ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলাধীন ঐতিহ্যবাহী ফান্দাউক দরবার শরীফের বার্ষিক ইছালে ছাওয়াব মাহফিল গত শুক্রবার বাদ জুমা শুরু হয়েছে এবং আজ রোববার বাদ ফজর আখেরি মুনাজাত মাধ্যমে সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।
প্রথম দিন শুক্রবার ও ২য় দিন গতকাল শনিবার তালিম পূর্বক আগত মুসল্লিদের মূল্যবান নসিহত পেশ করেন ফান্দাউক দরবারের পীর ও বাংলাদেশ আঞ্জুমানে খাদিমুল ইসলামের আমীর শাহসূফী আলহাজ্ব মাওলানা মুফতি সৈয়দ সালেহ আহমাদ মামুন আল হোসাইনী।

পীর সাহেব বলেন, সারা দুনিয়া ব্যাপী মানুষের মধ্যে যে হাহাকার ও আর্থিক সঙ্কট শুরু হয়েছে এর থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হলো হুকুমত ইসলাম আবারো কায়েম করে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) এর পূর্ণ আদর্শ অনুসরণ করা। তাহলেই কেবল বিশ্ববাসীর মধ্যে শান্তি ও পরকালীন মুক্তি আশা করা যায়।
মনে রাখবেন আজ পশ্চিমারা নিজেদের আধুনিকতার ছোঁয়ায় জাগতিক জীবনকে উন্নত করলেও আত্মিক ও মানসিক ভাবে তাদের মতো অশান্তিতে কেউ নাই। দুঃখের বিষয় হলো আজ মুসলিম বিশ্বও আখেরাত থেকে দুনিয়ার জীবনকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে তাদের চোরাবালিতে আটকে নিজেদেরকে গোলামির জিঞ্জিরে আবদ্ধ করে ইহকাল ও পরকালকে বিনষ্ট করছে। ফলশ্রুতিতে গোটা মুসলিম বিশ্ব আজ নানামুখী বিপর্যয় ও নিপিড়নের স্বীকার হচ্ছে। মুসলমান কেবলমাত্র আল্লাহ ও তার আনুগত্যকেই বরণ করবে জীবনের সকল ক্ষেত্রে। নতোবা সারা বিশ্বে মুসলমান সংখ্যায় বেশি হলেও আল্লাহর পক্ষ থেকে কোনো সাহায্য আসবে না।

সাধারণত ৯২ শতাংশ মুসলমানের যেই দেশে লাখ লাখ মসজিদ মাদরাসা অসংখ্য পীর মশায়েখদের খেদমত দৃশ্যমান। যাদের মাধ্যমে লাখ লাখ এতিম অনাথ শিশুরা শিক্ষা দীক্ষা পেয়ে এই দেশের জনশক্তিতে ভূমিকা রাখছে। সেই দেশেও কুখ্যাত কাফের কাদিয়ানীদের দোসর কিছু কুচক্রী মহল বিদেশিদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে নানাবিধ ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত করেই চলছে। কিছুদিন পূর্বে আপনারা দেখেছেন শিক্ষা কারিকুলাম নিয়ে স্কুল, কলেজ এমনকি মাদরাসার সিলেবাস নিয়েও তারা কতটা উদ্ধত আচরণ দেখিয়েছে। আশরাফুল মাখলুকাত মানুষকে বানরের বংশধর বানাতে মরিয়া হয়ে দেশব্যাপী মুসলমানদের তোপের মুখে সরকার এর সংশোধন করার ঘোষণা দিয়েছে।

সম্প্রতি পঞ্চগড়ে কাদিয়ানীদের ছালানা ইজতেমাকে কেন্দ্র করে আবারো ১৪ কোটি মুসলমানদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ সৃষ্টি করেছে। এর প্রতিবাদ করায় পঞ্চগড়ে আমাদের ভাইদের ওপর পাখির মতো গুলি করা হয়েছে এবং একজনকে শাহাদাত বরণ করেছে। আমরা লাখ লাখ মুসলমানদের এই মাহফিল থেকে প্রধানমন্ত্রীর নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি অতি দ্রুত রাষ্ট্রীয়ভাবে কুখ্যাত কাফের কাদিয়ানীদেরকে অমুসলিম ঘোষণা করে মুসলমান এই ঈমানী দাবি পুরণ করুন। নতুবা মুসলমানরা এই দাবি আদায়ে জীবনের শেষ রক্ত বিন্দু পর্যন্ত বিলীন করতে প্রস্তুত আছে।

পীর সাহেব বলেন, ইসলাম ও মুসলমানদের নিয়ে বিভিন্ন সময়ে অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির মূল কারণ হচ্ছে আমরা মুসলমানরা ঈমানের মৌলিক বিষয়গুলোতে ঐক্যবদ্ধ হতে পারিনি। এহেন পরিস্থতিতে বাংলাদেশের প্রতিটি হক্কানি দরবারের পীর মাশায়েখ, আলেম-উলামাদের ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। ইসলামী দলগুলোর মধ্যে আন্তরিকতা থাকতে হবে এবং দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে কাজ করার মানসিকতা তৈরি করতে হবে।

পীর ছাহেব আরো বলেন, ঐতিহ্যবাহী ফান্দাউক দরবার কোরআন সুন্নাহ মোতাবেক জীবন গড়ার শিক্ষা দিয়ে থাকেন। এই দরবার শরীয়তের পরীপন্থী কোনো কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করেনা। যুগ যুগ ধরে আল্লাহ ও তার রাসূলের পথের সন্ধান দিতে অলি আউলিয়াগণ তরিকতের ময়দানে কঠোর সাধনা করে গেছেন। কোরআন সুন্নাহর আলোকে অলি আউলিয়াগণ জীবন গড়ার উপদেশ দিয়ে গেছেন।
একমাত্র আল্লাহ ও তার রাসুলের (সা.) সস্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে জীবন পরিচালনা করতে হবে। আল্লাহর রেজামন্দি হাসিল করতে এবং আত্মশুদ্ধির জন্য অবশ্যই একজন হক্কানী পীরের কাছে বায়াত গ্রহণ করতে হবে। এর মাধ্যমে বান্দার অন্তরে যখন আল্লাহর ভয় এবং রাসূল (সা.) এর সুন্নতের অনুসরণের প্রতি মহব্বত তৈরি হবে তখন দেখবেন ব্যক্তি জীবন, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে কোনো ধরনের অশান্তি, দুর্নীতি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড খোঁজে পাওয়া যাবে না।

প্রথমদিন গত শুক্রবার মূল্যবান আলোচনা পেশ করেন আলহাজ্ব মাওলানা পীরজাদা মীর হাবিবুর রহমান যুক্তিবাদী, মাওলানা ড. আনোয়ার হোসাইন সাইফী, আলহাজ্ব মাওলানা মোশাররফ হোসেন হেলালী, মাওলানা হাফিজ আবু হানিফ আনোয়ারী, মাওলানা আমিনুল ইসলাম চৌধুরী প্রমুখ।

২য় দিন আলোচনা পেশ করেন, মৌকরা দরবার শরীফের পীর আলহাজ্ব মাওলানা নেসারুদ্দীন ওয়ালীউল্লাহী, বালাউটী সাহেবজাদা মাওলানা ডা. সাফিউর রহমান, মাওলানা মুফতি নেসার উদ্দিন ফেনী প্রমুখ। মাহফিলের সার্বিক ব্যবস্থাপনা ছিলেন দরবার শরীফের ২য় সাহেবজাদা পীরজাদা আলহাজ্ব মাওলানা মুফতি সৈয়দ মঈনুদ্দিন আহমদ আল-হোসাইনী, পীরজাদা মাওলানা সৈয়দ আবুবকর সিদ্দিক আল-হোসাইনী, পীরজাদা মাওলানা সৈয়দ বাকের মোস্তফা আল-হোসাইনী। উপস্থিত ছিলেন দেশ বরেণ্য উলামায়ে কেরাম, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ সাংবাদিকসহ দরবার শরীফের লাখ লাখ ভক্ত মুরিদান।