হারিকেনের প্রমোশন

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

০৯ জুন ২০২৩, ১১:৪৫ পিএম | আপডেট: ১০ জুন ২০২৩, ১২:০২ এএম

হারিকেন বা কুপিবাতি গ্রামীণ ঐতিহ্যের প্রতীকগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। বিদ্যুৎবিহীন গ্রামে রাতে আলোর চাহিদা মিটানো বা অন্ধকার দূর কারার একমাত্র অবলম্বন ছিল হারিকেন বা কুপিবাতি। সেই হারিকেন বিলুপ্তি হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কালের বিবর্তণে বর্তমানের ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে সেই হারিকেনের কদর বেড়ে গেছে। গ্রামের মানুষ ছাড়া শহরের মানুষকেও এখন বিদ্যুৎবিহীন রাতে হারিকেন ব্যবহার করতে দেখা যায়। বলা যায় ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের মধ্যে হারিয়ে যাওয়া হারিকেন প্রমোশন নিয়ে মহাসমারোহে মানুষ ঘরে ফিরে এসেছে।

রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন গ্রামে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই সব এলাকার গ্রামের ১৪ ঘন্টার মধ্যে ১০ থেকে ১২ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকে না। ফলে মানুষকে রাতে গৃরস্থ পরিবারগুলোকে হারিকেন, কুপি’র আলোর ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। রংপুরের পীরগাছা মহিলা কলেজের প্রফেসর আমিন উল্লাহ বলেন, বিদ্যুৎ কখন আসে আর কখন যায় বোঝা মুশকিল। সে জন্য গ্রামে মানুষ এখন পুরনো হারিকেন নামিয়েছেন। কেউ কেউ নতুন হারিকেন ক্রয় করে ব্যবহার করছেন। তিনি আরো জানান, মূলত গ্রাম থেকে হারিকেনের ব্যবহার উঠে গিয়েছিল। কিন্তু ভয়াবহ লোডশেডিং হারিকেন কুপি, ফিরিয়ে এনেছে। গাইবান্ধা সুন্দরগঞ্জের একটি রাজনৈতিক দলের নেতা রওশন আলী জানান, গ্রামে মোমবাতি কম। আর উপজেলা শহর ও গ্রামের হাটে মোমবাতি পাওয়া গেলেও দাম বেশি। তাছাড়া রাতে ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকে না। ফলে সাধারণ মানুষের মোমবাতি দিয়ে দীর্ঘসময় ঘর আলোকিত করা সম্ভব নয়। ফলে মানুষ কুপি, হারিকেনের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন।

বাঙ্গালীর জীবনে রাতের অন্ধকার দূর করতে এক সময় দেশের গ্রামের মানুষের অন্যতম ভরসা ছিল হারিকেন, কুপি ও হ্যাজাক বাতি। যার অন্যতম জ্বালানি উপাদান ছিল কেরোসিন। আগের দিনে এসব জ্বালিয়ে গ্রামাঞ্চলে রাতে বিয়ে-সাদি যাত্রাগান, প্রেনিগান, মঞ্চ নাটক, ওয়াজ মাহফিল কিংবা বাড়িতে দোয়ার অনুষ্ঠান করা হতো। হারিকেন জ্বালিয়ে বাড়ির উঠানে কিংবা ঘরের বারান্দায় ভাই-বোন একসাথে পড়াশোনা করতো। হারিকেনের জ্বালানি উপাদান কেরোসিন আনার জন্য কাচের বোতল ছিল। যা রশি দিয়ে বেঁধে রান্না ঘরের কোন স্থানে ঝুলিয়ে রাখা হতো। সন্ধ্যার আগেই হারিকেনের কাছ মুছে তেল ভরে জ্বালানো হতো।

সমাজ পরিবর্তন, বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় গ্রামবাংলার সেই ঐতিহ্যবাহী হারিকেন বিলুপ্তি হয়ে গিয়েছিল। বৈদ্যুতিক বাতি, চার্জার ও সৌর বিদ্যুতের নানা ব্যবহারের ফলে হারিকেনের ব্যবহার এখন আর দেখা যেত না। উপজেলার গ্রামাঞ্চলে এখন হারিকেন যেমন খুঁজে পাওয়া দুষ্কর তেমনি বিদ্যুৎ নেই এমন গ্রামও হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। অথচ লোডশেডিংয়ের যুগে সেই হারিকেন আবার প্রমোশন নিয়ে ফিরে এসেছে।
শতভাগ বিদ্যুতের দেশে এখন গ্রামের বেশির ভাগ মানুষের ঘর আলোকিত করার অবলম্বন হয়ে গেছে হারিয়ে যাওয়া হারিকেন।

সম্প্রতি গ্রাম থেকে ঢাকার কর্মস্থলে ফিরে এসেছেন এমন একাধিক ব্যাক্তি জানান, তারা গ্রামে বিদ্যুৎ খুব কম সময় পেয়েছেন। তবে সব বাসায় সন্ধ্যা হলেই হারিকেন জ্বালানো হচ্ছে। কেউ কেউ কুপি জ্বালালেও হারিকেন জ্বালানো হয় বেশির ভাগ গৃহস্থ বাড়িতে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

উৎসব মুখর পরিবেশে পালিত হলো জাবির ৫৪ তম দিবস

উৎসব মুখর পরিবেশে পালিত হলো জাবির ৫৪ তম দিবস

কুষ্টিয়ায়  স্কুল কমিটি নিয়ে বিএনপি-জামায়াত সংঘর্ষ, আহত ৩০

কুষ্টিয়ায় স্কুল কমিটি নিয়ে বিএনপি-জামায়াত সংঘর্ষ, আহত ৩০

জুলাই বিপ্লবে ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ির চাকার পিষ্ট হয়ে নিহত মাহবুব আলমের পরিবারের পাশে তারেক রহমান

জুলাই বিপ্লবে ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ির চাকার পিষ্ট হয়ে নিহত মাহবুব আলমের পরিবারের পাশে তারেক রহমান

ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোন ষড়যন্ত্রকারী বিএনপির  ক্ষতি করতে পারবে না : আমিনুল হক

ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোন ষড়যন্ত্রকারী বিএনপির  ক্ষতি করতে পারবে না : আমিনুল হক

যায়যায়দিন পত্রিকায় নির্বাহী সম্পাদক হলেন খুরশীদ আলম

যায়যায়দিন পত্রিকায় নির্বাহী সম্পাদক হলেন খুরশীদ আলম

বিধ্বংসী শতকে লিটনের জবাব, ঝড়ো সেঞ্চুরি তানজিদেরও, বিপিএলে রেকর্ড

বিধ্বংসী শতকে লিটনের জবাব, ঝড়ো সেঞ্চুরি তানজিদেরও, বিপিএলে রেকর্ড

ফরিদপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন দিনে মোট ১১ জন নিহত, আহত ৩৫

ফরিদপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন দিনে মোট ১১ জন নিহত, আহত ৩৫

চলমান সংস্কার গতিশীল করতে হবে, যাতে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে : মান্না

চলমান সংস্কার গতিশীল করতে হবে, যাতে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে : মান্না

ওয়ান টাইম প্লাস্টিক বন্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৬ হাজার প্রতিষ্ঠান: বিপিজিএমইএ

ওয়ান টাইম প্লাস্টিক বন্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৬ হাজার প্রতিষ্ঠান: বিপিজিএমইএ

পাটগ্রাম সীমান্তে বাংলাদেশিকে লক্ষ্য করে বিএসএফের গুলি, আহত ১

পাটগ্রাম সীমান্তে বাংলাদেশিকে লক্ষ্য করে বিএসএফের গুলি, আহত ১

ওসি মুহিবুল্লাহকে বাঁচাতে স্বজনদের মানববন্ধন

ওসি মুহিবুল্লাহকে বাঁচাতে স্বজনদের মানববন্ধন

ব্র্যাক ব্যাংকের টপ টেন রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড জয় ২০২৪ সালে ১.৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স সংগ্রহ

ব্র্যাক ব্যাংকের টপ টেন রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড জয় ২০২৪ সালে ১.৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স সংগ্রহ

শেখ হাসিনা ভারতের সাথে বৈষম্যমৃলক চূক্তি করেছিলেন-মৌলভীবাজারে সারজিস আলম

শেখ হাসিনা ভারতের সাথে বৈষম্যমৃলক চূক্তি করেছিলেন-মৌলভীবাজারে সারজিস আলম

শেখ হাসিনার চোখ ছিল শুধু ঢাকা থেকে টুঙ্গীপাড়া পর্যন্ত : সারজিস

শেখ হাসিনার চোখ ছিল শুধু ঢাকা থেকে টুঙ্গীপাড়া পর্যন্ত : সারজিস

স্বাধীন সামরিক বাহিনী সংস্কার কমিশন গঠনের প্রস্তাব

স্বাধীন সামরিক বাহিনী সংস্কার কমিশন গঠনের প্রস্তাব

চকরিয়ায় পুলিশ-সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলি: বসতবাতিতে আগুন, ওয়ার্ড মেম্বারসহ আহত ২

চকরিয়ায় পুলিশ-সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলি: বসতবাতিতে আগুন, ওয়ার্ড মেম্বারসহ আহত ২

শাহজালাল বিমানবন্দরে বিমান বাহিনীর সদস্যদের অপসারণে আইনি নোটিশ

শাহজালাল বিমানবন্দরে বিমান বাহিনীর সদস্যদের অপসারণে আইনি নোটিশ

সউদী-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক হজ চুক্তি স্বাক্ষরিত

সউদী-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক হজ চুক্তি স্বাক্ষরিত

ব্যবসা গুটিয়ে নিতে এক্সিট পলিসি চান ব্যবসায়ীরা

ব্যবসা গুটিয়ে নিতে এক্সিট পলিসি চান ব্যবসায়ীরা

ভ্যাট বাড়লেও সাধারণ মানুষের উপরে খুব প্রভাব পড়বে না: প্রেস সচিব

ভ্যাট বাড়লেও সাধারণ মানুষের উপরে খুব প্রভাব পড়বে না: প্রেস সচিব