অপচয়-অপব্যয়ে চরম অধঃপতন ও প্রতিকার
১২ মে ২০২৩, ০৮:৩৫ পিএম | আপডেট: ১৩ মে ২০২৩, ১২:০২ এএম
অপচয় বিভিন্ন প্রকার হলেও এর ক্ষতিকর প্রভাব একই, আর তা হল ক্ষেতে-খামারে ও ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশের চরম অধঃপতন। সৌখিনতা মানুষকে বিলাসী করে তোলে, যা মানুষের খারাপ কাজে অগ্রগামী করে। সে সংগ্রামে ও ত্যাগের মানসিকতা সপরিত্যাগ করে। যা মূলত অপচয়ের ফলাফল। অপচয় হল মূলত প্রবৃত্তির অনুসরণ। প্রবৃত্তি যা আদেশ করে সে তাই করে। প্রবৃত্তি যা নিষেদ করে তা সে করে না। এক্ষেত্রে আল্লাহর এই বাণীর অনুসরণেই বুদ্ধিমানে কাজ, আর তুমি অপব্যয় করো না।
যে ব্যক্তি এক মাসের খরচ এক দিনে ব্যয় করবে, তাকে করে চলবে সে প্রশান্ত চিত্তে দিনে কাটাতে পারবে। অপচয়ের মাধ্যমে মানুষ অন্যদের প্রতি যতœহীন হয়ে পড়ে। তবে সে তখনই টের পায় যখন সে সংকীর্ণতার সম্মুখীন হয়। যেমন ইউসুফ আ. থেকে বর্ণিত আছে, তাকে জিজ্ঞাসা করা হল যে, আপনি তো কখনো পরিতৃপ্ত হয়ে খান না? তিনি বললেন, আমি যদি পরিতৃপ্তি হয়ে খাই তাহলে ক্ষুধা কী জ্বালা তা আমি ভুলে যাব। অপচয়কারী তো আল্লাহর নিয়ামত সম্পর্কে ভুলে থাকে, সে কিভাবে অন্যদের প্রতি গুরুত্ব দিবে?
মুসলিম উম্মাহর ইতিহাসের পানাহারের বিষয়ের পুরাতন। পানাহার-এর বিষয়ে কুরআন, সুন্নাহ, ফিকহ্-এর বিধানই মুসলিমদের অনুসরণ করতে হবে। এমনকি ফিকহের কিতাবগুলো খাদ্য ও পানীয়ের জন্য আলাদা করে অধ্যায় রচিত হয়েছে। সেখানে হারাম খাদ্য নিষেদ করা হয়েছে, খাদ্যের আদব রক্ষা করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমান যুগে পানাহার অতিভোজন ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। আর এভাবেই খাদ্য পানীয়ের কোম্পানীগুলো অর্থ ধ্বংস করে চলছে। অতিভোজনের জন্য বিভিন্ন হোটেলে রেষ্টুরেন্ট খোলা হচ্ছে। দুদিন পর নানা রকমের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। বাস্তবাদী ধ্যান-ধারণায় পুষ্ট লোকদের অন্ধ অনুকরনের পিছনে মুসলিমরা ও ছুটে চলছে। অধিকাংশ মানুষের জীবনই অনুষ্টান ও পেক্ষাপটে অপচয় করাটাই অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। এমনকি আমাদের অনুষ্ঠানগুলো ব্যয়বহুল আর আমাদের রমজান মাস ইবাদত ও তাহজ্জুদের পরিবর্তে অপচয়ের মৌসুমে পরিণত হয়েছে।
মানুষ তার জীবনে চলার পথে গুরুত্বপূণ দায়িত্বসমূহ পালন করে থাকে। যেমন, আল্লাহর ইবাদত, পৃথীবি বসবাসযোগ্য করে গড়ে তোলা ও সেখানে কল্যান ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত কর, এজন্যই সে খাদ্যের প্রতি মুখাপেক্ষী। যাতে করে সে বড় হয় জীবন ধারণ করতে পারে চলাফেরা ও কাজ কর্ম করতে পারে। এ জন্য সে পানীর প্রয়োজন বোধ করে। যেহেতু পানী ছাড়া মানুষ বেশি দিন বাচঁতে পারে না সেহেতু বেচেঁ থাকার তাগিদেই সে পানাহারের প্রতি মুখাপেক্ষী। ঠিক তদ্রুপ বিভিন্ন প্রকারের খাদ্য পরিমান মতো গ্রহন করা মানুষের জীবনের বিভিন্ন পর্যায়কে শক্তিশালী ও সুস্থতা দান করে। আবার একই খাদ্য গ্রহন করা মানুষের স্বভাব বিরুদ্ধ। এজন্য বিভিন্ন প্রকারের খাদ্য তাকে গ্রহন করতে হয়। যেমন, পানীয়, সুগার, প্রোটিন, তেল, চর্বি ভিটামিন সহ বিভিন্ন খনিজ দ্রব্য।
সুতরাং মানুষের ক্ষুধা ও পিপাসা নিবারণে যতটুকু পানাহারের প্রয়োাজন ততটুকু গ্রহন করাই বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক, আর শরীয়ত তাই অনুমদন দেয়। জনাব মহিউদ্দিন মাস্তু বলেছেন, “ অতিভোজন যেমন রোগের জন্ম দেয় ঠিক তেমনি একেবারে খাদ্য গ্রহন না করা রোগের জন্ম দেয় ও ইবাদতে অলসতা সৃষ্টি করে। আর পানাহারের মধ্যম পন্তা অবলম্বন করা অন্তরকে শান্তি প্রদান করে। সুতরাং পানাহারের ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করাই যুক্তিযুক্ত।” নবী স: ও খাদ্যের ব্যাপারে মধ্যমপন্থা অবলম্বনের জন্য উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেন, কাফির ব্যক্তি খায় সাত পেটে আর মুমিন ব্যক্তি খায় এক পেটে। আর এতে অনেক উপকার বিদ্যমান, যেমন, সুস্থতা সুন্দর বোধশক্তি, প্রখর মুখস্থ শক্তি, অল্প ঘুম হালকা শরীল ইত্যাদি। এজন্যই বিজ্ঞানীরা বলেন সবচেয়ে বড় ঔষুধ হলো পরিমান মত খাদ্য গ্রহন করা। পক্ষান্তরে অতিরিক্ত পানাহার মানুষকে সম্পদ অপচয়ে বাধ্য করে, তার চিন্তা চেতনা সর্বদাই খাদ্যকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে। আলী রা, বলেন “যতটুকু খাদ্য দ্বারা ধনীরা বিলাসিতা করে ততটুক খাদ্যই গরীবের ক্ষুধা বৃদ্ধি করে। বলা হয়ে থাকে “অতিভোজন বুদ্ধিমত্তাকে লোপ করে দেয়। ওমর রা: বলেন, তোমরা অতিভোজন থেকে বিরত থাকো, কেননা তা সালাতে অলসতা সৃষ্টি করে, শরীরকে অসুস্থ করে দেয় এবং তোমরা পানহারের ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বন কর।
কেননা তা ক্ষতি থেকে দূরে রাখে, শরীরের সুস্থতা বৃদ্ধি করে, ইবাদতে শক্তি যোগায়। নিশ্চয় কোন ব্যক্তি তার দীনের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করার পূর্বে তার ধ্বংস হবে না। উমার ইবনু হুবাইরা র, রোমের বাদশাহকে জিজ্ঞাসা করল, তোমাদের মধ্যে তোমরা আহমক হিসেবে মনে কর? রোমের বাদশাহ উত্তরে বললেন. যে ব্যক্তি সামনে যা পায় তাই দিয়ে পেট পূর্ণ করে। ফারকাদ রহ. তার সাথীদের লক্ষ্য করে বলতেন,তোমরা খাওয়ার সময় লুঙ্গী বেধে বসবে লোকমা ছোট করবে, চিবিয়ে খাবে পানী পান করবে, তোমাদের কেউ যেন লুঙ্গী ঢিলে করে না বসে তাহলে তার পেট বড় হয়ে যাবে, আর তোমরা তোমাদের সামনে থেকে খাবে। এ ব্যাপারে সকল চিকিৎসক এক মত যে, রোগের প্রধান কারণ হলো খাওয়ার উপরে খাওয়া। এজন্য ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম জাওযিয়্যাহ রহ, তার বিখ্যাত গ্রন্থ “আত-তিব্ আন-নবাবী ” গ্রন্থে খাদ্যের তিনটি স্থর নির্ধারন করেছেন :
১ম স্তর : প্রয়োজনীয় পরিমান; ২য় স্তর : এমন পরিমান যা যথেষ্ট; ৩য় স্তর : অতিভোজন। কিন্তু দুঃখজনক হলে সত্য যে, রমযান মাসে আমাদের পরিবারে খরচ বৃদ্ধি পায়। এমনকি এই মাসে অতিভোজনের কারনে অনেকের বদহজমিও হয়। আল- হাসান রা, থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন একদিন উমর রা. তার ছেলে আব্দুল্লাহ রা.-এর ঘরে প্রবেশ করে তার সামনে কিছু গোশত দেখতে পেলেন। এসময় তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন এই গোশত কেন? আবব্দুল্লাহ বললেন, গোশত খেতে মন চেয়েছে, তাই। উমর রা. বললেন, কোন জিনিষের প্রতি আশক্তি হলেই কি তোমাকে তা খেতে হবে? কোন ব্যক্তির জন্য অপচয় করাটা এতটুকু যথেষ্ট যে, তার মন যা চাইবে তাই সে খাবে। (চলবে)
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস
শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া
ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল
‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’
প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের
প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া
মুসলিম চিকিৎসক
শীর্ষে দিল্লি
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান