বিবাহবিচ্ছেদ নয় মীমাংসাই উত্তম পথ
২৫ আগস্ট ২০২৩, ০৭:৪৬ পিএম | আপডেট: ২৬ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম
অতিরিক্ত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে বিবাহবিচ্ছেদ। বিগত বছরের তুলনায় এ বছর তার পরিমাণ আরো বহুগুণ বেড়েছে। শুধু ঢাকা শহরে প্রতি ৪০ মিনিটে একটি করে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটছে। এর মাঝে ৭০ ভাগ আবেদনকারীই নারী এবং তাদের অধিকাংশই কর্মজীবী ও শিক্ষিত দম্পতি। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করলে বলতে হয় “নৈতিকতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধের সংকটকালে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ ও মেলামেশাই হলো এর প্রধান কারণ। কেননা তাতে সৃষ্টি হয় পর-পুরুষ ও পর-নারীতে আসক্তি, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক। যে কারণে তৈরি হয় দাম্পত্য জীবনে কলহ ও মনোমালিন্য। তাছাড়া টিভি, সিরিয়াল, ফেসবুক ও সোশ্যাল মিডিয়ার নেতিবাচক প্রভাবও রয়েছে। আরো রয়েছে পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাব, যৌতুক প্রথা, মাদকাসক্তি, স্বামী-স্ত্রী পরস্পর দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে অজ্ঞতা এবং অসচেতনতা, পরিবারকে সময় না দেওয়া এবং পরস্পরের প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা-ভালবাসা ও আনুগত্যের অভাব। অনেকে ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি - বাকরি এবং ক্যারিয়ারকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দিতে গিয়ে পরিবারের গুরুত্ব হারিয়ে ফেলেন।
এটাও পরিবার ভাঙনের অন্যতম একটি কারণ। যেমনটা পশ্চিমা এক গবেষণায় উঠে এসেছে ‘অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বিশ্বায়নের সাথে পাল্লা দিতে গিয়ে পরিবার ও সম্পর্কে ভাঙন আরো বাড়বে’। মনে রাখতে হবে,সম্পদ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্যারিয়ারের চেয়ে পরিবারের মূল্য অনেক বেশি। কেননা সম্পদ আজ আছে কাল নাও থাকতে পারে কিন্তু পরিবার আমার চিরস্থায়ী সঙ্গী। তাই পরিবার কাঠামো নিরাপদ রেখে যতটুকু সম্পদ ও ক্যারিয়ার ঠিক রাখা যায় ততটুকুতে সীমাবদ্ধ থাকাই সভ্যতা। বিবাহ বিচ্ছেদ শুধু একটি পরিবাকে ধ্বংস করে না বরং এর প্রভাব পড়ে সন্তান ও সমাজের উপর। তাছাড়া বিবাহ বিচ্ছেদের পর নারীদেরকে অনেক বিপাকে পড়তে হয়। সংসার জীবনের অবনিবনার কষ্টের চেয়ে তাকে আরো যন্ত্রণা ও অনিশ্চিত জীবনের দিকে ঠেলে দেয়। সকলের কাছে সে বোঝা ও অবহেলার পাত্রে পরিণত হয়।
ইসলাম পরিবার ব্যাবস্থা দিয়েছে মানুষের সুখ-শান্তির জন্য। আল্লাহ বলেন, তার অন্যতম একটি নিদর্শন এই যে তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য হতে সঙ্গীনীদের সৃষ্টি করেছে যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি লাভ করো। (সূরা রুম : ২১)।
দাম্পত্য জীবনে সুখ পেতে স্বামী-স্ত্রী উভয়কে এগিয়ে আসতে হবে। প্রত্যেককে আপন কর্তব্যের প্রতি সচেতন হতে হবে। স্বামী হলেন তার স্ত্রীর দায়িত্বশীল। তাকে এই দায়িত্ব সম্পর্কে জবাবদিহি করা হবে। তিনি স্ত্রীর প্রতি সহনশীল ও সদাচরণ করবেন। আল্লাহ বলেন, তোমরা তাদের (স্ত্রীদের) সাথে সদ্ভাবে জীবনযাপন করো। (সূরা নিসা : ১৯)। তিনি স্ত্রীর সাথে ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ করবেন। নবীজি বলেন, নারীরা হলো বাঁকা হাড়ের মতো,তোমরা তাদের সাথে এতো কঠোরতা করো না যে তা ভেঙে যায় আবার তাদেরকে আপন অবস্থায়ও ছেড়ে দিওনা যে তারা আরো বেঁকে যায়। (বোখারি : ৩৩৩১)। নারীদের প্রতি কোনো ধরনের অন্যায় আচরণ না করার আহবান করে নবীজি সতর্ক করে বলেন, তোমরা নারীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো। (মুসলিম : ১২১৮)।
অনেক পুরুষ বাহিরে সদ্ব্যবহারী কিন্তু পরিবারের সাথে দুর্ব্যবহারী এবং বদমেজাজি অথচ নবীজি বলেছেন, তোমাদের মাঝে শ্রেষ্ঠ পুরুষ সে যে তার পরিবারের কাছে শ্রেষ্ঠ। (তিরমিজি : ১১৬২)। দাম্পত্য জীবনের এই পবিত্র বন্ধনকে আরো অটুট করতে হলে এবং এই ভালোবাসাকে আরো মধুময় করতে হলে অবদান রাখতে হবে স্ত্রীকেও। স্ত্রী হলেন তার স্বামী, সন্তান ও সংসারের দায়িত্বশীল। এগুলোর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ সম্পের্ক তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে (বোখারি : ২৫৫৪) স্ত্রীকে হতে হবে স্বামীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং আনুগত্যশীল। আল্লাহ বলেন, পুরুষ নারীর কর্তা কেননা আল্লাহ তাদের এক-কে অপরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন সুতরাং সচ্চরিত্রা স্ত্রীগণ হয় আনুগত। (সূরা নিসা,আয়াত : ৩৪) যদি কোনো নারী স্বামীর অবাধ্য হয় তাহলে নবীজি হুশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, কেয়ামতের দিন কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে সেই নারী যে তার স্বামীর অবাধ্য হয়। (তিরমিজি : ৩৫৯)। স্বামীর পছন্দ-অপছন্দকে প্রাধান্য দিতে হবে। নবীজি বলেছেন, সর্বশ্রেষ্ঠ নারী সে যার দর্শন স্বামীর চক্ষু শীতল করে এবং যে তার আনুগত্য করে এবং নিজের সম্ভ্রম ও সম্পদে স্বামীর পছন্দের বাহিরে যায়না। (নাসায়ী : ৩২৩১)
ইসলামে বিবাহ বিচ্ছেদের অনুমতি থাকলেও তা হতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। নবীজি (সা.) বলেছেন, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে অপ্রিয় হালাল হচ্ছে তালাক (বিবাহবিচ্ছেদ)। (ইবনে মাজাহ : ২০১৮)। বিবাহবিচ্ছেদ এড়াতে ইসলাম প্রথম থেকেই সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছে এবং পাত্র-পাত্রী নির্বাচনে কিছু নিয়মনীতি সহ বিয়ের ক্ষেত্রে দিয়েছে কতিপয় বিধিনিষেধ। তাই প্রথমেই আমাদেরকে তা অনুসরণ করতে হবে। অতঃপর দাম্পত্য জীবনে ধর্মীয় বিধিমালাগুলো মেনে চলতে বলা হয়েছে। যদি কখনো নিজেদের মাঝে মনোমালিন্য দেখা দেয় তাহলে আপস-নিষ্পত্তি করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন, যদি কোনো নারী তার স্বামী থেকে দুর্ব্যবহার বা উপেক্ষার আশংকা করে তবে পরস্পরে মিমাংসা করে নিলে তাদের কোনো গোনাহ নেই এবং মীমাংসাই উত্তম (বিবাহবিচ্ছেদ থেকে)। (সূরা নিসা : ১২৮)।
এবং সমাধানের জন্য ধাপেধাপে এগুতে বলেছে। প্রথমে তাকে উপদেশ দিবে, বুঝানোর চেষ্টা করবে। তাতে কাজ না হলে শয্যা ত্যাগ করবে, তারপরও যদি কাজ না হয় তাহলে স্ত্রীর অন্যায় হলে স্বামী তাকে শাসন করবে। আল্লাহ বলেন, যাদের মাঝে অবাধ্যতার আশংকা করবে তাদেরকে সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ করো এবং প্রহার করো। (সূরা নিসা : ৩৪)। এরপরও যদি সমাধান না হয় এবং উভয়ের মাঝে বিচ্ছেদের আশংকা দেখা দেয় তাহলে উভয় পরিবারের অভিভাবকগণ একত্রিত হয়ে তাদের মাঝে মীমাংসা করার চেষ্টা করবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমরা যদি স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সম্পর্কচ্ছেদ হওয়ার আশংকা করো তবে (তাদের মাঝে মীমাংসা করার জন্য)স্বামীর পরিবার থেকে একজন এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন সালিশ নিযুক্ত করো। তারা দুজন যদি মীমাংসা চায় তবে আল্লাহ তাদের মাঝে ঐক্য সৃষ্টি করে দিবেন। (সূরা নিসা : ৩৫)।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস
শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া
ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল
‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’
প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের
প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া
মুসলিম চিকিৎসক
শীর্ষে দিল্লি
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান