খাবার গ্রহণে ইসলামি শিষ্টাচার
১৮ আগস্ট ২০২৩, ০৮:১৮ পিএম | আপডেট: ১৯ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম
জীবন ধারণের প্রধান উপকরণ হলো খাদ্য। বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন খাদ্য গ্রহণ। কারণ আল্লাহ তাআ’লা মানুষকে এ চাহিদা দিয়েই সৃষ্টি করেছেন। এ চাহিদা মুসলিম অমুসলিম সকলেই পূরণ করে। সকলেই খাবার খেয়ে থাকে।তবে অমুসলিমদের খাওয়া-দাওয়াটকে আল্লাহ তাআ’লা পশুপাখির খাবারের সাথে তুলনা করেছেন। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে—আর যারা কাফের, তারা উপভোগ করছে ও খাচ্ছে, যেমন গবাদি পশুরা খায়। (সূরা মুহাম্মাদ-১২)। কিন্ত মুসলমানের খাওয়া দাওয়া, ঘুম-বিশ্রাম, চাকরি ইতি ইত্যাদি সবকিছুই ইবাদত। প্রশ্ন জাগতে পারে, এগুলো তো আমাদের দৈনন্দিনের কাজ এবং সেটাও নিজের চাহিদা মেটানোর জন্য করি। এগুলো ইবাদত হয় কীভাবে? হ্যাঁ, ইবাদত হবে যদি সে কাজগুলো সম্পাদিত হয় সুন্নত পদ্ধতিতে।
খাবারের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একাধিক সুন্নত রয়েছে। তন্মধ্যে কয়েকটি সুন্নত এখানে উল্লেখ করা হলো। শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা। আবূ নু’আইম রা.-থেকে বর্ণিত—তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সা.-এর কাছে একদা কিছু খাবার আনা হলো, তাঁর সঙ্গে ছিলেন তার পোষ্য ‘উমার ইবনু আবূ সালামা। তিনি বললেন—বিসমিল্লাহ বল এবং নিজের কাছের দিক থেকে খাও। (বুখারী-৫৩৭৮,ইবনে মাজাহ-৩২৬৫)। আমরা মাঝেমধ্যে খাবারের শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়তে ভুলে যাই। কখনো মাঝে, কখনো একেবারে শেষে গিয়ে স্মরণ হয় যে, বিসমিল্লাহ পড়িনি।এ অবস্থায় করণীয় কী? এ সম্পর্কে হযরত আয়শা রা. থেকে বর্ণিত আছে—তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, যখন তোমাদের কোন ব্যক্তি খাওয়া শুরু করে তখন যেন সে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে। সে খাওয়ার শুরুতে বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে গেলে তবে যেন বলে, ‘বিসমিল্লাহ ফী আওয়ালিহি ওয়া আখিরাহু।’ (এর শুরু ও শেষ আল্লাহ তা’আলার নামে)। (তিরমিজি : ১৮৫৮)।
খাবারের একটি সুন্নত হলো ডান হাতে খাওয়া। বর্তমানে রেস্টুরেন্ট, দামী হোটেল বা বিভিন্ন ভোজ উৎসবে দেখা যায় যে, অনেকে আধুনিকতার নামে চামচ দিয়ে বা বাম হাতে খাবার খেয়ে থাকে। যা সুন্নত পরিপন্থী এবং শয়তানি কাজ। কারণ রাসূল সা. সবসময় ডান হাতে খাবার খেতেন। কখনো বাম হাতে খাবার খেতেন না। হযরত ইবনু উমার রা. থেকে বর্ণিত, নবী সা.-বলেছেন, বাম হাতে যেন তোমাদের কেউ না খায় এবং পান না করে। কেননা বাম হাতে শাইতান পানাহার করে। (সুনানে তিরমিজি : ১৭৯৯)। অন্য বর্ণনায় হযরত সালিম (রহ.) হতে তার পিতা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন,তোমাদের প্রত্যেকে যেন খাওয়ার সময় ডান হাতে খায় এবং ডান হাতে পান করে। কারণ বাম হাতে শয়তান পানাহার করে। (জামে’ আত-তিরমিজি : ১৮০০)। দুটো হাদিসে একই নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। এখান থেকে বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়।
আমাদের মাঝে একটি বদ অভ্যাস সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়। সেটা হলো খাবারের দোষ বর্ণনা করা। অথচ রাসূল সা. কখনো খাবারের দোষ বর্ণনা করতেন না। রুচিসম্মত হলে খেতেন আর রুচিসম্মত না হলে খেতেন না। আবূ হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা.কখনও খাদ্যসামগ্রীর ত্রুটি ধরতেন না। পছন্দ হলে তিনি আহার করতেন, অন্যথায় রেখে দিতেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ : ৩২৫৯)। এখানে লক্ষ রাখতে হবে যে,খাবারে লবণ কম হয়েছে। তরকারি ঝাল হয়নি এগুলো দোষ বর্ণনার পর্যায়ে নয়। দোষ হচ্ছে কোনো খাবারকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা। একথা বলা যে, ডিম আর ডাল এগুলো কোনো খাবার হলো? গোশত দিতে খেতে দেবে ইত্যাদি।
পড়ে যাওয়া লোকমা তুলে খাওয়া সুন্নত। মাঝেমধ্যে থালা বা পাত্র থেকে খাবার নিচে পড়ে যায়। সেক্ষেত্রে উত্তম হলো—তা তুলে, ময়লা পরিস্কার করে খেয়ে ফেলা যদি সম্ভব হয়। তা না হলে কোনো প্রাণীকে দিয়ে দেবে।আরেকটি সুন্নত হলো খাবারের পাত্র চেটেপুটে খাওয়া এবং পাত্রে খাবার অবশিষ্ট না রাখা। হযরত আনাস ইবনু মালিক রা.থেকে বর্ণিত—রাসূলুল্লাহ সা.খাওয়া শেষ করে আঙ্গুল চাটতেন এবং বলতেন—তোমাদের কারো লোকমা পরে গেলে সে যেনো তার ময়লা দুর করে তা খেয়ে নেয় এবং শয়তানের জন্য ফেলে না রাখে। তিনি আমাদেরকে থালা পরিস্কার করে খেতে আদেশ দিয়েছেন। তিনি আরো বলেছেন—তোমাদের কেউই জানে না খাদ্যের কোন অংশে তার জন্য বরকত রয়েছে। (সুনানে আবু দাউদ : ৩৮৪৫) ।
খাবারের আরো একটি সুন্নত হলো, পাত্রের একপার্শ্ব থেকে খাওয়া । মাঝখান থেকে না খাওয়া। তবে অনেকে অজ্ঞতাবশত পাত্রের মাঝখান থেকে খেতে শুরু করে। এতে খাবারের বরকত নষ্ট হয়। কারণ এক হাদিসে রাসূল সা. ইরশাদ করেন, খাবারের মাঝখানে বরকত নাযিল হয়। ইবনু আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, নবী সা.বলেছেন, খাদ্যের মাঝখানে বারকাত নাযিল হয়, অতএব তোমরা এর কিনারা হতে খাওয়া আরম্ভ কর, মাঝখান হতে খেও না। (সুনানে তিরমিজি : ১৮০৫)
খাবার আল্লাহ তাআলার এক বিশেষ নিয়ামত। এ নিয়ামত পেয়ে অবশ্যই নিয়ামত দাতার কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা আমাদের কর্তব্য। সেজন্যে খাবার শেষে আল্লাহর নিকট শুকরিয়া আদায় করা। অর্থাৎ আলহামদুলিল্লাহ বলা। তাতে আল্লাহ তাআলা বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান। হযরত আনাস ইবনু মালিক রা.থেকে বর্ণিত—নবী সা.বলেছেন, কোন কিছু খেয়ে অথবা কিছু পান করে বান্দাহ আল্লাহ্ তা‘আলার প্রশংসা করলে অবশ্যই তিনি তার উপর সন্তুষ্ট হন। (জামে আত-তিরমিজি : ১৮১৬)। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে জীবনের প্রতিটি কাজকর্মে নববী আদর্শের ওপর চলার তাওফিক দান করুন, আমিন।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
এমবাপ্পের জোড়া গোলে জিতে শীর্ষে রিয়াল
ব্রাইটনের বিপক্ষেও বিপর্যস্ত ইউনাইটেড
‘ন্যায়বিচারকে হত্যা’ করা হয়েছে: পিটিআই
নতুন ভূগর্ভস্থ নৌ ঘাঁটি উন্মোচন ইরানের
রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধ করছে অনেক আফ্রিকান সেনা
পাওয়ার প্ল্যান্টের ৩৬০ মেট্রিকটন তেল ডাকাতি
বাংলাদেশি কর্মী নিতে প্রস্তুত রাশিয়া: রাষ্ট্রদূত
রাজনৈতিক দলগুলো বেশি কিছু সংস্কার না চাইলে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন: প্রেস সচিব
এবার ওলমোর ইনজুরি দুঃসংবাদ বার্সার
কুড়িগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃত্বে ইমন ও আলামিন
এসএমই ফাউন্ডেশনের নতুন চেয়ারপার্সন মো. মুশফিকুর রহমান
বিয়ের ওপর কর বাতিলের দাবি
শহীদ জিয়ার নাম মুছে ফেলার অপচেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছে আ.লীগ : মির্জা ফখরুল
নামাজের প্রথম কাতারে জামাত পড়াবস্থায় অজু ভেঙ্গে যাওয়া প্রসঙ্গে।
কয়েক মিনিটে বাংলাদেশ দখল করে নিতে পারে ভারত: শুভেন্দু অধিকারী
নরসিংদীতে নিখোঁজের ৫ দিন পর নদীতে পাওয়া গেল স্কুল ছাত্রের লাশ
বিএনপি : দেশবাদ যার রাজনীতির মূল কথা
পাহাড়ি উপজাতিরা আদিবাসী নয়
সংস্কার প্রতিবেদন : জাতির নতুন অধ্যায়ে অভিযাত্রা
অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিনিয়োগে জোর দিতে হবে