আজ ঐতিহ্যবাদী লেখক হোসেন মাহমুদের ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী
২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৩২ পিএম | আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৫০ পিএম
আজ ২১ ডিসেম্বর লেখক- সাংবাদিক হোসেন মাহমুদের ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী। কুষ্টিয়া জেলার খোকসা থানার ধোকড়াকোল গ্রামে ১৯৫৬ সালের ১৫ জুন তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মায়ের দিক থেকে সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী (১৮৮০-১৯৩১) এবং পিতার দিক থেকে ড. কাজী মোতাহার হোসেন (১৮৯৭-১৯৮১) এর বংশীয় ব্যক্তি ছিলেন। তার বাবা আমীর আলী মোল্লা ছিলেন একজন সমাজসেবী। মা সৈয়দা নুরমহল সিরাজী ছিলেন মুসলিম নবজাগরণের অন্যতম অগ্রদূত সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী’র দ্বিতীয় কন্যা।
তিনি হোসেন মাহমুদ নামে পরিচিত হলেও তার সম্পূর্ণ নাম ছিলো ইস্কান্দার হোসেন মাহমুদ মোল্লা। ডাক নাম ছিল বেলাল। সাত ভাই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ। খুব ছোট বয়সে তিনি পিতৃহারা হন। তিনি কৃতিত্বের সাথে ধোকড়াকোল হাইস্কুল থেকে ১৯৭২ সালে মানবিক বিভাগে মাধ্যমিক, কুষ্টিয়া কলেজ থেকে ১৯৭৪ সালে উচ্চমাধ্যমিক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৮ সালে বাংলায় বি.এ. এবং ১৯৮০ সালে এম.এ. সম্পন্ন করেন।
কর্মজীবনে তিনি ইসলামিক ফাউণ্ডেশনে ৩০ বছরের অধিক সময় কর্মরত ছিলেন। প্রথমদিকে তিনি ইসলামিক ফাউণ্ডেশনে ইভেন্টের কাজে যুক্ত ছিলেন। লেখালেখির দিকে তার আগ্রহ দেখে পরে তাকে সাহিত্য বিভাগে বদলী করা হয়। তিনি প্রায় ১ যুগ যাবৎ ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত মাসিক "সবুজপাতা" পত্রিকার সম্পাদনা করেছেন। তিনি ছিলেন মূলত ঐতিহ্যবাদী লেখক। ইসলামিক ইতিহাস এবং ঐতিহ্য তার লেখায় বিভিন্নভাবে উঠে এসেছে। বিশ্বসভ্যতায় মুসলমান এবং ভারতীয় উপমহাদেশে বাঙালী মুসলমানদের পুনর্জাগরণ তার সাহিত্যের অন্যতম প্রধান উপাদান ছিল।
তার প্রথম কবিতা "জাগরণ" প্রকাশিত হয় মাসিক মদীনা'র ১৯৭৫ সালের জুন সংখ্যায়। তার প্রথম গল্প প্রকাশিত হয় দৈনিক আজাদ পত্রিকায় ১৯৭৭ সালে, নাম "নদীর টানে"। এছাড়াও রাজশাহী থেকে প্রকাশিত দৈনিক বার্তা পত্রিকায় ১৯৭৯ সালে তার প্রথম প্রবন্ধ "বিশ্বকবিঃ বিশ্বের পটভূমিকায়" প্রকাশিত হয়। তার "অসময়ের ঝড়" গল্পটি দৈনিক বাংলায় ১৯৮৮ সালে প্রকাশ হওয়ার পর তার সাহিত্য জীবনের মোড় ঘুরে যায়। দেশের প্রথমসারির সকল পত্রিকায় লেখনির ক্ষেত্রে তার ছিলো সাচ্ছন্দ পদচারণা। সাহিত্যিক হিসেবে গ্রন্থাকারে তার আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯৯৪ সালে। প্রথম গল্পগ্রন্থ সকালের প্রতীক্ষা, এবং প্রথম সংকলনগ্রন্থ বাঙালী মুসলিম নবজাগরণের অগ্রদূত সৈয়দ ইসমাইল হোসেন শিরাজী।
তিনি ১৯৯৩ সালে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন। এতে ডান পায়ে হাঁটার শক্তি অনেকটাই হারিয়ে ফেলেন। পরে মাদ্রাজে গিয়ে চিকিৎসায় অনেকটা ভালো হয়ে ওঠেন। তবে ২০০৬ সালের শেষ দিকে ব্যথা জায়গায় কয়েকবার আঘাত পান। ফলে ধীরে ধীরে তার ডান পা অবশ হতে শুরু করে। এক পর্যায়ে ২০০৯ সাল থেকে অনিরাময়যোগ্য অস্টিওপোরোসিস রোগে আক্রান্ত হন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি চলৎশক্তিহীন অবস্থায় অতিবাহিত করেন। এছাড়াও পরবর্তীতে তিনি ডায়েবেটিস, এ্যাজমা ও লিভারের রোগাক্রান্ত হন। প্রায় আড়াই মাস মৃত্যুর সাথে লড়াই করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৯ সালের ২১ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। তখন তার বয়স হয়েছিলো ৬৪ বছর।
হোসেন মাহমুদ নতুনদের লেখা বিষয়ে আগ্রহী ছিলেন। বিশেষ করে তিনি শিশু-কিশোরদের লেখা নিয়ে বেশি ভাবতেন। শিশু সাহিত্য নিছক মজা নয়। এতে শেখা এবং জানার অনেক কিছু আছে, এটা তিনি সর্বদা বলতেন। একজন দায়িত্বশীল প্রতিশ্রুতিশীল লেখক ছিলেন তিনি। তরুণদের তিনি ভালোবাসতেন, সময় এবং সুযোগ দিতেন। গণমাধ্যমে শিশুবান্ধব লেখা নিয়ে আলোচনা ও আগ্রহের ঘাটতি বিষয়ে তার আফসোস ছিল। তিনি শিশু-কিশোরদের জন্য ৭টি গ্রন্থ প্রকাশ এবং ১০০টি গল্প অনুবাদ করে গেছেন। এছাড়াও আরো অনেক গল্প- কবিতা রচনা করে গেছেন। যার বেশিরভাগই বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হলেও জীবিতাবস্থায় গ্রন্থে রুপ দিতে পারেননি। তিনি একটি "থিসিস" শুরু করেছিলেন। তবে তা শেষ করে যেতে পারেন নি।
হোসেন মাহমুদ ১৯৮৪ সালে দৈনিক আজাদ পত্রিকার মধ্যে দিয়ে সাংবাদিকতা শুরু করেন। ১৯৮৬ সাল থেকে আমৃত্যু দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় সিনিয়র সাব- এডিটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ২০০১ সালে ঢাকা সাব এডিটর কাউন্সিলের আহ্বায়ক ও ২০০৩ সালে সভাপতি ছিলেন। তিনি ১৯৯৬ সাল থেকে বাংলা একাডেমীর আজীবন সদস্য ছিলেন। তার ৪৪ বছরের সাহিত্য জীবনে রাষ্ট্রীয় কোন বড় পদক বা স্বীকৃতি জোটেনি। তবে সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ২০০৭ সালে সেন্টার ফর ন্যাশনাল কালচার সম্মাননা পদক লাভ করেন। এছাড়াও ঢাকা সাব এডিটর কাউন্সিল থেকে তিনি ২০১৮ সালে সম্মাননা পদক লাভ করেন।
হোসেন মাহমুদের প্রকাশিত বই ২৪টি। শুধুমাত্র কিশোর- কিশোরীদের জন্য গ্রন্থ রচনায় বাংলা সাহিত্যে তিনিই প্রথম। "শাদী ও স্বপ্নের শাদা ঘোড়া" অনুবাদ গ্রন্থটি তারই উৎকৃষ্ট উদাহরণ। তার গ্রন্থসমুহের মধ্যে রয়েছে - গল্পগ্রন্থঃ সকালের প্রতীক্ষা (১৯৯৪), দিগন্ত রেখা (২০০৭)। অনুবাদ উপন্যাসঃ ফিলিস্তিনের আকাশ (২০০৬)। অনুবাদ গল্পঃ মেকঙের তীরে ভালোবাসা (২০০৭), শাদী ও স্বপ্নের শাদা ঘোড়া (২০১১), ককেশাসের বন্দী (২০১৬)। গবেষণা এবং প্রবন্ধঃ বাংলা সাহিত্যে মুসলিম জাগরণের সুচনা (২০০০), বাঙালি মুসলমানের আলোকবর্তিকা ও অন্যান্য প্রবন্ধ (২০০৫), আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা ও অন্যান্য (২০০৯), মহান একুশে ফেব্রুয়ারি (২০১১), বিশ্বের সাড়া জাগানো অভিযান (২০১১), ইসলামের নবী ঈসা মসীহ (আ) (২০১৪) । সম্পাদনাঃ সৈয়দ ইসমাইল হোসেন শিরাজী (১৯৯৬), ছোটদের শহীদ জিয়া (২০০৪), সৈয়দ ইসমাইল হোসেন শিরাজীর প্রবন্ধসমগ্র (২০১৩)। যৌথ সম্পাদনায়ঃ সৈয়দ আসাদউদ্দৌলা শিরাজী (২০০৪), শেখ ফজলল করিম রচনাবলী (২০০৪)। সংকলিত গ্রন্থঃ ভাষা থেকে স্বাধীনতা (২০০৪), ঈদ: আনন্দের উৎসব ত্যাগের শিক্ষা (২০০৪), কলম ও কালির মানুষ ১ম খন্ড (২০০৪), কলম ও কালির মানুষ ২য় খন্ড (২০০৪)। জীবনীঃ বাঙালি মুসলিম নবজাগরণে সৈয়দ ইসমাইল হোসেন শিরাজী (২০০৭)। অনুবাদ জীবনীঃ জান্নাতের দশ নারী (২০১০)। এছাড়াও তার গ্রন্থাকারে অপ্রকাশিত রচনার পরিমাণ বিপুল। যার মধ্যে একটি উপন্যাস-ও রয়েছে। এছাড়াও ‘আফগানিস্তান আমার ভালোবাসা’, ‘মা’, ‘রাসূল (সা.)-র শানে নিবেদিত কবিতা’, ‘কিশোরকণ্ঠ গল্প সংকলন’, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান’, ‘বাংলা সাহিত্যে মুসলিম প্রভাব’, ‘ছোটদের জিয়াউর রহমান’, ‘ মহান একুশে ’, ‘ইসলামী বিশ্বকোষ’ প্রভৃতি সংকলনে তার লেখা রয়েছে।
বিভাগ : সাহিত্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচনের পক্ষে মত বিএনপির যুগপৎ সঙ্গীদের
ঢাকায় ‘হযরত ফাতিমা জাহরা (সা.আ.) বিশ্বের নারীদের আদর্শ’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
চার ভাগে ফিরবেন ক্রিকেটাররা
চাঁদাবাজদের ক্ষমতায় আসতে দেবেন না: হাসনাত
এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের বরাদ্দ পেল বাফুফে
ইজতেমা মাঠকে যারা খুনের মাঠে পরিণত করেছে তারা সন্ত্রাসী
আসছে ভিভোর এক্স সিরিজের নতুন ফ্ল্যাগশিপ
বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ২ ভারতীয় নাগরিককে স্বদেশে ফেরত
মুন্সীগঞ্জে বিএনপি’র দু পক্ষে সংঘর্ষ,৩ জন গুলিবিদ্ব সহ আহত ১০
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাকিব-তামিমকে পাওয়া যাবে: ফারুক
ইজতেমা মাঠে হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করুন
কলাপাড়ায় অটোরিকশা উল্টে শিশুর মৃত্যু
আগামীকাল পঞ্চগড়ে বিএনপির জনসমাবেশ
ব্যাক্তিস্বার্থ পরিহার করে, দেশ ও দলের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে: ইলিয়াস পাটোয়ারী
সখিপুরে বিদ্যুৎষ্পৃষ্টে ডিস ব্যবসায়ীর মৃত্যু
যারাই সুযোগ পেয়েছে তারাই দেশের সাথে বেঈমানী করেছে: ডা. মু. তাহের
পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো মৌমাছি ও মধু সম্মেলন
শীতের দিনে ঝিরঝিরে বৃষ্টি স্থবির খুলনা শহুরে জীবন
টেকসই উন্নয়নের কথা মাথায় রেখেই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য নীতি করার তাগিদ
লোকসংগীত শিল্পী নিপা আহমেদ সারাহ্ এর একক সঙ্গীত সন্ধ্যা