স্বর্ণযুগে মুসলমানদের অবদান
২৫ মে ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২৫ মে ২০২৪, ১২:০৪ এএম
(গত দিনের পর) পদার্থবিজ্ঞান : আল বিরুনি তার আলোক বিষায়ক গ্রন্থে উল্লেখ করেন যে আলোর গতি শব্দের তুলানায় অসীম হতে পারে। রসায়নশাস্ত্র : বিজ্ঞানের সর্ববৃহৎ ও প্রধান শাখার নাম রসায়ন। রসায়নশাস্ত্রের জনক বলা হয় জাবির ইবনে হাইয়ানকে। রসায়নশাস্ত্রে বিভিন্ন মুসলিম মনীষী অবদান রাখেন। তাদের মধ্যে জাবির ইবনে হাইয়ান, খালিদ বিন-ইয়াজিদ, জাকারিয়া আল রাজী, আল-জিলদাকী প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। ভূ-গণিত: আবু রায়হান আল বিরুনি (৯৭৩-১০৪৮) প্রথম পৃথিবীর ব্যসার্ধ ৬৩৩৯.৬ কিমি (বর্তমান মান প্রায়. ৬৩৭১ কিমি ) নির্ণয় করেন। সংখ্যাবাচক চিহ্ন : মুসলিম গণিতবিদ আল খারেজমী সর্বপ্রথম সংখ্যাবাচক চিহ্নের ব্যবহার বিষয়ে ধারণা দেন। গণিতশাস্ত্রের উপর তার বিখ্যাত গ্রন্থ হলো ’কিতাবুল হিন্দ’। এখানে তিনি গণিতের বিভিন্ন জটিল বিষয়ের সমাধান দেখিয়েছেন।
দূরত্ব নির্ণয় : বিজ্ঞান ও গণিত জগতের এক অনন্য নাম ইবনুল হাইশাম। তিনিই প্রথম জ্যামিতিক গণনার সাহায্যে পৃথিবীর যেকোনো দুটি স্থানের মধ্যে দূরত্ব নির্ণয় করেন। সমুদ্র সূর্য ও নক্ষত্র : মুসলিম বিজ্ঞানী আল-ফারাবী সর্বপ্রথম সমুদ্রে সূর্য ও নক্ষত্র সমূহের উচ্চতা নির্ণয় করার আস্তারলব নির্মান করেন। যৌগিক সূত্র আবিষ্কার : জাবির ইবনে হাইয়ান প্রথম এসিড, গন্ধক, দ্রাবক, জল দ্রাবক, রৌপ্যক্ষার ও অনান্য যৌগিক সূত্র আবিষ্কার করেন। তাছাড়া তিনি ভস্মীকরণ ও লঘুকরণকে বৈজ্ঞানিক নিয়মে আলোচনা করেছেন। ডিমের পানি প্রস্তুতকরণ : একাদশ শতাব্দীর বিখ্যাত রসায়নবিদ ইমাম জাফর আস-সাদিক সর্বপ্রথম রসায়নশাস্ত্রের আলোকে ডিমের পানি প্রস্তুতকরণ পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। ধাতুর পরিবর্তন : মুসলিম মনীষী আবুল কাশেম আল ইরাকী সর্বপ্রথম ধাতুর পরিবর্তন সর্ম্পকে ধারণা দেন।
মানচিত্রের ধারণা : বিশ্ব মানচিত্রের প্রথম ধারণা দেন মুসলিম মনীষী আল-ইদ্রিসী। পরবর্তীতে এটিই বিশ্ব মানচিত্রের মডেল হিসেবে স্বীকৃত হয়। বর্ষপঞ্জি ও নক্ষত্র : উমর খৈয়াম প্রথম বর্ষপঞ্জি প্রনয়ণ করেন। পরবর্তীতে আল-বাত্তানী সর্বপ্রথম নক্ষত্রের চার্ট তৈরি করেন। উদ্ভিদবিদ্যা : উদ্ভিদবিদ্যায় মুসলমানদের অবদান অপরিসীম। উদ্ভিদবিদদের মধ্যে ইবনে বাতরের নাম উল্লেখযোগ্য। লতাপাতা সম্পর্কিত তাঁর তথ্যবহুল গ্রন্থটি আজও সকলের কাছে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। তাছাড়া মুসলমানরা ভূতত্ত্ব ও প্রাণিতত্ত্বে উন্নতি সাধন করেছিলেন। প্রকৌশল : বনু মুসা ভ্রাতাগণ তাদের ‘বুক অব ইনজিনিয়াস ডিভাইস’ বইয়ে, এক ধরনের স্বয়ংক্রিয় বাঁশির কথা উল্লেখ করেন যা সম্ভত প্রথম প্রোগামসম্পন্ন যন্ত্র। বাঁশিতে বাষ্প ব্যবহার করে শব্দ তৈরি করা হতো আর ব্যবহারকারী তা প্রয়োজন মতো এক এডজাস্ট করতে পারত। সামাজিক বিজ্ঞান : ইবনে খালদুনকে আধুনিক সমাজবিজ্ঞান, হিস্টোগ্রাফির, জনমিতি ও অর্থনীতির জনক হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
হাসপাতাল : ইসলামী বিশ্বে প্রথম হাসপতাল প্রতিষ্ঠা খলিফা হারুন-অর-রশিদ কর্তৃক ৮০৫ সালে বাগদাদে। দশম শতাব্দীতে বাগদাদে ৫ গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতাল ছিলো সেখানে কর্ডোবাতেই ছিল ৫০ টিরও বেশি হাসপাতাল। ত্রয়োদশ শতাব্দীর মিরশীয় গভর্নর আল মানসুর কালউন বিখ্যাত কালাউন হাসপাতাল তৈরি করেন যেখানে একটি মসজিদ ও চেপেল ছিল, পাশাপাশি বিভিন্ন রোগের জন্য আলাদা বিভাগ ও ডাক্তারদের জন্য গ্রন্থাগার ছিল। এটি চোখের চিকিৎসার জন্যও ব্যবহার হতো। এখানে ৮০০০ রোগীর ধারণ ক্ষমতা ছিল- ‘প্রতিদিন ৪০০০ গড়ে রোগীকে সেবা প্রদান করতো’। ঔষধ : আবু বকর মোহাম্মাদ ইবন যাকারিয়া আল রাযি প্রথম গুটিবসন্ত এবং হাম এর মাঝে পার্থক্য করেন যা পূর্বে একটি রোগ হিসাবে বিবেচনা করা হতো। আল জাহরাউয়ি ছিলেন প্রথম কোনও চিকিৎসক যিনি অ্যাকোপিক গর্ভাবস্থার বর্ণনা দিয়েছিলেন এবং হেমোফিলিয়ার বংশগত প্রকৃতি চিহ্নিত করা প্রথম চিকিৎসক। পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে, রাযিকে একবার বাগদাদের নতুন হাসপাতালের জন্য জায়গাটি বেছে নেওয়ার জন্য বলা হয়েছিল, তিনি নগরীর বিভিন্ন স্থানে মাংসের টুকরো ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন এবং সেই স্থানে হাসপাতালটি তৈরির প্রস্তাব দিয়েছিল যেখানে মাংসে সবচেয়ে ধীরে ধীরে পচন ধরছিল।
চক্ষু চিকিৎসায় : চক্ষু চিকিৎসায় মুসলমানদের মৌলিক আবিষ্কার রয়েছে। আলী আল মাওসুলি চোখের ছানি অপারেশনে সিদ্ধহস্ত ছিলেন। জর্জ সার্টনও তাকে জগতের সর্বপ্রথম মুসলিম চক্ষু চিকিৎসক বলে অকপটে স্বীকার করেছেন। তার ‘তাজকিরাতুল কাহহালিন’ চক্ষু চিকিৎসায় সবচেয়ে দুর্লভ ও মূল্যবান গ্রন্থ। এছাড়া চিকিৎসাশাস্ত্রে হাসান ইবনে হাইসাম, আলবেরুনি, আলী ইবনে রাব্বান, হুনাইন ইবনে ইসহাক, আবুল কাসেম জাহরাবি, জুহান্না বিন মাসওয়াই, সিনান বিন সাবিত, সাবিত ইবনে কুরা, জাবির ইবনে হাইয়ান প্রমুখও উল্লেখযোগ্য। শল্যচিকিৎসা : আবুল কাসিম আল জাহরাউয়ি হলেন ১০ম শতকের একজন ডাক্তার। তাকে মাঝে মাঝে শল্যচিকিৎসার জনক বলা হয়। অস্ত্রোপচার : মুসলিম বিজ্ঞানী আল-রাজী সর্বপ্রথম অস্ত্রোপচার বিষয়ে আধুনিক ভাবনা উদ্ভাবন করেন।
বাণিজ্য ও ভ্রমণ : অনেক মুসলমান ব্যবসার জন্য চীনে যায় এবং সাং রাজবংশের (৯৬০-১২৭৯) সময় আমদানি রপ্তানিতে তাদের ব্যাপক প্রভাব ছিল। মুহাম্মদ আল-ইদ্রিসি তাবুলা রোজারিয়ানা তৈরি করেছিলেন, যা মধ্যযুগের সেরা মানচিত্র, বিভিন্ন পরিব্রাজক যেমন ক্রিস্টোফার কলম্বাস এবং ভাস্কো দা গামার আমেরিকা ও ভারতে তাদের ভ্রমণে ব্যবহার করেছিলেন। শিল্প ও সংস্কৃতি : কবিতা : ১৩ শতকে পারস্য কবি রুমী অনেক বিখ্যাত কবিতা রচনা করেন যা আমেরিকার সবচেয়ে বেশি বিক্রিত কবিতাগুচ্ছের অন্যতম। চারুকলা : পান্ডুলিপি আলোকসজ্জা একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প ছিল এবং পারস্যের ক্ষুদ্র চিত্রশিল্প পারস্যীয় বিশ্বে সমৃদ্ধ হয়েছিল। পা-ুলিপি এবং আর্কিটেকচারাল অলংকরণে লিখিত আরবীর একটি অপরিহার্য বিষয় ক্যালিগ্রাফি।
সংগীত : নবম ও দশম শতাব্দীতে আরবি সংগীতের উন্নয়ন ঘটে। দার্শনিক আল-ফারাবী এর উন্নয়ন সাধনে তত্ত্ব প্রধান করে। তাঁর কাজ আন্দালুসিয়ার কোর্ট সংগীতকার জিরিয়াবের সংগীত অবলম্বনে ছিল। জিরিয়াব একজন খ্যাতনামা পলিম্যাথ ছিলেন, যার পাশ্চাত্য সভ্যতায় অবদানের মধ্যে ছিল নবম শতাব্দীর বিশ্ব সংগীতের দৃশ্যের আধিপত্য ছাড়াও আনুষ্ঠানিক খাবার, চুল কাটা, দাবা এবং আরও অনেক কিছু। (চলবে)
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র বৈঠক, হাসিনাকে ফেরানো নিয়ে আলোচনা থাকবে
রামু সেনানিবাসে সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালিত
এক সপ্তাহে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার
প্রবাসীদের যে জন্য সুখবর দিলো মালয়েশিয়া
জাবি শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, তদন্ত কমিটি গঠন, ফটকে তালা, মশাল মিছিল
মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল
"নতুন সিনেমা নিয়ে ফিরছেন গ্লোবাল তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি"
ড. ইউনূসকে নিয়ে খালেদা জিয়ার পুরোনো যে বক্তব্য ভাইরাল
নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি ইসলামী আন্দোলনের শুভ কামনা
আলোচনায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার ‘টুস করে ফেলে দেয়ার’ হুমকি
দীর্ঘ ১৫ বছর সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে পারেনি: খোকন
'ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে অভিনেতা তারিক আনাম খানের নাটক'
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ