ঢাকা   মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারি ২০২৫ | ২৩ পৌষ ১৪৩১

সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনীতিক আঞ্চলিক নেতা এরদোগান

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক :

১৪ মার্চ ২০২৩, ০৯:০৮ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৫:৫২ পিএম

মসজিদ আমাদের ব্যারাক, গম্বুজ আমাদের হেলমেট, মিনারগুলো আমাদের বেয়নেট এবং বিশ্বাস হলো আমাদের সৈন্য। এই প্রচারণায় সফল হন এরদোগান এবং ২০০৩ সালে তিনি প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এর পর তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। তিনবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর ২০১৪ সালে তিনি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। গত ২০ বছর ধরে তিনি দেশটির ক্ষমতায় আসীন। যে বালক একদা রাস্তায় লেবুর শরবত আর রুটি বিক্রি করতেন, তিনিই হয়ে উঠলেন আধুনিক তুরস্কের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনীতিক এবং যুদ্ধংদেহী এক আঞ্চলিক নেতা। তার উত্থান শুরু হয় প্রায় তিন দশক আগে ইস্তাম্বুল শহরের মেয়র নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে। এর পরে তিন তিনবার প্রধানমন্ত্রী এবং দুই দফায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন রজব তাইয়েপ এরদোগান। তার এই ক্ষমতা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও লড়বেন তিনি। তুরস্ক যখন বিধ্বংসী ভয়াবহ ভ‚মিকম্প-পরবর্তী বিপর্যয় মোকাবেলার চেষ্টা করছে, তখনই প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে এই কঠিন রাজনৈতিক পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহের এই ভ‚মিকম্পে তুরস্কে প্রায় ৪৫ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, গৃহহীন হয়েছে ১৫ লাখের মতো মানুষ। এছাড়াও রয়েছে তুরস্কের টালমাটাল অর্থনৈতিক পরিস্থিতি। দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতি এমন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে যে জীবনযাত্রার খরচ মেটাতে মানুষের নাভিশ্বাস ওঠেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০১৬ সালে সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থান চেষ্টা থেকে প্রেসিডেন্ট এরদোগান বেঁচে গেলেও, আসন্ন নির্বাচনে তিনি কতোটা সফল হবেন সেটা নির্ভর করছে তার সরকার কীভাবে বিপর্যস্ত অর্থনীতি ও ভ‚মিকম্পÑ পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে তার ওপর। দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর তুরস্কের রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে বদলে দিয়ে আরও ক্ষমতাবান হয়ে ওঠেন এরদোগান। আধুনিক তুরস্কের জনক মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের পর অন্য যেকোনও নেতার চেয়ে তিনিই দেশটিকে সবচেয়ে বেশি বদলে দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের অধ্যাপক বলেন, একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী হয়ে ওঠার সাথে সাথে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থেকেও এরদোগান ক্রমশ দূরে সরে গেছেন। তিনি বলেন, যখন তিনি দলের নেতৃত্বে আসেন, তার রাজনৈতিক আচরণে মনে হয়েছিল যে তিনি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকতে চান। কিন্তু যতোই তিনি ক্ষমতার কাছাকাছি গেছেন, ততই তিনি ক্ষমতাকে এককেন্দ্রিক করেছেন। সেটা তিনি সাংবিধানিকভাবে করেছেন। প্রেসিডেন্টের হাতে সব ক্ষমতা দিয়ে তিনি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিয়েছেন। বিচার বিভাগ, সংবাদ মাধ্যমসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে তার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গেছেন। এর পাশাপাশি তিনি তুরস্কের আদর্শিক অবস্থানেও পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। জনসমর্থন পাওয়ার উদ্দেশ্যে তিনি দেশটিকে ইসলামপন্থী ধারায় পরিচালিত করেছেন। পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতিরক্ষা জোট ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার জন্য সুইডেন ও ফিনল্যান্ড যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তুরস্ক তাতেও বাধা দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। এরদোগানের এই পেশি-সুলভ ক‚টনীতি লক্ষ্য করা গেছে ইউরোপের বাইরেও। মুসলিম মূল্যবোধের পক্ষে সরাসরি বক্তব্য দেওয়ার কারণেও এরদোগান বহু তুর্কীর কাছে জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। তার নেতৃত্বে ইসলামপন্থী দল জাস্টিস এন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি বা একেপি ক্ষমতায় আসার পর সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগণকে তুষ্ট করার জন্য নানা ধরনের পদক্ষেপ নিতে শুরু করে। চার সন্তানের পিতা এরদোগান জন্ম-নিয়ন্ত্রণের সমালোচনা করেন। যাদুঘর থেকে আয়া সোফিয়াকে ফের মসজিদে রূপান্তরিত করেন। ক্ষমতায় আসার আগেও এক সমাবেশে জাতীয়তাবাদী একটি কবিতা পড়ার জন্য তার চার মাসের জেল হয়েছিল। এই কবিতার কয়েকটি লাইন ছিল এরকম, মসজিদ আমাদের ব্যারাক, গম্বুজ আমাদের হেলমেট, মিনারগুলো আমাদের বেয়নেট এবং বিশ্বাস হলো আমাদের সৈন্য। ইসলামপন্থী বিভিন্ন ইস্যুতে তিনি ফরাসী প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাখোঁর সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছেন। সুইডেনে কোরান পোড়ানের ঘটনায় নরডিক ওই দেশটিকেও তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে কাশ্মির প্রসঙ্গ তুলে ভারতের সমালোচনা করেছেন। প্রেসিডেন্ট এরদোগান বহির্বিশ্বের সামনেও তার সামরিক পেশিশক্তি প্রদর্শন করেছেন। লিবিয়া ও সিরিয়া যুদ্ধে তিনি সরাসরি অংশ নিয়েছেন। ন্যাটোর সদস্য দেশ হওয়া স্বত্বেও তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধের জন্য তিনি মধ্যস্থতার উদ্যোগ নিয়েছেন। শস্য রফতানির বিষয়ে যুদ্ধরত দুটো দেশের মধ্যে সমঝোতায় পৌঁছাতেও সফল হয়েছেন। বিবিসি।

 


বিভাগ : ইসলামী বিশ্ব


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

ইরানের মাহাবাদ জলাভূমিতে পরিযায়ী পাখির কোলাহল
চীন থেকে প্রথম রেল চালান ইরান হয়ে আফগানিস্তানে পৌঁছেছে
ইসলামি বিপ্লবের পর ইরানে নারী শিক্ষার হার আড়াই গুণ বেড়েছে
হুথি-ইসরাইল সংঘাত বৃদ্ধির নিন্দা জাতিসংঘ মহাসচিবের
ব্যাংকখাত ঘুরে দাঁড়ালেও হতাশ করেছে ফার্মা ও কেমিকেল
আরও

আরও পড়ুন

আসামের কয়লা খনিতে ১১ শ্রমিক আটকে পড়েছেন, উদ্ধারকাজ চলছে

আসামের কয়লা খনিতে ১১ শ্রমিক আটকে পড়েছেন, উদ্ধারকাজ চলছে

আজ রাতে লন্ডন যাচ্ছেন খালেদা জিয়া, বিমানবন্দরে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা

আজ রাতে লন্ডন যাচ্ছেন খালেদা জিয়া, বিমানবন্দরে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা

গুয়ানতানামো কারাগার থেকে ১১ ইয়েমেনি বন্দি ওমানে স্থানান্তর

গুয়ানতানামো কারাগার থেকে ১১ ইয়েমেনি বন্দি ওমানে স্থানান্তর

কোথায় হবে তাহসান-রোজার হানিমুন?

কোথায় হবে তাহসান-রোজার হানিমুন?

পুরানা পল্টনে ভবনে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে

পুরানা পল্টনে ভবনে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে

জাতিসংঘ কি হারাচ্ছে তার বৈশ্বিক মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা?

জাতিসংঘ কি হারাচ্ছে তার বৈশ্বিক মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা?

দুপুরে ট্রাইব্যুনালের মূল ভবন উদ্বোধন করবেন প্রধান বিচারপতি

দুপুরে ট্রাইব্যুনালের মূল ভবন উদ্বোধন করবেন প্রধান বিচারপতি

মি: পটুয়াখালী নামে পরিচিত ম্যারাথন দৌড়বিদ টুকু জামিলের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ

মি: পটুয়াখালী নামে পরিচিত ম্যারাথন দৌড়বিদ টুকু জামিলের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ

ঢাকায় ফিরেছেন কলকাতা বিমানবন্দরে আটকা পড়া ২২০ বাংলাদেশি

ঢাকায় ফিরেছেন কলকাতা বিমানবন্দরে আটকা পড়া ২২০ বাংলাদেশি

এসএমএসে সাড়া না দিলে এনআইডি সংশোধন আবেদন বাতিল করবে ইসি

এসএমএসে সাড়া না দিলে এনআইডি সংশোধন আবেদন বাতিল করবে ইসি

সৈয়দপুরে ৬০ বছর বয়সী মাকে রাস্তায় ফেলে দিলেন স্বজনরা

সৈয়দপুরে ৬০ বছর বয়সী মাকে রাস্তায় ফেলে দিলেন স্বজনরা

রাজধানীর পুরানা পল্টনে ভবনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৫ ইউনিট

রাজধানীর পুরানা পল্টনে ভবনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৫ ইউনিট

নেপালে ৭.১ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠলো আরো ৪ দেশ

নেপালে ৭.১ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠলো আরো ৪ দেশ

সৌদি আরবে চালকবিহীন ট্রেন চালু

সৌদি আরবে চালকবিহীন ট্রেন চালু

পঞ্চগড়ে শীতার্তদের পাশে দাঁড়াল সেনাবাহিনী

পঞ্চগড়ে শীতার্তদের পাশে দাঁড়াল সেনাবাহিনী

পথে বসতে যাচ্ছে ভারতের মহাকাশ শিল্প!

পথে বসতে যাচ্ছে ভারতের মহাকাশ শিল্প!

কঠোর হস্তে সিন্ডিকেট ও বাজারব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের আহবান হাসনাতের

কঠোর হস্তে সিন্ডিকেট ও বাজারব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের আহবান হাসনাতের

কালো গ্লাসের অন্তরে বন্ধী সাব্বিরের রঙিন স্বপ্ন

কালো গ্লাসের অন্তরে বন্ধী সাব্বিরের রঙিন স্বপ্ন

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ শীতকালীন ঝড়ে পাঁচজনের মৃত্যু

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ শীতকালীন ঝড়ে পাঁচজনের মৃত্যু

নিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ, যা বললেন টিউলিপ সিদ্দিক

নিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ, যা বললেন টিউলিপ সিদ্দিক