রাসূল (সা.)-এর চরিত্র ছিল আল কুরআন

Daily Inqilab জাহেদুল ইসলাম

২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম

চলছে মহান রবিউল আউয়াল মাস। এই মাসে পৃথিবীতে আগমন করেন সর্বশ্রেষ্ঠ মানব, নবি-রাসূলদের সর্দার, আখেরী নবি হযরত মুহাম্মদ (সা.)। তিনি এসেছিলেন এক অন্ধকার সময়ে, অন্ধকার সমাজে; যে সমাজে কোনো নিয়মশৃঙ্খলা ছিল না, আইন ছিল না, মাজলুমের অধিকার ছিল না, এতিমের প্রকৃত অভিভাবক ছিল না, বিধবার কোনো সম্মান ছিল না। পান থেকে চুন খসলে বেঁধে যেতো রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, সে যুদ্ধ গুলো চলতো বছরের পর বছর। এমন সময়ে এক শুভ সকালে জন্মগ্রহণ করেন আমাদের প্রিয় নবি (সা.)। রাসূলের আগমনের সময়েই পৃথিবীতে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।

রাসূলের আগমনের উদ্দেশ্য ছিল মানবজাতিকে সংশোধন করা। আল্লাহ তাআলা বলেন, তিনিই উম্মীদের মাঝে একজন রাসূল পাঠিয়েছেন তাদের মধ্য থেকে, যে তাদের কাছে তিলাওয়াত করবে তাঁর আয়াতসমূহ, তাদেরকে পবিত্র করবে এবং তাদেরকে শিক্ষা দিবে কিতাব ও হিকমাত। যদিও ইতঃপূর্বে তারা স্পষ্ট গোমরাহীতে ছিল। (সূরা জুমুআ : ২)। গোমরাহী, পথভ্রষ্ট এবং বিভিন্ন খোদার পূজারী থেকে মানুষকে বিরত রাখায় ছিল তাঁর আগমনের উদ্দেশ্য। তিনি বলেন, হে মানব ম-লী, তোমরা বলো, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই, তবেই তোমরা সফল হবে। তাঁকে মেনে না নিলে পরিণতি কী হবে সে সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করাও ছিল নবির অন্যতম কাজ। আল্লাহ তাআলা বলেন, হে নবি, আমি তোমাকে পাঠিয়েছি সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে। (সূরা আল আহযাব : ৪৫)।

রাসূল মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন সর্বশেষ নবি ও রাসূল। তাঁর আগমনের মাধ্যমে নবি-রাসুলের আগমনের ধারাবাহিকতা বন্ধ হয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন, মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল ও সর্বশেষ নবি। (সূরা আহযাব : ৪০)। রাসূল (সা.) বলেন, আমি সর্বশেষ নবি, আমার পরে আর কোনো নবি আসবে না। (তিরমিজি, আবু দাউদ)। সর্বশেষ নবি হিসেবে কিয়ামত পর্যন্ত মানুষের যা কিছুর প্রয়োজন আছে সবকিছু রাসূলের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা সম্পন্ন করেছেন। রাসূলের মৃত্যুর পূর্বে আরাফার দিনে নাযিলকৃত আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন মনোনীত করলাম। (সূরা মায়িদাহ : ৩)।

পৃথিবীবাসী যত সমস্যার সম্মুখীন হবে সব সমস্যার সমাধান এই দুই গ্রন্থে পাওয়া যাবে। অন্ধকারাচ্ছন্ন একটি সমাজে এসে কীভাবে পঙ্কিলতা মুক্ত করে পুরা সমাজকে পরিবর্তন করে পৃথিবীর বুকে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা পৃথিবীবাসীর কাছে আজও বিস্ময়। মাত্র কয়েকবছরের ব্যবধানে কীভাবে একটি সমাজের আমূল পরিবর্তন করা সম্ভব- তা জানার জন্য আমাদেরকে রাসূলের সুন্নাহ জানতে হবে। তাঁর চরিত্র আমাদেরকে ধারণ করতে হবে। তাঁর গ্রহণ করা পলিসি সম্পর্কে আমাদেরকে অবহিত হতে হবে। তাঁর চরিত্র সম্পর্কে হযরত আয়িশা রাদিআল্লাহু আনহাকে প্রশ্ন করলে তিনি উত্তর দেন, আল কুরআন। (সহীহ মুসলিম।) আল কুরআনই ছিল তাঁর চরিত্র। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম একটি অন্ধকার যুগে এসেও সেই অন্ধকার সময়কে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ যুগ হিসেবে পরিণত করেন রাসূল মুহাম্মদ (সা.)। তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে আমার এই যুগটি হলো শ্রেষ্ঠ যুগ। তারপরের যুগ শ্রেষ্ঠ, তারপরের যুগ শ্রেষ্ঠ। (বুখারী, মুসলিম।) এটি সম্ভব হয়েছিল রাসূলের উত্তম চরিত্রের মাধ্যমে। তাঁর চরিত্র সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, আর নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের উপর অধিষ্ঠিত। (সূরা ক্বলাম : ৪)। তাই পৃথিবীবাসীর জন্য একমাত্র আদর্শবান ব্যক্তি হলেন মুহাম্মদ (সা.)। জীবনের সর্বক্ষেত্রে পৃথিবীবাসীকে পাঠ নিতে হবে একমাত্র রাসূল মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন থেকে। আল্লাহ তাআলা বলেন, অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে। (সূরা আহযাব : ২১)।

আজকের দূষিত সমাজকেও পরিশুদ্ধ করতে চাইলে আমাদেরকে রাসূলের জীবনী অধ্যয়ন করতে হবে। রাসূলের চরিত্র ধারণ করতে হবে এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে রাসূলের অনুসরণ নিশ্চিত করতে হবে। রবিউল আউয়াল মাসে প্রতিটি মুসলিমের এটাই প্রতিজ্ঞা হওয়া উচিত।


বিভাগ : ইসলামী জীবন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

শাওয়াল মাসের ফজিলত ও আমল
অসংখ্য নবী রাসূলের স্মৃতি ধন্য ফিলিস্তিন
রক্তাক্ত ফিলিস্তিনে ইসরাইলের বর্বরোচিত হামলা
রমজান-পরবর্তী মুমিনের ক্যালেন্ডার
প্রশ্ন : মরণোত্তর চক্ষুদান বা অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান কি শরীয়ত সমর্থন করে?
আরও
X

আরও পড়ুন

ভারতে আবাসিক ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, যেভাবে নাটকীয়ভাবে বেঁচে গেল একটি পরিবার

ভারতে আবাসিক ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, যেভাবে নাটকীয়ভাবে বেঁচে গেল একটি পরিবার

অবশেষে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেলেন উখিয়ার ১৩ এসএসসি পরীক্ষার্থী

অবশেষে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেলেন উখিয়ার ১৩ এসএসসি পরীক্ষার্থী

পবিপ্রবি শিক্ষার্থী পানিতে পড়ে আহত হওয়ার পরে চিকিৎসা অবহেলার মৃত্যুর অভিযোগ

পবিপ্রবি শিক্ষার্থী পানিতে পড়ে আহত হওয়ার পরে চিকিৎসা অবহেলার মৃত্যুর অভিযোগ

শেরপুর জেলা উপজেলায় নানা আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদযাপন

শেরপুর জেলা উপজেলায় নানা আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদযাপন

নববর্ষ উদযাপনে মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আনন্দ শোভাযাত্রা

নববর্ষ উদযাপনে মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আনন্দ শোভাযাত্রা

মাজারের বার্ষিক ওরসের মেলায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে জবাই করে হত্যা করল স্বামী

মাজারের বার্ষিক ওরসের মেলায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে জবাই করে হত্যা করল স্বামী

কুমিল্লার রাজগঞ্জ বাজারে অগ্নিকাণ্ডে পৌনে দুই কোটি টাকার মালামাল ভস্মীভূত

কুমিল্লার রাজগঞ্জ বাজারে অগ্নিকাণ্ডে পৌনে দুই কোটি টাকার মালামাল ভস্মীভূত

সরকার নয়, আমরা একটি দেশ হিসেবে কাজ করছি: জ্বালানি উপদেষ্টা

সরকার নয়, আমরা একটি দেশ হিসেবে কাজ করছি: জ্বালানি উপদেষ্টা

মতলবে উপজেলা বিএনপির বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা

মতলবে উপজেলা বিএনপির বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা

ফিলিস্তিনবাসীদের শান্তি কামনায়   বিশেষ দোয়া মাহফিল

ফিলিস্তিনবাসীদের শান্তি কামনায়  বিশেষ দোয়া মাহফিল

বর্ণাঢ্য ‘ড্রোন শো’ দেখে মুগ্ধ লাখো মানুষ

বর্ণাঢ্য ‘ড্রোন শো’ দেখে মুগ্ধ লাখো মানুষ

নতুন বছরে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর হোক  : মঞ্জু

নতুন বছরে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর হোক : মঞ্জু

বুধবার ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী

বুধবার ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পুরোনো পদে ফিরলেন গাঙ্গুলি

পুরোনো পদে ফিরলেন গাঙ্গুলি

আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা ইমার্জিং নারী ক্রিকেট দল

আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা ইমার্জিং নারী ক্রিকেট দল

রূপায়ণ সিটিতে শতকন্ঠে বর্ষবরণ

রূপায়ণ সিটিতে শতকন্ঠে বর্ষবরণ

বর্ষবরণকে স্বাগত জানিয়ে গাজীপুরে জেলা বিএনপির শোভাযাত্রা

বর্ষবরণকে স্বাগত জানিয়ে গাজীপুরে জেলা বিএনপির শোভাযাত্রা

আমরা নতুন বাংলাদেশে প্রবেশ করেছি: ফারুকী

আমরা নতুন বাংলাদেশে প্রবেশ করেছি: ফারুকী

ভারতীয়দের হজ কোটা ৮০ শতাংশ কমাল সৌদি

ভারতীয়দের হজ কোটা ৮০ শতাংশ কমাল সৌদি

চীনা দূতাবাসের সৌজন্যে ঢাকার আকাশে ব্যতিক্রমী ড্রোন শো

চীনা দূতাবাসের সৌজন্যে ঢাকার আকাশে ব্যতিক্রমী ড্রোন শো