ঢাকা   বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সততা ছাড়া মানবজনম মূল্যহীন

Daily Inqilab মুহাম্মদ শামসুল ইসলাম সাদিক

২৭ জুলাই ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২:০৩ এএম

সততা মনুষ্যত্ব্যের বিকাশ ঘটায়। সততাই মানব জীবনে সফলতা ও আনন্দ বয়ে আনে। সততাই বড় সম্পদ। সারা জীবন সৎ থাকার জন্য ওরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছে, সেই চেষ্টাই হলো ওদের বড় অর্জন। সত্য মানুষকে মুক্তি দেয়, মিথ্যা মানুষকে ধ্বংস করে। সৎলোক কখনও মিথ্যা কথা বলেনা, কারো সম্পদ লুট করেনা, তার দ্বারা ঘুষ গ্রহণ ও মানুষের সাথে প্রতারণা করা সম্ভব হয়না। প্রত্যেক সমাজেই সততার জয় জয়কার। সততার সামাজিক মূল্য অপরিসীম। এই সততার মাধ্যমেই সমাজে সুখ ও শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। সততার অভাবে সমাজ দুর্নীতিগ্রস্থ হয়। বিশ্বের দরবারে দেশ ও জাতি হয় কলংকিত। বিশ্বে আজ অশান্তির মূল কারণ হচ্ছে সৎলোকের অভাব। সৎ ও অসততার মধ্যে পার্থক্যটা হলো আকাশ-পাতাল। সৎ লোকের জীবনবোধ অসৎ লোকের জীবনবোধের চেয়ে বিপরীতধর্মী। সৎলোকের অভাবে জাতিতে জাতিতে সংঘাত-সংঘর্ষ লেগেই আছে। ফলে বিশ্বের প্রতিটি কণায় কণায় অশান্তির অগ্নিশিখা দাউদাউ করে জ্বলছে।

সৎ লোক বৈষয়িকভাবে দরিদ্র থাকতে পারে। সে স্বেচ্ছায় ওই রকম দারিদ্র্যকে বেছে নিয়েছে। সৎ লোক নিজে জীবনচারিতায় কী আনন্দ পায়, সেটা একজন অসৎ লোক বুঝবে না। অসৎ লোকদের ধারণাই হলো, সমাজে সব লোকই অসৎ। আবার অসৎ লোক নিজের অসততার পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়েও বলে, সমাজে সব লোকই অসৎ। আর সে নিজে যা করছে তা-ই স্বাভাবিক। কিছু অসৎ লোক এমনও বলে যে ওসব পদে বসে সৎ থাকা যায় না। সৎ থাকতে গেলে চাকরি হারাতে হবে। ব্যক্তি পর্যায়ের কিছু লোক বলে ট্যাক্স অফিসে গিয়ে সৎ হতে গেলে ট্যাক্সম্যানরা আপনার কাছ থেকে শুধু বেশি ট্যাক্সই চাইবে। অসৎ ও দুর্নীতিবাজ লোকদের আরেক কৌশল হলো কী করব, ওপরের সবাইকে খুশি করতে হয়! অসৎ লোক কাউকে নিয়ম ভেঙে কিছু সুবিধা দিতে গিয়ে বলে, ওপরের নির্দেশ আছে। অসৎ লোকেরা আবার সংঘবদ্ধ থাকে। তাদের পাশ কাটিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত কেউ দিতে গেলে তারা তা ঠেকিয়ে দেবে। সৎ লোক কারা? সৎলোকের পরিচয় কি? সততার স্বরূপ কি?

এসব প্রশ্নের জবাব নবম হিজরী তাবুকের যুদ্ধে অনেক মুনাফিক মিথ্যা ওজর পেশ করে শরীক হয় নাই। মুনাফিকরাতো ইসলামের চরম শত্রু। সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে কাব ইবনে মালিক (রা.), মুররা ইবনে রবি (রা.) ও হেলাল ইবনে উমাইয়া (রা.) এই তিনজন জিহাদের প্রবল আকাংখা থাকা সত্ত্বেও বিশেষ অসুবিধার কারণে তাবুক যুদ্ধে শরীক হতে পারেন নি। অথচ এসব সাহাবী ছিলেন আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রেমে আসক্ত। তাবুক যুদ্ধে শরীক না হওয়ার কারনে উক্ত তিন সাহাবীকে এক ঘরে করে রাখা হয়েছিল। উক্ত তিন সাহাবীই ছিলেন সৎ ও মহৎ। আর সৎ থাকলে দুঃখ-কষ্ট ভোগ করতেই হয়। বিনম্র চিত্তে তিন সাহাবী আল্লাহর দরবারে তওবা করতে থাকলেন। ৫০ দিন এইভাবে এক ঘরে থাকার পর আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করলেন। আল্লাহ পরিচয় করিয়ে দিলেন উক্ত তিন সাহাবীই সৎ। ইরশাদ হচ্ছে: হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সৎলোকের সঙ্গী হয়ে যাও।’ (সূরা তওবা : আয়াত-১১৯)।

দুর্নীতিবাজদের আরেক কৌশল হচ্ছে, সৎ লোকগুলোকেও দুর্নীতিবাজ বলা। তারা বলতে থাকে, ও, ওই লোকটা সৎ আছে কারণ সে তো দুর্নীতি করার সুযোগই পায়নি। সুযোগ পেলে দেখতেন সে হতো দুর্নীতির গডফাদার! আসলে দুর্নীতিবাজরা সৎ লোকদের এসব বলে একটু হলেও কাদা মেখে দিতে চায়। তবে যারা সৎ আছে তারা এসব নিন্দাবাদের পরোয়া করে না। তারা সৎ থাকে নিজের বিশ্বাসকে মূল্য দেওয়ার জন্য। তাদের বিশ্বাস, সততা তাদের অন্যদের থেকে শুধু আলাদাই করবে না, প্রকৃতপক্ষে তারাই সফল হবে। তাদের কাছে সফলতার মাপকাঠি হলো সততা আর পরিশ্রম। তাদের আরেক গুণ হলো তারা বিনয়ী। দুনিয়ার মিথ্যা লোভ তাদের তাড়িয়ে ফিরতে পারে না। তারা হলো এক অনন্য মানুষ। সৎ লোকের সুনাম ও সুখ্যাতি চিরদিন অব্যয় অক্ষয় থাকে। কোরআনে বর্ণিত আসহাবে কাহাফের ঘটনা এর জ্বলন্ত প্রমাণ।

মূর্তিপূজক বাদশা দাকিয়ানুসের আমলে ৭জন যুবক তাদের ঈমান ও সততা রক্ষার জন্য তাদের দেশ ত্যাগ করেন। একটি কুকুরও তাঁদের সঙ্গী হয়ে যায়। তারা একটি পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নেয় এবং কুকুরটি গুহার দ্বারে পাহারাদার হিসাবে কাজ করে। ঐ গুহার মধ্যে তারা ঘুমিয়ে পড়ে। এক ঘুমে ৩০৯ বছর অতিবাহিত হয়ে যায়। ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে তাদের একজন ‘আফমুস’ নামক শহরে খাদ্য দ্রব্য আনতে যায়। দোকানদারকে সে একটি দিরহাম দিলে দোকানদার বিস্ময়ে জিজ্ঞেস করলো তুমি কোথা থেকে এসেছ এবং এ দিরহামটি কোথায় পেয়েছ? এতে অনেক লোক একত্রিত হল। দিরহামটি তৎকালীন বাদশার কাছে নেয়া হল। তৎকালীন মুসলিম বাদশা দেখলেন দিরহামটি ৩০৯ বছর আগের। এতে প্রমাণ হল আসহাবে কাহাফের উক্ত ৭ যুবক ও কুকুরটি ৩০৯ বছর একাধারে ঘুমিয়েছিলেন। দাকিয়ানুশ-বাদশার অত্যাচার থেকে মুক্তি ও সততা রক্ষার জন্য উক্ত যুবকরা দেশ ত্যাগ করেছিলেন। তাদের সততার ঘটনাকে চির স্মরণীয় করে রাখার জন্য আল্লাহ তা কোরআনে উল্লেখ করেছেন। উক্ত ৭জন সৎ ও মহৎ যুবকের সঙ্গী হওয়ায় আল্লাহ সেই কুকুরটিকেও জান্নাত দান করবেন।

সৎ লোকদের কেউ তোষামোদও করে না। সৎ লোকের পরিচয় প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে যারা আল্লাহকে ভয় করে সকল প্রকার অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকেন তারাই সৎলোক। কারণ তারা অপরের এই ব্যবহার অপছন্দ করে। গৌরব-গরিমা এসব হলো তাদের সৃষ্টিকর্তার জন্য। মহান শুধুই তাদের রব তাদের সৃষ্টিকর্তা। এই লোকগুলো সমাজের কাদায় থাকলেও কাদা যেন গায়ে মাখতে না পারে সে ব্যাপারে সচেষ্ট থাকে। চাওয়া-পাওয়ার উৎস তাদের কাছে একটিই। সেই উৎস হলো তাদের সৃষ্টিকর্তা এবং বিশ্বাস করে, তিনি চাইলে তারা ভালো থাকবে। দুনিয়ার ভালো থাকার উপকরণগুলো তারা ততটাই মূল্য দেয় যতটা না হলে ন্যুনতম জীবন ধারণ করা যাবে না। এরা অন্য লোককে সম্মান করে। এরা এ-ও জানে, প্রকৃত জ্ঞানী হওয়ার জন্য প্রকৃতির পাঠই অনেক উপকারী, যদি সেই পাঠ সঠিকভাবে গ্রহণ করা যায়। আর যারা একমাত্র আল্লাহকে ভয় করে সকল অন্যায় কাজ ছেড়ে দেয় তারাই সৎলোক।


বিভাগ : ইসলামী জীবন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

ইসলামের আলোকে স্বাধীনতা
জুমার দিনের মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য না পড়ার শাস্তি
আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার গুরুত্ব
মুমিনের লক্ষ্য একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি
দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম
আরও

আরও পড়ুন

লক্ষ্মীপুরে অবাদে চলছে ফিটনেস বিহীন যানবাহন, নিশ্চুপ পুলিশ ও বিআরটিএ

লক্ষ্মীপুরে অবাদে চলছে ফিটনেস বিহীন যানবাহন, নিশ্চুপ পুলিশ ও বিআরটিএ

কোটালীপাড়ায় বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ

কোটালীপাড়ায় বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ

সাটু‌রিয়া উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক গ্রেফতার

সাটু‌রিয়া উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক গ্রেফতার

কলকাতায় বাংলাদেশ উপ হাইকমিশনের নিরাপত্তা জোরদার

কলকাতায় বাংলাদেশ উপ হাইকমিশনের নিরাপত্তা জোরদার

‘সাইবার মানডে’ উপলক্ষে ওয়েব হোস্টিংয়ে লিমডা হোস্টে চলছে ৬০% পর্যন্ত ছাড়!

‘সাইবার মানডে’ উপলক্ষে ওয়েব হোস্টিংয়ে লিমডা হোস্টে চলছে ৬০% পর্যন্ত ছাড়!

ঢাকায় আসছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রী

ঢাকায় আসছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রী

ফ্যাসিস্ট সরকারের ৮ বছরের নিষেধাজ্ঞার পর অবশেষে মঞ্চে আসছে থিয়েট্রিক্যাল বাহাস ও কন্ঠনালীতে সূর্য

ফ্যাসিস্ট সরকারের ৮ বছরের নিষেধাজ্ঞার পর অবশেষে মঞ্চে আসছে থিয়েট্রিক্যাল বাহাস ও কন্ঠনালীতে সূর্য

মিলেছে ‘হারিছ চৌধুরী’র ডিএনএ, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের নির্দেশ

মিলেছে ‘হারিছ চৌধুরী’র ডিএনএ, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের নির্দেশ

নাম পরিবর্তনের দাবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের

নাম পরিবর্তনের দাবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের

গলায় ফাঁস দিয়ে বৃদ্ধের আত্মহত্যা

গলায় ফাঁস দিয়ে বৃদ্ধের আত্মহত্যা

আইএসের নৃশংসতার বিচারে জাতিসংঘ ব্যর্থ : নাদিয়া মুরাদ

আইএসের নৃশংসতার বিচারে জাতিসংঘ ব্যর্থ : নাদিয়া মুরাদ

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে হেফাজতের মানববন্ধন

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে হেফাজতের মানববন্ধন

মানিকগঞ্জে হাঙ্গার প্রজেক্টের গণতন্ত্র অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত

মানিকগঞ্জে হাঙ্গার প্রজেক্টের গণতন্ত্র অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত

এবার ভারতের মালদহে বাংলাদেশিদের জন্য হোটেল ভাড়া বন্ধ ঘোষণা

এবার ভারতের মালদহে বাংলাদেশিদের জন্য হোটেল ভাড়া বন্ধ ঘোষণা

কিশোরগঞ্জের হাওর-অর্থনীতি বেগবান করতে চলছে কয়েকশ কোটি টাকার প্রকল্প

কিশোরগঞ্জের হাওর-অর্থনীতি বেগবান করতে চলছে কয়েকশ কোটি টাকার প্রকল্প

প্লাস্টিক ব্যবহার রোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে: অতিরিক্ত সচিব ফাহমিদা খানম

প্লাস্টিক ব্যবহার রোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে: অতিরিক্ত সচিব ফাহমিদা খানম

দেশের ৬৯ কারাগারের ১৯টি ঝুঁকিপূর্ণ, ৭০ জঙ্গিসহ ৭০০ বন্দি এখনো পলাতক

দেশের ৬৯ কারাগারের ১৯টি ঝুঁকিপূর্ণ, ৭০ জঙ্গিসহ ৭০০ বন্দি এখনো পলাতক

পায়রার রাজস্ব আয় বাড়বে তিনগুণ, দেশের অর্থনীতিতে রাখবে বড় ভূমিকা

পায়রার রাজস্ব আয় বাড়বে তিনগুণ, দেশের অর্থনীতিতে রাখবে বড় ভূমিকা

মমতা ব্যানার্জির মনে গভীর কট্টরপন্থি হিন্দুত্ববাদ : রিজভী

মমতা ব্যানার্জির মনে গভীর কট্টরপন্থি হিন্দুত্ববাদ : রিজভী

কঠিন সময় পার করছে বাংলাদেশ : প্রধান উপদেষ্টা

কঠিন সময় পার করছে বাংলাদেশ : প্রধান উপদেষ্টা