ঢাকা   রোববার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ | ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

আপত্তি সত্ত্বেও ‘সৌন্দর্যবর্ধনের’ নামে গাছকাটা অব্যাহত রেখেছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

০৭ মে ২০২৩, ০৮:০৫ পিএম | আপডেট: ০৭ মে ২০২৩, ০৮:০৫ পিএম



পরিবেশবাদী ও সচেতন নাগরিকদের বিরোধিতা সত্ত্বেও রাজধানীর ধানমন্ডি সাত মসজিদ সড়কের গাছ কাটা অব্যাহত রেখেছে ডিএসসিসি।
উত্তপ্ত ঢাকার তাপমাত্রা কমানোর জন্যে যেখানে উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) 'চিফ হিট অফিসার' নিয়োগ দিয়েছে। ২ লাখ গাছ লাগানোর ঘোষণা দিয়েছে। সেখানে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ঢাকা নগরের গাছ কেটে 'সৌন্দর্যবর্ধন' করছে।
আজ রোববার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের সামনে থেকে আবাহনী খেলার মাঠের উত্তর-পশ্চিম কোণ পর্যন্ত সড়কের বিভাজকে থাকা সব গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। সেখনে একটিও অক্ষত গাছ দেখা যায়নি। মিডিয়ান তৈরির কাজ করছেন মিস্ত্রিরা। অনেক জায়গায় ইতোমধ্যে মিডিয়ান তৈরি হয়ে গেছে। মিডিয়ানের ওপর স্টিলের বিভাজন দেওয়াও শুরু হয়েছে।
গত শনিবার রাতেও আবাহনী খেলার মাঠের উত্তর-পশ্চিম কোণে গাছ কাটা হয়েছে এবং গাছ কাটা অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছে সিটি করপোরেশন।
সিটি করপোরেশন বলছে, উন্নয়নের স্বার্থে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য এই সড়কের ২ কিলোমিটারের মধ্যে থাকা থাকা সব গাছ কেটে ফেলতে হবে। তবে পরিবেশবাদীরা বলছেন, গাছ রেখেও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করা যেত।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, 'প্রচণ্ড বায়ুদূষণে অভিশপ্ত, একটি তাপীয় দ্বীপে পরিণত হওয়া ঢাকাতে গাছ কাটার আগে ১০০ বার চিন্তা করতে হবে। ঢাকা সিটি করপোরেশনই এই গাছগুলো লাগিয়েছে। ওয়ার্ক অর্ডারে বলা হয়েছে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য এই গাছগুলো কাটা হচ্ছে। কিন্তু গাছ কেটে কীভাবে সৌন্দর্যবর্ধন হয় তা আমাদের জানা নেই। নতুন করে যে ডিভাইডার করা হচ্ছে সেখানে কীভাবে সৌন্দর্যবর্ধন হচ্ছে তা বুঝতে পারছি না। দেখতে তো একই রকম। এই গাছগুলো রেখেই সৌন্দর্যবন্ধনের কাজ করা যেত।'
রিজওয়ানা হাসান আরো বলেন, 'তারা বলছে এই গাছগুলো অনিরাপদ। সুস্থ সবল গাছ অনিরাপদ হয় কীভাবে? এই অনিরাপদের সার্টিফিকেট কোন বিশেষজ্ঞ দিয়েছে আমাদের জানা নেই। বিষয়টা হচ্ছে একবার গাছ লাগাব কিছু টাকা পকেটে ভরব, আরেকবার গাছ কাটব কিছু টাকা পকেটে ভরব। তারা বলছে এখানে বাগান বিলাস গাছ লাগানো হবে। কিন্তু বাগান বিলাস গাছ তো ছায়া দেবে না। বাগান বিলাস গাছ কি অক্সিজেন দেবে? উন্নয়ন প্রকল্পের তো যৌক্তিকতা থাকতে হবে।'
‘আমরা সিটি করপোরেশনের ভুল ধরিয়ে দিলাম, কিন্তু সিটি করপোরেশন কাউকে পরোয়া করল না। আমরা গতকাল সেখানে ৪টি গাছ লাগিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু সিটি করপোরেশন সেই গাছগুলো রাখেনি, তুলে ফেলেছে। দেশে যদি গণতন্ত্র থাকত, ভোটের অধিকার থাকত তাহলে ঢাকা সিটি করপোরেশন এই ধৃষ্টতা দেখাত না। আমাদের কথা না শুনলে আমরা এই আন্দোলনকে জাতীয় আন্দোলনে রূপ দেব,' তিনি যোগ করেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী সালেহ আহম্মেদদ্য ডেইলি বলেন, 'এই কাজ মূলত জিগাতলা থেকে সাত মসজিদ রোডে ২৭ নম্বরের যে মোড় আছে সেখান পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার জুড়ে হবে।'
গাছ কাটা ছাড়াই সৌন্দর্যবর্ধনের কাজটি করা যেত কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'ইন্টারসেকশনগুলো আমরা পরিবর্তন করেছি। পুরো রোডজুড়ে এখন আমরা ৪টি ইন্টারসেকশন রেখেছি। আমরা বিভিন্ন বিকল্প উপায় চেষ্টা করে দেখেছি। কিন্তু হচ্ছে না। তাই গাছ কাটতে হচ্ছে। আমরা সেখানে উন্নত প্রজাতির দ্রুত বর্ধনশীল গাছ লাগিয়ে দেব। এতে দ্রুত সবুজায়ন হবে। তবে উন্নয়নের স্বার্থে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটবে। আমরা সেই বিষয়ে সচেতন আছি।'
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এই কর্মকর্তা বলেন, 'আমার বক্তব্য ছিল যতটুকু রাখা যায় আমরা কিছু গাছ রাখার চেষ্টা করব। জায়গা যদি ৬ ফুট হতো তাহলে কিছু গাছ রাখতে পারতাম। কিন্তু সেই মিডিয়ানের জায়গাটি ৩ ফুটেরও কম। তাই চেষ্টা করেও গাছ রাখা যায়নি। তবে আমরা দ্রুত গাছ লাগিয়ে দেব।'
কী গাছ লাগানো হবে জানতে চাইলে সালেহ আহম্মেদ বলেন, 'আমরা এখনো সিদ্ধান্ত নেইনি। আমাদের মেয়র এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে যতটুকু জানি বাগান বিলাসসহ বিভিন্ন প্রজাতির কাছ থাকবে।'
এই প্রকল্পে বাজেট কত জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'সাত মসজিদ রোডে প্রায় ২ কিলোমিটারের সৌন্দর্যবর্ধনে দেড় থেকে ২ কোটি টাকা ব্যয় হবে।'
এদিকে সাত মসজিদ সড়কের বিভাজনকে গাছ কাটা বন্ধে আহ্বান জানিয়ে গত মঙ্গলবার রাতে মানববন্ধন করে পরিবেশবাদী ও সচেতন নাগরিকরা। এর আগে গত জানুয়ারিতে সাত মসজিদ সড়কে কিছু গাছ কাটে সিটি করপোরেশন। পরে প্রতিবাদের মুখে তা বন্ধ রাখা হয়। ওই ঘটনার পর আবার গাছ কাটতে শুরু করেছে সিটি করপোরেশন।


বিভাগ : মহানগর


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

টিয়ারশেল-সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে সরানো হলো প্রথম আলোর সামনে অবস্থানকারীদের
বিএনপি’র প্রতিনিধি দলের সাথে ঢাকায় নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত রামিস সেনের বৈঠক
হাজীদের সর্বোত্তম স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ধর্ম উপদেষ্টা ড. খালিদ হোসেন
ইসলামকে রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে গোলটেবিল বৈঠকে নেতৃবৃন্দ
‘মানুষ একদিন বলবে আ.লীগ নামে কোন দল ছিল না সন্ত্রাসীরাই আ.লীগ’
আরও

আরও পড়ুন

যশোরে ব্যবসায়ীর পায়ে গুলি সাবেক এসপি আনিসসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা থানায় রেকর্ড

যশোরে ব্যবসায়ীর পায়ে গুলি সাবেক এসপি আনিসসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা থানায় রেকর্ড

যশোরে একই সঙ্গে দুই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ জাহিদুল

যশোরে একই সঙ্গে দুই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ জাহিদুল

ইমনের সেঞ্চুরির পরও এগিয়ে খুলনা

ইমনের সেঞ্চুরির পরও এগিয়ে খুলনা

টিয়ারশেল-সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে সরানো হলো প্রথম আলোর সামনে অবস্থানকারীদের

টিয়ারশেল-সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে সরানো হলো প্রথম আলোর সামনে অবস্থানকারীদের

নাইমের ১৮০, মেট্রোর বড় সংগ্রহ

নাইমের ১৮০, মেট্রোর বড় সংগ্রহ

রাজার বোলিংয়ে অলআউট বরিশাল

রাজার বোলিংয়ে অলআউট বরিশাল

দেশের টাকা পাচার করে হাসিনা ও তাঁর দোসররা দেশকে দেউলিয়া করে গেছে পাচারকৃত টাকা উদ্ধারে কাজ করতে হবে -মাওলানা ইমতিয়াজ আলম

দেশের টাকা পাচার করে হাসিনা ও তাঁর দোসররা দেশকে দেউলিয়া করে গেছে পাচারকৃত টাকা উদ্ধারে কাজ করতে হবে -মাওলানা ইমতিয়াজ আলম

এসডিজি কার্যক্রমে যুক্ত হচ্ছে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের ‘থ্রি জিরো তত্ত্ব’

এসডিজি কার্যক্রমে যুক্ত হচ্ছে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের ‘থ্রি জিরো তত্ত্ব’

বিএনপি’র প্রতিনিধি দলের সাথে ঢাকায় নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত রামিস সেনের বৈঠক

বিএনপি’র প্রতিনিধি দলের সাথে ঢাকায় নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত রামিস সেনের বৈঠক

৫ বছর পর আয়োজিত হতে যাচ্ছে আন্তঃবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০২৪

৫ বছর পর আয়োজিত হতে যাচ্ছে আন্তঃবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০২৪

থিতু হয়েও ইনিংস লম্বা করতে পারলেন না শাহাদাত

থিতু হয়েও ইনিংস লম্বা করতে পারলেন না শাহাদাত

গণ-অভ্যুত্থানে ঢাবি ভিসির ভূমিকা কী ছিল? জানতে চান ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক

গণ-অভ্যুত্থানে ঢাবি ভিসির ভূমিকা কী ছিল? জানতে চান ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক

নির্বাচন কমিশনের প্রধান কাজ হওয়া উচিত অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সাধারণ জনগণের আস্থা অর্জন করা : রিজভী

নির্বাচন কমিশনের প্রধান কাজ হওয়া উচিত অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সাধারণ জনগণের আস্থা অর্জন করা : রিজভী

ইংরেজিতে দক্ষতা অর্জনে দেশে এলো অ্যাপ ‘পারলো’

ইংরেজিতে দক্ষতা অর্জনে দেশে এলো অ্যাপ ‘পারলো’

সীমান্তর লক্ষ্য এসএ গেমসের হ্যাটট্রিক স্বর্ণ জয়

সীমান্তর লক্ষ্য এসএ গেমসের হ্যাটট্রিক স্বর্ণ জয়

বিপিএলের প্রথম দিনই মাঠে নামছে বসুন্ধরা-মোহামেডান

বিপিএলের প্রথম দিনই মাঠে নামছে বসুন্ধরা-মোহামেডান

নির্বাচিত সরকারই দেশকে পুনর্গঠন করতে পারে : তারেক রহমান

নির্বাচিত সরকারই দেশকে পুনর্গঠন করতে পারে : তারেক রহমান

লক্ষ্মীপুরে ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন ৫০ জন

লক্ষ্মীপুরে ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন ৫০ জন

১৫ দিন রিমান্ড শেষে কারাগারে আব্দুর রাজ্জাক

১৫ দিন রিমান্ড শেষে কারাগারে আব্দুর রাজ্জাক

পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিল জিম্বাবুয়ে

পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিল জিম্বাবুয়ে