আশুরার রোজা কেন রাখবেন
২৮ জুলাই ২০২৩, ০৮:৩৬ পিএম | আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২৩, ১২:০১ এএম
বারোমাসে এক বছরে। গণনার এ পদ্ধতি পৃথিবীর সূচনালগ্ন থেকেই। আল্লাহ তাআলা বলেন : নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট আল্লাহর বিধানে মাস সমূহের সংখ্যা বারো, যেদিন তিনি আকাশম-লী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন সেদিন থেকেই। তন্মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। (সূরা তাওবা-৩৬)। চারটি সম্মানিত মাসের একটি হলো মুহাররম। এ মাসের অন্যতম বিশেষ দিনটি হলো আশুরা বা দশ-ই মহাররম। এদিনে আল্লাহর কুদরতে বহু অলৌকিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। যা কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। সেসব ঘটনা সমূহের মধ্যে অন্যতম হলো, জালিম ফেরাউনের কবল থেকে নবী মূসা আ. ও বনী ইসরাইলকে আল্লাহ তাআ’লা এ দিনে মুক্তি দান করেছিলেন। সেজন্যে ইহুদিরা আশুরার দিনে রোজা রাখত। নবী সা. মদীনায় হিজরত করে এসে এ রোজা সম্পর্কে জানতে পেরে তিনিও এ দিনে রোজা রাখতে শুরু করেন এবং সাহাবিদেরকেও রোজা রাখার নির্দেশ দেন।
হযরত ইবনে আব্বাস রা. কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে তার প্রমাণ মিলে। হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত : তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সা.মাদীনায় আগমন করে দেখতে পেলেন যে, ইয়াহুদীগণ ‘আশুরার দিনে সওম পালন করে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন,কি ব্যাপার? (তোমরা এ দিনে সওম পালন কর কেন?) তারা বলল—এ অতি উত্তম দিন, এ দিনে আল্লাহ তা’আলা বনী ইসরাঈলকে তাদের শত্রুর কবল হতে নাজাত দান করেন, ফলে এ দিনে মূসা আ.সওম পালন করেন। আল্লাহর রাসূল সা.বললেন : আমি তোমাদের অপেক্ষা মূসার অধিক নিকটবর্তী, এরপর তিনি এ দিনে সওম পালন করেন এবং সওম পালনের নির্দেশ দেন। (সহিহ বুখারী : ২০০৪; হাদিসের মান: সহিহ)।
অন্য বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, জাহিলি যুগ থেকেই আশুরার রোজার প্রচলন ছিল। শুধু সাধারণ মানুষ নয়, বরং রাসূল সা. নিজেও রেখেছেন। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়শা রা. থেকে বর্ণিত : তিনি বলেন, জাহিলিয়্যাতের যুগে কুরাইশগণ ‘আশুরার সওম পালন করত এবং আল্লাহর রসূল সা.-ও এ সওম পালন করতেন। যখন তিনি মাদীনায় আগমন করেন তখনও এ সওম পালন করেন এবং তা পালনের নির্দেশ দেন। যখন রমযানের সওম ফরয করা হল তখন ‘আশুরার সওম ছেড়ে দেয়া হলো, যার ইচ্ছা সে পালন করবে আর যার ইচ্ছা পালন করবে না। (সহিহ বুখারী-২০০২-হাদিসের মান : সহিহ )।
আশুরার রোজা কীভাবে রাখবেন : ইহুদিরা শুধু দশ-ই মুহাররম রোজা রাখত। এখন যদি মুসলমানগণও শুধুমাত্র সেদিন রোজা রাখে তাহলে ইহুদিদের সাথে সাদৃশ্য হয়ে যায়। এজন্য রাসূল সা. সাহাবিদেরকে নির্দেশ দিলেন, আগে বা পরে একটি রোজা বৃদ্ধি করে দুটি রোজা রাখতে। অতিরিক্ত একটি রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন ইহুদিদের বিরোধিতা করার জন্য। হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত : রাসূল সা. ইরশাদ করেন, তোমরা আশুরার রোজা রাখো এবং ইহুদিদের বিরোধিতা করো। আশুরার দিনের আগে অথবা পরে একটি রোজা রাখো। (মুসনাদে আহমাদ-২১৫৪)।
এখানে একটি বিষয় লক্ষ্যনীয় যে, কুরআন ও হাদিসে উল্লিখিত সম্মানিত অর্থাৎ জিল-কা’দাহ, জিল-হিজ্জাহ, মুহাররম ও রজব এ চারটি মাস ও আশুরার রোজার যে ফজীলত বর্ণনা করা হয়েছে সেটা অবশ্য রমজান ব্যতীত বাকি এগারো মাসের দিকে লক্ষ্য করে। কারণ সবচেয়ে সম্মানিত মাস হলো রমজান। এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট হাদিসও রয়েছে । হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত : তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সা.-কে ‘আশুরার দিনের সওমের উপরে অন্য কোন দিনের সওমকে প্রাধান্য প্রদান করতে দেখিনি এবং এ মাস অর্থাৎ রমজান মাস (এর উপর অন্য মাসের গুরুত্ব প্রদান করতেও দেখিনি)। (সহিহ বুখারী-২০০৬-হাদিসের মান: সহিহ )।
অন্য হাদিসে আবূ হুরাইরাহ রা. থেকে বর্ণিত আছে : তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা.বলেছেন, রমাজান মাসের পর আল্লাহর মাস মুহররম-এর সওম হচ্ছে সর্বোত্তম এবং ফরয সালাতের পর রাতের সলাতই সর্বোত্তম। (সুনানে আবু দাউদ-২৪২৯-হাদিসের মান: সহিহ )। উপরোক্ত দুটি হাদিসের আলোকে প্রতীয়মান হয় যে, সবচেয়ে সম্মানিত মাস হলো রমজান এবং সবচেয়ে বেশি মর্যাদাপূর্ণ রোজা হলো রমজানের রোজা। বাকি এগারো মাসের তুলনায় আশুরার রোজা সম্মানিত ও ফজীলতপূর্ণ।
আশুরার রোজার ফজীলত : যে মাসকে আল্লাহর মাস বলে সম্বোধন করা হয়েছে সেটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ হবে এবং এ দিনে রোজা রাখার প্রতিদান কতো বেশি! এক হাদিসে আবূ কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে : নবী সা. বলেছেন, আল্লাহ্ তা’আলার নিকট আমি আশা পোষণ করি যে, তিনি আশুরার রোযার মাধ্যমে পূর্ববর্তী এক বছরের (গুনাহ্) ক্ষমা করে দিবেন। (জামে আত-তিরমিজি,৭৫২-হাদিসের মান: সহিহ/সহীহ ইবনে মাজাহ : ১৭৩৮-হাদিসের মান: সহিহ )। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সম্মানিত মাস সমূহের যথাযথ সম্মান প্রদর্শন পূর্বক আশুরার দিন সম্পর্কে সঠিক তথ্য জেনে তদনুযায়ী আমল করার তাওফিক দান করুন, আমিন।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস
শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া
ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল
‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’
প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের
প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া
মুসলিম চিকিৎসক
শীর্ষে দিল্লি
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান