নৈতিক অবক্ষয় রোধে করণীয়

Daily Inqilab ইসমাঈল সিদ্দিকী

০৪ আগস্ট ২০২৩, ০৮:৫১ পিএম | আপডেট: ০৫ আগস্ট ২০২৩, ১২:০২ এএম

প্রযুক্তি যত সহজলভ্য হচ্ছে, বড়দের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ আর ভালোবাসা ততই বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। মানুষের আচরণ দেখে সমাজের ছোট-বড় পার্থক্য করা আজ কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে । না আছে বড়দের সম্মান, না আছে শ্রদ্ধাবোধ। ফেসবুক খুললেই পুরো টাইমলাইন জুড়ে বড়দের নিয়ে কাদা ছোড়াছুড়ি করতে দেখা যায়। ঠুনকো বিষয়কে কেন্দ্র করে যুগশ্রেষ্ঠ মনিষীদেরকেও নানারকম নেতিবাচক মন্তব্যে জর্জরিত করা হয়। ‘আমিই সঠিক বুঝেছি; আমার উস্তাযগণ ভুল বুঝেছেন বা আমার বড়রা দ্বীন বোঝেননি, দ্বীনের দাবিসমূহের ব্যাপারে তাদের খবর নেই, তাদের মধ্যে দ্বীনের দরদ নেই এরকম একগুঁয়ে একটা মনোভাব বর্তমান উঠতি বয়সী তরুণদের মাঝে চরমভাবে জেঁকে বসেছে। দ্বীন ও উম্মাহর জন্য তাঁদের যেসব খেদমত ও অবদান সেগুলো স্বীকার করতে তারা যেন সংকীর্ণতা বা কষ্ট অনুভব করছে।অথচ বড়দের অগ্রাধিকার দিতে, শ্রদ্ধাবোধ আর সম্মান প্রদশর্ন করতে আমাদের নবিজি আমাদের শিক্ষা দিয়ে গেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রা.) হতে বর্ণিত, নবি কারিম (সা.) বলেছেন: যে ব্যক্তি আমাদের ছোটদেরকে স্নেহ করে না এবং বড়দেরকে সম্মান করে না সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত না। (আবু দাউদ : ৪৮৪২)। নবি কারিম (সা.) বড়দের সম্মান প্রদশর্ন না করার ব্যাপারে হুশিয়ারি বার্তা উচ্চারণ করার পাশাপাশি কার্যক্ষেত্রেও বড়দের অগ্রাধিকার দিয়ে উম্মতকে দেখিয়ে গেছেন। বর্ণিত হয়েছে, ‘কয়েকজন লোক একবার একটি হত্যা মামলা নিয়ে নবিজির কাছে এসেছেন। নিহতের ছোট সন্তান আগ বেড়ে কথা বলতে চাইলে নবিজি (সা.) তাকে থামিয়ে বড় ভাইকে কথা বলার আদেশ দিলেন’ (সুনানে আবু দাউদ : ৬১৪২)

নৈতিক মূল্যবোধের প্রয়োজনীয়তা : জীবনে চলার পথে প্রত্যেক মানুষের সবচেয়ে বেশি যা প্রয়োজন তা হলো নৈতিক মূল্যবোধ। আর একটা সুশৃঙ্খল সমাজের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে নৈতিক মূল্যবোধের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ সমাজে নৈতিক মূল্যবোধ অবক্ষয়ের ডাল-পালা মেললে অন্যায়, অপরাধ, অপসংস্কৃতি বেড়ে যাবে, এটাই স্বাভাবিক। তখন আর এই কথা বললে চলবে না যে, ‘অবক্ষয়ের চোরা স্রোত বইয়ে যাচ্ছে আমাদের সমাজে’ বরং বলতে হবে ‘চোরা স্রোত নয়, রীতিমতো বন্যার মতো অবক্ষয় ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আমাদের সমাজটাকে।’

নবীনদের সুশিক্ষা নিশ্চিত করা করা : আজকের তরুণরাই জাতির আগামি দিনের কর্ণধার। বাস্তবিকভাবে পারিবারিক, সামাজিক ও জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তরুণদের অবদান অনস্বীকার্য। পরিবার গঠন, উন্নয়ন ও সমাজের কল্যাণে কর্মময় জীবন ব্যয় করে—একসময়ে তারা বার্ধক্যে উপনীত হন। তাদের বেড়ে ওঠা ও প্রাপ্ত শিক্ষার ওপর সংশিষ্ট রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ কেমন হবে তা নির্ভর করে। তাই তরুণ প্রজন্মকে এবং তার ভবিষ্যৎ ও নীতি-নৈতিকতা নিয়ে বর্তমান প্রজন্মের প্রবীণদেরই ভাবতে হবে। প্রবীণদের প্রাণান্ত প্রচেষ্টা আর সযতœ পরিচর্যায় নবীনরা বেড়ে ওঠলে আশা করি বড়দের প্রতি নেতিবাচক ধারণা জন্মানোর এ প্রবণতা ধীরে ধীরে কমে যাবে। বিগত কয়েক দশক ধরে এই প্রচেষ্টা আর সযতœ পরিচর্যার অভাবেই সৃষ্টি হয়েছে সামাজিক অবক্ষয়, নতুন প্রজন্ম ধাবিত হচ্ছে অধঃপতনের দিকে আর নানারকম একগুঁয়ে মনোভাব তাদের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা যদি এখন থেকেই সচেতন না হই, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না গ্রহণ করি, তাহলে তরুণ প্রজন্মের ধ্বংস অনিবার্য, যা সমগ্র জাতির জন্য এক মহা সর্বনাশের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। আর আমরা যারা ছোটো আমাদের মনে রাখতে হবে, আমরা যদি বড়দের সম্মান না দেই, তা হলে ছোটরাও আমাদের সম্মান দেবে না, এটিই স্বাভাবিক নিয়ম। তাই সচেতন হতে হবে আপনাকে আমাকে। যার যার অবস্থান থেকে মানবিকতা, নৈতিকতা, নম্রতা, ভদ্রতা, শিষ্টাচার ও সৌজন্য প্রদর্শন এবং ভালো ব্যবহার করতে হবে। তবেই অন্যজন শিখবে। আমি অন্যের সাথে ভালো ব্যবহার করলে, তার বিনিময়ে আমিও ভালো ব্যবহার পাবো। তাই আগে নিজেকে সচেতন হতে হবে, তারপর অন্যকে সচেতন করার কথা ভাবতে হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তাওফিক দান করুক।


বিভাগ : ইসলামী জীবন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

জেদ্দায় হজ-ওমরাহ মেলা পরিদর্শনে ধর্ম উপদেষ্টা
মাত্র ৯৫ দিনে মুহিব্বুল মুরসালিন খানের পবিত্র কুরআন হিফয সম্পন্ন
পিতা-মাতার মর্যাদা এবং তাদের আনুগত্যের বিষয়ে ইসলামের নির্দেশনা
ইসলামের দৃষ্টিতে দুর্নীতির কারণ ও প্রতিকার
ঘুষ : একটি অবৈধ উপার্জন
আরও

আরও পড়ুন

ইউক্রেনে আরও ৬০ বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র পাঠাচ্ছে জার্মানি

ইউক্রেনে আরও ৬০ বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র পাঠাচ্ছে জার্মানি

দেশের ইতিহাসে প্রথম গোয়েন্দা জাহাজ উন্মোচন ইরানের

দেশের ইতিহাসে প্রথম গোয়েন্দা জাহাজ উন্মোচন ইরানের

বিয়ে না করেও ৩২ বছর বয়সে ৮৭ সন্তানের পিতা!

বিয়ে না করেও ৩২ বছর বয়সে ৮৭ সন্তানের পিতা!

৮ ফেব্রুয়ারী কক্সবাজারে আসছেন জামায়াত আমীর ডা. শফিকুর রহমান

৮ ফেব্রুয়ারী কক্সবাজারে আসছেন জামায়াত আমীর ডা. শফিকুর রহমান

মোবারকগঞ্জ সুগার মিলে চিনি খেতে বাধা দেওয়াই মারামারি : আহত-১, আটক-২

মোবারকগঞ্জ সুগার মিলে চিনি খেতে বাধা দেওয়াই মারামারি : আহত-১, আটক-২

বিরলে সীমান্ত এলাকায় বিজিবি কর্তৃক বিপুল পরিমাণ ফেন্সিডিল উদ্ধার

বিরলে সীমান্ত এলাকায় বিজিবি কর্তৃক বিপুল পরিমাণ ফেন্সিডিল উদ্ধার

বিএসএফের হাতে আটক যুবক ফেরত আনলো বিজিবি

বিএসএফের হাতে আটক যুবক ফেরত আনলো বিজিবি

নিজেকে আ.লীগের চক্রান্তের শিকার দাবি এনবিআরের সেই মতিউরের

নিজেকে আ.লীগের চক্রান্তের শিকার দাবি এনবিআরের সেই মতিউরের

হিলিতে দিনব্যাপী ৪৬ তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহের উদ্বোধন ও পুরস্কার বিতরণ

হিলিতে দিনব্যাপী ৪৬ তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহের উদ্বোধন ও পুরস্কার বিতরণ

মহিলাদের জন্য সংসদে কোন সংরক্ষিত আসন চাই না  : মুফতি ফয়জুল করীম

মহিলাদের জন্য সংসদে কোন সংরক্ষিত আসন চাই না : মুফতি ফয়জুল করীম

কারামুক্ত ডেসটিনির এমডি রফিকুল আমীন

কারামুক্ত ডেসটিনির এমডি রফিকুল আমীন

ময়মনসিংহ সদর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দিনব্যাপী তারুণ্য উৎসব উদযাপন

ময়মনসিংহ সদর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দিনব্যাপী তারুণ্য উৎসব উদযাপন

রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী

রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী

বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ

বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ

আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু

আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু

ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?

ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?

বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের

বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের

দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম

দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

আটঘরিয়ায় মসজিদের মাইক চুরি

আটঘরিয়ায় মসজিদের মাইক চুরি