ঢাকা   শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৩ পৌষ ১৪৩১
মেলায় ক্রেতাদের ভিড় : একটি গাছের দাম সাড়ে ৬ লাখ টাকা বেশি বিক্রি হচ্ছে আমের চারা

বৃক্ষমেলা যেন সুশোভিত এক উদ্যান

Daily Inqilab রফিক মুহাম্মদ

০৯ জুলাই ২০২৩, ১১:৩৪ পিএম | আপডেট: ১০ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম

আবহাওয়া পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব সারা বিশ্বেই প্রকট হচ্ছে। এর ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন বাড়ছে। তেমনি পৃথিবীর তাপমাত্রাও অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশেও আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবে বাড়ছে নানান প্রকৃতিক দুর্যোগ। বায়ুমন্ডলির তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে পৃথিবীতে সবুজের পরিমাণ বাড়াতে হবে, অর্থাৎ বৃক্ষের সংখ্যা বাড়াতে হবে। বৃক্ষ নিধন বন্ধ করে বৃক্ষরূপন করতে হবে। বৃক্ষরূপনের ব্যাপারে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রতিবছরের মতো রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এবারও শুরু হয়েছে মাসব্যাপী বৃক্ষমেলা। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা খোলা। এবারের জাতীয় বৃক্ষমেলার প্রতিপাদ্য ‘গাছ লাগিয়ে যতœ করি, সুস্থ প্রজন্মের দেশ গড়ি’। মেলার বিভিন্ন স্টলে সারি সারি সাজানো রয়েছে বনজ, ফলদ, সবজি, ঔষধিসহ দেশি-বিদেশি নানান প্রজাতির গাছ। বিক্রি হচ্ছে চেনা-অচেনা ফুল ও ফলের গাছও। এ ছাড়া রয়েছে বনসাই ও ক্যাকটাসের মতো গাছ। নানা বয়সের বৃক্ষপ্রেমীরা আসছেন মেলায়। স্টল ঘুরে পছন্দের গাছ কিনছেন অনেকেই।
মেঘলা আকাশ, আবার থেমে থেমে ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি। এরই মধ্যে গতকাল বৃক্ষপ্রেমীরা সবুজে চোখ জুড়াতে আসেন বৃক্ষমেলায়। মেলায় প্রবেশ করলে মনে হয় যেন ফলে– ফুলে সুশোভিত এক উদ্যান। প্রতিটি স্টলের ভেতরে আর সামনে হরেক রকমের ফলদ, বনজ, ঔষধি আর শোভাবর্ধনকারী গাছপালার নান্দনিক সমাবেশ। এর মধ্যে প্রথমেই নজর কেড়ে নেবে গাছে ঝুলে থাকা থোকা থোকা আম।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে (আগের বাণিজ্য মেলার মাঠে) গিয়ে দেখা যায়, বড় বড় ড্রামে লাগানো আমগাছগুলোতে ঝুলে আছে রংবেরঙের বাহারি আম। দেশি আম যেমন, ল্যাংড়া, আ¤্রপালি, গোপালভোগ, বি-৭, সূর্যডিম, ফজলিসহ বিভিন্ন জাতের আমের চারা আছে। তবে এর বাইরে বেশির ভাগই বিদেশী জাতের বাহারি নামের আমের চারা। এগুলো হল, হাই টু টু, রেড পালমার, ব্ল্যাক স্টার, থাই কিং, নাঙ্গুলী, কিং চাকা পাত, হানি ডিউ, ব্রুনেই কিং, থাই ক্যান, চিয়াং মাই, ব্যানানা ম্যাঙ্গো, থাই কিউ জাত, থাই কাঁচা মিঠা, তোতাপুরি আমসহ আরও অনেক জাত।
বৃক্ষমেলায় কয়েকটি স্টলের মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মানুষের বেশি আগ্রহ আমের চারার প্রতি। কারণ, এসব চারা লাগানোর দুই থেকে তিন বছরের মধ্যেই ফল পাওয়া যায়। চাহিদার দিক দিয়ে এরপর রয়েছে পেয়ারা ও লেবুর চারা।
মেলার দর্শনার্থীদের বেশির ভাগ রাজধানীর বাসিন্দা। নগরবাসীর কথা মাথায় রেখে বৃক্ষমেলায় নার্সারি ব্যবসায়ীরা গাছের চারা এনেছেন। গাছ লাগানোর জন্য রয়েছে ছোট ও বড় টব, ড্রাম এবং বিশেষ ধরনের (জিও) ব্যাগ।
মেলায় আসা বেলি গার্ডেন নার্সারির মালিক জিয়াউদ্দিন বলেন, তার স্টলে বিদেশি প্রায় ৩০ জাতের আম রয়েছে। বেশি বিক্রি হয় আমের চারা। মানুষ ছাদে লাগানোর জন্য চারা নিয়ে যান। প্রতিদিন তিনি ১০০ থেকে ২০০টি চারা বিক্রি করেন। দাম ২০০ থেকে ১ হাজার টাকা। ফল ধরেছে এমন গাছের দাম আরেকটু বেশি। তিনি বলেন, কেউ চাইলে তারা পরিচিত ভ্যানচালকদের মাধ্যমে চারা বাড়িতে পৌঁছে দেন।
প্রথম দিকে ঘোরাফেরা, দেখাশোনা আর শেষ দিকে কেনাকাটা। আর সব মেলার মতো জাতীয় বৃক্ষমেলায়ও এমনটাই দেখা যায়। বৃক্ষমেলায় শেষবেলায় এখন তাই ক্রেতাদের প্রচুর ভিড়। মাসব্যাপী এই মেলা শেষ হবে ১২ জুলাই। তাই ক্রেতার সংখ্যাই বেশি, বিক্রেতারাও চূড়ান্ত দাম ঠিক করে ফেলেছেন।
দাম, জাত, বয়সের কারণে বৃক্ষমেলায় কিছু গাছ ‘সোনার চেয়েও দামি’। এদিক দিয়ে সবচেয়ে এগিয়ে বনসাই বা বামনবৃক্ষ। অন্য গাছও আছে। বিরল বৃক্ষের গায়েও আছে দামি তকমা। মেলা ঘুরে একটা বনসাই পাওয়া গেল, যার দাম ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। লাখি বৃক্ষের তালিকায় বড় বৃক্ষ নয়, বামনবৃক্ষই এগিয়ে। কেন? নার্সারি উদ্যোক্তাদের জবাব, এটা গাছের দাম নয়, সময় ও শিল্পের দাম। তাই বয়স্ক, নান্দনিক বনসাইয়ের দাম বেশি হয়ে থাকে।
এ ছাড়া মেলায় আছে ভিন্ন রকম ফল গাছের চারা। যেমন আঠাবিহীন কাঁঠাল, বিচি ছাড়া পেয়ারা বা সাদা রঙের জামের গাছ নিজেই লাগাতে পারেন আপনার বাগানে, বাড়ির আঙিনায়, এমনকি শহুরে ফ্ল্যাটবাড়ির ছাদে। ছোট চারা থেকে ফল ধরা বড় গাছ সবই পাওয়া যাচ্ছে জাতীয় বৃক্ষমেলায়।
বন অধিদপ্তরের আয়োজনে বৃক্ষমেলা শুরু হয়েছিল ১৯৯৪ সালে। এর মধ্যে কোভিড সংক্রমণের কারণে শুধু ২০২০ ও ২০২১ সালে মেলা হয়নি। গত বছর থেকে আবার নিয়মিত মেলা হচ্ছে। এবার মেলার পরিসর ও অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা বেড়েছে। তথ্যকেন্দ্রের হিসাবে, গত বছর তিন কোটি টাকার বেশি চারা বিক্রি হয়েছিল। এবার তারা আশা করছে, বিক্রি আরও বাড়বে। গত বছর স্টল ছিল ১১৭টি, অংশ নেয় ৬৯টি প্রতিষ্ঠান। এবার স্টলের সংখ্যা ১২৪, আর ৭৫টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

হেলিকপ্টারে সফর নিয়ে বিতর্ক, ব্যাখ্যা দিলেন আসিফ মাহমুদ
সচিবালয়ে আগুন: সংগ্রহ করা হলো সিসিটিভি ভিডিও
জাহাজে ৭ খুন : লাগাতার কর্মবিরতিতে পণ্যবাহী নৌযান শ্রমিকেরা
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি পরিকল্পিত নাশকতা: ইসলামী আইনজীবী পরিষদ
‘প্রতিবন্ধীদের সংগঠন ও সম্পদ দখল করে পতিত সরকারের শিল্পমন্ত্রীর কন্যা’
আরও

আরও পড়ুন

ইউসুফ (আঃ)- এর সমাধিতে নিয়ে গেল ইসরাইলি সেনারা

ইউসুফ (আঃ)- এর সমাধিতে নিয়ে গেল ইসরাইলি সেনারা

কাকরাইলে সাদপন্থিদের জমায়েত নিষিদ্ধ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

কাকরাইলে সাদপন্থিদের জমায়েত নিষিদ্ধ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

ইয়েমেনে হামলার সময় বিমানবন্দরে ছিলেন ডব্লিউএইচওর প্রধান

ইয়েমেনে হামলার সময় বিমানবন্দরে ছিলেন ডব্লিউএইচওর প্রধান

ইসরায়েলি হামলায় ইয়েমেন ও গাজায় ব্যাপক প্রাণহানি

ইসরায়েলি হামলায় ইয়েমেন ও গাজায় ব্যাপক প্রাণহানি

হেলিকপ্টারে সফর নিয়ে বিতর্ক, ব্যাখ্যা দিলেন আসিফ মাহমুদ

হেলিকপ্টারে সফর নিয়ে বিতর্ক, ব্যাখ্যা দিলেন আসিফ মাহমুদ

কুমিল্লায় ছুরিকাঘাতে যুবক খুন

কুমিল্লায় ছুরিকাঘাতে যুবক খুন

সচিবালয়ে আগুন: সংগ্রহ করা হলো সিসিটিভি ভিডিও

সচিবালয়ে আগুন: সংগ্রহ করা হলো সিসিটিভি ভিডিও

জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বাশার আল-আসাদের স্ত্রী আসমা

জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বাশার আল-আসাদের স্ত্রী আসমা

টেস্ট ক্যারিয়ারের রেকর্ডময় ৩৪তম সেঞ্চুরি পূর্ণ করলেন স্মিথ

টেস্ট ক্যারিয়ারের রেকর্ডময় ৩৪তম সেঞ্চুরি পূর্ণ করলেন স্মিথ

জাহাজে ৭ খুন : লাগাতার কর্মবিরতিতে পণ্যবাহী নৌযান শ্রমিকেরা

জাহাজে ৭ খুন : লাগাতার কর্মবিরতিতে পণ্যবাহী নৌযান শ্রমিকেরা

লেস্টার সিটিকে হারিয়ে ধরাছোঁয়ার বাইরে লিভারপুল

লেস্টার সিটিকে হারিয়ে ধরাছোঁয়ার বাইরে লিভারপুল

ফের্নন্দেসের লাল কার্ডের দিনে ফের হারল ইউনাইটেড

ফের্নন্দেসের লাল কার্ডের দিনে ফের হারল ইউনাইটেড

শেষের গোলে জিতে চেলসির জয়রথ থামাল ফুলহ্যাম

শেষের গোলে জিতে চেলসির জয়রথ থামাল ফুলহ্যাম

পরলোকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং: ভারতে ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা

পরলোকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং: ভারতে ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা

কালীগঞ্জে রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লীর সংবাদ সম্মেলন

কালীগঞ্জে রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লীর সংবাদ সম্মেলন

গ্রাম আদালত সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত

গ্রাম আদালত সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত

মিসরে প্রেসিডেন্ট সিসির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ

মিসরে প্রেসিডেন্ট সিসির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ

কুর্দি যোদ্ধাদের ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি এরদোগানের

কুর্দি যোদ্ধাদের ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি এরদোগানের

৩৫শ’ এজেন্টের অধিকাংশই গুজরাটের পাচারকারী

৩৫শ’ এজেন্টের অধিকাংশই গুজরাটের পাচারকারী

৫ সাংবাদিককে হত্যা করল ইসরাইল বিমান

৫ সাংবাদিককে হত্যা করল ইসরাইল বিমান