ডাকুন বুদ্ধিমত্তার সাথে, বলুন সুন্দর ভাষায়
১৪ জুলাই ২০২৩, ০৮:১৬ পিএম | আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২৩, ১২:০১ এএম
ডাকতে থাকুন বুদ্ধিমত্তার সাথে আর বলতে থাকুন সুন্দর ও সাবলীল ভাষায়। রোগের সঠিক ঔষধ সঠিক জায়গায় প্রয়োগ করুন, যাতে তার রোগের প্রতিষেধক কার্যকরী প্রভাব ফেলে এবং সে শান্তি উপভোগ করতে পারে। রোগ না বুঝে যেনতেনভাবে যত্রতত্র ঔষধ প্রয়োগ করা হলে ব্যাথা-বেদনা আরো বেড়ে যেতে পারে এবং তার মধ্যে বিরুদ্ধ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। যে প্রতিক্রিয়ায় শয়তান এসে আরো লবণ মাখবে। সুন্দর ও হৃদয়গ্রাহী শব্দমালা প্রয়োগ করুন, যাতে সে আপনাকে আপন মনে করে। কখনো তিক্ত কথা বলবেন না, যতই তা যুক্তিগ্রাহ্য হোক।
আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, হে নবী! প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তা এবং সদুপদেশ সহকারে তোমার রবের পথের দিকে ডেকে যাও এবং লোকদের সাথে বিতর্ক করো সর্বোত্তম পদ্ধতিতে। তোমার রবই বেশী ভালো জানেন কে তাঁর পথচ্যুত হয়ে আছে এবং কে আছে সঠিক পথে। (সুরা নাহল : ১২৫) আয়াতে মানুষকে ডাকার বা দাওয়াত দানের দু’টি পদ্ধতি বিবৃত হয়েছে। এক, জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তার সাথে ডাকতে হবে। দুই. সুন্দর ও সদুপদেশের মাধ্যমে ডাকুন।
জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তার সাথে ডাকুন : জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তার মানে হচ্ছে, নির্বোধদের মত চোখ বন্ধ করে ডাকলে হবে না। বরং বুদ্ধি খাটিয়ে যাকে ডাকা হচ্ছে তার মন-মানস, যোগ্যতা ও অবস্থার প্রতি নজর রেখে এবং এ সংগে পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝে কথা বলতে হবে। একই লাঠি দিয়ে সবাইকে তাড়িয়ে নিয়ে গেলে হবে না। যে কোন যুক্তি বা দলের মুখোমুখি হলে প্রথমে তার রোগ নির্ণয় করতে হবে তারপর এমন যুক্তি প্রমাণের সাহায্যে তার রোগ নিরসনের চেষ্টা করতে হবে যা তার মন মস্তিস্কের গভীরে প্রবেশ করে তার রোগের শিকড় উপড়ে ফেলা যায়।
তবে সে জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তা হতে হবে সহজ-সরল, বোধগম্য ও সাবলীল। সত্যের দাওয়াতের সাফল্যের মূলমন্ত্র হচ্ছে, দাওয়াতদানকারীরা দার্শনিক তত্ব ও সূক্ষাতিসূক্ষè তত্বালোচনার পরিবর্তে লোকদেরকে এমনসব সহজ সরল সৎকাজের নির্দেশ দিবেন যা সবার কাছে সৎকাজ হিসেবে পরিচিত অথবা যাদের সৎকাজ হবার ব্যাপারটি বুঝার জন্য প্রত্যেক মানুষের সাধারণ জ্ঞানই যতেষ্ট হয়। এভাবে সত্যের আহবায়কের আবেদন সাধারণ-অসাধারণ নির্বিশেষে সবাইকে প্রভাবিত করে এবং প্রত্যেকটি শ্রোতার কান থেকে হৃদয় অভ্যন্তরে প্রবেশের পথ সে নিজেই তৈরী করে নেয়। এ ধরণের সৎকর্মের দাওয়াতের বিরুদ্ধে যারা প্রতিবাদের ঝড় তোলে এক সময় তারা ব্যর্থ হয় এবং দাওয়াতের সাফল্যের পথ প্রসস্ত হয়। কারণ সাধারণ মানুষ যতই বিদ্বেষ ভাবাপন্ন হোক না কেন যখন তারা দেখে যে, একদিকে সৎ ভদ্র ও উন্নত নৈতিক চরিত্রের অধিকারী এক ব্যক্তি সরল সহজভাবে সোজাসুজি সৎকাজের দাওয়াত দিচ্ছে এবং অন্যদিকে একদল লোক তার বিরোধীতায় নেমে এমন পদ্ধতি অবলম্বন করছে যা নৈতিকতা ও মানবতার সম্পূর্ণ পরিপন্থী তখন স্বাভাবিকভাবেই ধীরে ধীরে সত্য বিরোধীদের প্রতি তাদের মন বিরূপ হয়ে উঠতে থাকে এবং সত্যের আহবায়কের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যেতে থাকে। এ কর্মকৌশলের বদৌলতেই নবী সা : আরবে সাফল্য অর্জন করেন এবং তারপর মাত্র কিছুদিনের মধ্যে নিকটবর্তী দেশগুলোয় ইসলাম এমনভাবে বিস্তার লাভ করে যে সেখানে কোথাও মুসলমানদের সংখ্যা দাঁড়ায় শতকরা একশ ভাগ, কোথাও নব্বই ভাগ এবং কোথাও আশি ভাগ।
সুন্দর ও সদুপদেশের মাধ্যমে ডাকুন : দ্বিতীয় পদ্ধতিটি হচ্ছে, সুন্দর ও সদুপদেমের মাধ্যমে আহবান করা। সদুপদেশের দুই অর্থ হয়। এক, যাকে উপদেশ হচ্ছে তাকে শুধুমাত্র যুক্তি প্রমাণের সাহায্যে তুপ্ত করে দিয়ে ক্ষান্ত হলে চলবে না বরং তার আবেগ-অনুভূতির প্রতিও আবেদন জানাতে হবে। দুস্কৃতি ও ভ্রষ্টতাকে শুধুমাত্র বুদ্ধিবৃত্তিক দিক দিয়ে বাতিল করলে হবে না বরং সেগুলোর অশুভ পরিণতির ভয় দেখাতে হবে। ইসলামের দীক্ষা গ্রহণ ও সৎকাজে আত্মনিয়োগ শুধু যে ন্যায়সংগত ও মহৎ গুণ, তা যৌক্তিকভাবে প্রমাণ করবে না বরং সে গুলোর প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি করতে হবে। দুই, উপদেশ এমনভাবে দিতে হবে যাতে আন্তরিকতা ও মংগলাখাংকা সুস্পষ্ট হয়ে উঠে। যাকে উপদেশ দান করা হচ্ছে সে যেন একথা মনে না করে যে, উপদেশদাতা তাকে তাচ্ছিল্য করছে এবং নিজের শ্রেষ্ঠত্বের অনুভূতির স্বাদ নিচ্ছে। বরং সে অনুভব করবে উপদেশদাতার মনে তার সংশোধনের প্রবল আকাংখা রয়েছে এবং আসলে সে তার ভাল চায়।
শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহ তা’আলা বলেন : হে মুহাম্মদ, আমার বান্দাদেরকে বলো, তারা যেন মুখ হতে সে সব কথাই বের করে যা অতি উত্তম। আসলে শয়তানই মানুষের মধ্যে বিপর্যয় সৃষ্টি করে থাকে। প্রকৃত কথা হলো, শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। (সুরা বনী ইসরাঈল ঃ ৫৩) অর্থাৎ কাফের এবং ইসলাম বিরোধীদের সাথে আলাপ আলোচনা ও তর্ক-বিতর্ক করার সময় কড়া কথা, বাড়াবাড়ি ও বাহুল্য বর্জন করবে। বিরোধী পক্ষ যতই অপ্রীতিকর কথা বলুক না কেন মুসলমানদের মুখ থেকে কোন ন্যায় ও সত্য বিরোধী কথা বের হওয়া উচিত নয়। ক্রোধ আত্মহারা হয়ে তাদের আজে বাজে কথা বলা শোভা পায় না। ঠা-া মাথায় তাদের এমন কথা বলতে হবে, যা যাচাই বাছাই করা, মাপাজোকা, ওজন করা, সত্য এবং তাদের দাওয়াতের মর্যাদার সাথে সংগতিশীল। বিরোধীদের কথার জবাব দিতে গিয়ে নিজেদের মধ্যে ক্রোধের আগুন জ্বলে উঠছে বলে মনে হবে এবং মেজাজ আকস্মিকভাবে আবেগ-উত্তেজনায় ভরে যেতে দেখতে পাওয়া যারে তখনই বুঝতে হবে, দীনের দাওয়াতের কাজ নষ্ট করার জন্য এটা শয়তানের উস্কানী ছাড়া আর কিছুই নয়। তার তো চেষ্টা হচ্ছে. দাওয়াত দানকারীরাও বিরোধীদের মতো সংস্কারের কাজ ত্যাগ করে সে যেভাবে মানব গোষ্ঠীকে বিতর্ক-কলহ ও ফিতনা-ফাসাদে মশগুল করে রাখতে চায় সেভাবে তারাও তার মধ্যে মশগুল হয়ে যাক।
সুন্দর করে কথা বলা মানুষের শ্রেষ্ট একটি গুণ। আর এটি আল্লাহর এক বিশেষ দান। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমার ভাইয়ের সাথে হাসি মুখে কথা বলা একটি দান। সুতরাং সুন্দর ও ভালো কথা বলুন। আল্লাহ তা’আলা বলেন : এটা আল্লাহ তা’আলারই দয়া যে, তুমি তাদের প্রতি ছিলে কোমল প্রকৃতির। তা না হয়ে যদি তুমি তাদের প্রতি কঠোর হতে, তাহলে তারা তোমার নিকট থেকে সরে যেত। (সুরা আল ইমরান : ১৫৯)। তোমার রবের পথে হিকমত ও সুন্দর ভাষায় আহবান করো। (সুরা নাহল : ১২৫)। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও ম’ুমেনদের সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেন : তখন আল্লাহ তাঁর রাসুল ও মুমেনদের প্রতি প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং তাদের জন্যে ন্যায় ও বিবেকসম্মত বা তাক্ওয়ার কথা বলা কর্তব্য করে দিলেন, আর তারাই এ ধরনের কথা বলার অধিক উপযুক্ত। (সুরা ফাতাহ : ২৬) ‘আল্লাহ তাঁর রাসুল ও মুমেনদের প্রতি প্রশান্তি নাযিল করলেন’ অর্থ ধৈর্য ও মর্যাদা যা দিয়ে নবী সা. এবং মুসলমানগণ কাফের কুরাইশদের এ জাহেলী সংকীর্ণতার মোকাবেলা করেছিলেন। তাঁরা তাদের এ হঠকারিতা ও বাড়াবাড়িতে উত্তেজিত হয়ে সংযম হারিয়ে ফেলেছিলেন না এবং তাদের মোকাবেলায় এমন কোন কথাও বলেননি যা ন্যায়ের সীমা ছাড়িয়ে যায় ও সত্যের পরিপন্থী হয় কিংবা যার কারণে কাজ সুন্দর ও সার্থকভাবে সম্পাদিত হওয়ার পরিবর্তে আরো বেশী এলোমেলো ও বিশৃংখল হয়ে যায়।
রূঢ় বাক্য পরিহার করতে হবে : এটি যেন নিছক বিতর্ক, বুদ্ধির লড়াই ও মানসিক ব্যায়াম পর্যায়ের না হয়। আলোচনায় পেঁচিয়ে কথা বলা, মিথ্যা দোষারোপ ও রূঢ় বাক্যবানে বিদ্ধ করার প্রবণতা যেন না থাকে। প্রতিপক্ষকে চুপ করিয়ে দিয়ে নিজের গলাবাজী করে যেতে থাকা এর উদ্দেশ্য হবে না। বরং এ বিতর্ক আলোচনায় মধূর বাক্য ব্যবহার করতে হবে। উন্নত পর্যায়ের ভদ্র আচরণ করতে হবে। যুক্তি প্রমাণ হতে হবে ন্যায়সংগত ও হৃদয়গ্রাহী। যাকে উদ্দেশ্য করে বলা হচ্ছে তার মনে যেন জিদ, একগুঁয়েমী এবং কথার প্যাঁচ সৃষ্টি হবার অবকাশ না দেখা দেয়। সোজাসুজি তাকে কথা বুঝাবার চেষ্টা করতে হবে এবং যখন মনে হবে যে, সে কুটতর্কে লিপ্ত হতে চাচ্ছে তখনই তাকে তার অবস্থার ওপর ছেড়ে দিতে হবে যাতে ভ্রষ্টতার নোংরা কাঁদামাটি সে নিজের গায়ে আরো বেশী করে মেখে নিতে পারে।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস
শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া
ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল
‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’
প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের
প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া
মুসলিম চিকিৎসক
শীর্ষে দিল্লি
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান