চারিদিকে দাবদাহ ও লোডশেডিং

রোগী-স্বজনে হাঁসফাঁস ঢামেক

Daily Inqilab সাখাওয়াত হোসেন

০৭ জুন ২০২৩, ১০:৩০ পিএম | আপডেট: ০৮ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম

চারিদিকে দাবদাহ ও লোডশেডিং-এর কারনে জীবন অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। দাবদাহে শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। বন্ধ রাখা হয়েছে স্কুল। অনেকেই প্রচন্ড গরমের কারনে খুব বেশি প্রয়োজন না হলে ঘর থেকে বের হচ্ছে না। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করছেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা। হাসপাতাল ভবনের ভেতরে উপরে ঘুরছে পাখা আর নিচে চলছে টেবিল ফ্যান। এরপরও গরমে অতিষ্ঠ সবাই।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে চলছে দাবদাহ, সেইসঙ্গে চলছে লোডশেডিং। এর প্রভাব পড়েছে ঢামেক হাসপাতালেও। এখানে গরমের কারণে রোগীর সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে। তীব্র গরমে হাসপাতালের বাইরে গাছের ছায়ায় পাটি বিছিয়ে বসে আছেন রোগীর স্বজনরা।
ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বলেন, গরমের কারণে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সব রোগীই কষ্টে আছে। আমাদের যেখানে যেখানে ফ্যানে সমস্যা আছে সেগুলো আমরা ঠিক করে দিচ্ছি। প্রায় দুইশ’ নতুন ফ্যান লাগানো হয়েছে। আমরা সবাইকে বলছি, বেশি লোক রোগীর কাছাকাছি থাকবেন না। অতিরিক্ত অ্যাটেনডেন্ট কমলে গরম কিছুটা কম লাগবে। আপনারা জানেন, আমাদের এখানে একবার ফ্যান চালু হলে শীতের সময় পর্যন্ত সেই ফ্যানটি আর বন্ধ হয় না।

তিনি আরো বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ যে জায়গাগুলোতে অতিরিক্ত ফ্যান লাগানো আছে সেগুলো আমরা বন্ধ করে দেয়ার চেষ্টা করছি। আমরা মানবিক দিক চিন্তা করে অনেক সময় অনেক কিছু করতে পারি না। এই গরমে উপরে ফ্যান চললেও নিচে অতিরিক্ত ফ্যান লাগানো আছে। সেগুলো আমরা চাইলেই খুলে দিতে পারি না। নিচের ফ্যানের বাতাসে রোগীরা যদি একটু আরাম পায় তাহলে সেটি আমরা অনেক সময় ওভারলুক করে যাই। আমাদের এনআইসিইউ, পিআইসিইউ ও অপারেশন থিয়েটারসহ আরও বেশ কয়েক জায়গায় এসি লাগানো আছে। কিন্তু সব ওয়ার্ডে তো এসি লাগানো সম্ভব নয়। হাসপাতালটিকে সংস্কার করা হবে। তখন আর এই ধরনের সমস্যা থাকবে না।
হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের বারান্দায় কথা হয় এক শিশু রোগীর মা বেবি আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, বাচ্চা এখনো ঠিকমতো খাচ্ছে না। শুধু কান্নাকাটি করে। এজন্য ডাক্তার স্যালাইন দিয়েছেন। এখানে তিনদিন ধরে ভর্তি আছি। দুপুর হলে গরমে টেকা যায় না। কী কষ্টের মধ্যে যে এখানে দিন যাচ্ছে, বলে বোঝাতে পারব না।
হাসপাতালের কাশেম নামে এক কর্মচারী জানান, শিশু ওয়ার্ডে রোগীর অতিরিক্ত চাপ। একটি বেডে দুই থেকে তিনজন করে শিশু রাখা হয়েছে। এই গরমে যেখানে একটি বেডে একজনকে রাখাই কষ্ট, সেখানে দুই থেকে তিনজনকে রাখা হয়েছে। একেক ধরনের রোগীর একেক ধরনের সমস্যা রয়েছে। যদি এক বেডে বেশি করে রোগী রাখা হয় তাহলে সেই রোগীদের ইনফেকশনও তো হতে পারে। বর্তমানে যে পরিমাণ গরম তাতে শিশুদের অনেক বেশি কষ্ট হচ্ছে।

মহিদুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, মুন্সিগঞ্জ থেকে এক আত্মীয়কে নিয়ে এসেছেন চিকিৎসার জন্য। কিন্তু হাসপাতালের উপরে ফ্যান চলুক আর নিচে ফ্যান চলুক কিছুতেই শরীরে ঠিকমতো বাতাস লাগে না। যেটুকু বাতাস লাগে সেটাও গরম। তাই সামান্য বাতাসের জন্য বাইরে গাছের নিচে পাটি বিছিয়ে শুয়ে আছি। কিছুক্ষণ পরপর আবার রোগীর কাছ থেকে ঘুরে আসছি।

ময়মনসিংহ থেকে এসেছেন হালিমা আক্তার। তিনি ইনকিলাবকে বলেন, আমার ভাই অসুস্থ। গত মঙ্গবার এসেছি। কিন্তু গরমের কারনে ভাই আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছে। কি করবো বুঝতে পারছি না। আমরা গবীর মানুষ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বাইরে উন্নত হাসপাতালে যাওয়ার সুযোগ নেই, তাই বাধ্য হয়ে সব সহ্য করতে হচ্ছে।

ঢামেক হাসপাতালের শিশু বহির্বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. মো. শাহেদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, গরমের কারণে বিভিন্ন রোগ নিয়ে দেশের নানা প্রান্ত থেকে রোগী আসছে। এর মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ শিশুর সর্দি-জ্বর ও হাঁপানি। এছাড়া জন্ডিস, টাইফয়েড ও ডায়েরিয়ার রোগীও তুলনামূলকভাবে বেড়েছে। আমরা চেষ্টা করছি ভাল চিকিৎসা দেয়ার জন্য। চারিদিকে দাবদাহ ও লোডশেডিং আমাদের কিছুই করার নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

বরিশালে ক্যান্সার চিকিৎসা ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়ে আছে

বরিশালে ক্যান্সার চিকিৎসা ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়ে আছে

সেবা বঞ্চিত হলে অভিযোগ করা যাবে ইসির বিরুদ্ধে

সেবা বঞ্চিত হলে অভিযোগ করা যাবে ইসির বিরুদ্ধে

এমপিওভুক্ত হচ্ছেন আরও ৩ হাজার শিক্ষক

এমপিওভুক্ত হচ্ছেন আরও ৩ হাজার শিক্ষক

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের নবনিযুক্ত সচিব ছাগলনাইয়ার সন্তান সামছু উদ্দিন

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের নবনিযুক্ত সচিব ছাগলনাইয়ার সন্তান সামছু উদ্দিন

বাংলাদেশে শনাক্ত হলো 'রিওভাইরাস’, রোগটি সম্পর্কে যা জানা যায়

বাংলাদেশে শনাক্ত হলো 'রিওভাইরাস’, রোগটি সম্পর্কে যা জানা যায়

আন্দোলনের মুখে পাঠ্যবই থেকে বাদ পড়লো ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত গ্রাফিতি

আন্দোলনের মুখে পাঠ্যবই থেকে বাদ পড়লো ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত গ্রাফিতি

মাসের শেষে আবারো আসছে শৈত্যপ্রবাহ

মাসের শেষে আবারো আসছে শৈত্যপ্রবাহ

বর্ষসেরা ফটোগ্রাফার হিসাবে পুরস্কার পেলেন, আলোকচিত্রী ও সাংবাদিক মুগনিউর রহমান মনি

বর্ষসেরা ফটোগ্রাফার হিসাবে পুরস্কার পেলেন, আলোকচিত্রী ও সাংবাদিক মুগনিউর রহমান মনি

রাজশাহীর সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ

রাজশাহীর সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ

বেড়া কৈটোলা নির্মাণ বিভাগের অফিসিয়াল ও উন্নয়ন কাজে স্থবিরতা

বেড়া কৈটোলা নির্মাণ বিভাগের অফিসিয়াল ও উন্নয়ন কাজে স্থবিরতা

গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বাইডেন-নেতানিয়াহুর ফোনালাপ

গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বাইডেন-নেতানিয়াহুর ফোনালাপ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা

না ফেরার দেশে নির্মাতা রায়হান রাফির বাবা

না ফেরার দেশে নির্মাতা রায়হান রাফির বাবা

এলিফ্যান্ট রোডে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা চেষ্টা, গ্রেপ্তার ২

এলিফ্যান্ট রোডে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা চেষ্টা, গ্রেপ্তার ২

ছাগলনাইয়ায় খালে ভাসছিল নারীর অর্ধগলিত লাশ

ছাগলনাইয়ায় খালে ভাসছিল নারীর অর্ধগলিত লাশ

ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরতায় ৫ দিনে গাজায় নিহত ৭০ শিশু

ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরতায় ৫ দিনে গাজায় নিহত ৭০ শিশু

ঘরে বসে মাত্র ১০ দিনেই মিলবে থাইল্যান্ডের ভিসা

ঘরে বসে মাত্র ১০ দিনেই মিলবে থাইল্যান্ডের ভিসা

মিয়ানমারের কাচিনে জান্তার বিমান হামলা, শিশুসহ নিহত ১৫

মিয়ানমারের কাচিনে জান্তার বিমান হামলা, শিশুসহ নিহত ১৫

আজ বায়ুদূষণে শীর্ষে ঢাকা

আজ বায়ুদূষণে শীর্ষে ঢাকা

দাবানলে পুড়ছে লস অ্যাঞ্জেলেস, এবার পাশে দাঁড়াল কানাডা

দাবানলে পুড়ছে লস অ্যাঞ্জেলেস, এবার পাশে দাঁড়াল কানাডা