বরিশালে ৭ মেয়র প্রার্থীর ৫ জনই জামানত হারালেন
১৩ জুন ২০২৩, ১১:৪২ পিএম | আপডেট: ১৩ জুন ২০২৩, ১১:৪২ পিএম
বহুল আলোচিত বরিশাল সিটি নির্বাচনে ৭ মেয়র প্রার্থীর ৫ জনেরই জামানত বাজেয়াপ্ত হল। ৫৮ বর্গকিলোমিটারের বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের ২ লাখ ৭৫ হাজার ২৬৭ ভোটরের মধ্যে গত সোমবারের নির্বাচনে ১ লাখ ৪২ হাজার ১৮২ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।
২০০৩ থেকে বিগত ৪টি সিটি নির্বাচনের মধ্যে প্রধান বিরোধী দলহীন ৫ম নির্বাচনেই এযাবতকালের সর্বনিম্ন সংখ্যক, ৫১% ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করলেন।
যেকোনো স্থানীয় সরকার নির্বাচনেই প্রায় ৮০% ভোটারের উপস্থিতি অত্যন্ত স্বাভাবিক বিষয় বলে মনে করেন নির্বাচনী পর্যবেক্ষকগণ। বরিশাল নগর পরিষদের বিগত ৪টি নির্বাচনেও ভোটারের উপস্থিতিতে এ কথার সত্যতা মেলে।
তবে ইতোমধ্যে বিজয়ী আওয়ামী লীগ প্রার্থী ছাড়া অন্য সবাই গত সোমবারের নির্বাচনে অনিয়মসহ নানা কারচুপির অভিযোগ করে ফলাফল প্রত্যাখান করেছেন। জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস এ নির্বাচনের ফলাফলকে প্রত্যাখান করে অভিযোগ করে বলেছেন ‘বরিশালসহ বিশ্ববাসী দেখেছেন ভোটের নামে নির্বাচনী প্রহসন। তার মতে, ‘ইভিএম-এর কারিগরি ডাকাতির মাধ্যমে নৌকার পক্ষে যে খেলা ও তামাসা দেখাল, তাতে বরিশালবাসী লজ্জিত’। তিনি ‘মেরুদ-হীন সিইসি’র পদত্যাগের পাশাপাাশি অভিযোগ করেন, ‘ভোটারবিহীন নির্বাচনে ৫১% ভোট পড়ল কিভাবে?’
জাপা প্রার্থীর মতে, ‘সাজানো নাটক ও ডিজিটাল কারচুপির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন যে খেলা দেখালেন, তাতে এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে বরিশালে জাতীয় পার্টি আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না’। গত সোমবার বরিশাল সিটির নির্বাচন নিয়ে প্রতিক্রীয়া ব্যক্ত করে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে জাপা প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছিলেন।
ইসলামী আন্দোলন গত সোমবার রাতেই তাদের প্রতিক্রীয়া ব্যক্ত করে বরিশাল ও খুলনা সিটির ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ‘অনেক বিলম্বে হলেও অপর দুটি সিটির নির্বাচন বয়কটেরও ঘোষণা দেয়’।
এদিকে গত সোমবারের নির্বাচনে যে ৫১% ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন, তার ফলাফলে বিজয়ী আওয়ামী লীগ ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের দুই প্রার্থী ছাড়া সবারই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী মোট প্রদত্ত ভোটের ১/৮ অংশ ভোট না পেলে প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত বাতিল হয়। সে নিরিখে মোট প্রদত্ত ১ লাখ ৪২ হাজার ১৮২ ভোটের মধ্যে ন্যূনতম ১৭ হাজার ৭৭৩ ভোট পেতে হবে। কিন্তু সে লক্ষে পৌঁছতে পারেননি অবশিষ্ট ৫ প্রার্থী।
আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ৮৭ হাজার ৮০৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হলেও তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী আন্দোলনের মুফতি ফয়জুল করিম ৩৩ হাজার ৮২৮ ভোট পেয়েছেন। আর সোমবারের সিটি নির্বাচনে প্রথম দুজন প্রার্থী ছাড়া অন্য ৫ প্রার্থীর সবার প্রাপ্ত ভোটই ৮ হাজারেরও নিচে।
এমনকি জাতীয় পার্টির প্রার্থী ভোটের দিন পর্যন্ত যথেষ্ঠ প্রতিদ্বন্দ্বীতায় থাকলেও তিনি পেয়েছে আলোচনার বাইরে থাকা স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান রূপনের চেয়েও কম ৬ হাজার ৬৬৫ ভোট। আর রূপনের ভাগ্যে জুটেছে ৭ হাজার ৯৯৯ ভোট। জাপা প্রার্থীর এত কম সংখ্যক ভোট প্রাপ্তিতে হতবাক সাধারণ ভোটারসহ নির্বাচনী পর্যবেক্ষকগণও।
এদিকে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের মতে, প্রধান বিরোধী দলহীন বরিশাল সিটির ৫ম নির্বাচন সরকার নির্বাচন কমিশন ও সাধারণ মানুষের জন্য অনেকগুলো বার্তা দিয়ে গেছে। এ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতির হার ৫১%-এর মতো হলেও জাপা প্রার্থীর অভিযোগ ‘ভোটারবিহীন এ নির্বাচনে এত ভোট পড়ল কিভাবে’?
প্রশ্ন উঠেছে, যেসব ভোটার কেন্দ্রে আসেননি তারাই কি বিএনপির ভোটার? ফলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা সবগুলোর দলের পক্ষে-বিপক্ষে ৫১% ভোট ধরলেও অবশিষ্ট ৪৯% ভোটারই কি বিএনপির ভোটার?
পাশাপাশি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ গত মাসধিককালে বরিশাল মহানগরীতে হাজার হাজার কর্মী বাহিনী নিয়ে প্রচারণা চালালেও তাদেরকে ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনের প্রায় সমসংখ্যক ৩৫ হাজারের নিচে ভোট নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হল। ভোট কারচুপির অভিযোগের সপক্ষে কেউ এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য প্রমাণ হাজির করতে পারেন নি। সে হিসেব বাদ দিলে ভোটারদের কেন্দ্রে উপস্থিতি নিয়ে শুরু থেকেই যে সংশয় ছিল, তা সত্যি প্রমাণিত হয়েছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। পাশাপাশি যে প্রায় অর্ধেক ভোটার কেন্দ্রে গেলেনই না, তারা কোনো দল বা মতের ভোটর তার বিবেচ্য বিষয় বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকগণ।
অপরদিকে দলীয় সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে বিএনপির যেসব নেতা-কর্মী এ নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় ছিলেন, তাদের অর্ধেকরও বেশি বিজয়ী হয়েছেন।
এসব কিছু বিবেচনায় গত সোমবার বরিশাল নগর পরিষদের ৫ম নির্বাচন সাধারণ মানুষ, রাজনৈতিক দল ও তাদের নেতৃবৃন্দের জন্য অনেকগুলো বার্তা প্রদান করেছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। পাশাপাশি এ নির্বাচনের মাধ্যমে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর সাথে আওয়ামী লীগের ‘সখ্যতার যে সন্দেহ’ ছিল বিভিন্ন মহলে তা থেকে দলটি অনেকটাই বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে বলেও মনে করছেন অনেক রজনৈতিক পর্যবেক্ষকগণ।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ
এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ
আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?
হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন
দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা
নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই
ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে
বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম
সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা
সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ
৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার
সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী
মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক
জমকালো আয়োজনে পালিত হলো বান্দরবান সেনাবাহিনীর ৬৯ ব্রিগেডের ৪৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ
বিহারীরা কেমন আছে
ব্রাহ্মণপাড়ায় ধর্ষণের শিকার হতদরিদ্র প্রতিবন্ধী যুবতীর সন্তান প্রসব! আতংকে ভুক্তভোগী পরিবার