ঢাকা   রোববার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ | ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ঘুষ একটি সামাজিক ব্যাধি

Daily Inqilab ইসমাঈল সিদ্দিকী

২৮ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৩ এএম

ঘুষ একটি সামাজিক ব্যাধি; যা মহামারির ন্যায় সমাজের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে এবং তৃণমূল থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ, সবাই এই ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে গেছে। অবস্থা এমন হয়েছে যে, ঘুষ ছাড়া বড় মাপের কোনো কিছু করার কথা কল্পনাই করা যায় না। আর ঘুষ না দিলে কেউ কোনো চাকরিতে নিয়োগও হতে পারে না। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে অদক্ষ, অনভিজ্ঞ ও অসৎ কর্মচারী নিয়োগ দেয়ার ফলে এসব কর্মকর্তা নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েই তার বিনিয়োগকৃত সমুদয় অর্থ উত্তোলনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। রাষ্ট্রের গুরত্বপূর্ণ সব সেক্টরে এসব অদক্ষ-অনভিজ্ঞ লোক নিয়োগ দেয়ার ফলে প্রাণহানিসহ নানাবিধ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও অহরহ ঘটছে।

ঘুষ ও দুর্নীতির ক্ষেত্রে ইসলাম অত্যন্ত কঠোরতা অবলম্বন করেছে। কারণ ঘুষ-দুর্নীতি সমাজের নৈতিকতার ভিত্তি ও মানুষের মানবিক মূল্যবোধ নষ্ট করে দেয়। দুর্নীতিবাজেরা অবৈধভাবে অন্যের অর্থবিত্ত আত্মসাৎ, লুটপাট ও জবরদখল করতে সচেষ্ট হয়। কোরআন মাজীদে অবৈধভাবে মানুষের ধনসম্পদ আত্মসাৎ করতে নিষেধ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করো না এবং মানুষের ধন সম্পত্তির কিছু অংশ জেনেশুনে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে তা বিচারকদের বা প্রশাসকদের কাছে পেশ করো না। (সূরা বাকারা : ১৮৮)।

যারা অন্যায়ভাবে মানুষের সম্পদ ভোগ করবে, তাদের আবাসস্থল জাহান্নামে হবে বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। এরশাদ হয়েছে, নিশ্চয়ই যারা অন্যায়ভাবে আল্লাহর সম্পদ আত্মসাৎ করবে, কিয়ামতের দিন তাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে জাহান্নাম। (বোখারী : ৩৯৯৫)। নবী কারীম সা. ঘুষদাতা এবং গ্রহীতা উভয়কে অভিসম্পাত করেছেন এবং ঘুষখোররা ইবাদত ও দান-খয়রাত করেও ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে বলে সতর্ক করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবন উমর রা. বর্ণনা করেন যে, রাসূল সা. বলেছেন : ঘুষদাতা ও গ্রহীতা উভয়ের ওপরই আল্লাহর লা’নত। (ইবনে মাজাহ:২৩১৩)।

অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূল সা. দীর্ঘ সফরে ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত, ধূলো মলিন এলোকেশে এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করে বলেন, সে আকাশের দিকে তাকিয়ে প্রার্থনা করছে, হে আমার প্রতিপালক! হে আমার প্রতিপালক! অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পোশাক হারাম। আর তার দেহও হারাম উপার্জন দ্বারা গঠিত। তার প্রার্থনা কবুল হবে কিভাবে’? (মুসলিম : ২৭৬০)। অর্থাৎ হারাম ভক্ষণ করায় তার প্রার্থনা কবুল হবে না যদিও মুসাফিরের প্রার্থনা সাধারণত কবুল হয়ে থাকে। (আবু দাউদ : ১৫৩৬)। দুনিয়ার জীবনই মানুষের শেষ নয় বরং মৃত্যুর পর মানুষকে আখিরাতের অনন্ত জীবনে প্রবেশ করতে হবে। সেদিন আল্লাহ তা‘আলার দরবারে দুনিয়ার জীবনের প্রতিটি কর্মের হিসাব দিতে হবে, এই চিন্তা জাগ্রতকরণ। কারণ, মানুষ যখন তার আবেগ- অনুভূতি, লোভ-লালসা, কামনা-বাসনাকে ধর্মীয় বিধিবিধান ও নৈতিক অনুশাসনের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসবে, তখন সে দুর্নীতিমুক্ত জীবিকা অর্জন করতে পারবে। শোষণমুক্ত সমাজ বিনির্মাণের জন্য জবাবদিহিতার কোনো বিকল্প নেই। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সর্বনি¤œ পর্যায় পর্যন্ত জবাবদিহিতার নিশ্চিতকরণ অফিস আদালতে ঘুষের লেনদেন প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। এ সম্পর্কে রাসূল সা. বলেন: তোমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল। আর তোমরা প্রত্যেকে স্বীয় দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। (বোখারী, ৮৯৩)।

পাশাপাশি কর্মচারীদের ন্যায়ানুগ ও প্রয়োজন মেটাতে পারে এরকম বেতন-ভাতার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। কারণ প্রয়োজনের তুলনায় স্বল্প বেতনের কারণেও মানুষ ঘুষের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। আমাদের প্রিয় নবী সা. শ্রমিকদের অধিকার সম্পর্কে বলেছেন, তারা তোমাদের ভাই। আল্লাহ তাদেরকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন। কারো ভাই তার অধীনে থাকলে তার উচিত নিজে যা খাবে তাই খাওয়াবে। নিজে যা পরবে তাকেও তা পরতে দিবে এবং তাকে দিয়ে এমন কাজ করাবে না যা তার সাধ্যাতীত। কোনভাবে তার উপর আরোপিত বোঝা বেশি হয়ে গেলে নিজেও সে কাজে তাকে সাহায্য করবে। (বোখারী : ২৫৪৫)।

 


বিভাগ : ইসলামী জীবন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম
মসজিদে পরে এসে ঘাড় ডিঙিয়ে সামনের কাতারে যাওয়া জায়েজ নেই
দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য সুন্দর জীবন এবং কৃতজ্ঞতাবোধ
যুগে যুগে জুলুম ও জালিমের পরিণতি
সালাম ইসলামী সম্ভাষণ রীতির এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ
আরও

আরও পড়ুন

ট্রাম্পের জয়ের পর ইলন মাস্কের সম্পদ বাড়ছে রকেট গতিতে

ট্রাম্পের জয়ের পর ইলন মাস্কের সম্পদ বাড়ছে রকেট গতিতে

ভয়াবহ তুষারঝড়ে বিপর্যস্ত যুক্তরাজ্য, বহু ফ্লাইট বাতিল

ভয়াবহ তুষারঝড়ে বিপর্যস্ত যুক্তরাজ্য, বহু ফ্লাইট বাতিল

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরও ১২০ ফিলিস্তিনি

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরও ১২০ ফিলিস্তিনি

ইভেন্টের  সেরা লড়াইটি উপহার দিলেন আফরা-সানজিদা

ইভেন্টের সেরা লড়াইটি উপহার দিলেন আফরা-সানজিদা

ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান পাহাড়ের পর জয়-জাকিরকে হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ

ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান পাহাড়ের পর জয়-জাকিরকে হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ

নাটকীয় শেষ দশ মিনিটে দুই গোল শোধ করে বার্সাকে রুখে দিল সেল্তা

নাটকীয় শেষ দশ মিনিটে দুই গোল শোধ করে বার্সাকে রুখে দিল সেল্তা

বিবর্ণ সিটিকে ইতিহাদেই বিধ্বস্ত করলো টটেনহ্যাম

বিবর্ণ সিটিকে ইতিহাদেই বিধ্বস্ত করলো টটেনহ্যাম

নটিংহ্যামকে হারিয়ে চার ম্যাচের জয়খরা কাটালো আর্সেনাল

নটিংহ্যামকে হারিয়ে চার ম্যাচের জয়খরা কাটালো আর্সেনাল

স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক

স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক

পাঠ্যবই ছাপায় অনিয়মে আনন্দ প্রিন্টার্সকে সতর্কতা

পাঠ্যবই ছাপায় অনিয়মে আনন্দ প্রিন্টার্সকে সতর্কতা

দক্ষিণ লেবাননে ৬ চিকিৎসাকর্মী নিহত

দক্ষিণ লেবাননে ৬ চিকিৎসাকর্মী নিহত

জনগণের সাথে জনসংযোগ বাড়াতে হবে

জনগণের সাথে জনসংযোগ বাড়াতে হবে

আমরা যুদ্ধে বিশ্বাসী না কেউ গায়ে পড়লে জবাবের প্রস্তুতি রাখতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

আমরা যুদ্ধে বিশ্বাসী না কেউ গায়ে পড়লে জবাবের প্রস্তুতি রাখতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথের কাছে ২৭ রেফারির চিঠি

বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথের কাছে ২৭ রেফারির চিঠি

ফের বাড়লো সোনার দাম, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা

ফের বাড়লো সোনার দাম, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা

বাংলাদেশে খেলা নিয়ে অনিশ্চিয়তায় হামজা!

বাংলাদেশে খেলা নিয়ে অনিশ্চিয়তায় হামজা!

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই হবে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের খেলা

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই হবে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের খেলা

সিলেটে মাজিদের ফিফটি

সিলেটে মাজিদের ফিফটি

অ্যাম্বাসেডর কাপ উশুতে সেনাবাহিনী চ্যাম্পিয়ন

অ্যাম্বাসেডর কাপ উশুতে সেনাবাহিনী চ্যাম্পিয়ন

মাদক শুধু ব্যক্তিকে নয় পরিবারকেও ধ্বংস করে

মাদক শুধু ব্যক্তিকে নয় পরিবারকেও ধ্বংস করে