জুমার খুৎবা পূর্ব-বয়ান

মনগড়া অনুশাসনে আল্লাহর বরকত থেকে বঞ্চিত হচ্ছি

Daily Inqilab শামসুল ইসলাম

১৬ জুন ২০২৩, ১১:৫৪ পিএম | আপডেট: ১৭ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম

আল্লাহর নির্দেশিত পথ ব্যতিরেকে নিজেদের মনগড়া অনুশাসন, আইন, রীতি- নীতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর বরকত থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। এবং ক্রমশ তীব্র তাপদাহ, খড়া, অনাবৃষ্টি, ভূমিকম্প, দাবানল, জলোচ্ছ্বাস, জলধারা হ্রাস, ভূমিধসসহ নানাবিধ গজবে নিপতিত হচ্ছি। এসব থেকে বাঁচতে হলে, আল্লাহর বরকত ও রহমত প্রাপ্তির বিকল্প নেই। গতকাল জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম এসব কথা বলেন।

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি মো. রুহুল আমিন গতকাল জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, মানব জাতিকে কেবলমাত্র আল্লাহ ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর কাছে প্রত্যেকটা জিনিসের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। অন্যের আদর্শের সাথে প্রভাবিত হওয়া যাবে না। আল্লাহর হুকুমের কাছে মাথানত করতে হবে। মহান আল্লাহ এহসানকারীকে অত্যন্ত ভালোবাসেন। একজন কৃতদাসকেও সমান অধিকার দিতে হবে। পবিত্র কোরআনের পরিপন্থি কোন কাজ কেউ করলে তার প্রতিবাদ করতে হবে। ধৈর্য শিক্ষা দেয়ার জন্য আল্লাহ আম্বিয়া (আ.) কে দিয়ে ছাগল চড়াতেন। রাত জেগে তাহজ্জুত নামাজ আদায় করতে হবে। মোনাফেকদের অনুসরণ অনুকরণ করা যাবে না।

খতিব বলেন, রাসূল (সা.) এর আদর্শ কোনো মানুষের নয়। আল্লাহ জিবরাঈল (আ.) এর মাধ্যমেই নবীর আদর্শ দান করেছেন। দ্বীনের জন্য কাজ করলে মান অপমানের কিছুই নেই। ইজ্জতের মালিক একমাত্র আল্লাহ। তিনি বলেন, তায়েফের ময়দানে রাসূল (সা.) দ্বীনের দাওয়াত দিতে গিয়ে রক্তাক্ত ও অপমানীত হয়েছিলেন। তিনি তাদের বদদোয়া করেননি। বরং তাদের জন্য হেদায়েতের দোয়া করেছিলেন। রাসূল (সা.) আদর্শ কিয়ামত পর্যন্ত বহাল থাকবে। অবশ্যই সবরকারীরা সফলকাম। সবর আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে। তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আসন্ন কোরবানী দেয়ার নিয়ত করার অনুরোধ জানান। কারণ আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেছেন, হে ঈমানদারগণ তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে দাখিল হয়ে যাও। আল্লাহ সবাইকে কবুল করুন। আমিন।

রাজধানীর মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজমের খতিব মুফতী মাওলানা মাহবুবুর রহমান গতকাল জুমার পূর্ব বয়ানে বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর বান্দাগণের প্রতি যে বরকত ও নেয়ামত নাযিল কারেন নিঃসন্দেহে তা আল্লাহর অপরিসীম অনুগ্রহের ফলে প্রেরিত হয়। বরকত প্রত্যেকটি মানুষের জন্য অতিব জরুরি একটি বিষয়। পৃথিবীতে এমনও মানুষ রয়েছে যারা দীর্ঘ হায়াত প্রাপ্তির পরও তাদের ধন-সম্পদ, রিযিক, সম্মান, সন্তান-সন্ততি, ইবাদাত-বন্দেগীতে আল্লাহর তরফ থেকে কোন বরকত না থাকায় ক্রমশ সকল কিছু হ্রাস পায়। আবার এমনও মানুষ রয়েছে অতি সল্প হায়াত প্রাপ্ত হয়েও আল্লাহর বরকত প্রাপ্তির কারণে কল্যাণকর সকল কিছু বৃদ্ধি পেতে থাকে। অনেকেই আছেন প্রচুর পরিশ্রম করা সত্যেও আশানুুরূপ সফল হয় না, এর একমাত্র কারণ আল্লাহর তরফ থেকে বরকত নাযিল না হওয়া। সুতরাং সকল কাজে বরকত অনেক জরুরি বিষয়, যা আল্লাহর পক্ষথেকে বান্দাগণের জন্য অনেক বড় নেয়ামত। আল্লাহর অনুগ্রহ ও বরকত লাভের জন্য আমল-আক্বীদাসহ আল্লাহর নির্দেশিত পথ অনুসরণ করার বিকল্প নেই।

খতিব উপস্থিত মুসল্লিদের আল্লাহর বরকত ও নেয়মত সম্পর্কে বলতে গিয়ে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর যদি সে জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং পরহেযগারী অবলম্বন (তাকে ভয়) করত, তবে আমি তাদের প্রতি আসমানি ও দুনিয়ার নেয়ামতসমূহ উম্মুক্ত করে দিতাম। কিন্তু তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। সুতরাং আমি তাদেরকে পাকড়াও করেছি তাদের কৃতকর্মের বদলাতে (সূরা আরাফ : ৯৬)। অপর এক আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, অতপর বলেছি, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছেড়ে দেবেন। তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দেবেন, তোমাদের জন্যে উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্য নদীনালা প্রবাহিত করবেন (সূরা নূহ : ১০-১২)। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নাফরমানী করে কখনই বরকত লাভ করা সম্ভব নয়। বরকত ও নেয়ামত লাভের জন্য ঈমান-আক্বীদা ঠিক রেখে দুনিয়া ও আখিরাতের মালিক মহান রাব্বুল আলামীনের কাছে নিজেতেক সপেদিতে হবে। জানতে হবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন একটি জাতির উপর কখন বরকত ও নেয়ামত নাযিল করেন, আর কি কি কারণে বরকত ও নেয়ামত উঠিয়ে নিয়ে বিপর্যয়ের সম্মুখীন করেন। ব্যক্তি, পারিবারিক, সামাজিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সকল পর্যায়ে আজ আল্লাহর নাফরমানি বিরাজমান। যিনি শক্তি-সমার্থ দিলেন, সেই শক্তি-সমার্থই তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে, মানুষকে অধিকার বঞ্চিত করা হচ্ছে, দূর্বলদের কোণঠাসা করে রাখা হচ্ছে, আল্লাহর জমিনে তারই বাণী প্রচারে বাধা প্রদান করা হচ্ছে, অন্যায়-অনাচারকে আধুনিকতার চাদরে মুড়িয়ে ন্যায় হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। সর্বপরি আল্লাহর নির্দেশিত পথ ব্যতিরেকে নিজেদের মনগড়া অনুশাসন, আইন, রীতি- নীতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর বরকত থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। এবং ক্রমশ তীব্র তাপদাহ, খড়া, অনাবৃষ্টি, ভূমিকম্প, দাবানল, জলোচ্ছ্বাস, জলধারা হ্রাস, ভূমিধসসহ নানাবিধ গজবে নিপতিত হচ্ছি। এসব থেকে বাঁচতে হলে, আল্লাহর বরকত ও রহমত প্রাপ্তির বিকল্প নেই। আর আল্লাহ কখনই নাফারমান জাতির উপর তার বরকত বেশিদিন স্থায়ী রাখেন না। তাই সময় থাকতে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশিত পথে জীবন পরিচালনা করি। বেশি বেশি ইস্তেগফার পাঠের মাধ্যমে নিজেদের পূর্ববর্তী গুনাহের জন্য মহান রবের নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি। আল্লাহ সবাইকে কবুল করুন। আমিন।

মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী বাইতুল মামুর জামে মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুর রহিম কাসেমী গতকাল জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, আসমান জমিন সৃষ্টির পর থেকেই আল্লাহর নিকট বছরে মাস বারোটি। তন্মধ্যে শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজসহ মোট চারটি মাস হারাম তথা সম্মানিত । অনুরূপ শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজ এ তিনটি মাস হজের মাস হিসাবেও পরিচিত । সে হিসেবে হিজরী সনের সমাপনী মাস পবিত্র জিলহজের গুরুত্ব, মহাত্ব ও ফজিলতও কোন কোন মাসের তুলনায় আলাদা এবং সম্মানী। মহান আল্লাহ তায়ালা এ মাসের প্রথম দশকের মহাত্ব বর্ণনায় বলেন, ফজরের শপথ, দশ রাত্রির শপথ, আর শপথ জোড় ও বেজোড় এর। ( সূরা ফাজর)। হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, দশম হল ঈদ উল আজহার দিন, বেজোড় হল আরাফার দিন আর জোড় হল কোরবানির দিন। তিনি আরও বলেন, এ দশকের প্রতি দিনের ইবাদাত এক বছরের ইবাদাতের সওয়াব তুল্য, একেকটি রোজা এক বছরের রোজা ও এক এক রাত্রির ইবাদাত এক একটি শবে কদরের সওয়াবের সমপরিমাণ । তিনি এ মাসের নয় তারিখ আরাফার রোজার মহাত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, আরাফার দিবসের রোজার মাধ্যমে আশাকরি আল্লাহ তায়ালা এক বসর আগের ও পরের গুনাহ মাফ করে দিবেন । (আল হাদিস)। তিনি আরও এক বর্ণনায় বলেন, এমন কোন দিন নেই, যে দিন আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদেরকে আরাফার দিনের চেয়ে বেশি জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন । (আল হাদিস)। সাহাবায়ে কিরাম থেকে বর্ণনা মতে রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিলহজ মাস আগামন করলে প্রথম নয় দিন সিয়াম পালন করতেন। নফল সালাতে রাত্রি জাগরণসহ অন্যান্য ইবাদাতে মশগুল থাকতেন । আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে বিশেষত: জিলহজের প্রথম দশকের সুন্নাহ সমর্থিত আমল সমূহ আদায় করার তৌফিক দান করেন । আমিন।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী
বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার
সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ
১০০ টাকা ঘুষ খেলেও চাকরি থাকবে না: নৌপরিবহন উপদেষ্টা
আরও

আরও পড়ুন

প্রোটিয়াদের হোয়াইট ওয়াশ করে পাকিস্তানের ইতিহাস

প্রোটিয়াদের হোয়াইট ওয়াশ করে পাকিস্তানের ইতিহাস

৯ গোলের উৎসবে লিভারপুলের বড় জয়

৯ গোলের উৎসবে লিভারপুলের বড় জয়

বড়দিনের ছুটির আগে রিয়ালের বড় জয়

বড়দিনের ছুটির আগে রিয়ালের বড় জয়

ঘরের মাঠেই বিধ্বস্ত ইউনাইটেড

ঘরের মাঠেই বিধ্বস্ত ইউনাইটেড

গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ

গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ

এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ

এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ

আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?

আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?

হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে

হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে

ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন

ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন

দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা

দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা

নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই

নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই

ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে

ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে

বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম

বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম

সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা

সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা

সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ

সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ

৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার

৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার

সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী

সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী

মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন

মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন

বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার

বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার

জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক

জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক