ঢাকা   রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৭ আশ্বিন ১৪৩১

আপত্তি সত্ত্বেও ‘সৌন্দর্যবর্ধনের’ নামে গাছকাটা অব্যাহত রেখেছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

০৭ মে ২০২৩, ০৮:০৫ পিএম | আপডেট: ০৭ মে ২০২৩, ০৮:০৫ পিএম



পরিবেশবাদী ও সচেতন নাগরিকদের বিরোধিতা সত্ত্বেও রাজধানীর ধানমন্ডি সাত মসজিদ সড়কের গাছ কাটা অব্যাহত রেখেছে ডিএসসিসি।
উত্তপ্ত ঢাকার তাপমাত্রা কমানোর জন্যে যেখানে উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) 'চিফ হিট অফিসার' নিয়োগ দিয়েছে। ২ লাখ গাছ লাগানোর ঘোষণা দিয়েছে। সেখানে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ঢাকা নগরের গাছ কেটে 'সৌন্দর্যবর্ধন' করছে।
আজ রোববার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের সামনে থেকে আবাহনী খেলার মাঠের উত্তর-পশ্চিম কোণ পর্যন্ত সড়কের বিভাজকে থাকা সব গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। সেখনে একটিও অক্ষত গাছ দেখা যায়নি। মিডিয়ান তৈরির কাজ করছেন মিস্ত্রিরা। অনেক জায়গায় ইতোমধ্যে মিডিয়ান তৈরি হয়ে গেছে। মিডিয়ানের ওপর স্টিলের বিভাজন দেওয়াও শুরু হয়েছে।
গত শনিবার রাতেও আবাহনী খেলার মাঠের উত্তর-পশ্চিম কোণে গাছ কাটা হয়েছে এবং গাছ কাটা অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছে সিটি করপোরেশন।
সিটি করপোরেশন বলছে, উন্নয়নের স্বার্থে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য এই সড়কের ২ কিলোমিটারের মধ্যে থাকা থাকা সব গাছ কেটে ফেলতে হবে। তবে পরিবেশবাদীরা বলছেন, গাছ রেখেও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করা যেত।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, 'প্রচণ্ড বায়ুদূষণে অভিশপ্ত, একটি তাপীয় দ্বীপে পরিণত হওয়া ঢাকাতে গাছ কাটার আগে ১০০ বার চিন্তা করতে হবে। ঢাকা সিটি করপোরেশনই এই গাছগুলো লাগিয়েছে। ওয়ার্ক অর্ডারে বলা হয়েছে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য এই গাছগুলো কাটা হচ্ছে। কিন্তু গাছ কেটে কীভাবে সৌন্দর্যবর্ধন হয় তা আমাদের জানা নেই। নতুন করে যে ডিভাইডার করা হচ্ছে সেখানে কীভাবে সৌন্দর্যবর্ধন হচ্ছে তা বুঝতে পারছি না। দেখতে তো একই রকম। এই গাছগুলো রেখেই সৌন্দর্যবন্ধনের কাজ করা যেত।'
রিজওয়ানা হাসান আরো বলেন, 'তারা বলছে এই গাছগুলো অনিরাপদ। সুস্থ সবল গাছ অনিরাপদ হয় কীভাবে? এই অনিরাপদের সার্টিফিকেট কোন বিশেষজ্ঞ দিয়েছে আমাদের জানা নেই। বিষয়টা হচ্ছে একবার গাছ লাগাব কিছু টাকা পকেটে ভরব, আরেকবার গাছ কাটব কিছু টাকা পকেটে ভরব। তারা বলছে এখানে বাগান বিলাস গাছ লাগানো হবে। কিন্তু বাগান বিলাস গাছ তো ছায়া দেবে না। বাগান বিলাস গাছ কি অক্সিজেন দেবে? উন্নয়ন প্রকল্পের তো যৌক্তিকতা থাকতে হবে।'
‘আমরা সিটি করপোরেশনের ভুল ধরিয়ে দিলাম, কিন্তু সিটি করপোরেশন কাউকে পরোয়া করল না। আমরা গতকাল সেখানে ৪টি গাছ লাগিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু সিটি করপোরেশন সেই গাছগুলো রাখেনি, তুলে ফেলেছে। দেশে যদি গণতন্ত্র থাকত, ভোটের অধিকার থাকত তাহলে ঢাকা সিটি করপোরেশন এই ধৃষ্টতা দেখাত না। আমাদের কথা না শুনলে আমরা এই আন্দোলনকে জাতীয় আন্দোলনে রূপ দেব,' তিনি যোগ করেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী সালেহ আহম্মেদদ্য ডেইলি বলেন, 'এই কাজ মূলত জিগাতলা থেকে সাত মসজিদ রোডে ২৭ নম্বরের যে মোড় আছে সেখান পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার জুড়ে হবে।'
গাছ কাটা ছাড়াই সৌন্দর্যবর্ধনের কাজটি করা যেত কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'ইন্টারসেকশনগুলো আমরা পরিবর্তন করেছি। পুরো রোডজুড়ে এখন আমরা ৪টি ইন্টারসেকশন রেখেছি। আমরা বিভিন্ন বিকল্প উপায় চেষ্টা করে দেখেছি। কিন্তু হচ্ছে না। তাই গাছ কাটতে হচ্ছে। আমরা সেখানে উন্নত প্রজাতির দ্রুত বর্ধনশীল গাছ লাগিয়ে দেব। এতে দ্রুত সবুজায়ন হবে। তবে উন্নয়নের স্বার্থে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটবে। আমরা সেই বিষয়ে সচেতন আছি।'
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এই কর্মকর্তা বলেন, 'আমার বক্তব্য ছিল যতটুকু রাখা যায় আমরা কিছু গাছ রাখার চেষ্টা করব। জায়গা যদি ৬ ফুট হতো তাহলে কিছু গাছ রাখতে পারতাম। কিন্তু সেই মিডিয়ানের জায়গাটি ৩ ফুটেরও কম। তাই চেষ্টা করেও গাছ রাখা যায়নি। তবে আমরা দ্রুত গাছ লাগিয়ে দেব।'
কী গাছ লাগানো হবে জানতে চাইলে সালেহ আহম্মেদ বলেন, 'আমরা এখনো সিদ্ধান্ত নেইনি। আমাদের মেয়র এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে যতটুকু জানি বাগান বিলাসসহ বিভিন্ন প্রজাতির কাছ থাকবে।'
এই প্রকল্পে বাজেট কত জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'সাত মসজিদ রোডে প্রায় ২ কিলোমিটারের সৌন্দর্যবর্ধনে দেড় থেকে ২ কোটি টাকা ব্যয় হবে।'
এদিকে সাত মসজিদ সড়কের বিভাজনকে গাছ কাটা বন্ধে আহ্বান জানিয়ে গত মঙ্গলবার রাতে মানববন্ধন করে পরিবেশবাদী ও সচেতন নাগরিকরা। এর আগে গত জানুয়ারিতে সাত মসজিদ সড়কে কিছু গাছ কাটে সিটি করপোরেশন। পরে প্রতিবাদের মুখে তা বন্ধ রাখা হয়। ওই ঘটনার পর আবার গাছ কাটতে শুরু করেছে সিটি করপোরেশন।


বিভাগ : মহানগর


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও অজিদের অনায়স জয়

দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও অজিদের অনায়স জয়

প্লটবঞ্চিত পূর্বাচলের আদিবাসিন্দাদের ৩শ’ ফুট সড়কে অবস্থান : বিক্ষোভ অব্যাহত

প্লটবঞ্চিত পূর্বাচলের আদিবাসিন্দাদের ৩শ’ ফুট সড়কে অবস্থান : বিক্ষোভ অব্যাহত

দেশে সংস্কার  ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার আহ্বান

দেশে সংস্কার ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার আহ্বান

ছাত্রলীগের হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের মামলা করতে বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

ছাত্রলীগের হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের মামলা করতে বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

উম্মাহর কল্যাণে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই

উম্মাহর কল্যাণে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই

বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারসহ নিহত ১৪

বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারসহ নিহত ১৪

পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধে ব্যবহারের আশঙ্কা

পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধে ব্যবহারের আশঙ্কা

মস্কোয় হামলার উপযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভে পাঠাবে না জার্মানি

মস্কোয় হামলার উপযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভে পাঠাবে না জার্মানি

জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী

জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী

মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান

মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান

বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির

বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির

একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১

একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১

কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু

কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু

সাজেক ভ্রমণে আটকা পড়েছেন ৮০০ পর্যটক

সাজেক ভ্রমণে আটকা পড়েছেন ৮০০ পর্যটক

‘শুধু সংস্কারে থেমে থাকলেই চলবে না, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে হবে’ : তারেক রহমান

‘শুধু সংস্কারে থেমে থাকলেই চলবে না, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে হবে’ : তারেক রহমান

যে কোনো ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব দিতে প্রস্তুত: বিএনপির স্থানীয় কমিটির সদস্য ডা. জাহিদ

যে কোনো ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব দিতে প্রস্তুত: বিএনপির স্থানীয় কমিটির সদস্য ডা. জাহিদ

ভোলায় ঝড়ের কবলে পড়ে ১০ ট্রলারডুবি, নিখোঁজ ১

ভোলায় ঝড়ের কবলে পড়ে ১০ ট্রলারডুবি, নিখোঁজ ১

ছাত্ররাজনীতিতে গুণগত সংস্কার প্রয়োজন : শিবির সেক্রেটারী

ছাত্ররাজনীতিতে গুণগত সংস্কার প্রয়োজন : শিবির সেক্রেটারী

মতলবে ছেলের ইটের আঘাতে মায়ের মৃত্যু : আটক ছেলে

মতলবে ছেলের ইটের আঘাতে মায়ের মৃত্যু : আটক ছেলে

মব জাস্টিসের প্রতিবাদে চবিতে মানববন্ধন

মব জাস্টিসের প্রতিবাদে চবিতে মানববন্ধন