ইসলামে লেবাস-পোশাকের নীতিমালা
১১ আগস্ট ২০২৩, ০৮:৩১ পিএম | আপডেট: ১২ আগস্ট ২০২৩, ১২:০৩ এএম
ইসলাম ধর্মে পোশাকের গুরুত্ব সীমাহীন। পোশাকের মাধ্যমে ইসলামী ঐতিহ্যৈর প্রকাশ ঘটে। পোশাক ব্যক্তিত্বের পরিচয় ফুটিয়ে তোলে। পোশাকের মাধ্যমে ব্যক্তিত্বের স্বভাব প্রকৃতি অনুভব করা যায়। পোশাক মানুষকে সম্মানিত করার পাশাপাশি যথাযথ ভাবে পোশাকের গুরুত্ব না দিলে ব্যক্তিত্বকে কলুষিত করে। ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থার নাম। জীবনের সর্বক্ষেত্রে ইসলামের দিক নির্দেশনা রয়েছে, পোশাক-পরিচ্ছদের বিষয়ে ও ইসলামের দিক নির্দেশনা রয়েছে।
পোশাককে আরবিতে ‘লিবাস’ বলা হয়। এর অর্থ পরিহিত বস্তু বা যা পরিধান করা হয়। শরিয়তের পরিভাষায় লেবাস ও পোশাক বলা হয়, যা মানুষের লজ্জাস্থানকে আবৃত করে। (ফাতাওয়ায়ে শামী ৬/৩৫২) পোশাক মানুষের মৌলিক প্রয়োজনীয় বিষয়। লজ্জাস্থান আবৃত রাখা এবং সুন্দর ও পরিপাটি থাকার চাহিদা মানুষের স্বভাবজাত। শীত গ্রীষ্মের প্রকোপ ও বাইরের ধুলাবালি থেকে শরীরকে রক্ষার জন্য তা অতীব জরুরী আবরণ। মোটকথা পোশাক মানুষের জন্য আল্লাহর অপার এক অনুগ্রহ ।
আদিকাল থেকে মানুষ পোশাকের ব্যাবহার করে আসছে। মানুষের রুচিবোধ ও ব্যক্তিত্বের প্রতিফলন ঘটে পোশাকের মধ্য দিয়ে। তাই পোশাক পরিধানে যথাযথ বিধিনিষেধ পালনের গুরুত্ব দিয়েছে ইসলাম। আল্লাহ তাআলা বলেন: হে বনী-আদম আমি তোমাদের জন্যে পোশাক অবর্তীণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং অবর্তীণ করেছি সাজ সজ্জার বস্ত্র এবং পরহেযগারীর পোশাক, এটি সর্বোত্তম। এটি আল্লাহর কুদরতের অন্যতম নিদর্শন, যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে।’ (সূরা আ’রাফ, আয়াত ২৬)। ইসলামী শরীয়তে পোশাক - পরিচ্ছদের নীতিমালা নির্ধারিত রয়েছে। যা অনুসরণ করে মানুষ পোশাকের কল্যাণ লাভ করতে পারে এবং পোশাকের অকল্যাণ থেকে রক্ষা পেতে পারে। নিম্নে কিছু নীতিমালা সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরা হল :
সতর আবৃত করা : লেবাস অবশ্যই সতর-আবৃতকারী হতে হবে। ইসলামের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত নামাযে সতর ঢাকা ফরয। পুরুষের নাভি থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত আর নারীর মুখমন্ডল, টাখনু পর্যন্ত পা ও হাতের তালু ছাড়া গোটা শরীর নামাযে আবৃত রাখা ফরয। তদ্রুপ গায়রে মাহরাম ও পরপুরুষের সামনে মুখমন্ডলসহ গোটা শরীর আবৃত রাখাও জরুরি। অতএব পোষাকের মাধ্যমে যাতে এই প্রয়োজন পূরণ হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা অপরিহার্য। এত সংক্ষিপ্ত পোষাক পরিধান করা যে, সতর বা সতরের কিছু অংশ খোলা থাকে বা এত পাতলা কাপড় ব্যবহার করা যে, শরীরের অঙ্গ-প্রতঙ্গ দৃষ্টিগোচর হয়, পুরুষ মহিলা সবার জন্যই হারাম ও নিষিদ্ধ। তদ্রুপ এত আঁটসাঁট পোষাক, যার উপর দিয়ে শরীরের অঙ্গসমূহ ফুটে ওঠে তাও বর্জনীয়।
২. পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে অন্যের সাদৃশ্য বর্জন করা : পোশাক-পরিচ্ছদে দুটি বিষয়ে সাদৃশ্য অবলম্বনের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এক. কাফির-মুশরিকদের পোশাক গ্রহণ করা যাবে না। ইবন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের অনুসরণ করবে, সে তাদের দলভুক্ত হবে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-৪০৩৩)। দুই. বিপরীত লিঙ্গের মতো পোশাক ধারণ করা যাবে না। অর্থাৎ পুরূষের জন্য নারীদের মতো আর নারীদের জন্য পুরূষের মতো পোশাক পরিধান করা জায়েজ নয়। ইসলাম নারী ও পুরুষ উভয়কে লজ্জা ও শালীনতা রক্ষাকারী পোশাক পরিধান করার নির্দেশ দিলেও পোশাকের ক্ষেত্রে উভয়কে স্বকীয়তা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে অত্যন্ত কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হযয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীর বেশধারণকারী পুরূষের উপর আর পুরূষের বেশধারণকারিনী নারীর উপর লানত করেছেন।(সহীহ বুখারী, হাদীস নং- ৩৮৮৫)
৩. রেশমের পোশাক পরিধান না করা : ইসলামে রেশমের পোষাক পুরূষের জন্য নিষেধ, কিন্তু নারীর জন্য অনুমোদিত। স্বর্ণের ব্যবহার নারীর জন্য জায়েয, কিন্তু পুরূষের জন্য হারাম। যেকোনো রংয়ের কাপড় নারীরা পরিধান করতে পারে, কিন্তু পুরূষের জন্য কিছু কিছু রং অপছন্দনীয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন : ‘আমার উম্মতের পুরূষদের জন্য রেশমি কাপড় এবং স্বর্ণ ব্যবহার করা হারাম, কিন্তু নারীদের জন্য তা হালাল।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস নং- ১৭২০)।
৪.পোশাকটি লাল , জাফরান, হলুদ রঙের হতে পারবে না : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- আমি লাল রঙের জিনপোষে সওয়ার হই না, হলুদ (কুসুম) বর্ণের কাপড় পরি না এবং রেশম আটকানো জামা পরিধান করি না। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং- ৪০৪৮)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেহেতু নিষেধ করেছেন সেহেতু অবিমিশ্র উজ্জ্বল লাল ও হলুদ উভয় রংয়ের পোশাক পুরুষদের জন্য না পরাই উত্তম। ইমাম নববি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তার আল মাজমুতে উল্লেখ করেছেন, তবে লাল ও হলুদের সঙ্গে অন্য রঙ মিশ্রিত থাকলে উক্ত পোষাক পরায় কোনো বাধা নেই। (চলবে)
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
খুশদীলের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে রংপুরের আটে আট
বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক দেশের ভিসা
মেডিকেল কলেজে শিক্ষক বাড়ানোর কথা ভাবছে সরকার
ছাত্রদলের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি আজ
গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুনর্গঠনে ১০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন
অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর দিকে তাকিয়ে ইইউ
ভারতের উদ্বেগের মধ্যে হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে পাকিস্তান
সান্ত¡না খুঁজে পাচ্ছেন না, দুই দেশে কলঙ্কিত টিউলিপ
দুর্নীতির মামলায় ইমরান খান ও বুশরা বিবির কারাদণ্ড
বিদেশে টাকা পাচারের রাজনীতি মানুষ চায় না : পীর সাহেব চরমোনাই
শেখ পরিবারের রক্তের জন্যই দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন টিউলিপ -রিজভী
নামাজ মু’মিনের জন্য মেরাজস্বরূপ
ক্রেডিট কার্ডে বিদেশে বাংলাদেশিদের লেনদেন কমেছে
স্বনির্ভর অর্থনীতির পথে দেশ
বগুড়ার বিমানবন্দর দ্রুত চালুর দাবি
আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বাংলাদেশকে মানবাধিকার লংঘন বন্ধ করতে হবে : হিউম্যান রাইটস ওয়াচ
হাজারীবাগের ট্যানারির গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড
জুলাই বিপ্লব ঘোষণাপত্র দেওয়া জরুরি : নুরুল হক নুর
গণঅভ্যুত্থানের ইশতেহারে বিএনপির ভূমিকা লিখতে হবে : জয়নুল আবদিন
নির্বাচনে রাজনৈতিক নেতাদের পরিবেশ রক্ষায় প্রতিশ্রুতি দিতে হবে