ইসলাম সকল নাগরিকের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করেছে
০৫ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৪ এএম
সুবিচার পাওয়া প্রত্যেক মানুষের মৌলিক অধিকার। দেশের সব নাগরিকের ন্যায় ও সুবিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। আদালতে বিচারপ্রার্থীরা ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্যই আসেন। আদালতের কর্তব্য হচ্ছে, বিচার প্রার্থী সব নাগরিকের ন্যায় ও সুবিচার নিশ্চিত করা। পাশাপাশি বিচারপ্রার্থীদের সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। কেননা আইনের চোখে সবাই সমান। রাষ্ট্রের সব নাগরিকই আইনের কাছে সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী। আইনের কাছে সমান আশ্রয় লাভের অধিকার শুধু অধিকারই নয়, বরং তা মৌলিক অধিকারের অন্তর্ভূক্ত। মৌলিক অধিকার হচ্ছে এমন অধিকার যা রাষ্ট্র তার নাগরিকদের প্রদান করতে আইনত বাধ্য। অর্থাৎ রাষ্ট্র নাগরিকদের এসকল মৌলিক অধিকার বলবৎ করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ।
আদালত হতে হবে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ। এ স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আদালতেই অপরাধীদের বিচার হতে হবে। আদালত যখন স্বাধীন হবে, আল্লাহভীরু হবে তখন দেশের জনগণ ন্যায় ও সুবিচার পাবে। প্রকাশ্য আদালতে বিচার পাওয়া নাগরিকদের অধিকার। একই সাথে বিচার হতে হবে দ্রুত ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায়। তবে দ্রুত বিচার করতে গিয়ে ন্যায় বিচারকে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না। সুবিচার আল্লাহর হুকুম, অর্থাৎ ফরজ ইবাদত। ন্যায়ের বিধান সর্বকালের ও সব সমাজের জন্য কাম্য। সব আসমানি কিতাবে এই নির্দেশনা রয়েছে।
মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, নিশ্চয়ই আমি তাওরাত অবতীর্ণ করেছিলাম; তাতে ছিল পথনির্দেশ ও আলো; নবীগণ, যারা আল্লাহর অনুগত ছিল, তারা ইয়াহুদিদের তদনুসারে বিধান দিত, আরও বিধান দিত রব্বানিগণ এবং বিদ্বানগণ। কারণ, তাদের আল্লাহর কিতাবের রক্ষক করা হয়েছিল এবং তারা ছিল সেটির সাক্ষী। সুতরাং তোমরা নির্বোধ লোকদের ভয় কোরো না, আর শুধু আমাকেই ভয় করো। আমার আয়াতের বিনিময়ে সামান্য সম্পদ ক্রয় কোরো না। আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুসারে যারা বিধান দেয় না, তবে তারাই কাফির। আমি তাদের জন্য তাতে বিধান দিয়েছিলাম যে প্রাণের বদলে প্রাণ, চোখের বদলে চোখ, নাকের বদলে নাক, কানের বদলে কান, দাঁতের বদলে দাঁত এবং জখমের বদলে অনুরূপ জখম। অতঃপর কেহ তা ক্ষমা করলে উহাতে তারই পাপমোচন হবে। আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তদনুসারে যারা বিধান দেয় না, তবে তারাই ‘জালিম’। ইঞ্জিল অনুসারীগণ যেন আল্লাহ উহাতে যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুসারে বিধান দেয়। আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুসারে যারা বিধান দেয় না, তবে তারাই ‘ফাসিক’। (সুরা মায়িদা : ৪৪-৪৭)।
ইসলাম ন্যায়বিচারের শিক্ষা দেয় : ইসলাম একটি শান্তিপ্রিয় ধর্ম। ইসলামের শিক্ষা অত্যন্ত উচ্চাঙ্গের। ইসলামের শিক্ষাগুলোর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হলো সমাজ ও দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। মহান আল্লাহ তাআলার পক্ষ পৃথিবীতে এ পর্যন্ত থেকে যত নবি-রাসূল (আ.) এর আগমন ঘটেছে, তাদের প্রত্যেককে আল্লাহ তাআলা বিশেষ যেসব দায়িত্ব দিয়েছেন তার মধ্যে প্রধান দায়িত্ব ছিল বিচার সালিশে ন্যায় ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা করা। আল্লাহ তাআলার নির্দেশ অনুযায়ী সব নবি রাসূলই (আ.) দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করেছেন এবং এ ক্ষেত্রে তারা সফলও হয়েছেন।
বিচার-সালিশের ক্ষেত্রে যেন পরিপূর্ণ ন্যায়বিচার করা হয় এ বিষয়ে মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করেছেন, হে মানবম-লী! নিশ্চয়ই তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেরা পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে। এ জন্য যে, তাদের কোনো সম্মানিত লোক চুরি করলে তখন তারা তাকে রেহাই দিয়ে দিত। আর যখন কোনো দুর্বল লোক চুরি করত তখন তারা তার ওপর শাস্তি প্রয়োগ করত। আল্লাহর কসম! মুহাম্মাদের কন্যা ফাতেমাও যদি চুরি করে, তবে অবশ্যই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাত কেটে দেবেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস )। আল-কুরআনের শিক্ষা হচ্ছে ন্যায় ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে যদি নিজ পিতা-মাতার বিরুদ্ধেও সাক্ষ্য দিতে হয় তা যেন দেওয়া হয়। আর আমরা আজ করছি উলটা, অপরাধী নিজের আত্মীয়স্বজন হলে তাকে কীভাবে রক্ষা করা যায় সে চেষ্টায় কোন কমতি করি না।
কুরআনে কারীমে আল্লাহ তাআলা বলেন, হে যারা ইমান এনেছ! আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সাক্ষ্যদাতা হিসাবে তোমরা দৃঢ়ভাবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাকারী হও, এমনকি সেই সাক্ষ্য তোমাদের নিজেদের বা পিতামাতার অথবা নিকটাত্মীয়দের বিরুদ্ধে গেলেও। যার সম্পর্কে সাক্ষ্য দেওয়া হচ্ছে, সে ধনী হোক বা গরিব, আল্লাহ উভয়েরই সর্বোত্তম অভিভাবক। অতএব, তোমরা যাতে ন্যায়বিচার করতে সক্ষম হও, সে জন্য তোমরা কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করো না আর তোমরা যদি পেঁচানো কথা বল অথবা সত্য এড়িয়ে যাও, তবে মনে রেখ, তোমরা যা কর সে বিষয়ে নিশ্চয় আল্লাহ পুরোপুরি অবগত আছেন। (সুরা নিসা : ১৩৫)। সত্য সাক্ষ্য ব্যতিরেকে সুবিচার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। সত্য সাক্ষ্য দিতে গিয়ে যদি নিজেদের স্বার্থে আঘাত লাগে অথবা নিজ পিতা-মাতার বা নিকটাত্মীয় পরিজনের প্রতিকূলেও যদি যায়, তবুও সত্য সাক্ষ্য দিতে হবে। তাই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হলে একমাত্র সত্যকেই মাধ্যম বানাতে হবে। আল্লাহ তাআলা আরও ইরশাদ করেন, হে যারা ইমান এনেছ! আল্লাহর উদ্দেশ্যে তোমরা ন্যায়ের পক্ষে সাক্ষী হিসাবে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হও আর কোনো জাতির শত্রুতা যেন কখনোই তোমাদের অবিচার করতে প্ররোচিত না করে। তোমরা সদা ন্যায়বিচার করো। এ কাজটি তাকওয়ার সবচেয়ে নিকটে। আর তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করো। তোমরা যা কিছু কর, নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে পুরোপুরি অবগত আছেন। (সুরা মায়েদা : ৮)।
আল্লাহর কাছে সবাই সুবিচার পাবে : সবকিছুর বিধানদাতা একমাত্র আল্লাহ তাআলা । তিনি হলেন, আদল অর্থাৎ ন্যায়বান, ন্যায়পরায়ণ। তিনি হলেন, হাকিম বা ন্যায়বিচারক। তিনি আহকামুল হাকিমিন অর্থাৎ সব বিচারকের শ্রেষ্ঠ বিচারক। তাই তিনি একমাত্র বিধানদাতা। দুনিয়া এবং আখেরাতে সবাই তার কাছে সুবিচার পাবে। আল্লাহর ভয় ও তাকওয়ার আদলে যে সমাজ গড়ে উঠবে সেই সমাজেই ন্যায় ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা হবে। কুরআনে কারীমে এরশাদ হয়েছে, যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে জেনে রেখো যে তাদের কোনো কোনো পাপের জন্য আল্লাহ তাদের শাস্তি দিতে চান এবং মানুষের মধ্যে অনেকেই তো সত্যত্যাগী। তবে কি তারা জাহেলি যুগের বিধিবিধান কামনা করে? নিশ্চিত বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য বিধানদানে আল্লাহ অপেক্ষা কে শ্রেষ্ঠতর। (সুরা মায়িদা : ৪৮-৫০)।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র বৈঠক, হাসিনাকে ফেরানো নিয়ে আলোচনা থাকবে
রামু সেনানিবাসে সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালিত
এক সপ্তাহে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার
প্রবাসীদের যে জন্য সুখবর দিলো মালয়েশিয়া
জাবি শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, তদন্ত কমিটি গঠন, ফটকে তালা, মশাল মিছিল
মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল
"নতুন সিনেমা নিয়ে ফিরছেন গ্লোবাল তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি"
ড. ইউনূসকে নিয়ে খালেদা জিয়ার পুরোনো যে বক্তব্য ভাইরাল
নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি ইসলামী আন্দোলনের শুভ কামনা
আলোচনায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার ‘টুস করে ফেলে দেয়ার’ হুমকি
দীর্ঘ ১৫ বছর সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে পারেনি: খোকন
'ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে অভিনেতা তারিক আনাম খানের নাটক'
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ