ক্ষমা পাওয়ার পূর্বশর্ত তওবা
০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:৪৭ পিএম | আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম
কল্পনা করুন, এলাকায় আপনি খুব বেশি ক্ষমতাবান ব্যক্তি। এলাকার সর্বোচ্চ প্রভাবশালী বাবার আদরের সন্তান আপনি। যাকে আলালের ঘরের দুলাল বলা হয়। কিন্ত আপনার এই ক্ষমতা আপনাকে কুপথে পরিচালিত করছে। আপনি প্রতিনিয়তই অসহায় মানুষের প্রতি অন্যায় করে চলেছেন। গলির মোড়ের দোকান থেকে প্রতিদিন আপনার সাঙ্গ-পাঙ্গসহ চা-বিস্কুট, পান-সিগারেট খেয়ে টাকা মন চাইলো তো দিচ্ছেন, আবার মন চাচ্ছে নাতো দিচ্ছেন না। এটা যে আপনি অন্যায় করছেন, সেটা আপনিও জানেন, দোকানিও জানেন। ক্ষমতার জোরে আপনি সেটা গায়ে মাখছেন না বা ভাবছেন পাপ হচ্ছে না, অন্যদিকে ভয়ে দোকানি আপনাকে কিছু বলতে পারছেন না।
এলাকার মসজিদের নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত ইমাম সাহেব রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় আপনার সাঙ্গ-পাঙ্গসহ ইমাম সাহেবের যা ছিল তা কেড়ে নিলেন। উনি অসহায়ের মতো একবার আপনার দিকে একবার আকাশের দিকে তাকিয়ে কিছু না বলে চলে গেলেন। এটাও যে অন্যায় সেটা আপনিও জানেন আবার ইমাম সাহেবও। কিন্তু ক্ষমতার জোরে আপনি গায়ে মাখছেন না বা ভাবছেন পাপ হচ্ছে না, আর ভয়ে ইমাম সাহেবও কিছু বলছেন না। এভাবে নানান উপায়ে আপনি বিভিন্ন জনের ক্ষতি করে চলেছেন প্রতিনিয়ত। আপনি যে আপনার এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব করছেন সেটা এলাকার কমবেশি সবাই মোটামুটি জানে, কিন্তু ভয়ে কেউ কিছু বলছে না। এদিকে আপনার কুচ পরোয়া নেহি, আপনি আছেন আপনার তালে।
এভাবেই চলছে জীবন। হঠাৎ এমন একদিন আসলো, যেদিন আল্লাহ কোনো এক উছিলায় আপনাকে হিদায়াত দান করলেন। আপনার মধ্যকার ফিতরত উদয় হলো, আপনার ভেতরে নৈতিকতা বীজ বুনলো, আপনি বুঝতে পারলেন এতোদিন যা করে এসেছেন তা পাপ, মহা পাপ। বুঝতে পেরেছেন আপনি মহা ভুলের মধ্যে ছিলেন এতোদিন। আপনি সুপথে আসার সিদ্ধান্ত নিলেন। আল্লাহ প্রদত্ত এবং রাসূল (সা.) এর নির্দেশিত পথে নিজের জীবন পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নিলেন। যেই ভাবা সেই কাজ, আপনি সর্বপ্রথম গেলেন গলির মোড়ের দোকানির কাছে। গিয়ে তার কাছ থেকে ক্ষমা চাইলেন। ওয়াল্লাহি খুশিতে ছলছল নয়নে তিনি আপনাকে ক্ষমা করে দিবেন বিনা শর্তে, পূর্বের কোনো ক্ষতিপূরণ ছাড়াই। এভাবে ইমাম সাহেব থেকে শুরু করে এলাকার যত মানুষের আপনি ক্ষতি করেছেন, তাঁদের কাছে ক্ষমা চাইলেই বিনা ক্ষতিপূরণেই আপনাকে ক্ষমা করে দিবেন, তাতে কোনো ভুল নেই। বরং এই ভেবে সবাই হাল ছেড়ে বাঁচবেন যে, আজকে থেকে কেউ আর অত্যাচারের স্বীকার হবেন না।
এবার আপনার মনে ভাবনার উদয় হলো আমার এতো এতো পাপের পর আল্লাহ তায়ালা কি আমাকে ক্ষমা করবেন? আরশের সুশীতল ছায়াতলে কি অদৌ আমার আশ্রয় হবে? তবে এবার আপনাকেই বলছি, একটু চিন্তা করুন তো, যে মানুষকে মহান আল্লাহ তাঁর রহমতের বিশাল ভান্ডার থেকে ন্যানো অনু পরিমাণ রহমত দান করেছেন, সেই মানুষই আপনাকে বিনা শর্তে ক্ষমা করে দিলেন তাদের ক্ষতি করার পরও। তাহলে আপনি আল্লাহ তায়ালার কোনো ক্ষতি না করে (এতোদিন যা করেছেন সব নিজেরই ক্ষতি করেছেন) রহমতের ভান্ডার, রাহমানুর রহীম আল্লাহ কেন আপনাকে ক্ষমা করবেন না? বরং আল্লাহ খুশি হবেন, মহা খুশি। আপনি কি জানেন যে, আমরা যখন তওবা করে আল্লাহর কাছে ফিরে আসি তখন আল্লাহ এই ব্যক্তির চেয়ে বেশি খুশি হন, যে মরুভূমিতে তার উট হারিয়ে আবার তা খুঁজে পায়!
আপনাকে উদ্দেশ্যে করেই মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ বলেছেন : অতঃপর যে তওবা করে স্বীয় অত্যাচারের পর এবং সংশোধিত হয়, নিশ্চয় আল্লাহ তার তওবা কবুল করেন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু। (সূরা মায়িদা- ৫:৩৯)। অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন : অন্তর যারা অজ্ঞতাবশতঃ মন্দ কাজ করে, অতঃপর তওবা করে এবং নিজেকে সংশোধন করে নেয়, আপনার পালনকর্তা এসবের পরে তাদের জন্যে অবশ্যই ক্ষমাশীল, দয়ালু। (সূরা নাহল- ১৬:১১৯)। ‘অবশ্যই আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করবেন, যারা ভূলবশতঃ মন্দ কাজ করে, অতঃপর অনতিবিলম্বে তওবা করে; এরাই হল সেসব লোক যাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাবান। (সূরা নিসা- ৪:১৭)। তাছাড়া আপনার ব্যাপারে রাসূল (সা.) কে উদ্দেশ্যে করে দয়াময় আল্লাহ তায়ালা বলেন : আর যখন তারা আপনার কাছে আসবে যারা আমার নিদর্শনসমূহে বিশ্বাস করে, তখন আপনি বলে দিন, তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। তোমাদের পালনকর্তা রহমত করা নিজ দায়িত্বে লিখে নিয়েছেন যে, তোমাদের মধ্যে যে কেউ অজ্ঞতাবশতঃ কোন মন্দ কাজ করে, অনন্তর তওবা করে নেয় এবং সৎ হয়ে যায়, তবে তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, করুণাময়। (সূরা আনআম- ৬:৫৪)। আর যারা মন্দ কাজ করে, তারপরে তওবা করে নেয় এবং ঈমান নিয়ে আসে, তবে নিশ্চয়ই তোমার পরওয়ারদেগার তওবার পর অবশ্য ক্ষমাকারী, করুণাময়। (সূরা আরাফ- ৭: ১৫৩)।
কিন্তু যারা বুঝার পরও ফিরে আসবে না, মানুষের হক নষ্ট করতে থাকবে। তাদেরকে সতর্ক করে মহান আল্লাহ বলেন : অতঃপর যদি তোমরা পরিত্যাগ না কর, তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হয়ে যাও। কিন্তু যদি তোমরা তওবা কর, তবে তোমরা নিজের মূলধন পেয়ে যাবে। তোমরা কারও প্রতি অত্যাচার করো না এবং কেউ তোমাদের প্রতি অত্যাচার করবে না। (সূরা বাক্বারা- ২:২৭৯)। আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিক বুঝ দান করুন এবং সঠিক পথে নিজেকে পরিচালিত করার তৌফিক দান করুন। আমীন।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস
শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া
ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল
‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’
প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের
প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া
মুসলিম চিকিৎসক
শীর্ষে দিল্লি
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান