মোহাম্মদ (সা.) পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ

Daily Inqilab মুফতী মোহাম্মদ এনামুল হাসান

২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম

আরবি হিজরী সনের তৃতীয় মাস রবিউল আওয়াল।রবিউল আওয়াল মাস মুসলিম মিল্লাতের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ফযিলতের মাস।কারন এ মাসে ই বিশ্বনবী মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.) এ ধরাতে শুভাগমন করেন এবং ওফাত লাভ করেন। বিশ্বনবী মোহাম্মদ (সা.) এমন এক সময় দুনিয়াতে শুভাগমন করেন যখন দুনিয়াব্যাপী ছিল গোমরাহি, পথভ্রষ্টতায় নিমজ্জিত। ৫৭১ খ্রিষ্টাব্দ ক্বাবা শরিফ ধংষ করার জন্য আসহাবে ফিল (হস্থ বাহিনী) আক্রমণ করে। ওই বছর রবিউল আওয়াল মাসে ১২ তারিখ সোমবার দুনিয়ার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও উল্লেখযোগ্য দিন। কারন ওই দিন ই হুজুর (সা.) জন্মগ্রহণ করন।

হুজুর (সা.) জন্মের পূর্ব থেকে ই এমন কিছু অলৌকিক ঘটনা ঘটতে থাকে, যা ছিল মূলত হুজুর (সা.) আগমনের পূর্বাভাস। মোহাম্মদ (সা.) জন্মের পূর্বে পারস্য দেশে কিসরার রাজপ্রসাদে এক কম্পন অনুভূত হয়।যার ফলে প্রসাদের ১৪ টি গম্বুজ ধংষ হয়ে যায়। পারস্যের যে অগ্নিকু- ১ হাজার বছরে কখনো নির্বাপিত হয়নি তা নিজে নিজে ই নিভে যায়। হুজুর (সা.) মাতৃগর্ভ থাকাকালীনই মা আমিনা স্বপ্নে দেখেন যে, একজন ফেরেশতা এসে তাকে বলছেন, তোমার গর্ভে থাকা সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর তার নাম যেন আহমদ রাখা হয়। এজন্য মা সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর নাম রাখলেন আহমদ। দাদা আব্দুল মুত্তালিব তার প্রিয় পৌত্রের নাম রাখলেন মোহাম্মদ।

জন্মের পর প্রথম সাতদিন আবুলাহাবের আযাদকৃত দাসী সুওয়াইবা হুজুর (সা.) কে দুধ পান করান। জন্মের অষ্টমদিন আরবের অভিজাত বংশের প্রথা অনুযায়ী তাকে ধাত্রী হালিমা সাদিয়ার হাতে অর্পণ করা হয়, যেন তিনি তাকে স্তন্যপান করান এবং লালন পালন করেন। শিশু মোহাম্মদ (সা.) আরবের অন্যান্য শিশুদের থেকে সম্পূর্ণ সতন্ত্র ছিল। খেলাধুলা বা অহেতুক সকল কর্মকা- থেকে নিজেকে বিরত রাখতেন।শুধু বিরত ই রাখতেন না বরং এ সকল কর্মকা- থেকে এড়িয়ে থাকতেন। প্রিয় নবী মোহাম্মদ (সা.) সমগ্র বিশ্বের মানবজাতির পথ প্রদর্শকের জন্য প্রেরিত হয়েছেন। তিনি সর্বকালের সকল মানুষের জন্য একমাত্র আদর্শরুপে আগমন করেছেন। মানবজাতির সার্বিক কল্যাণের ফর্মুলা তিনি বিশ্ববাসীর সামনে উপস্থাপন করেছেন।

তিনি ঘরের কাজ নিজে ই করতেন, বাজার থেকে প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি নিয়ে আসতেন,জুতা ছিড়ে গেলে নিজে ই তা সেলাই করতেন, নবী হিসেবে প্রধান সংস্কারক, প্রধান বিচারক, প্রধান সমরনায়ক, আদর্শ স্বামী, আদর্শ পিতা, আদর্শ ব্যবসায়ী, আদর্শ রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে রাসুল (সা.) এর মধ্যে যাবতীয় মানবীয় গুণাবলীর বিপুল সমাবেশ হয়েছিল। সীমাহীন গুণাবলীর অধিকারী হয়ে ও তিনি সাদামাটা জীবনযাপন করেছেন।সামান্যতম অহংকার কিংবা বড়ত্ব তার মাঝে ছিলনা। একবার এক ব্যক্তি রাসুল (সা.) এর দরবারে উপস্থিত হলেন, রাসুল (সা.) কে দেখামাত্র লোকটি কাপতে লাগলো। রাসুল (সা.) তাকে অভয় দিয়ে বললেন, ভীতসন্ত্রস্ত হয়োনা। আমি কুরাইশ বংশের এক মহিলার পুত্র মাত্র।যিনি শুকনো গোশত পাক করে আহার করতেন।

রাসুল (সা.) মানবজাতিকে নির্দেশ দিয়েছেন, তোমরা এক আল্লাহর এবাদত করিবে,তার সাথে কাউকে শরিক করবেনা, তিনি আরো নির্দেশ দিয়েছেন পরোপকারের,সার্থপরতা পরিহার করার,তিনি তার আদর্শের দ্বারা এমন এক সোনালী সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যার মূল বৈশিষ্ট্য ছিল, সুবিচার, পরস্পরে সহানুভূতি এবং মমত্ববোধ। যার কারনে তার জীবদ্দশায় বিশৃঙ্খলতায় জর্জরিত আরব হয়ে উঠে সম্প্রীতি ও শান্তির প্রতিক। মোহাম্মদ (সা.) এর দৃষ্টিতে জুলম অত্যাচার বড় পাপকার্য। অত্যাচারিত মজলুম, অসহায় মানুষদের সাহায্য করা হুজুর (সা.) এর নিকট এক মহান এবাদত। তৎকালীন আরবজাতি তার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে তার জন্য জীবন পর্যন্ত বিলিয়ে দিতে সদাসর্বদা প্রস্তুত থাকতো। তাকে ভালোবাসতো পাগলের মতো।

মোহাম্মদ (সা.) এর দশ বৎসরের খাদেম হজরত আনাস (রা.) বলেন, আমি দেখেছি, রাসুল (সা.) এর চুল মোবারক যখন কাটা হতো, সাহাবায়ে কেরাম তখন তার চারপাশে দাঁড়িয়ে থাকতেন। একটি চুল মাটিতে পড়া মাত্র তারা দ্রুতবেগে তা তুলে নিতেন এবং বরকতের জন্য তা তাদের নিজেদের কাছে রেখে দিতেন। অধিনস্থদের প্রতি হুজুর (সা.) ব্যবহার ছিল অতি উত্তম। হজরত আনাস (রা.) বলেন, আমি প্রায় দশ বছর হুজুরের খেদমত করেছি।আল্লাহর শপথ, আমি বাড়ীতে অথবা সফরকালে রাসুল (সা.) এর যে পরিমাণ খেদমত করেছি,তার চেয়ে অধিক খেদমত হুজুর (সা.) আমার করেছেন। দশ বৎসর যাবত খেদমতে হুজুর (সা.) অসন্তুষ্ট হয়ে উহ শব্দটি পর্যন্ত করেননি। কোন সময় যদি কাজ করতে ভুলে যেতাম তাহলে তিনি বলেননি যে একাজটি কেন করনি।

মোহাম্মদ (সা.) এই পৃথিবীতে কিভাবে জীবন যাপন করেছেন, তার জীবন পরিচালনার পদ্ধতি কিরুপ ছিল, পারিবারিক জীবনে তিনি কেমন ছিলেন, স্ত্রীদের সাথে তার ব্যবহার কেমন ছিল, সবকিছু ই আল্লাহ তায়ালা কিয়ামত পর্যন্ত আগত উম্মতের আমলের আমলের সুবিধার্থে সংরক্ষণ করে রেখেছেন সাহাবায়ে কেরামদের মাধ্যমে। হুজুর (সা.) এমন অদ্বিতীয় ব্যক্তি যার বংশ তালিকা ও আমাদের মাঝে সংরক্ষিত। তার বংশের তালিকা হলো- মোহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব ইবনে হাশেম ইবনে আব্দে মানাফ ইবনে কুসাই ইবনে কিলাব ইবনে মুররাহ ইবনে কা’ব ইবনে লুআই ইবনে গালেব ইবনে ফিহর ইবনে মালিক ইবনে নযর ইবনে কিনানা ইবনে খুযাইমা ইবনে মুদরিকাহ ইবনে ইলিয়াস ইবনে মুযার ইবনে নাযযার ইবনে মা’বাদ ইবনে আদনান। এ পর্যন্ত সমস্ত ইতিহাসবিদ একমত তাই এর পর মতবিরোধ থাকায় সতর্কতা অবলম্বনে আর না লেখায় উত্তম।

বিশ্বব্যাপী আজ দাবানলের মতো দাউদাউ করে অশান্তির আগুন জ্বলছে। কোথাও আজ শান্তির লেশমাত্র নেই।মানুষের জান- মালের নিরাপত্তা নেই। মারামারি, কাটাকাটি নিত্যদিনের সঙ্গী। দুনিয়াব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে আমাদের সকলকে বিশ্বনবী মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.) এর আদর্শ ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে সকল স্তরে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এর বিকল্প কোন ব্যবস্থাই দুনিয়াবাসীকে শান্তি দিতে পারবেনা।


বিভাগ : ইসলামী জীবন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

শাওয়াল মাসের ফজিলত ও আমল
অসংখ্য নবী রাসূলের স্মৃতি ধন্য ফিলিস্তিন
রক্তাক্ত ফিলিস্তিনে ইসরাইলের বর্বরোচিত হামলা
রমজান-পরবর্তী মুমিনের ক্যালেন্ডার
প্রশ্ন : মরণোত্তর চক্ষুদান বা অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান কি শরীয়ত সমর্থন করে?
আরও
X

আরও পড়ুন

ভারতে আবাসিক ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, যেভাবে নাটকীয়ভাবে বেঁচে গেল একটি পরিবার

ভারতে আবাসিক ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, যেভাবে নাটকীয়ভাবে বেঁচে গেল একটি পরিবার

অবশেষে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেলেন উখিয়ার ১৩ এসএসসি পরীক্ষার্থী

অবশেষে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেলেন উখিয়ার ১৩ এসএসসি পরীক্ষার্থী

পবিপ্রবি শিক্ষার্থী পানিতে পড়ে আহত হওয়ার পরে চিকিৎসা অবহেলার মৃত্যুর অভিযোগ

পবিপ্রবি শিক্ষার্থী পানিতে পড়ে আহত হওয়ার পরে চিকিৎসা অবহেলার মৃত্যুর অভিযোগ

শেরপুর জেলা উপজেলায় নানা আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদযাপন

শেরপুর জেলা উপজেলায় নানা আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদযাপন

নববর্ষ উদযাপনে মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আনন্দ শোভাযাত্রা

নববর্ষ উদযাপনে মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আনন্দ শোভাযাত্রা

মাজারের বার্ষিক ওরসের মেলায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে জবাই করে হত্যা করল স্বামী

মাজারের বার্ষিক ওরসের মেলায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে জবাই করে হত্যা করল স্বামী

কুমিল্লার রাজগঞ্জ বাজারে অগ্নিকাণ্ডে পৌনে দুই কোটি টাকার মালামাল ভস্মীভূত

কুমিল্লার রাজগঞ্জ বাজারে অগ্নিকাণ্ডে পৌনে দুই কোটি টাকার মালামাল ভস্মীভূত

সরকার নয়, আমরা একটি দেশ হিসেবে কাজ করছি: জ্বালানি উপদেষ্টা

সরকার নয়, আমরা একটি দেশ হিসেবে কাজ করছি: জ্বালানি উপদেষ্টা

মতলবে উপজেলা বিএনপির বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা

মতলবে উপজেলা বিএনপির বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা

ফিলিস্তিনবাসীদের শান্তি কামনায়   বিশেষ দোয়া মাহফিল

ফিলিস্তিনবাসীদের শান্তি কামনায়  বিশেষ দোয়া মাহফিল

বর্ণাঢ্য ‘ড্রোন শো’ দেখে মুগ্ধ লাখো মানুষ

বর্ণাঢ্য ‘ড্রোন শো’ দেখে মুগ্ধ লাখো মানুষ

নতুন বছরে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর হোক  : মঞ্জু

নতুন বছরে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর হোক : মঞ্জু

বুধবার ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী

বুধবার ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পুরোনো পদে ফিরলেন গাঙ্গুলি

পুরোনো পদে ফিরলেন গাঙ্গুলি

আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা ইমার্জিং নারী ক্রিকেট দল

আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা ইমার্জিং নারী ক্রিকেট দল

রূপায়ণ সিটিতে শতকন্ঠে বর্ষবরণ

রূপায়ণ সিটিতে শতকন্ঠে বর্ষবরণ

বর্ষবরণকে স্বাগত জানিয়ে গাজীপুরে জেলা বিএনপির শোভাযাত্রা

বর্ষবরণকে স্বাগত জানিয়ে গাজীপুরে জেলা বিএনপির শোভাযাত্রা

আমরা নতুন বাংলাদেশে প্রবেশ করেছি: ফারুকী

আমরা নতুন বাংলাদেশে প্রবেশ করেছি: ফারুকী

ভারতীয়দের হজ কোটা ৮০ শতাংশ কমাল সৌদি

ভারতীয়দের হজ কোটা ৮০ শতাংশ কমাল সৌদি

চীনা দূতাবাসের সৌজন্যে ঢাকার আকাশে ব্যতিক্রমী ড্রোন শো

চীনা দূতাবাসের সৌজন্যে ঢাকার আকাশে ব্যতিক্রমী ড্রোন শো