স্থবিরতার মুখে বরিশাল রেল যোগাযোগ প্রকল্প
১৫ জুলাই ২০২৩, ১১:৩০ পিএম | আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
ব্রিটিশ যুগ থেকে দেশের পাঠ্যবইতে প্রশ্ন ছিল, ‘রেললাইন নেই কোন জেলায়’? উত্তর-‘বরিশাল জেলায়’! তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুঃসাহসিক প্রকল্প হিসেবে এককালের রেলপথহীন নদী-নালার বরিশাল অঞ্চলকে রেল যোগাযোগের আওতায় আনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তবে অজ্ঞাত কারণে তা ক্রমশ স্থবির হয়ে পড়ছে। এ লক্ষ্যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের পরে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা, এলাইনমেন্ট নির্ধারণ, বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন ও দরপত্র দলিল ২০২১-এর জুলাইয়ে রেল বিভাগে জমা দেয়ার পরে এ মেগা প্রকল্পটি অনুমোদনের তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। এমনকি ‘৪১ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষ ২১১ কিলোমিটার দীর্ঘ এ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কার্যক্রম যত বিলম্বিত হবে, প্রকল্প ব্যয় ততই বাড়বে’ বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল মহল।
এ রেলপথ নির্র্মাণে যে ৫ হাজার ৬৩৮ একর ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে, সময় যত গড়াবে তার মূল্য বৃদ্ধির ফলেও প্রকল্প ব্যয় বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল। এমনকি প্রকল্পটিও আগামী জাতীয় নির্বাচনে দক্ষিণাঞ্চলে সরকার দলীয় প্রার্থীদের প্রশ্নের মুখোমুখি করতে পারে। তবে বরিশাল অঞ্চলে ক্ষমতাসীন দলের জাতীয় পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতা প্রকল্পটি নিয়ে আশা ছাড়েননি। তাদের মতে, একমাত্র শেখ হাসিনার পক্ষেই সম্ভব এ মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়ন। কিন্তু প্রকল্পটির বাস্তবায়ন এগিয়ে নিতে তাদের তেমন কোনো তৎপরতা বা উদ্যোগও লক্ষ্যণীয় নয়।
এমনকি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের বিবেচনা মতে পিপিপি পদ্ধতিতে ডিপিএম-এ ১টি প্যকেজে বা ওটিএম পদ্ধতিতে ৪টি প্যাকেজে বাস্তবায়নযোগ্য এ ‘প্রকল্প-সারপত্র’ এখন পর্যন্ত পরিকল্পনা কমিশনের উচ্চ পর্যায়ে বিবেচনার জন্যও উত্থাপিত হয়নি।
ফলে কবে রেললাইনবিহীন দক্ষিণাঞ্চলে ট্রেনের হুইস্যাল শোনা যাবে তা বলতে পারছেন না রেলপথ মন্ত্রণালয় বা রেলপথ বিভাগের দায়িত্বশীল কেউ। ইতঃপূর্বে ২০২৩-এর জুলাই নাগাদ ফরিদপুর-বরিশাল-পায়রা বন্দর-কুয়াকাটা রেললাইন প্রকল্পটির বাস্তব অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরু করে ২০২৮-এর মধ্যে ট্রেন চালু করতে আশাবাদী ছিল রেলপথ বিভাগ। এমনকি প্রথম ৩ বছরের মধ্যে ভাংগা থেকে বরিশাল সেকশনের ৯৫ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ সম্পন্ন করে ট্রেন চালুর সম্ভবনার কথাও বলেছিলেন একাধিক কারিগরি বিশেষজ্ঞ।
কিন্তু পুরো বিষয়টি এখন অন্ধকারে। একদিকে প্রকল্পটির জন্য দাতা বা বিনিয়োগকারীর অভাব, অন্যদিকে নানা অজ্ঞাত কারণে সরকারের ওপর মহলে আগের মত আগ্রহের ঘাটতি পুরো বিষয়টিকে স্থবির করে দিচ্ছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্রে জানা গেছে। এমনকি এ রেলপথ নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণেও অন্তত ৩ বছর লেগে যেতে পারে বলে দাবি প্রকল্প সংশ্লিষ্টগণের।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ২০১৮-এর অক্টোবরে ফরিদপুরের ভাংগা জংশন থেকে বরিশাল-পায়রা-কুয়াকাটা রেলপথ নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা, বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন ও টেন্ডার ডকুমেন্ট তৈরির লক্ষ্যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী ২০২০-এর মার্চে প্রতিষ্ঠানটি প্রস্তাবিত এ রেলপথ, স্টেশন ও জংশন স্থাপনের সমিক্ষাসহ বিস্তারিত নকশা জমা দেয়ার কথা থাকলেও কাজটি সম্পন্ন হয়েছে পরের বছর জুলাই মাসে। করোনা সঙ্কটের পাশাপাশি এলাইনমেন্ট পরিবর্তনের কারণেও বিলম্বের কথা জানিয়েছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রস্তাবিত রেলপথের কয়েকটি স্থানে পুনরায় জরিপ পরিচালনা করে নতুন এলাইনমেন্ট অনুযায়ী নকশা প্রনয়ন করা হয়।
২১১ কিলোমিটার দীর্ঘ এ রেলপথ নির্মাণের ফলে পায়রা বন্দর ছাড়াও পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা এবং বরিশাল বিভাগীয় সদরসহ দক্ষিণাঞ্চল রেলপথে ভাংগা জংশন হয়ে রাজধানী ঢাকাসহ উত্তরবঙ্গের পাশাপাশি সারা দেশের সাথে যুক্ত হবার কথা।
পরমর্শক প্রতিষ্ঠান ভাংগা থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত প্রস্তাবিত সিঙ্গেল লেন ব্রডগেজ এ রেলপথে ১১টি স্টেশনের প্রস্তাব করেছে। মূল জংশন থাকবে ফরিদপুরের ভাংগাতেই। সেখান থেকে একটি লাইন পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় এবং অপর একটি লাইন ভাটিয়াপাড়াÑকালনা-নড়াইল-যশোর ও খুলনা ছাড়াও বেনাপোল এবং অপর লাইনটি ফরিদপুরÑরাজবাড়ী-কুষ্টিয়া পাকশি সেতু হয়ে উত্তরবঙ্গের লাইনে যুক্ত হবে। প্রস্তাবিত বরিশাল-কুয়াকাটামুখি রেলপথে ভাংগার পরে টেকেরহাট, মাদারীপুর, গৌরনদী, বরিশাল বিমান বন্দর, বরিশাল মহানগর, বাকেরগঞ্জ, পটুয়াখালী, আমতলী, পায়রা বিমান বন্দর, পায়রা বন্দর হয়ে সর্বশেষ কুয়াকাটাতে স্টেশন নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। স্টেশনগুলোর ভবন দক্ষিণাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী ইলিশ মাছের আদলে নির্মাণের নকশা করা হয়েছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে সংঘর্ষ, ৫০ ছাগল পুড়ে অঙ্গার
‘ভ্যাট বাড়ানোর’ পরিকল্পনা থেকে সরে না এলে রেস্তোরাঁ বন্ধের হুমকি
সুদহার বাড়ছে সঞ্চয়পত্রে
সুরমা নদীর তীরে জমে উঠেছে শীতকালীন সবজির হাট : প্রতিদিন প্রায় ১২ লক্ষ টাকার বেচাকেনা
মন্দিরে প্রবেশে ফ্রি টোকেন পেতে হুড়োহুড়ি, পদদলিতে নিহত ৬
লক্ষ্মীপুরে বহুতল ভবনের ফাইলিংয়ে বিধ্বস্ত সড়ক-দোকানপাট, ঝুঁকিতে ভবন
রাফির ব্যাংক লেনদেন নিয়ে যা বললেন সারজিস
পটুয়াখালী জেলা জমিয়াতুল মোদার্রেছিনের সাবেক সভাপতির ইন্তেকাল
আশুলিয়া থানায় নতুন ওসি হিসেবে যোগ দিলেন নুরে আলম সিদ্দিক
বকশীবাজারে স্থাপিত বিশেষ আদালতে আগুন দেওয়া হয়েছে
জকিগঞ্জে ক্রসফায়ারের চার বছর পর ওসির বিরুদ্ধে মামলা
আজকের মধ্যে ন্যায় বিচারের ইঙ্গিত না পেলে শাহবাগ ব্লকেডে যাবেন বিডিআর পরিবারের সদস্যরা
চুয়াডাঙ্গায় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস;স্বাভাবিক জনজীবন আড়ষ্ট
কুষ্টিয়ায় ইটভাটায় অভিযান, জরিমানা ১২ লাখ টাকা
পদ্মা নদীতে অবৈধ বালি উত্তোলনের দায়ে ৯ জনকে কারাদণ্ড
মা-ছেলের মিলনে আবেগাপ্লুত ভক্ত-সমর্থক; অরুণা বিশ্বাসের তেলবাজি, কটাক্ষের শিকার
শেরপুরে শপিংমলে ভেসে উঠল ‘ছাত্রলীগ' ও জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান: আটক-২
বিমানবন্দরে নরওয়ের নাগরিকদের হেনস্থা, একজনকে বেধরক মারধর
বিডিআর বিদ্রোহের বিচার: বকশীবাজারে শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ, ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী
এ দেশে অন্য কোনো দেশের দাদাগিরি চলবে না : হাসনাত