ঢাকা   শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা সফলতার সোপান

Daily Inqilab আইয়ুব আল আনসারী

০৯ জুন ২০২৩, ০৭:৪৯ পিএম | আপডেট: ১০ জুন ২০২৩, ১২:০৩ এএম

আইয়ামে জাহেলিয়া যুগে যে মানুষগুলোর জীবন ছিল অন্যায় ,অবিচার ,দুর্নীতি আর অসৎ কাজে পরিপূর্ণ। আর সে মানুষগুলোই ইসলামের ছোঁয়া পেয়ে হয়ে গেলেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ। ইসলামের পূর্ব যুগে যে কাজগুলো তাদের নিত্যনৈমিত্তিক ছিল। ইসলামের ছায়াতলে এসে সে কাজগুলো হলো তাদের কাছে সবচেয়ে ঘৃণিত। কি ছিল তাদের পরিবর্তনের কারণ? কেনইবা তাদের পক্ষে অসৎ কাজে জড়ানো অসম্ভব ছিল! কি এমন শিক্ষা তাদেরকে বাস্তব জীবন উপলব্ধি করার সুযোগ করে দিয়েছে?

আজকের দিনে ও কোন জাতি যদি সেই শিক্ষায় শিক্ষিত হয় । তার পক্ষে ও অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে অসৎকাজে তার জীবন পরিচালনা করা। সে শিক্ষাব্যবস্থা ভিনগ্রহের কোন শিক্ষা ব্যবস্থা নয়। যার সাথে আমাদের প্রতিনিয়ত দেখা-সাক্ষাৎ হয়ে থাকে। কিন্তু আমরা তাকে উপলব্ধি করতে পারিনা। পারিনা ধৈর্য নিয়ে তার প্রবর্তকের কথাগুলো হৃদয়ঙ্গম করতে। সেই শিক্ষাব্যবস্থা নাম ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা। এই শিক্ষাব্যবস্থা মানুষকে জানিয়ে দেয় তার জীবনের চূড়ান্ত সাফল্য নির্ভর করে দুনিয়ার কাজকর্মের ভিত্তিতে আখেরাতের সাফল্যের উপর।দুনিয়ার স্বল্পতম সময়ে অবস্থানের জন্য আল্লাহ যে হেদায়াত (আল কুরআন) ও সত্য দ্বীন (আল ইসলাম) দিয়েছেন তার ভিত্তিতে জীবন যাপন করেই এই চূড়ান্ত সাফল্য পাওয়া যাবে। দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ ও সাফল্য লাভের জন্য যার মন সদা প্রস্তুত তার পক্ষে কল্যাণ ধারা ছাড়া অন্যপথে চলা অসম্ভব। ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা মূলত প্রস্তুতি ও প্রতিষেধকমূলক ব্যবস্থার কথা শিক্ষা দেয়। এটি জানিয়ে দেয় মানুষের আত্মার তিন অবস্থার কথা। নফসে আম্মারা (প্ররোচনাকারী ষের মনে আত্মা), নফসে লাওয়ামা (অনুশোচনাকারী আত্মা) এবং , মেধা, নফসে মুৎসাইন্না (প্রশান্ত আত্মা)। এটি জানিয়ে দেয় আত্মাকে বিকশিত করে প্রশান্ত আত্মার অধিকারী সুন্দরতম মানুষে পরিণত হওয়ার জন্য, যে আত্মা অভাব-অনটনে হক্-নাহকের পার্থক্য করতে পারবে, কঠিন বিপদের মাঝেও ধৈর্য ধারণ করবে, অত্যাচারীর চরম নির্যাতনও তাকে অন্যায়কে গ্রহণ করতে বাধ্য করতে পারবে না। রাসূলে আকরাম সা. মানবতার শিক্ষক হিসেবে এই পৃথিবীতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘আমাকে শিক্ষক করে প্রেরণ করা হয়েছে।’ পৃথিবীবাসীকে যে প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা দিয়েছিলেন তাতে অন্যতম ছিল ‘তিনি তাদেরকে আল্লাহর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে শোনান, সংশোধন করেন। আর কিতাব ও হিকমাহ শিক্ষা দেন।’ অর্থাৎ তাজকিয়ায়ে নফস্ বা আত্মার পরিশুদ্ধি এর একটি বড় কাজ। তার শিক্ষায় আত্মশুদ্ধ মানুষেরা ছিল সম্পূর্ণ নতুন এক প্রজন্ম। আরবরা তাদের চিনেও যেনো চিনতে পারছে না। এরা এমন এক প্রজন্ম-, অসৎকাজে জড়ানো এদের জন্য ছিল অকল্পনীয় বিষয় । নবী করিম সা.-এর সাহচর্য, নির্দেশনা, শিক্ষকতার মাধ্যমে দুনিয়ার রং পাল্টে দেয়ার নতুন ইতিহাস রচনার একদল মানুষ তৈরি হয়েছিল। এরাই উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ ছাত্র। রাসূলের প্রতিটি কথাকে তারা কত শ্রদ্ধার সাথে তুলে ধরতেন তা বিস্ময়কর। এ শিক্ষাব্যবস্থায় জন্ম নিয়ে মানুষ তৈরি হয়েছে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী সোনার মানুষ। যারা দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, আত্মসাৎ, আমানতের খেয়ানত, ঘুষ, জোরপূর্বক অর্থ আদায়, আয় ও ব্যয়ের হারাম পথে পদার্পণ কখনোই তাদের জীবনে স্থান লভে করতে পারে না। বরং তাদের মনে কেবলই ভয় ‘ঘুষদাতা ও গ্রহীতা উভয়েই জাহান্নামি’, এরা ভয়ে অস্থির, ‘হায় উমর কেনো শুকনো খড় হলো না, তাহলে তো তাকে আর জবাব দিতে হতো না।’ আত্মসাৎ তো দূরের কথা দুধের শিশু ক্ষুধার তাড়নায় বাইতুলমালের আপেল থেকে একটি আপেল হাতে নিয়ে কামড় বসিয়েছে, অমনি খলিফা তার হাত থেকে তা কেড়ে নিয়ে বায়তুলমালে জমা দিলেন। এই হচ্ছে ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থার ইতিবাচক একটি আলেখ্য। যদি এরূপ বৈশিষ্ট্যম-িত একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন সম্ভব হয় তাহলেই সম্ভব হেরার রাজ তোরণ ধরে মুক্তির নয়া সড়কে পৌঁছা যেখানে দুর্নীতি বলতে কিছুই থাকবে না বরং থাকবে কেবল সুনীতি, সুশাসন এবং জবাবদিহিতামূলক যাবতীয় ব্যবস্থা।


বিভাগ : ইসলামী জীবন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলামের অবদান
যুগে যুগে জুলুম ও জালিমের পরিণতি
দোয়া কবুল হওয়ার শ্রেষ্ঠ সময়সমূহ
দুর্ভিক্ষ, বিপর্যয় কেন আসে
জনসাধারণের খোঁজ-খবর নেয়া শাসকের নৈতিক দায়িত্ব
আরও

আরও পড়ুন

কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার

কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস

গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস

শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে

শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে

চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক

চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক

পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া

পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া

ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব

ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব

লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল

ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল

‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’

‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’

প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের

প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের

প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া

প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া

মুসলিম চিকিৎসক

মুসলিম চিকিৎসক

শীর্ষে দিল্লি

শীর্ষে দিল্লি

সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা

সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা

ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা

ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা

বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান

বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান

মানসিক সুস্থতায় কর্মবিরতি

মানসিক সুস্থতায় কর্মবিরতি