২০৪১ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার খায়েশ জেগেছে আ.লীগের
১১ মার্চ ২০২৩, ১১:৩৭ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৩:০৮ পিএম
২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার নীল-নকশা নিয়ে সরকার আগামী নির্বাচন করতে চায় অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে দুইটা নির্বাচন হয়েছে- ২০১৪ তে একটা লোকও ছিল না।
বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৪ আসনে নির্বাচিত হয়েছে। আর ২০১৮ তে নির্বাচন করেছে আগের রাত্রিতে সমস্ত ভোট তুলে নিয়ে চলে গেছে। এখন আবার তাদের খায়েস হয়েছে যে, তাদের ৪১ সাল পর্যন্ত থাকতে হবে। সেই ব্লু প্রিন্ট নিয়ে তারা আবার ২০২৪-এ নির্বাচন করতে চায়, সেই একই কায়দা। কেনো? তাদের তো আজীবন থাকতে হবে। এই দেশটা তো হচ্ছে তাদের জমিদারী। আমরা সব প্রজা আর সেই প্রজার মতোই আমাদের সঙ্গে ব্যবহার শুরু করেছে। কিন্তু মানুষ এবার তা এবার হতে দেবে না। আজকে কথায় হবে না, কাজে নেমে পড়তে হবে। মানুষকে নামতে হবে আরো বেশি করে। জনগণকে সম্পৃক্ত করতে আরো কাজ করতে হবে। জনগণের উত্তাল তরঙ্গের মতো আন্দোলন সৃষ্টি করে এদেরকে পরাজিত করতে হবে।
গতকাল শনিবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের ফুটপাতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন। গ্যাস, বিদ্যুৎসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি প্রতিবাদে, সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার, খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দী নেতাদের মুক্তি এবং ১০ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে এদিন দেশের সকল জেলা ও মহানগরে মানববন্ধন করে দলটির নেতাকর্মীরা। সকাল ১১টায় শুরু হয়ে এক ঘন্টার এই মানবন্ধনে কাকরাইল থেকে নয়াপল্টন সড়কের এক পাশে ফকিরাপুল পর্যন্ত কয়েক হাজার নেতা-কর্মী সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে এই মানববন্ধনে অংশ নেয়।
মানববন্ধনে মির্জা ফখরুল বলেন, ১৯৭২ সালে যে সংবিধান ছিলো, পরবর্তিকালে জনগণের প্রয়োজনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সংযোজন করা হয়েছিল। সেই সংবিধানকে ভেঙে-চুরে দিয়ে তারা একদলীয় শাসন ব্যবস্থার জন্যে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছে। দুইটা নির্বাচন করেছে ইতোমধ্যে। ২০১৪ সালে শফিউল আলম প্রধানের (মরহুম) কথায় কুত্তা মার্কা নির্বাচন, একজন লোকও ছিলো না। ১৫৪টা আসন ডিক্লিয়ার করেছে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচনে। ২০১৮ তে নির্বাচন করেছে আগের রাত্রিতে সমস্ত ভোট তুলে নিয়ে চলে গেছে
তিনি বলেন, সরকারের দুইজন-তিনজন মন্ত্রী বলতে শুরু করেছে যে, বিএনপি ভয় পায়, বিএনপি নির্বাচন করবে। পরিস্কার ভাষায় বলে দিতে চাই, বিএনপি এই সরকারের অধীনে, হাসিনা সরকারের অধীনে, এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহন করবে না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। এই আন্দোলনে আমরা ১০ দফা আমরা দিয়েছি। সেখানে পরিস্কার আমরা বলেছি, সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করার পরে একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে তাদেরকে নির্বাচন করতে হবে।
সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপির অন্যতম এই শীর্ষ নেতা বলেন, আমরা সংঘর্ষে যেতে চাই না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে যে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি আপনারা সেটা মেনে নেন, ১০ দফা মেনে নেন। ১০ দফা দাবি মেনে অবিলম্বে পদত্যাগ করুন, সংসদ ভেঙে দিন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।
তিনি বলেন, আপনারা (সরকার) রিকশাওয়াকে জিজ্ঞাসা করেন, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে তারা যেতে চায় কিনা। তারা সবাই বলবে যে না। কারণ তাকে (শেখ হাসিনা) তারা বিশ্বাস করে না। তার অধিনে কোনো দিন সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন হতে পারে না।
সরকারের ভয়াবহ দুর্নীতি বেরুচ্ছে:
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আন্তর্জাতিক পত্র-পত্রিকাগুলোতে এবং সবচাইতে নামকরা পত্রিকাগুলোতে আজকাল যা বেরুচ্ছে! গার্ডিয়ান বলছে যে, বাংলাদেশের উন্নয়নের ফানুস দুর্নীতির কারণে চুপসে গেছে। ১১ কোটি টাকা ব্যাংকের দিনে-দুপুরে হাইজেক হলো। কি সাজানো নাটক! সবাই মিলে ভাগ করে বলছেন, না না ৯ কোটি টাকা উদ্ধার হয়নি, তিন কোটি উদ্ধার হয়েছে। বাকি টাকা কোথায় গেলো, জবাব দেবে কে?
তিনি বলেন, এদেশের মানুষ সোচ্চার হয়েছে, প্রতিবাদ করছে যে, ভারতের আদানির সঙ্গে যে বিদ্যুৎ চুক্তি হয়েছে, এটা বাংলাদেশের স্বার্থের বিরোধী। আমরা প্রকাশ্যে বলেছি, এই চুক্তি কোনো মতেই বাংলাদেশের পক্ষে যেতে পারে না। সেটা বাংলাদেশের মানুষ মেনে নেবে না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিদেশ থেকে অনেকেই প্রশ্ন করছেন, কিভাবে বাংলাদেশ সরকার এই চুক্তি সই করলো? চুক্তি সই করেছে এজন্য তারা ঘুষ দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। কতটা তারা দুর্নীতি করেছে? তারা ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত পরীক্ষামূলকভাবে নেওয়া শুরু করেছে। এদেশের মানুষকে পরিহাস করে, তাদেরকে উপেক্ষা করে, তাদের ন্যায় সঙ্গত যে অধিকার তা থেকে বঞ্চিত করে তার পকেট কেটে তারা নিজেদের সম্পদের পাহাড় বানাতে এই চুক্তি করেছেন। এদেশের মানুষ কখনো এটা মেনে নেবে না।
আন্দোলনে জনগণ দেখে ওদের গাত্রদাহ:
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা প্রথম থেকে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে। এই আন্দোলন দেখে আপনাদের গাত্রদাহ হয়েছে। উস্কানি দেয়ার চেষ্টার করছেন, বার বার উত্তেজিত করার চেষ্টা করছেন। জনগণ আন্দোলন শুরু করেছে। এই আন্দোলনে তারা জয়ী হবে তারপরেই ঘরে ফিরে যাবে। আমাদের কাছে বিকল্প পথ নেই।
তিনি বলেন, আজকে ঢাকা মহানগরে উত্তরা থেকে শুরু করে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত মানুষ দাঁড়িয়ে গেছে। সমস্ত বাংলাদেশের জেলাগুলোতে মানুষ দাঁড়িয়ে গেছে। এভাবে সমাবেশের পর সমাবেশ, আরো মানববন্ধ এই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আমরা জনগনকে সম্পৃক্ত করছি। তবে ধরযেরও সীমা আছে, মানুষের ধরযেরও সীমা আছে। এই আন্দোলন দিনে দিনে বাড়েতে থাকবে, তীব্র থেকে তীব্র হবে, বেগবান হবে। এই রকম শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আমরা এই ভয়াবহ দানবীয় ফ্যাসিস্ট অবৈধ সরকারকে সরে যেতে বাধ্য করব এবং নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং নতুন কমিশনের অধীনে নতুন একটি সরকার, নতুন একটি সমাজ গড়ে তুলব-এই হচ্ছে আমাদের প্রত্যাশা।
ফখরুল বলেন, সরকার অনেক রকমের চক্রান্ত শুরু করেছে। পঞ্চগড়ে একটা সাম্প্রদায়িক হামলা সৃষ্টি করার জন্য তারা অনুমতি দিয়েছে, তারা সেই নিরব ভূমিকা পালন করেছে আর সেই ঘটনার পরে ১৮৩ জন বিএনপির নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করেছে। এভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে মানুষকে বোকা বানানো যাবে না, এভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে, গায়েবী মামলা দিয়ে মানুষকে ঠেকিয়ে রাখা যাবে না।
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, দেশটাকে এই সরকার রসাতলে নিয়ে গেছে। একদিকে গুম-খুন-ছিনতাই-রাহাজানি সব চলছে।
তিনি বলেন, আমরা যারা নিরহ মানুষ, এদেশের যারা নিরহ যারা আজকে নিজের বেঁচে থাকার দাবিতে রাস্তায় নেমে গেছে তাদের গ্রেফতার করছে সরকারের বাহিনী। আমাদের রুহুল কবির রিজভী, মীর সরাফত আলী সপু, সাইফুল আলম নিরব, মোনায়েম মুন্না, এসএম জাহাঙ্গীরসহ আরো অনেককে। তাদের অপরাধ কি? আমরা তো দেশের জনগণের দাবির কথা বলছি, দেশে অন্যায় হচ্ছে, জুলুম হচ্ছে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছি।এটা বললে গ্রেফতার করবেন-এটা হতে পারে না।
মহানগর দক্ষিন বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম মজনুর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, যুব দলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ও ছাত্র দলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল বক্তব্য রাখেন।#
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
প্রোটিয়াদের হোয়াইট ওয়াশ করে পাকিস্তানের ইতিহাস
৯ গোলের উৎসবে লিভারপুলের বড় জয়
বড়দিনের ছুটির আগে রিয়ালের বড় জয়
ঘরের মাঠেই বিধ্বস্ত ইউনাইটেড
গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ
এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ
আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?
হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন
দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা
নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই
ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে
বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম
সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা
সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ
৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার
সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী
মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক