, যার মাধ্যমে আল্লাহর নিকট পাপী হিসাবে আর জ্ঞানীর নিকট লাঞ্ছিত হিসাবে গণ্য হবে তাই অপচয় ও অপব্যয়, পরিমানে তা যতই কম হোক না কেন।’
নিঃসন্দেহে যেকোন প্রকার ধূমপান ও নেশা গ্রহন মানুষের জন্য বিধ্বংসী মারণাস্ত্র। কিন্তু ধূমপান ও নেশা জাতীয় দ্রব্যের বাজার এত সয়লাব হয়েছে, যে মুসলিম বিশ্বে ও মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের ব্যবস্থা হচ্চে এই ধ্বংসাত্মক নেশা জাতীয় দ্রব্যের মাধ্যমে। যদিও ইদানিং স্বাস্থ্য সচেনতার কারণে কিছু দেশে ধূমপানের পরিমান কমে এসেছে, কিন্তু উন্নত দেশ গুলোতে এর পরিমান বেড়েই চলছে। মুসলিম বিশ্ব এর থেকে পিছিয়ে নেই। এক জরিপে দেখা গেছে, এশিয়ার ৩০% লোক ধূমপান করে। যা আমাদেরকে ভাবিয়ে তোলে। আরব দেশগুলোতে প্রতি বছর মদের ব্যবসায় ৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়।

মানুষ তার প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার গ্রহন করলে হজম করতে পারে না। ফলে সে বদহজমীতে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। অতিভোজনের ফলে ভুরি বেড়ে যায়, চর্বি বৃদ্ধি পায়। এতে শ্বাসকষ্ট হয়। হার্ট এ্যাটাকের সম্ভাবনা ও থাকে। ডায়রিয়া ও হয়ে থাকে অতিভোজন ফলে। আর এভাবে মানুষ তার রোগ প্রতিরাগ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। মানসিকভাবেও সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। অনেক সময় মানুষ তার অব্যাসবশত অনেক জিনিষ ক্রয় করে থাকে, অথচ এগুলোতে তার কোন কাজ নেই। এর মাধ্যমে ব্যক্তি সমাজ এমনকি রাষ্ট্রও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। উদাহরনস্বরুপ বলা যায় অনেক মানুষ বোিশ দামে লাল আপেল ক্রয় করে অথচ পুষ্টির ক্ষেত্রে লাল আপেলের কোন বিশেষত্ব নেই। আবার বিভিন্ন কোম্পানী তাদের নতুন পণ্য বিক্রির জন্য বিভিন্ন ধোঁকার ও আশ্রয় নেয়, আর মানুষ ও বেশি দাম দিয়ে ক্রয় করে। এর মাধ্যমে ও অপচয় ও অপব্যয় হয়। বিভিন্ন বানিজ্যিক ঘোষনার মাধ্যমে ও মানুষকে ধোঁকায় নিমজ্জিত করা হয়।

যেমন ১০টি পন্য একসাথে কিনলে ২০০ টাকার প্রাইজবন্ড। এ ক্ষেত্রে যে ব্যক্তির দশটি পণ্যের প্রয়োজন নেই সেও দশটি পণ্য ক্রয়ের মাধ্যমে অপচয়ে লিপ্ত হয়ে পড়ে। দৈনন্দিন ফ্যাশনের পনিবর্তন ও বিভিন্ন পণ্যের উদ্ভোবনের মাধ্যমে মানুষ সবচেয়ে বেশি অপচয়ে লিপ্ত হচ্ছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, এসব দৈনন্দিন পরিবর্তন ফ্যাশন তাদের মনে কোন বিরূপ প্রতিক্রয়া সৃষ্টি করছে না। বরং ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে তারা অংশগ্রহন করে যাচ্ছে। আর তাদের মনে এই বিষ ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে যে, এই সব অত্যাধুনিক আসবাপত্র গ্রহন না করাটা আধুনিকায়ন ওপ্রগতিশীলতায় বিরোধিতা করে পিছনের দিবে ফিরে যাওয়ার নামান্তর। এই ফ্যাশন বেশি আক্রান্ত হয়েছে নারীরা। যেমন নিত্য নতুন গাড়ির চাহিদা, নিত্য নতুন মোবাইল, আরো বিভিন্ন উন্নত আসবাবপত্রের আবিষ্কার হচ্ছে। যার মাধ্যেমে মানুষ অপচয়ের নিমজ্জিত হচ্ছে। বিশেষ করে ধনী শ্রেনীরা যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য তারা প্রতিনিয়ত এসব জিনিস ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ার পূর্বেই পরিত্যাগ করছে। বস্তুত এগুলো একদিকে অপচয়, অন্যদিকে অবকাঠামো ধ্বংস করা। অপচয় ও অপব্যয়ের যে ক্ষতিকর দিকগুলো রয়েছে সেগুলো ব্যক্তি, পরিবার. সমাজ, রাষ্ট্র,এমনকি আর্ন্তজাতিক ভারসাম্যকে হুমকির মুখে ফেলে। অযথা খরচ দুনিয়ার ব্যবস্থাপনাকে যেমন বিশৃঙ্খল করে, তেমন ব্যক্তির আখিরাতকেও নষ্ট করে। নিম্নে অপব্যয় ও অপটয়ের কিছু ক্ষতিকর দিক তুলে ধরা হলো, অপচয়ের জন্য মানুষ উপরি ইনকামের প্রতিঝুকে পড়ে। এ জন্য মানুষ অবৈধ পন্থা অবলম্বন করতেও দ্বিধাবোধ করে না। এর মাধ্যমে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র অর্থনৈাতকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নবী স. বলেছেন, ‘প্রত্যেক ঐ শরীর যা হারাম দ্বারা গঠিত, তারা জন্য জাহান্নামই উপযুক্ত।

অপচয়ের মাধ্যমে মানুষ হঠাৎ করে যে কোন কাজ করে বসে, পরিণতির প্রতি চিন্তা করে না। মানুষ তার উপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারে না, আর এর পরিণতি হয় অত্যন্ত ভতয়াবহ, যা মানুষকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেয়। আর হিংসাহ বদ্বেষে অন্তর পরিপূর্ণ হয়ে যায়। অপচয়ের মাধ্যমে মানুষ বিভিন্ন পাপ কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে। সে তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আল্লাহর অবাধ্যতায় ব্যবহার করে এবং তার আনুগত্য থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। সে মনে মেনও অনেক পাপের বিষয় গোপন করে রাখে, করন মানুষ পেটপুরে খেলেই সেখানে শয়তান অবস্থান গ্রহন করে। এ জন্য নবী সা. কলেছেন: আদম সন্তান তার পেটের তুলনায় অন্য কোন খারাপ পাত্র ভর্তি করে না। মানুষের জন্য তো কয়েক লোকমা খাদ্যই যথেষ্ট, যা তার মেরুদ- সোজা করে রাখেন। আর যদি একান্তেই প্রয়োজন হয়, তাহলে পাকস্থলীর এক- তৃতীয়াংশ খাদ্য, এক-তৃতীয়াংশ পানীয় আর এক-তৃতীয়াংশ নিশ্বাসের জন্য রাখবে।’ পরিবেশের অবক্ষয়ের জন্য অপচয় অন্যতম প্রধান দায়ী। (চলবে)


বিভাগ : ইসলামী জীবন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলামের অবদান
যুগে যুগে জুলুম ও জালিমের পরিণতি
দোয়া কবুল হওয়ার শ্রেষ্ঠ সময়সমূহ
দুর্ভিক্ষ, বিপর্যয় কেন আসে
জনসাধারণের খোঁজ-খবর নেয়া শাসকের নৈতিক দায়িত্ব
আরও

আরও পড়ুন

বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ

বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ

কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার

কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস

গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস

শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে

শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে

চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক

চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক

পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া

পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া

ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব

ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব

লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল

ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল

‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’

‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’

প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের

প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের

প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া

প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া

মুসলিম চিকিৎসক

মুসলিম চিকিৎসক

শীর্ষে দিল্লি

শীর্ষে দিল্লি

সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা

সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা

ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা

ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা

বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান

বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান