ঘটনার ২ দিন আগেই মামলা ১০ দিন আগে জিডি
১৮ মার্চ ২০২৩, ১০:৫০ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৩:২১ পিএম
একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গীকারানামার স্ট্যাম্প ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে গত ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি। এর দুই দিন আগে ২২ ফেব্রুয়ারি এ ঘটনায় মামলা হয়। শুধু তা-ই নয়, এ সংক্রান্ত জিডি হয় স্ট্যাম্প ছিনতাইয়েরও দশ দিন আগে অর্থ্যাৎ ওই বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি। চাঞ্চল্যকর এই মামলা ও জিডি সবই হয় রাজধানীর ধানমন্ডি মডেল থানায়। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর তদন্তে এমন চিত্র ফুটে উঠেছে। পিবিআইয়ের তদন্তে মামলাটি মিথ্যা ও দুরভিসন্ধিমূলক উল্লেখ করে আদালতে উল্টো বাদীর বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়েছে।
চাঞ্চল্যকর এ মামলার বাদী হলেন বহুল বিতর্কিত ব্যক্তি মুজিবুর রহমান। যিনি নিজেকে কখনো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব, কখনো রাজউকের অথরাইজড অফিসার, আবার কখনো জাতীয় গৃহায়ণ অধিদফতরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে পরিচয় দিতেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা পরিচয়ে প্রতারণার মাধ্যমে সহজ সরল মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন বিপুল পরিমাণ টাকা। এখন তার বসবাস ধানমন্ডি ১১ নম্বর সড়কের ৭৭ নম্বর কনকর্ড নুসরাত অ্যাপার্টমেন্টের দ্বিতীয় তলার ২-এ নম্বর বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে। তার দায়ের করা ধানমন্ডি থানায় মামলা নং-২০, তারিখ-২২-২-২০২২, ধারা- ৪০৬/৪২০/৩২৩/৩৪২//৩৮৪/৫০৬ পেনাল কোড। মামলাটির তদন্তভার পিবিআই’র কাছে গেলে উঠে আসে ঘটনার আদ্যোপান্ত।
প্রতারণায় অভিযুক্ত উক্ত মো. মুজিবুর রহমান ছিলেন মূলত খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কেডিএ) চেইনম্যান। বিভিন্ন অপরাধে তিনি চাকরিচ্যুৎ হন। মিথ্যা পরিচয়ে তার প্রতারণার বিষয়টি ধরা পড়ে ধানমন্ডির বাসায় একটি অনুষ্ঠান করতে গিয়ে। অতিরিক্ত আলোকসজ্জা করা ওই অনুষ্ঠানটির ব্যাপারে সবাই জানতো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিবের অনুষ্ঠান। কিন্তু পাশের ফ্ল্যাটের জাতীয় গৃহায়ণ অধিদফতরের এক কর্মকর্তা যখন নিশ্চিত করেন উক্ত মুজিবুর তার অফিসের সামান্য পিয়ন। তখন প্রতারণার বিষয়টি সকলের নজরে আসে। কিন্তু এর আগেই পূর্বাচলে ৬ কাঠার একটি প্লট বিক্রির কথা বলে একই ভবনের বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমানের কাছ থেকে ৩ কোটি ৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন মুজিবুর। পরে স্থানীয় থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে সেই ভুক্তভোগীর বিরুদ্ধেই মিথ্যা মামলা করেন মুজিবুর।
মামলা তদন্তে যা পেয়েছে পিবিআই:
মজিবুর রহমানের মামলা তদন্ত করতে গিয়ে পিবিআইর কর্মকর্তা মোহাম্মদ তাহেরুল হক চৌহান জানতে পেরেছেন, ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে মজিবুর রহমান ধানমন্ডি থানায় যে মামলাটি করেছিলেন, তা ছিল মিথ্যা ।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাদী ও বিবাদীর অঙ্গীকারনামার স্ট্যাম্প ২৪ ফেব্রুয়ারি ছিনতাই হয়। অথচ এ নিয়ে ১০ দিন আগে ১৪ ফেব্রুয়ারি ধানমন্ডি থানায় জিডি করেন মুজিবুর। ছিনতাইয়ের দুই দিন আগে ২২ ফেব্রুয়ারি মামলা করেন মজিবুর। তাহলে কিসের ভিত্তিতে বা কোন দলিলের ভিত্তিতে এই মামলা রুজু হলো তা প্রশ্নবিদ্ধ। ২৩ ফেব্রুয়ারি স্ট্যাম্প উদ্ধার হলে দেখা যায়, স্ট্যাম্পের শর্তগুলো নিজেই ভঙ্গ করেছেন মুজিবুর। নির্ধারিত সময়ের আগেই মামলা করাটা অত্যন্ত দুরভিসন্ধিমূলক বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ১৬ ও ২১ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন সময়ে মোস্তাফিজুরের মারধর ও হুমকি দেওয়ার যে অভিযোগ করেছেন মজিবুর রহমান, তদন্তে এর কোনে সত্যতা পায়নি পিবিআই। তাহেরুল হক চৌহান প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করেছেন- ‘মামলায় নানা রকম অসঙ্গিতসহ অঙ্গীকারনামা দলিলে অসম্পূর্ণ বিষয় থাকা সত্ত্বেও ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) মামলা গ্রহণ করাটা একেবারেই সমীচীন বলে মনে হয়নি। এ ব্যাপারে ওসিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চিঠির মাধ্যমে আমার কাছে (পিবিআই) হাজির হওয়ার জন্য অনুরোধ করলে তিনি হাজির হননি’।
এ মিথ্যা মামলা দায়ের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে, অভিযুক্ত মুজিবুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, পিবিআইকে ম্যানেজ করে মামলাটি আসামির পক্ষে নেয়া হয়েছে। মামলাটি বর্তমানে সিআইডিতে তদন্তাধীন। চাকরিচ্যুতের বিষয়ে মুজিবুর বলেন, তিনি কোনদিনই চাকরি করেননি। তিনি একজন ডেভলপার ব্যবসায়ী।
তবে এ ব্যাপারে পিআইআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার ইনকিলাবকে বলেন, মুজিুবর সম্পর্কে যতটুক মনে আছে, তিনি একজনের বিরুদ্ধে ৩ কোটি টাকা পাবেন বলে একটি মামলা করেছিলেন। কিন্তু ঘটনাটি সম্পূর্ণ উল্টো।
জানতে চাইলে ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকরাম আলী মিয়া ইনকিলাবকে বলেন, ‘কেউ মামলা করতে চাইলে আইনগতভাবে পুলিশ নিতে বাধ্য। এ কারণে মামলা নিয়েছি। কিন্তু মুজিুবর প্রতারক। দুষ্টু চক্রের লিডার। এর আগে সে গ্রেফতার হয়েছিলো। তার বিরুদ্ধে সম্প্রতিও একটি মামলা হয়েছে। আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।
এদিকে মুজিবুর প্রসঙ্গে একই ভবনের বাসিন্দা বীর মুক্তযোদ্ধা বাংলাদেশ টেলিভিশনের অবঃ উপ-মহাপরিচালক পরিচালক সেখ আব্দুস সালেক ইনকিলাবকে বলেন, মজিবুর শয়তানের চেয়েও অধম। প্রতারণাই তার পেশা। স্থানীয় প্রশাসনসহ স্থানীয় একটি দুষ্টু চক্র তাকে সহায়তা করে।
এদিকে ভুক্তভোগী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, যে অঙ্গীকারনামা স্ট্যাম্পটি ছিনতাইয়ের কথা বলা হয়েছে, আসলে ওই অঙ্গীকারানামাও ভুয়া। তিনি এ ধরনের কোনো কাগজে স্বাক্ষর করেননি। প্রতারক মুজিবুর মামলা করে আইনি সুবিধা নিতে সব এসব করেছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন
আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী
নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত
বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ
বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি
যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে : চীন
আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন
মেক্সিকোতে প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৭
মাথাপিছু ১৪০০ ডলারের চেক পাচ্ছেন ১০ লাখ মার্কিনি
৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরাইল
মোজাম্বিকে ঘূর্ণিঝড় চিডোরে নিহত ৯৪
মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী
রাফালের আগমনে ভারত সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি
উত্তর প্রদেশে নিহত ৩ খলিস্তানি নেতা
ভারতে বাল্যবিবাহবিরোধী অভিযানে আটক ৫০০০
মুজিবল্যান্ড বানিয়ে হিন্দুস্তানে থাকুক আ.লীগ : রাশেদ প্রধান
গ্রেফতার ভয়ে পোল্যান্ড সফর বাতিল করলেন নেতানিয়াহু
পানামা খাল দখলের হুমকিকে ভর্ৎসনা পানামা প্রেসিডেন্টের
স্বৈরাচারের দোসর শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী-সন্তানসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা