দাওয়াতের লক্ষ্য হোক ইসলাম
২৫ আগস্ট ২০২৩, ০৭:৪৭ পিএম | আপডেট: ২৬ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম
দাওয়াত একটি আরবী শব্দ, যার অর্থ ডাকা, আহবান করা। ইসলামে দাওয়াতের সারকথা হচ্ছে, মানুষকে দুনিয়ার শান্তি ও আখিরাতের মুক্তির দিকে আহবান করা। ইসলামের আবির্ভাব শুধু ব্যক্তির কল্যাণের জন্য নয়; সমগ্র মানবজাতির কল্যাণের জন্যই ইসলাম। আর ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের সৌভাগ্য দুটি বিষয়ের উপর নির্ভরশীল: সালাহ ও ইসলাহ। অর্থাৎ নিজে সংশোধন হওয়া এবং অন্যকে সংশোধন করা। দাওয়াতের কাজ ছাড়া যা কখনো সম্ভবপর নয়। আল্লাহ তাআলা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। মানুষকে এ পৃথিবীর বাসিন্দা বানিয়েছেন। তিনি তাদেরকে কোনো কিছু ছাড়া ছেড়ে দেননি। বরং তাদের জন্য প্রয়োজনীয় খাবার-পানীয় ও পোশাক সৃষ্টি করেছেন। যুগে যুগে তাদের চলার জন্য জীবনাদর্শ নাযিল করেছেন। সর্বকালে ও সর্বস্থানে আল্লাহর নাযিলকৃত আদর্শ অনুসরণ করার মধ্যে ও অন্য সকল আদর্শ বর্জন করার মধ্যেই মানবজাতির কল্যাণ ও সুখ নিহিত রয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন : এ পথই আমার সরল পথ। কাজেই তোমরা এর অনুসরণ করো এবং অন্যান্য পথ অনুসরণ করবে না, করলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করবে। এভাবে আল্লাহ্ তোমাদেরকে নির্দেশ দিলেন যেনো তোমরা তাকওয়ার অধিকারী হও। (সূরা আনআম : ১৫৩)।
ইসলাম হচ্ছে সর্বশেষ আসমানী জীবনব্যবস্থা। আর কুরআন হচ্ছে- সর্বশেষ আসমানী কিতাব। মুহাম্মদ (সা.) হচ্ছেন- সর্বশেষ নবী ও রাসূল। আল্লাহ তাঁকে এ জীবন-বিধান সকল মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন : এ কুরআন আমার নিকট ওহী করা হয়েছে যেনো তোমাদেরকে এবং যার নিকট তা পৌঁছবে তাদেরকে এর দ্বারা সতর্ক করতে পারি। (সূরা আনআম : ১৯)। আল্লাহ তাঁর রাসূল মুহাম্মদ (সা.)-কে ইসলাম দিয়ে সকল মানুষের কাছে প্রেরণ করেছেন। তিনি বলেন : আপনি বলুন, হে মানুষ! নিশ্চয় আমি তোমাদের সকলের প্রতি আল্লাহ্র রাসূল। (সূরা আরাফ : ১৫৮)। ইসলামের দিকে দাওয়াত দেয়া একটি উত্তম আমল। যেহেতু এই দাওয়াত দানের মাধ্যমে মানুষ সরল পথের দিশা পায়। এর মাধ্যমে মানুষকে তার দুনিয়া ও আখেরাতে শান্তির পথ দেখানো হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন : ওই ব্যক্তির চেয়ে আর কার কথা উত্তম হতে পারে যে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে, নেক আমল করে। আর বলে অবশ্যই আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা হামীম আস-সাজদাহ : ৩৩)।
ইসলামের দিকে আহ্বান করা একটি মর্যাদাপূর্ণ মিশন। এটি নবী-রাসূলদের কাজ। রাসূল (সা.) বর্ণনা করেছেন যে, তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর মিশন এবং তাঁর অনুসারীদের মিশন হচ্ছে- আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়া। আল্লাহ তাআলা বলেন : বলুন, এটাই আমার পথ, আমি জেনে-বুঝে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকি, আমি এবং যারা আমার অনুসরণ করেছে তারা। আর আল্লাহ্ কতই না পবিত্র এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। (সূরা ইউসূফ : ১০৮)। আমভাবে সকল মুসলমান এবং খাসভাবে আলেমসমাজকে ইসলামের দাওয়াত দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন : আর তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল যেন থাকে যারা কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে এবং সৎকাজের নির্দেশ দেবে ও অসৎকাজে নিষেধ করবে; আর তারাই সফলকাম। (সূরা আলে-ইমরান : ১০৪)। রাসূল (সা.) বলেন : আমার পক্ষ থেকে একটি আয়াত হলেও মানুষের কাছে পৌঁছিয়ে দাও। (সহিহ বুখারী : ৩৪৬১)।
আল্লাহর দিকে দাওয়াত দান একটি মহান মিশন ও গুরুদায়িত্ব। কারণ দাওয়াত মানে- মানুষকে এক আল্লাহ্র ইবাদতের দিকে ডাকা, তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে আসা, অনিষ্টের জায়গায় কল্যাণ বপন করা, বাতিলের বদলে হক্ককে স্থান করে দেওয়া। তাই যিনি দাওয়াত দিবেন তার ইলম, ফিকহ, ধৈর্য, সহনশীলতা, কোমলতা, দয়া, জান-মালের ত্যাগ, নানা পরিবেশ-পরিস্থিতি ও মানুষের আচার-অভ্যাস সম্পর্কে অবগতি ইত্যাদি গুণ থাকা প্রয়োজন। আল্লাহ তাআলা বলেন, আপনি মানুষকে দাওয়াত দিন আপনার রবের পথে হিকমত ও উত্তম কথার মাধ্যমে এবং তাদের সাথে তর্ক করুন উত্তম পদ্ধতিতে। নিশ্চয় আপনার রব, তাঁর পথ ছেড়ে কে বিপথগামী হয়েছে, সে সম্বন্ধে তিনি বেশী জানেন এবং কারা সৎপথে আছে তাও তিনি ভালভাবেই জানেন। (সূরা নাহল: ১২৫)।
আল্লাহ তাআলা নি¤েœাক্ত বাণীতে তাঁর রাসূলের উপর অনুগ্রহের কথা উল্লেখ করেন, আল্লাহর দয়ায় আপনি তাদের প্রতি কোমল-হৃদয় হয়েছিলেন; যদি আপনি রূঢ় ও কঠোরচিত্ত হতেন তবে তারা আপনার আশপাশ থেকে সরে পড়ত। কাজেই আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন এবং কাজে কর্মে তাদের সাথে পরামর্শ করুন। (সূরা আলে-ইমরান: ১৫৯)। দাঈ বা দাওয়াত দানকারী দাওয়াত দিতে গিয়ে তর্কের সম্মুখীন হতে পারেন। বিশেষত আহলে কিতাবদের (ইহুদী ও খ্রিস্টান) সাথে। যদি তর্কের পর্যায়ে পৌঁছে যায় সেক্ষেত্রে আল্লাহ আমাদেরকে উত্তম পন্থায় তর্ক করার নির্দেশ দিয়েছেন। উত্তম তর্ক হচ্ছে- কোমলতা ও দয়ার মাধ্যমে, ইসলামের বুনিয়াদি দিকগুলো তুলে ধরার মাধ্যমে, ঠিক যেভাবে নির্মলভাবে কোনরূপ জোর-জবরদস্তি ব্যতিরেকে এ বুনিয়াদগুলো এসেছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, আর তোমরা উত্তম পন্থা ছাড়া কিতাবীদের সাথে বিতর্ক করবে না, তবে তাদের সাথে করতে পার, যারা তাদের মধ্যে যুলুম করেছে। আর তোমরা বল, আমাদের প্রতি এবং তোমাদের প্রতি যা নাযিল হয়েছে, তাতে আমরা ঈমান এনেছি। আর আমাদের ইলাহ্ ও তোমাদের ইলাহ্ তো একই। আর আমরা তাঁরই প্রতি মুসলিম (আত্মসমর্পণকারী)। (সূরা আনকাবুত: ৪৬)।
আল্লাহর দিকে দাওয়ার দেয়ার রয়েছে মহান মর্যাদা ও অফুরন্ত প্রতিদান। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করবে তাদের সওয়াবের কোনো কমতি হবেনা। আর কেউ ভ্রষ্টতার দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান পাপের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করবে তাদেরও পাপের কোনো কমতি হবেনা। (সহিহ মুসলিম- ২৬৭৪)। বৈষয়িক কোন কিছুর ভিত তৈরী হয়ে পূর্ণতা পেতে যেমন পরিশ্রম ও ধৈর্যের প্রয়োজন তেমনি মানুষের অন্তরগুলো গড়ে তুলতে এবং সেগুলোকে সত্যের পথে নিয়ে আসতে ধৈর্য ও ত্যাগের প্রয়োজন। রাসূল (সা.) ইসলামের দিকে দাওয়াত দিয়েছেন এবং কাফের, ইহুদী ও মুনাফিকদের নির্যাতনের উপর ধৈর্য ধারণ করেছেন। তারা তাঁর সাথে উপহাস করেছে, মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে, কষ্ট দিয়েছে, পাথর ছুড়ে মেরেছে। তারা বলেছে- তিনি যাদুকর, পাগল। তারা তাঁকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে বলেছে যে, তিনি কবি বা গণক। এসব কিছুর ওপর তিনি ধৈর্য ধারণ করেছেন। এক পর্যায়ে আল্লাহ তাঁকে সাহায্য করেছেন, তাঁর ধর্মকে বিজয়ী করেছেন। তাই দাঈর কর্তব্য হচ্ছে- তাঁর অনুসরণ করা। অতএব আপনি ধৈর্য ধারণ করুন, নিশ্চয় আল্লাহ্র প্রতিশ্রুতি সত্য। আর যারা দৃঢ় বিশ্বাসী নয় তারা যেন আপনাকে বিচলিত করতে না পারে। (সূরা রূম : ৬০)।
তাই মুসলমানদের কর্তব্য হচ্ছে তাদের রাসূলের অনুসরণ করা। তাঁর আদর্শে পথ চলা। ইসলামের দাওয়াত দেয়া। আল্লাহর রাস্তায় কষ্টের মুখোমুখি হলে ধৈর্য ধারণ করা; যেভাবে তাদের রাসূল (সা.) ধৈর্য ধারণ করেছেন। অবশ্যই তোমাদের জন্য রয়েছে রাসূলুল্লাহ্র মধ্যে উত্তম আদর্শ, তার জন্য যে আশা রাখে আল্লাহ্ ও শেষ দিনের এবং আল্লাহ্কে বেশী স্মরণ করে। (সূরা আহযাব : ২১)। এ দ্বীনের অনুসরণ করা ব্যতীত এ উম্মত সুখী হতে পারবে না, কল্যাণ অর্জন করতে পারবে না। এজন্য আল্লাহ্ তাআলা সকল মানুষের কাছে এ ধর্মকে প্রচার করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, এটা মানুষের জন্য এক বার্তা, আর যাতে এটা দ্বারা তাদেরকে সতর্ক করা হয় এবং তারা জানতে পারে যে, তিনিই কেবল এক সত্য ইলাহ্ আর যাতে বুদ্ধিমানগণ উপদেশ গ্রহণ করে। (সূরা ইব্রাহিম : ৫২)।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
চকরিয়ায় বাইক-ডাম্পার মুখোমুখি সংঘর্ষে বায়ো ফার্মার এরিয়া ম্যানেজার নিহত
প্রকাশনা জালিয়াতি করে পদোন্নতির অভিযোগ রাবি অধ্যাপক সাহালের বিরুদ্ধে
সখিপুরে পুকুরের পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু
ইবিতে র্যাগিংয়ের ঘটনা, প্রতিবেদন চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়
‘মানুষ একদিন বলবে আ.লীগ নামে কোন দল ছিল না সন্ত্রাসীরাই আ.লীগ’
হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার, বরখাস্ত ডিসি মশিউর ও এডিসি জুয়েল
পান্তকে রেকর্ড দামে কিনে নিল লাক্ষ্ণৌ
তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন
বিএনপি’র জন্য ফাঁকা মাঠ এমন ভাবার কোন অবকাশ নাই: তারেক রহমান
রায়গঞ্জে বাস চাপায় ২ মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু
ঈদগাঁওতে ছোট ভাইয়ের আঘাতে বড় ভাইয়ের মৃত্যু
টেকনাফে সাগরে ভেসে যায় তিন শিশু, মৃত্যু উদ্ধার-১, নিখোঁজ দুই
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ
একতরফা ও গায়ের জোরের নির্বাচন দেখতে চাই না: প্রধান নির্বাচন কমিশনার
যশোরের পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু
নয়াদিল্লি-লন্ডনের নতুন প্রেস মিনিস্টার ফয়সাল ও আকবর
বিএনপির কেউ অন্যায় করলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে: রিজভী
আবারও আলোচনার তুঙ্গে শাকিব-পূজা,নেটিজেনদের দৃষ্টি কেড়েছে দুজনের ম্যাচিং পোশাক
কর্মসূচি স্থগিত করলেন অটোরিকশা চালকরা
মহানবীকে (সা.) নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব আন্দালিভ রহমান পার্থের