মিয়ানমারে মিলিশিয়াদের প্রতিরোধ আরো জোরদার

সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছে মুসলমানরা

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

২১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৩ এএম

তানিনথারি অঞ্চলের ঘূর্ণায়মান পাহাড়জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা চেকপয়েন্টে অবস্থানরত বিদ্রোহী যোদ্ধারা মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা কাছাকাছি একটি শহরের দিকে যাত্রা করা গাড়ি এবং ট্রাকগুলো তল্লাশি করছে। ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর যেসব গোষ্ঠী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে তারা সবাই এই কাজটিই করে থাকে। তবে এই বিদ্রোহীদের যেটি আলাদা করেছে তা হচ্ছে তাদের বিশ্বাস। এরা স্বল্প পরিচিত ‘মুসলিম কোম্পানি’ এর সদস্য, যারা খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ-অধ্যুষিত সশস্ত্র গোষ্ঠী - কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন (কেএনইউ) এর অংশ হিসাবে মিয়ানমারে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামে যোগ দিয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে কেএনইউ-তে এর নাম ব্রিগেড চার-এর তৃতীয় কোম্পানি। মুসলিম কোম্পানির ১৩০ জন সেনা সামরিক শাসকদের উৎখাত করার জন্য হাজার হাজার যোদ্ধার একটি ভগ্নাংশ মাত্র। মুসলিম কোম্পানির নেতা ৪৭ বছর বয়সী মোহাম্মদ আইশার আল-জাজিরাকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে দীর্ঘকাল ধরে লড়াই করা সশস্ত্র প্রতিরোধ আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘কিছু এলাকায় তাদের নিজস্ব রাষ্ট্র থাকা জাতিগতদের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয়েছে।’ তিনি জানান, কোনো একটি গোষ্ঠীই ভূমিতে আধিপত্য বিস্তার করে না এবং এর পাশাপাশি সামরিক বাহিনীর দমন-পীড়ন সব গোষ্ঠীকে প্রভাবিত করে। আইশার বলেন, ‘যতদিন সামরিক বাহিনী থাকবে, ততদিন মুসলমান এবং অন্য সবাই নিপীড়িত হবে।’ মুসলিম কোম্পানির নেতা আশা করেন যে সামরিক বিরোধী শক্তির মধ্যে বৈচিত্র্যের গ্রহণযোগ্যতা সাংস্কৃতিক এবং আঞ্চলিক উত্তেজনা কমাতে সাহায্য করবে, যা এর আগে মিয়ানমারে সংঘাতের কারণ হয়েছিল। মুসলিম কোম্পানির ঘাঁটি মিয়ানমারের কারেন রাজ্যে। তাদের প্রধান শিবিরে অবস্থানরত নারী যোদ্ধারা মাথায় হিজাব এবং লম্বা জামা পরেন। শিবিরে তৈরি করা মসজিদ থেকে কুরআন তিলাওয়াতের শব্দ শোনা যায়। তাদের মসজিদে বিছানো রয়েছে মাদুর। এই যোদ্ধারা রমজানে রোজা রাখেন এবং প্রতিদিন তাদের নামাজে অংশ নেন। অপর এক খবরে বলা হয়, মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আঞ্চলিক মিলিশিয়াগুলোর প্রতিরোধ ক্রমে জোরদার হয়ে উঠছে। মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আঞ্চলিক মিলিশিয়াগুলোর প্রতিরোধ ক্রমে জোরদার হয়ে উঠছে। সম্প্রতি সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোয় কাচিন ইনডিপেনডেন্স আর্মি (কেআইএ), কারেন ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (কেএনএলএ) ও ম্যান্ডালেভিত্তিক পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ) একযোগে জান্তা ঘাঁটিগুলোয় আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে প্রায়ই বিভিন্ন কৌশলগত এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে সেনাবাহিনী। চীন সীমান্তের কাছাকাছি কানপিকেটি এলাকায় জান্তা সমর্থিত বাহিনীর ওপর হামলা চালায় কেআইএ। ওই হামলায় দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিএফের একটি ব্যাটালিয়নের সদর দপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট এলাকা দখল করে নেয় তারা। এলাকাটি চীনের সঙ্গে বাণিজ্য রুট হওয়ায় কৌশলগতভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। দখলে নেয়ার পর রুটটি পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে কেআইএ। কেআইএ মুখপাত্র কর্নেল নও বু স্থানীয় সংবাদমাধ্যম দি ইরাবতীকে বলেন, ‘কেআইএর এ আক্রমণ কাচিন স্টেট স্পেশাল রিজিয়নে তাদের নিয়ন্ত্রণ জোরদার করেছে। তবে যুদ্ধের অগ্রগতি বিষয়ে আমার কাছে এ মুহূর্তে দেয়ার মতো কোনো তথ্য নেই।’এদিকে বৃহস্পতিবার থাইল্যান্ড সীমান্তের কাছে মিয়াওয়াড্ডি টাউনশিপ এলাকার একটি কৌশলগত জান্তা ঘাঁটি দখল করেছে কারেন রাজ্যভিত্তিক মিলিশিয়া কেএনএলএ। তাদের হামলায় এলাকাটি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে জান্তা সেনারা। থাই সীমান্তবর্তী এ বাণিজ্যকেন্দ্রিক এলাকাও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর ম্যান্ডালেতেও জান্তা বাহিনীর সঙ্গে স্থানীয় মিলিশিয়া পিডিএফের ব্যাপক সংঘর্ষ চলছে। চলতি বছরের জুলাই থেকেই মাদায়া টাউনশিপের অন্তত ৩৫টি জান্তা ঘাঁটি দখলে নিয়েছে পিডিএফ। এর মধ্যে এয়ার ডিফেন্স ব্যাটালিয়নসহ গুরুত্বপূর্ণ সেনাঘাঁটিও রয়েছে। অবশ্য পিডিএফের মুখপাত্র কো অসমন্ড বরেন, ‘জান্তা সরকার বিপুল সৈন্য ও বিমান নিয়ে এলাকাগুলো পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে। তারা একযোগে আর্টিলারি, স্থল ও বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, তবে এখনো জায়গাগুলো আমাদের দখলেই রয়েছে।’ এলাকাগুলো পুনরুদ্ধারের জন্য জান্তাদের চালানো হামলায় অসংখ্য বেসামরিক মানুষ হতাহত হয়েছে। এছাড়া প্রায় ১০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন ক্যাম্পে। কাচিন, কারেন ও ম্যান্ডালে এলাকায় মিলিশিয়াগুলোর সম্মিলিত আক্রমণ জান্তা সরকারের নিয়ন্ত্রণকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। একের পর এক কৌশলগত ঘাঁটি দখল করে নিয়ন্ত্রণে রাখছে তারা। ফলে এলাকাগুলো পুনরুদ্ধার করতে গিয়ে ব্যাপক প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে হচ্ছে জান্তা সরকারকে। আল-জাজিরা, ইরাবতী।


বিভাগ : ইসলামী বিশ্ব


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

এবছর একাধিক উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করবে ইরান
নতুন পারমাণবিক সাফল্য উন্মোচন করতে যাচ্ছে ইরান
বিশাল ভূগর্ভস্থ ক্ষেপণাস্ত্র শহর উন্মোচন করলো ইরানের আইআরজিসি
প্যাসিফিকা ইনস্টিটিউটের বার্ষিক ইফতারে শরিক অন্য ধর্মাবলম্বীরাও
তাকওয়াভিত্তিক সমাজ গঠনে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব
আরও
X

আরও পড়ুন

জুলাই গণহত্যার বিচার আইসিসিতে পাঠাতে চাই না: চিফ প্রসিকিউটর

জুলাই গণহত্যার বিচার আইসিসিতে পাঠাতে চাই না: চিফ প্রসিকিউটর

কর্ণফুলীতে পুকুরে ডুবে ভাইয়ের মৃত্যু, বোন হাসপাতালে

কর্ণফুলীতে পুকুরে ডুবে ভাইয়ের মৃত্যু, বোন হাসপাতালে

সাগরপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় ২১৪ রোহিঙ্গা আটক

সাগরপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় ২১৪ রোহিঙ্গা আটক

কিশোরগঞ্জে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত

কিশোরগঞ্জে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত

ঐক্যবদ্ধ জিহাদের মাধ্যমে ফিলিস্তিনকে রক্ষা করতে হবে বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদ অব্যাহত

ঐক্যবদ্ধ জিহাদের মাধ্যমে ফিলিস্তিনকে রক্ষা করতে হবে বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদ অব্যাহত

১৩ বছর পর জমি দখলে নেয় ভুক্তভোগী, ভিন্নখাতে নিতে অপ-প্রচার

১৩ বছর পর জমি দখলে নেয় ভুক্তভোগী, ভিন্নখাতে নিতে অপ-প্রচার

দেশের ১৩৫ কলেজে নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগ

দেশের ১৩৫ কলেজে নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগ

দেশে বড় বিনিয়োগ আসতে পারে: বিডা চেয়ারম্যান

দেশে বড় বিনিয়োগ আসতে পারে: বিডা চেয়ারম্যান

প্রতিবাদ মিছিল থেকে যারা লুটপাট করেছে তারা মানবতার কলঙ্ক : দুদু

প্রতিবাদ মিছিল থেকে যারা লুটপাট করেছে তারা মানবতার কলঙ্ক : দুদু

নেত্রকোনায় চাঞ্চল্যকর আনোয়ার হত্যাকান্ডের রায়ে একজনের ফাঁসি

নেত্রকোনায় চাঞ্চল্যকর আনোয়ার হত্যাকান্ডের রায়ে একজনের ফাঁসি

ড. ইউনূসের সঙ্গে পিটার হাসের সাক্ষাৎ

ড. ইউনূসের সঙ্গে পিটার হাসের সাক্ষাৎ

কিশোরগঞ্জে দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষে বাড়ি-দোকান ভাংচুর, লুটপাট অর্ধশত আহত

কিশোরগঞ্জে দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষে বাড়ি-দোকান ভাংচুর, লুটপাট অর্ধশত আহত

জিম্বাবয়ের বিপক্ষে যে কারণে শক্তিশালী দল দিল বিসিবি

জিম্বাবয়ের বিপক্ষে যে কারণে শক্তিশালী দল দিল বিসিবি

দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচেও মেয়েদের বড় জয়

দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচেও মেয়েদের বড় জয়

মহেশপুর সড়ক দুর্ঘটনায় দুইজন নিহত আহত ৪

মহেশপুর সড়ক দুর্ঘটনায় দুইজন নিহত আহত ৪

লালমোহনে প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে সার-বীজ বিতরণ

লালমোহনে প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে সার-বীজ বিতরণ

ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে ঈশ্বরগঞ্জে ছাত্রদলের বিক্ষোভ

ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে ঈশ্বরগঞ্জে ছাত্রদলের বিক্ষোভ

দেশে বিনিয়োগের এত অনুকূল পরিবেশ আগে ছিল না: ড. ইউনূস

দেশে বিনিয়োগের এত অনুকূল পরিবেশ আগে ছিল না: ড. ইউনূস

বিশ্বের শক্তিশালী ৫০ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ

বিশ্বের শক্তিশালী ৫০ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ

বর্ণিল আয়োজনে হাবিপ্রবিতে ২৪ তম বিশ্ববিদ্যালয়  দিবস উদযাপন

বর্ণিল আয়োজনে হাবিপ্রবিতে ২৪ তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন