ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪ | ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নারীসহ নানা অভিযোগ শিক্ষকের বিরুদ্ধে তবুও বেপরোয়া

Daily Inqilab জবি সংবাদদাতা

২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৪১ পিএম | আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৪১ পিএম

 

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে বিতর্ক যেন কাটছেই না। ছাত্রী অবন্তিকার আত্মহত্যা ও মীমের শ্লীলতাহানির অভিযোগে সম্প্রতি দুই শিক্ষক সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন। এবার ছাত্রীর সঙ্গে এক শিক্ষকের অপ্রীতিকর অবস্থায় আটকে পর বিয়ে, অসৌজন্যমূলক আচরণে দুই ছাত্রীর লিখিত অভিযোগ, ক্লাসে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তি, ফেসবুকে সিনিয়র শিক্ষকদের গালিগালাজসহ নানা চাঞ্চল্যকর ঘটনায় শাস্তির মুখোমুখি হচ্ছেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবু সালেহ সেকান্দার। শিক্ষক সেকান্দারের বিষয়ে তদন্ত কমিটিকে সর্বশেষ সিন্ডিকেটে খতিয়ে দেখার জন্য বলা হয়েছে। এদিকে একাডেমিক সব কার্যক্রম থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত সেকেন্দারের সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ, আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীলদল ও শিক্ষক সমিতি।

জবির ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ জানা যায়, ঘটনার সূত্রপাত ২০১২ সালের ৮ জানুয়ারি বিভাগের ২য় সেমিস্টারের এক ছাত্রীকে নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বেড়াতে গিয়ে শিক্ষক সেকান্দারকে অপ্রীতিকর অবস্থায় আটক করে প্রোক্টর অফিসে জানায় সেখানকার শিক্ষার্থীরা। এরপর জাবির তৎকালীন প্রোক্টর আরজ মিয়া, জগন্নাথের শিক্ষক মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ও জাহাঙ্গীরনগরের শিক্ষক ড. ইমরান জাহানসহ একাধিক শিক্ষকের সামনে সেকেন্দার বিয়ের মুচলেকা দিলে দুজনকে ছেড়ে দেয়া হয়। পরে সেই ছাত্রীকে বাধ্য হয়ে বিয়ের করেন। এতে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ক্লাস না করার জন্য জানায় শিক্ষার্থীরা। তাদের পরীক্ষায় ধ্বস নামানোর অভিযোগ উঠে। বর্তমানে ওই ছাত্রী শিক্ষককে ডিভোর্স দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তি: ২০১১ সালের ১১ নভেম্বর শিক্ষক আবু সালেহ সেকেন্দার ক্লাসে মাস্টার্সে খিলাফত পড়াতে গিয়ে বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীকে থাপ্পড় মারা উচিত, কারণ বাংলাদেশের যে অবস্থা তাতে হাইসনার (প্রধানমন্ত্রীর নামের কটাক্ষ) পদত্যাগ করা উচিত। পদত্যাগ না করলে জুতাপেটা করা উচিত।' পরক্ষণেই তিনি বলেন, 'যারা ভোট চুরি করে ক্ষমতায় আসে তাদের আবার লজ্জা আছে নাকি!' তিনি শুধু প্রধানমন্ত্রী নন এদেশের রাষ্ট্র ব্যবস্থা নিয়েও কটাক্ষ করেন। সেসময় বিষয়টি একাধিক জাতীয় গণমাধ্যমে এ অভিযোগ করেন ক্লাসের শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনার পর ৭ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করা হয় সেকান্দারের বিরুদ্ধে। অভিযোগ আছে, আবু সালেহ সেকেন্দার ছাত্র অবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলের ছাত্র শিবিরের নেতৃত্ব দেন।

যে কারণে একাডেমিক কাজ থেকে অব্যাহতি: শিক্ষক আবু সালেহ সিকান্দারের বিরুদ্ধে অসৌজন্যমূলক আচরণের লিখিত অভিযোগ দেন সাবিকুন্নাহার রিপা ও ফারজানা নাজনীন নামে বিভাগের দুই ছাত্রীসহ ৪ জন। পরবর্তীতে শিক্ষকের ক্লাস করতে চাননা মর্মে আরো ২২ জন শিক্ষার্থী লিখিত অভিযোগ দেন। এসব অভিযোগে ২০১৯ সালে বিভাগটির ৭১তম একাডেমিক কমিটিতে সকল শিক্ষক একাডেমিক সব কর্মকান্ড থেকে সিকান্দারকে অব্যাহতি দেন।
এরপরেই একের পর এক সিনিয়র শিক্ষক, ডীন, প্রোক্টর,ভিসিদের বিরুদ্ধে বাড়তে থাকে আবু সালেহ সেকান্দারের ফেসবুক অশালীন পোস্ট। পোস্টে শিক্ষকদের চোর, বাটপার ও নানা গালিগালাজ উল্লেখ করায় শিক্ষকরা অতিষ্ট হয়ে পড়েন। ২০২২ সালের ২৬ অক্টোবর ৯৭ তম একাডেমিক সভায় সকল শিক্ষক সাক্ষর করে ভিসি বরাবর আবেদন করে সিকান্দারের কঠোর শাস্তির দাবি জানান ইসলামের ইতিহাস বিভাগ। পরদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীলদল সেকান্দারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে বলে।

 

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আতিয়ার রহমান বলেন, সেকান্দারের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের অভিযোগ, ক্লাসে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তি, অপ্রীতিকর ঘটনায় ছাত্রীকে বিয়েসহ নানা ঘটনায় কেউ তার ক্লাস করতে চায় না। তাই একাডেমিক কাজ থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এরপর মানসিক যন্ত্রণায় ফেলে দিয়েছে শিক্ষকদের। তার জ্বালায় সুইসাইড করার মতো অবস্থা আমার। তার বিচার চাই।

 

বিভিন্ন সময় ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে মানহানিকর নানা প্রসঙ্গ তুলে মনগড়া অভিযোগ করেন শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। গতকাল রাতে ফেসবুকে এমন ঘটনার স্বীকার সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডীন প্রফেসর ড. আবুল হোসেন। আবুল হোসেন বলেন, আমাকে নিয়ে ফেসবুক পোস্টে লিখেছে, একটি বিভাগের পিএইচডি সেমিনারে নাকি এক্সটার্নাল হিসেবে ছিলাম। এটা মিথ্যা। সব সেমিনারে ডীনদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। সে পাগল। তার বিচার হওয়া উচিত।

এসকল অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক আবু সালেহ সিকান্দার বলেন, 'কোন কোন বিষয়ে সংবাদ হয় জানেন আপনি? আপনার এডিটরকে আমাকে ফোন দিতে বলেন। জগন্নাথের সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলব না।'

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোক্টর ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, উনি (সিকান্দার) অনেক সিনিয়র শিক্ষক, ডীনদের বিরুদ্ধে অশালীন ও মিথ্যা ফেসবুকে পোস্ট দেন। তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি চলমান আছে। শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. জাকির হোসেন বলেন, এভাবে অসত্য ও অশালীন ভাবে লিখে এতো শিক্ষক ও প্রধানমন্ত্রীর সম্মানহানি করা অপরাধ। তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত৷ আমরা শিক্ষক সমিতির সভায় বিষয়টি তুলব।


বিভাগ : মহানগর


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

রাউজানে বড় ভাইয়ের হাতে ছোট ভাই খুন

রাউজানে বড় ভাইয়ের হাতে ছোট ভাই খুন

ইন্দোনেশীয় হজযাত্রীবাহী উড়োজাহাজে আগুন, জরুরি অবতরণ

ইন্দোনেশীয় হজযাত্রীবাহী উড়োজাহাজে আগুন, জরুরি অবতরণ

দুর্ভিক্ষের মুখে সুদান: জাতিসংঘ

দুর্ভিক্ষের মুখে সুদান: জাতিসংঘ

রাফায় অভিযান নিয়ে ইসরাইলের সঙ্গে মিশরের বিরোধ চরমে

রাফায় অভিযান নিয়ে ইসরাইলের সঙ্গে মিশরের বিরোধ চরমে

মালয়েশিয়ার ধমকে হামাস নেতাদের সাথে আনোয়ারের ছবি ফেরাল ফেসবুক

মালয়েশিয়ার ধমকে হামাস নেতাদের সাথে আনোয়ারের ছবি ফেরাল ফেসবুক

উখিয়ায় ভাড়া বাসা থেকে এনজিও সংস্থার এক কর্মীর লাশ উদ্ধার

উখিয়ায় ভাড়া বাসা থেকে এনজিও সংস্থার এক কর্মীর লাশ উদ্ধার

চলতি মাসেই আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড়

চলতি মাসেই আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড়

স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রীর অবস্থা 'সংকটজনক', একজন আটক

স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রীর অবস্থা 'সংকটজনক', একজন আটক

ডিজে বৌদ্ধ সন্ন্যাসী

ডিজে বৌদ্ধ সন্ন্যাসী

ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি সংলাপে প্রস্তুত রাশিয়া: পুতিন

ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি সংলাপে প্রস্তুত রাশিয়া: পুতিন

বিতর্কিত সিএএ আইনে প্রথমবারের মতো ১৪ জনকে নাগরিকত্ব দিলো ভারত

বিতর্কিত সিএএ আইনে প্রথমবারের মতো ১৪ জনকে নাগরিকত্ব দিলো ভারত

বিতর্কিত সিএএ আইনে প্রথমবারের মতো ১৪ জনকে নাগরিকত্ব দিলো ভারত

বিতর্কিত সিএএ আইনে প্রথমবারের মতো ১৪ জনকে নাগরিকত্ব দিলো ভারত

ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আবারও আগুন!

ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আবারও আগুন!

দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে চীনে পৌঁছেছেন পুতিন

দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে চীনে পৌঁছেছেন পুতিন

করোনা আক্রান্ত অর্থমন্ত্রী সুস্থ আছেন

করোনা আক্রান্ত অর্থমন্ত্রী সুস্থ আছেন

আবশ্যিক সেনা প্রশিক্ষণ নিয়ে বিতর্ক জার্মানিতে

আবশ্যিক সেনা প্রশিক্ষণ নিয়ে বিতর্ক জার্মানিতে

একসঙ্গে ৪ সন্তানের জন্ম, কয়েক ঘণ্টা পরই তিনজনের মৃত্যু

একসঙ্গে ৪ সন্তানের জন্ম, কয়েক ঘণ্টা পরই তিনজনের মৃত্যু

ফের ৫ বিভাগে ৪৮ ঘণ্টার তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা জারি

ফের ৫ বিভাগে ৪৮ ঘণ্টার তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা জারি

গাজীপুরে আগুনে শতাধিক বসতঘর-দোকান পুড়ে ছাই

গাজীপুরে আগুনে শতাধিক বসতঘর-দোকান পুড়ে ছাই

যুক্তরাষ্ট্রে জাহাজের ধাক্কায় সেতু ধস : এখনো ‘পানিতে আটকা’ ২০ ভারতীয়

যুক্তরাষ্ট্রে জাহাজের ধাক্কায় সেতু ধস : এখনো ‘পানিতে আটকা’ ২০ ভারতীয়