ঢাকা   রোববার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ | ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

আক্রান্ত ফিলিস্তিন : আমাদের করণীয়

Daily Inqilab মুফতি আইয়ুব নাদীম

১৪ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম | আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম

বিশ্বের মানচিত্রে লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মাজলূম রাষ্ট্রের নাম ফিলিস্তিন। ফিলিস্তিন বিশ্বের আর দশটা রাষ্ট্রর মতো, সাধারণ কোন রাষ্ট্র নয়, বরং মুসলমানদের প্রথম কেবলা বাইতুল মাকদিস ধারণকারী এক পবিত্র ভূমি। শতশত নবী-রাসূল, আর হাজারো সাহাবীদের পদধূলিত এক পূণ্যভূমি। এটি সেই মর্যাদাপুর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ সজিদের দেশ যেখানে মে’রাজ রজনীতে সমস্ত নবী-রাসুলগন ও ফেরেশতারা বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর ইমামতীতে দুই রাকা’ত নামাজ আদায় করেছিলেন। বিশ্ব নবী এবং সাহাবীগন প্রথমে এই মাসজিদুল আকসার দিকে ফিরেই নামাজ আদায় করতেন। তাছাড়া হযরত ইব্রাহীম আ. ও হযরত মুসা আঃ সহ অসংখ্য নবী-রাসূলগনের কবর এই খানে। তাই স্বাভাবিক ভাবেই এই রাষ্ট্র কোটি কোটি মুসলমানের হৃদয়ে রাজ্যে আবেগ ও ভালোবাসা শীর্ষে অবস্থান করে। সেহেতু কোন সন্দেহ নেই ফিলিস্তিনের আজকের এই বিভীষিকাময় পরিস্থিতি দেখে, যেকোন মুসলমানের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। ভৌগলিক নানা বাধা, প্রতিবন্ধকতা, সীমাবদ্ধতার কারণে আমরা দূর দেশ থেকে তাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই-সংগ্রামে শরীক হতে পারছিনা। পারছিনা বলে, কি আমাদের কিছু করার নেই? না, আমাদেরও অনেক কিছু করার আছে। ঘৃণা প্রকাশ করা: এই মুহূর্তে দখলদার ইসরাইলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে হাঁটে- ঘাটে, মাঠে-ময়দানে সমস্বরে ঐক্যবদ্ধ ভাবে বলিষ্ঠ কন্ঠে তাদের ব্যাপারে তীব্র খুব ও ঘৃণা প্রকাশ করা। আর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী বিপ্লবী মজলুম জনতার পক্ষে সংহতি ও জোড়ালো সমর্থন প্রকাশ করা। কাফেররা সহজেই এক হয়ে যায়। অথচ আমরা চূড়ান্ত সংকটেও এক হতে পারি না। কারণ, ওরা যা আছে সব কাফের। নিরেট কাফের। কিন্তু মুসলমান যা আছে, সব মুসলিম নয়। এদের মধ্যে কিছু মুনাফিকও আছে। বিষয়টি একটি হাদিস দ্বারাও বোঝা যায়, মহানবী (সা.) বলেছেন, মুমিনের পরস্পর পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা দয়া-মায়া, মমতার দৃষ্টান্ত একটি দেহের মতো,যখন দেহের কোন অঙ্গ পীড়িত হয়, তখন তার জন্য সারা দেহ অনিদ্রা ও জ্বরে আক্রান্ত হয়।’ (বুখারী:৬০১১) বোঝা গেল, পৃথিবীর যেকোন প্রান্তরে কোন মুসলমান আক্রান্ত হলে অপর মুসলমান ভাই তার জন্য ব্যাথিত হবে এবং তার ব্যথা উপশম ও মর্যাদা রক্ষার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা সাধনা করবে। রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ করা: রাজনৈতিক ছোট- বড় প্রতিটি দলের জন্য জরুরি হল-নিজেদের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে ঐক্যবদ্ধ ভাবে তীব্র প্রতিবাদ ও আন্দোলন গড়ে তোলা। কুনুতে নাযিলাহর আমল: প্রতিদিন ফজরের নামাজে কুনুতে নাযিলার আমল করা। কুনুতে নাযিলার মর্ম হলো-মুসলমানদের ওপর কোন পিবদ-আপদ নেমে আসলে ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে হেদায়েত বা বদদোয়ার নিয়তে ওই আমল করাকে বোঝায়। এটি একটি ইসলামী সভ্য- সংস্কৃতির সুপ্রতিষ্ঠিত ও প্রমাণিত একটি সুন্নাত।এব্যাপারে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে, একটি হাদিসে হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা.) (ফজর সালাতে) সর্বদা কুনুত (নাযিলাহ) পড়তেন না; শুধু পড়তেন কোন জাতির জন্য দুআ করতে বা বদদুআ করার প্রয়োজন হলে। তিনি কুনুত পড়তেন যখন ফজর সালাতের দ্বিতীয় রাকাতের রুকু থেকে মাথা উঠাতেন। (সহীহ ইবনে খুজাইমা:-১০৯৭,)

দোয়া করা: দূর দেশে বসে দূরাবস্থায় নিপতিত মজলুম ভাই-বোনদের জন্য বেশি বেশি দোয়া-দরুদ পড়া। এ ব্যাপারে একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হযরত আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু সূত্রে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলকে বলতে শুনেছি,‘যখন কোন মুসলমান নর-নারীর তার ভাইয়ের জন্য পশ্চাতে অদৃশ্য দোয়া করে, তখনই তার (মাথার ওপর নিযুক্ত) ফেরেশতা বলেন,আর তোমর জন্যও অনুরূপ।’ (মুসলিম : ২৭৩২)। তাই আসুন!বর্তমান যুদ্ধময় এহেন পরিবেশ, পরিস্থিতিতে আল্লাহমুখি হই। কারণ এটার বিকল্প নেই। উম্মাহর সম্পর্ক আল্লাহর সাথে যত বাড়বে আল্লাহও তার নযর আমদের দিকে তত প্রসারিত করবেন। আল্লাহর কাছে দুআ ছাড়া এখন আমাদের কিছুই করার নেই। সাথে সাথে আমরা আমাদের সাধ্যানুযায়ী আমাদের দূর দেশে বসে ইসরাইলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ ও আন্দোলন গড়ে তুলি।আর স্বাধীনতাকামী ফিলিস্তিনের মজলুম ভাই-বোনদের জন্য উপরিউক্ত করণীয়গুলো যথাসাধ্য পালনের চেষ্টা করি। আল্লাহ তাআলা আমাদের সহায় হোন।


বিভাগ : ইসলামী জীবন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম
মসজিদে পরে এসে ঘাড় ডিঙিয়ে সামনের কাতারে যাওয়া জায়েজ নেই
দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য সুন্দর জীবন এবং কৃতজ্ঞতাবোধ
যুগে যুগে জুলুম ও জালিমের পরিণতি
সালাম ইসলামী সম্ভাষণ রীতির এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ
আরও

আরও পড়ুন

ট্রাম্পের জয়ের পর ইলন মাস্কের সম্পদ বাড়ছে রকেট গতিতে

ট্রাম্পের জয়ের পর ইলন মাস্কের সম্পদ বাড়ছে রকেট গতিতে

ভয়াবহ তুষারঝড়ে বিপর্যস্ত যুক্তরাজ্য, বহু ফ্লাইট বাতিল

ভয়াবহ তুষারঝড়ে বিপর্যস্ত যুক্তরাজ্য, বহু ফ্লাইট বাতিল

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরও ১২০ ফিলিস্তিনি

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরও ১২০ ফিলিস্তিনি

ইভেন্টের  সেরা লড়াইটি উপহার দিলেন আফরা-সানজিদা

ইভেন্টের সেরা লড়াইটি উপহার দিলেন আফরা-সানজিদা

ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান পাহাড়ের পর জয়-জাকিরকে হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ

ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান পাহাড়ের পর জয়-জাকিরকে হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ

নাটকীয় শেষ দশ মিনিটে দুই গোল শোধ করে বার্সাকে রুখে দিল সেল্তা

নাটকীয় শেষ দশ মিনিটে দুই গোল শোধ করে বার্সাকে রুখে দিল সেল্তা

বিবর্ণ সিটিকে ইতিহাদেই বিধ্বস্ত করলো টটেনহ্যাম

বিবর্ণ সিটিকে ইতিহাদেই বিধ্বস্ত করলো টটেনহ্যাম

নটিংহ্যামকে হারিয়ে চার ম্যাচের জয়খরা কাটালো আর্সেনাল

নটিংহ্যামকে হারিয়ে চার ম্যাচের জয়খরা কাটালো আর্সেনাল

স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক

স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক

পাঠ্যবই ছাপায় অনিয়মে আনন্দ প্রিন্টার্সকে সতর্কতা

পাঠ্যবই ছাপায় অনিয়মে আনন্দ প্রিন্টার্সকে সতর্কতা

দক্ষিণ লেবাননে ৬ চিকিৎসাকর্মী নিহত

দক্ষিণ লেবাননে ৬ চিকিৎসাকর্মী নিহত

জনগণের সাথে জনসংযোগ বাড়াতে হবে

জনগণের সাথে জনসংযোগ বাড়াতে হবে

আমরা যুদ্ধে বিশ্বাসী না কেউ গায়ে পড়লে জবাবের প্রস্তুতি রাখতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

আমরা যুদ্ধে বিশ্বাসী না কেউ গায়ে পড়লে জবাবের প্রস্তুতি রাখতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথের কাছে ২৭ রেফারির চিঠি

বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথের কাছে ২৭ রেফারির চিঠি

ফের বাড়লো সোনার দাম, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা

ফের বাড়লো সোনার দাম, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা

বাংলাদেশে খেলা নিয়ে অনিশ্চিয়তায় হামজা!

বাংলাদেশে খেলা নিয়ে অনিশ্চিয়তায় হামজা!

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই হবে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের খেলা

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই হবে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের খেলা

সিলেটে মাজিদের ফিফটি

সিলেটে মাজিদের ফিফটি

অ্যাম্বাসেডর কাপ উশুতে সেনাবাহিনী চ্যাম্পিয়ন

অ্যাম্বাসেডর কাপ উশুতে সেনাবাহিনী চ্যাম্পিয়ন

মাদক শুধু ব্যক্তিকে নয় পরিবারকেও ধ্বংস করে

মাদক শুধু ব্যক্তিকে নয় পরিবারকেও ধ্বংস করে