ভালো-মন্দ পার্থক্য করার ক্ষমতা
১৮ আগস্ট ২০২৩, ০৮:১৮ পিএম | আপডেট: ১৯ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম
আল্লাহ তা’আলা বলেন : আমি তাকে পথ দেখিয়ে দিয়েছি। এরপর হয় সে শোকরগোজার হবে নয়তো হবে কুফরের পথ অনুসরণকারী। (সুরা আদ দাহর : ৩)। অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা মানুষকে জ্ঞান ও বিবেক-বুদ্ধি দিয়েই ছেড়ে দেননি। যা সুরা আদ দাহরের দ্বিতীয় আয়াতে বলা হয়েছে। বরং এগুলো দেয়ার পাশাপাশি তাকে পথও দেখিয়েছেন যাতে সে জানতে পারে শোকরিয়ার পথ কোনটি এবং কুফরীর পথ কোনটি। এরপর যে পথই সে অবলস্বন করুক না কেন তার জন্য সে নিজেই দায়ী। এ বিষয়টি সুরা বালাদে এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে : আমি কি তাকে দু’টি সুস্পষ্ট পথ দেখাইনি? (আয়াত : ১০)। সূরা আশ শামসে বিষয়টি বর্ণনা করা হয়েছে এভাবে : শপথ প্রবৃত্তির আর সে সত্তার যিনি তাকে আভ্যন্তরিন শক্তি দিয়ে শক্তিশালী করেছেন। আর পাপাচার ও তাকওয়ার অনুভূতি দু’টোই তার ওপর ইলহাম করেছেন। (আয়াত : ৮)।
কুরআন মাজিদে বিস্তারিত বর্ণনা সামনে রাখলে বুঝা যায় যে, এ আয়াতে পথ দেখানোর যে কথা বলা হয়েছে তার দ্বারা পথ প্রদর্শনের কোন একটি মাত্র পন্থা ও উপায় বুঝানো হয়নি। বরং এর দ্বারা অনেক পন্থা ও উপায়ের কথা বলা হয়েছে যার কোন সীমা পরিসীমা নেই। যেমন : এক. প্রত্যেক মানুষকে জ্ঞান ও বিবেক-বুদ্ধির যোগ্যতা দেয়ার সাথে সাথে একটি নৈতিক বোধ ও অনুভূতি দেয়া হয়েছে যার সাহায্যে সে প্রকৃতিগতভাবেই ভাল ও মন্দের মধ্যে পার্থক্য করে, কিছু কাজ-কর্ম ও বৈশিষ্ট্যকে খারাপ বলে জানে যদিও সে নিজেই তাতে লিপ্ত। আবার কিছু কাজ-কর্ম ও গুণাবলীকে ভাল বলে মনে করে যদিও সে নিজে তা থেকে দূরে অবস্থান করে।
এমনকি যেসব লোক তাদের স্বার্থ ও লোভ-লালসার কারণে এমন সব দর্শন রচনা করেছে যার ভিত্তিতে তারা অনেক খারাপ ও পাপকার্যকেও নিজেদের জন্য বৈধ করে নিয়েছে তাদের অবস্থাও এমন যে, সে একই মন্দ কাজ করার অভিযোগ যদি কেউ তার ওপর আরোপ করে, তাহলে সো প্রতিবাদে চিৎকার করে উঠবে এবং তখনই জানা যায় যে, নিজেদের মিথ্যা ও অলীক দর্শন সত্ত্বেও বাস্তবে সে নিজেরও সেসব কাজকে খারাপই মনে করে থাকে। অনুরূপ ভাল কাজ থেকে তারা যখন নিজেরাই নিজেদের সদাচরণের সুফল ও উপকার লাভ করে তখন তারা সেটিকে মূল্যবান মনে করতে বাধ্য হয়ে যায়।
দুই. প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই আল্লাহ তা’আলা বিবেক (তিরস্কারকারী নফস) বলে একটি জিনিস রেখে দিয়েছেন। যখন সে কোন মন্দ কাজ করতে উদ্যত হয় অথবা করতে থাকে অথবা করে ফেলেছে তখন এ বিবেকই তাকে দংশন করে। যতই হাত বুলিয়ে বা আদর-সোহাগ করে দিয়ে মানুষ এ বিবেককে ঘুম পাড়িয়ে দিক, তাকে অনুভূতিহীন বানানোর যত চেষ্টাই করুক সে তাকে একদম নিশ্চিহ্ন করতে সক্ষম নয়। হঠকারী হয়ে দুনিয়ায় সে নিজেকে চরম বিবেকহীন প্রমাণ করতে পারে, সে সুন্দর সুন্দর অজুহাত খাড়া করতে দুনিয়াকে ধোঁকা দেয়ার সব রকম প্রচেষ্টা চালাতে পারে, সে নিজের বিবেককে প্রতারিত করার জন্য নিজের কর্মকা-ের সপক্ষে অসংখ্য ওজর পেশ করতে পারে; কিন্তু এসব সত্ত্বেও আল্লাহ তার স্বভাব-প্রকৃতিতে যে হিসাব পরীক্ষককে নিয়োজিত রেখেছেন সে এত জীবন্ত ও সজাগ যে, সে নিজে প্রকৃতপক্ষে কি তা কোন অসৎ মানুষের কাছেও গোপন থাকে না। সুরা কিয়ামাতে এ কথাটিই বলা হয়েছে যে : মানুষ যত ওজরই পেশ করুক না কেন সে নিজেকে নিজে খুব ভাল করেই জানে। (আয়াত : ১৫)।
তিন. মানুষের নিজের সত্তায় এবং তার চারপাশে যমীন থেকে আসমান পর্যন্ত গোটা বিশ্ব-জাহানের সর্বত্র এমন অসংখ্য নিদর্শনাদি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে যা আমাদের জানিয়ে দিচ্ছে যে এমনসব জিনিস এক আল্লাহ ছাড়া হতে পারে না কিংবা বহু সংখ্যক খালিক এ বিশ্ব-জাহানের সৃষ্টিকর্তা বা পরিচালক হতে পারে না। বিশ্ব চরাচরের সর্বত্র এবং মানুষের আপন সত্তার অভ্যন্তরে বিদ্যমান এ নিদর্শনাবলীই কিয়ামত ও আখিরাতের সুস্পষ্ট প্রমাণ পেশ করেছে। মানুষ যদি চোখ বন্ধ করে থাকে অথবা বুদ্ধি-বিবেক কাজে লাগিয়ে সব বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা না করে অথবা তা যেসব সত্যের প্রতি ইংগিত করছে তা মেনে নিতে টালবাহানা ও গড়িমসি করে তাহলে তা তার নিজেরই অপরাধ। আল্লাহ তা’আলা নিজের পক্ষ থেকে তার সামনে সত্যের সন্ধান দাতা নিদর্শনাদি পেশ করতে আদৌ কোন অসম্পূর্ণতা রাখেননি।
চার. মানুষে নিজের জীবনে তার সমসাময়িক পৃথিবীতে এবং তার পূর্বের অতীত ইতিহাসের অভিজ্ঞতায় এমন অসংখ্য ঘটনা সংঘটিত হয়েছে এবং হয়ে থাকে যা প্রমাণ করে যে, একটি সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর শাসন-কর্তৃত্ব তার ওপর এবং সমগ্র বিশ্ব-জাহানের ওপর কর্তৃত্ব চালিয়ে যাচ্ছে। যাঁর ইচ্ছা সবকিছুর ওপর বিজয়ী এবং যাঁর সাহায্যের সে মুখাপেক্ষী।
এসব অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণ বাহ্যিক ক্ষেত্রসমূহেই শুধু এ সত্যের প্রমাণ পেশ করে না। বরং মানুষের নিজের প্রকৃতির মধ্যে সে সর্বোচ্চ শাসন-কর্তৃত্বের প্রমাণ বিদ্যমান যার কারণে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার ক্ষেত্রে খারাপ সময়ে নাস্তিকরাও আল্লাহর সামনে প্রার্থনার হাত প্রসারিত করে এবং এবং কট্টর মুশরিকরাও সব মিথ্যা প্রভুকে পরিত্যাগ করে একমাত্র আল্লাহকে ডাকতে শুরু করে। (চলবে)
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস
শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া
ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল
‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’
প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের
প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া
মুসলিম চিকিৎসক
শীর্ষে দিল্লি
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান