বিরোধীদলকে নির্মূলের জন্য বেছে বেছে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে রায় দেয়া হচ্ছে: প্রিন্স
১৮ এপ্রিল ২০২৩, ০৫:৩৯ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:০৫ পিএম
বিরোধী দলকে নির্মূলের জন্য বেছে বেছে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অবৈধ সরকারের নির্দেশে রায় দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স। তিনি বলেন, ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট সাতক্ষীরার কলারোয়ায় তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার গাড়ী বহরে হামলা মামলার রায়ে বিএনপির সাবেক এমপি ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ চারজনের যাবজ্জীবন ও ৪৪ জনের ৭ বছর করে কারাদ-ের যে রায় ঘোষণা করা হয়েছেন তা নিঃসন্দেহে ফরমায়েসী রায়। এর আগেও ২০২১ সালে তৈরী করা আইনে হাবিবুল ইসলাম হাবিবকে ১০ বছরের সাজা দেয়া হয়েছে। প্রধান বিচারপতিকে বন্দুকের জোরে সরিয়ে দেয়াসহ আওয়ামী সরকারের নির্দেশে আদালতকে দিয়ে অনেক কিছুই করা হয়েছে এবং হচ্ছে। এসব কার নির্দেশে হচ্ছে সেটির জন্য বেশী লেখাপড়ার প্রয়োজন পড়ে না। সাধারণ জনগণও তা বুঝে গেছে। শেখ হাসিনার গাড়ীবহরে হামলা মামলার রায়ও আওয়ামী সরকারের ইচ্ছার বাইরে হয়নি। আইন আদালতকেও সরকার প্রতিহিংসা চরিতার্থের রাজনীতির অনুসঙ্গ করে ফেলেছে। মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, একটি মামলাকে পরবর্তীতে তিনটি মামলায় বিভক্ত করে সাতক্ষীরা জেলা বিএনপি’র নেতাকর্মীদেরকে সীমাহীন ও নিষ্ঠুর নির্যাতন ও হয়রানী করা হয়েছে। হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ বিএনপি নেতাকর্মীরা এই ঘটনার সাথে জড়িত না থাকা সত্বেও তাদেরকে ¯্রফে প্রতিহিংসার কারণে অবৈধ সরকার তাদেরকে এই মিথ্যা মামলার সাথে জড়িত করেছে। অথচ এফআইআরে হাবিবুল ইসলাম হাবিবের নামটি পর্যন্ত ছিল না। সেদিন হাবিবুল ইসলাম ঢাকায় অবস্থান করছিলেন, ঘটনাটি বেলা ১১-৫০ মিনিটে ঘটে এবং ঘটনার পরপরই দুপুর ১-০০ টায় বিবিসি থেকে হাবিবুল ইসলাম হাবিবের ঢাকার টিএন্ডটি ফোনে ফোন করে সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। হাবিবুল ইসলাম হাবিব যদি ঘটনার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়ায় উপস্থিত থাকেন তবে তার পক্ষে কিভাবে সেদিনই ঢাকায় এসে ল্যান্ডফোনে বিবিসি’র সঙ্গে কথা বলা সম্ভব ? এই ঘটনায় কেউ হতাহত ছিল না, কিন্তু পরবর্তীতে একজনকে আহত সাজিয়ে মামলা করা হলেও সেও সাক্ষী দিতে যায়নি, এমনকি যে সকল সাংবাদিকদের সাক্ষী করা হয়েছিল, মূলধারার সংবাদপত্রের সাংবাদিকরাও এই সাজানো মামলায় সাক্ষী দেননি। ঘটনার এক যুগ পর পাকা রাস্তার ওপর থেকে একটি বুলেটের খোসা উদ্ধারের নাটক সাজিয়ে মামলাটিকে পরিচালনা করা হয়। বন্ধুরা, আপনাদের নিকট প্রশ্ন রাখতে চাই-তর্কের খাতিরে যদি বলি, সে সময় যদি সেখানে গুলি করার ঘটনা ঘটেও থাকে তাহলে এক যুগ পর রাস্তায় বুলেটের খোসা পাওয়া কি হাস্যকর কিংবা অসম্ভব নয় ? প্রকৃতপক্ষে সেদিন তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী নিরাপত্তা রক্ষীরাই দুই রাউন্ড গুলি ছুঁড়েছিল। এছাড়া সেখানে কোন গুলির ঘটনা ঘটেনি। তাহলে এটা পরিস্কার যে, কেবলমাত্র রাজনৈতিকভাবে হেনস্তা করতেই বিএনপি’র প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ চারজনকে যাবজ্জীবন এবং বাকীদের ৭ বছর করে কারাদন্ড প্রদানের ঘটনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখা থাকবে। এই ঘটনায় দায়ের করা মামলার দন্ডবিধি অংশে ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারী সাবেক এমপি ও সাতক্ষীরা জেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৫০ জন নেতাকর্মীকে ৪ থেকে ১০ বছর মেয়াদে সাজা প্রদান করেন সাতক্ষীরা চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হুমায়ন কবির। আসামীদের মধ্যে দুই জন (মাহফুজুর রহমান সাবু এবং জাবিদ হাসান লাকী) দন্ড ভোগ করা অবস্থায় কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন।
তিনি বলেন, বিএনপি গণতন্ত্রে অঙ্গীকারাবদ্ধ একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। বিএনপি বরাবরই জনগণের শক্তিকে অবলম্বন করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছে। অতীতের মতো বর্তমান অবৈধ সরকার নানাভাবে নিজেরাই নাশকতার সৃষ্টি করে ‘উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে’ চাপানোর মতো পরিকল্পনা করে তা বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর এর দায় চাপানোর অংশ হিসেবে বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ অন্যান্য নেতাকর্মীদের জড়ানো হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আজ যে দন্ড ঘোষনা করা হলো তা সম্পূর্ণরুপে ফরমায়েসী। যতই দিন যাচ্ছে ততই একের পর এক সরকারের হিং¯্র রুপের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে, মানবিক বিবেচনাগুলো পদদলিত করা হচ্ছে। আজকে আদালতের রায়ে সরকারের নিষ্ঠুর দানবীয় রুপের আরো একটি নতুন চেহারা দেখা গেল। দেশব্যাপী অত্যাচার, নিপীড়ণ, লুন্ঠন, দখল এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, এগুলোকে আড়াল করতেই সাজানো মিথ্যা মামলায় বিএনপি’র নেতৃবৃন্দকে জড়িয়ে আদালতকে ব্যবহার করে নির্দয় রায় দেয়া হচ্ছে, আজকের রায়ও সেই নিষ্ঠুরতার অংশ। সরকার ক্ষমতাসীন হয়েই নি¤œ আদালতকে কব্জায় নিয়ে বিএনপি-কে নিশ্চিহ্ন করতে যে নির্মূলের নীতি অবলম্বন করেছে, আজকের রায় সেটিরই ধারাবাহিকতা। বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এই রায় ঘোষণার ঘটনা শুধু অবান্তর ও হাস্যকরই নয়, এটি একটি সুদুরপ্রসারী মাষ্টারপ্ল্যানেরই অংশ। আমরা আজকের এই রায়ের বিরুদ্ধে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এর তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাচ্ছি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক বলেন, এই ভোটারবিহীন অবৈধ শাসকগোষ্ঠী গণবিরোধী কাজের জন্য সম্পূর্ণরুপে গণবিচ্ছিন্ন। সেজন্য মিথ্যাচার, ষড়যন্ত্র, কুটিল চক্রান্ত, অশুভ পরিকল্পনার ওপর নির্ভর করছে বলেই ইতোমধ্যে বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের ন্যায় গায়েবী মামলায় সারাদেশ ভাসিয়ে দিয়ে গ্রেফতারের ধুম শুরু করে ক্ষমতাসীনরা। পূর্বের বিচ্ছিন্ন ধারার হামলা, মামলা এখন নিরবচ্ছিন্ন ধারায় পরিণত হয়েছে। টার্গেট বিএনপি, বিএনপি-কে ধ্বংস করতে না পারা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর ঘুম হারাম হয়ে গেছে। তাই ক্ষমতায় থেকে তিনি যা করছেন তা চক্রান্তমূলক। এই চক্রান্ত গণতন্ত্র, বাক স্বাধীনতা, নাগরিক স্বাধীনতা, বিবেক, মুক্তচিন্তার বিরুদ্ধে। এই চক্রান্ত বিএনপিসহ বিরোধী দল ও মতের বিরুদ্ধে।
আজ বিএনপি’র প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ অন্যান্য নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ফরমায়েসী রায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি পুরোপুরি প্রত্যাখান করছে। অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত বানোয়াট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা প্রত্যাহারসহ নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি করছে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রিন্স বলেন, গতরাতে সাতক্ষীরায় কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র আহবায়ক শেখ এবাদুল ইসলাম, সদস্য সচিব শফিকুল ইসলাম বাবু, যুগ্ম আহবায়ক মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, শ্যামনগর উপজেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি মাসুদুল আলম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ লিয়াকত আলী বাবু, আশাশুনি উপজেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহবায়ক খায়রুল আহসান ও সাতক্ষীরা জেলা কৃষকদলের যুগ্ম আহবায়ক আলী হোসেনসহ ১৫ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আমি তাদেরকে গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তাদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবী করছি। এছাড়া বিএনপি’র প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ নেতাকর্মীদের বাড়ীতে বাড়ীতে পুলিশী তল্লাশী, হুমকি ও হয়রানী করা হচ্ছে। ফরমায়েসী রায়ের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ মিছিল করার সময় জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মোমতাজুল হক চন্দনসহ মোট ছয়জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিএনপি’র পক্ষ থেকে আমি এসব ন্যাক্কারজনক ঘটনায় প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে এই ধরণের হয়রানী বন্ধ ও নেতাকর্মীদের মুক্তির আহবান জানাচ্ছি।
এদিকে জিয়া মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রহমানকে গত ১০ এপ্রিল বিকেল ৩টায় সাদা পোশাকধারী আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হলেও এখন পর্যন্ত সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজ করেও তার কোন সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। এ নিয়ে তার পরিবারসহ সংশ্লিষ্ট সকলেই গভীর উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় রয়েছেন। তার পরিবার-পরিজনদের ধারণা-আইন শৃঙ্খলা বাহিনীই তাকে তুলে নিয়ে গেছে।
বিভাগ : মহানগর
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
সাটুরিয়ায় জমি নিয়ে বিরোধে হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কৃষকের মৃত্যু
"অভিনেত্রী মন্দিরার সিনেমার প্রিমিয়ার প্রদর্শনী যুক্তরাষ্ট্রে"
পেঁয়াজের পরিচর্যায় ব্যস্ত কুষ্টিয়ার কৃষকরা
স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকার বিতর্কিত সিলেবাসের মাধ্যমে মানুষকে ধর্মহীন করার চক্রান্ত করেছিল-পীর ছাহেব চরমোনাই
ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের আদেশের বিরুদ্ধে আপিলে যাচ্ছে রাষ্ট্র
জবির বোটানি বিভাগ অ্যালামনাইয়ের নির্বাচন অনুষ্ঠিত
আরএফকে জুনিয়র কি আমেরিকার খাদ্যাভ্যাসকে পরিবর্তন করতে পারবেন?
জুলাই বিপ্লবের গ্রাফিতি মুছে ফেলার ঘটনায় গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের দুঃখ প্রকাশ
বর্তমান সরকার পূর্নবাসনসহ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিবেন- আশাবাদী ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকরা
ফরিদগঞ্জে অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েছে শিশু-কিশোররা
সউদীতে এক সপ্তাহে ২০ হাজার প্রবাসী গ্রেফতার
চট্টগ্রামে চাকরিচ্যুত ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মহাসড়ক অবরোধ
পাকিস্তানে রাতভর শিয়া-সুন্নি সংঘর্ষে নিহত অন্তত ৩২
মোহাম্মদপুরে সড়ক অবরোধ, তীব্র যানজট
ইসরায়েলি হামলায় বৈরুতে নিহত ২০,শুজাইয়া ছাড়ছে শত শত ফিলিস্তিনি
আফগানিস্তানে মাজারে বন্দুকধারীর নির্বিচার গুলিবর্ষণে নিহত ১০
সকল পুলিশ সদস্যকে জনসাধারণের সাথে উত্তম ব্যবহার করতে হবে- শেরপুরের পুলিশ সুপার
সরকারির চাকরির বয়সসীমা ৩৫ করার দাবিতে সমাবেশ আজ
২ মার্চ 'জাতীয় পতাকা দিবস' হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান : ড. আব্দুল মঈন খান
সাংবাদিক নূরুল কবিরকে হয়রানি, তদন্তের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার