চট্টগ্রামে শ্রাবণেও তীব্র দহন বিদ্যুতের অভাবে হাঁসফাঁস অবস্থা

লোডশেডিংয়ে জনদুর্ভোগ

Daily Inqilab রফিকুল ইসলাম সেলিম

২৪ জুলাই ২০২৩, ১০:৩৮ পিএম | আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৩, ১২:০৮ এএম

চট্টগ্রাম অঞ্চলে শ্রাবণ মাসের অঝরে বর্ষণের বদলে চলছে তীব্র তাপদাহ। সেইসাথে বিদ্যুতের লোডশেডিং জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। বৈরী আবহাওয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে রোগ-বালাই। ঘরে ঘরে রোগী, ডেঙ্গু আতঙ্ক সর্বত্র। প্রখর রোদে সড়কে উড়ছে ধুলাবালি। জনজীবনে হাঁসফাঁস অবস্থা। এ অবস্থায় বন্ধ রয়েছে সাতটি বিদ্যুৎকেন্দ্র। জ্বালানি সাশ্রয়ে গ্যাস ও ফার্নেস অয়েল নির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বেশিরভাগ সময় বন্ধ রাখা হচ্ছে। তাতে লোডশেডিং অনিবার্য হয়ে পড়েছে। তীব্র লোডশেডিংয়ে জনজীবন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি শিল্প কারখানায় উৎপাদন বিঘিœত হচ্ছে। স্থবির হয়ে পড়েছে সার্বিক ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রফতানি কার্যক্রম।

চট্টগ্রামে বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় দেড় হাজার মেগাওয়াট। তবে তীব্র তাপদাহের কারণে এ চাহিদা আরো বেড়ে গেছে। শ্রাবণ মাসেও বৃষ্টির দেখা নেই। গতকাল পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস সর্বোচ্চ ৩৫.৩ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে। যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৪.৪ ডিগ্রি বেশি। দুঃসহ গরমে দফায় দফায় লোডশেডিং জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। রাতে-দিনে সমানে লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে। কোন কোন এলাকায় এক ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের পর আধা ঘণ্টাও বিদ্যুৎ থাকছে না। দিনের বেলা বেশিরভাগ এলাকা বিদ্যুৎহীন থাকছে। সন্ধ্যায় পিক আওয়ারে সরবরাহ কিছুটা বাড়লেও রাত বাড়তেই বিদ্যুতের সঙ্কট তীব্র হচ্ছে।

পিডিবির হিসেবে, গত রোববার দিনের বেলায় চট্টগ্রামে ৯২৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। আর ওইদিন সন্ধ্যায় পিক আওয়ারে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ১২শ’ ৯৮ মেগাওয়াট। জ্বালানি সাশ্রয়ে দিনের বেলায় বেশিরভাগ বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখায় উৎপাদন কম হচ্ছে। ফলে ঘাটতি চরম আকার ধারণ করছে। সন্ধ্যাবেলায় উৎপাদন বাড়লেও চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ কম থাকায় লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। মহানগরীর আবাসিক এলাকার পাশাপাশি বাণিজ্যিক ও শিল্প এলাকাগুলোতেও লোডশেডিং চলছে। শহরতলী এবং গ্রামে লোডশেডিং অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। মহানগরীর ব্যস্ততম জুবিলী রোড, কাজির দেউড়ী, জামাল খান, চকবাজার, মুরাদপুর, নিউমার্কেট, মাদারবাড়ি, আগ্রাবাদ, হালিশহর, খুলশী, ষোলশহর, বহদ্দারহাটসহ বেশিরভাগ এলাকায় দফায় দফায় লোডশেডিংয়ে জনজীবন অতিষ্ট হয়ে পড়েছে।

পিডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, ভরা বর্ষাতেও কাক্সিক্ষত বৃষ্টিপাত নেই। তাপদাহের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। সে তুলনায় উৎপাদন বাড়েনি। চট্টগ্রাম অঞ্চলে ২৫টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা দুই হাজার ৫৪৫ মেগাওয়াট। কিন্তু জ্বালানি সঙ্কট, যান্ত্রিক ত্রুটিসহ নানা কারণে সবকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র পুরোদমে চালানো যাচ্ছে না। রোববার সাতটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ ছিল। এ অবস্থায় চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। বিগত ১৫ বছরে বিদ্যুৎখাতের উন্নয়নে সারাদেশের মতো চট্টগ্রাম অঞ্চলেও হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। স্থাপন করা হয়েছে বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র। তবে তার সুফল পাচ্ছে না গ্রাহকেরা। এ নিয়ে জনমনে ক্ষোভ অসন্তোষ বিরাজ করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা মন্তব্য করছেন অনেকে। লোডশেডিংয়ে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

এবার ভরা মৌসুমের আগেই ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে ডেঙ্গু জ্বর। মশার কামড়ে মানুষ মারা যাচ্ছে। গতকালও ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৯৩ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ২১শ’ ছাড়িয়ে গেছে। মারা গেছেন ২২ জন। চলতি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১৬শ’ ৬২ জন। হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর উপচেপড়া ভিড়। অনেকে বাসাবাড়িতেও চিকিৎসা নিচ্ছেন। বিরূপ আবহাওয়ার কারণে ডেঙ্গুর পাশাপাশি ভাইরাস জ্বর, ডায়রিয়াসহ নানা রোগবালাই ছড়িয়ে পড়েছে। ঘরে ঘরে অসুখ বিসুখ লেগেই আছে। তার উপর চলছে বিদ্যুতের আসা যাওয়ার খেলা। সামনে এসএসসি পরীক্ষা। তীব্র গরম এডিসসহ মশার উৎপাত সেইসাথে বিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা বিঘিœত হচ্ছে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

মাদুরোকে গ্রেপ্তারে ২৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের

মাদুরোকে গ্রেপ্তারে ২৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের

যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত উভয়েই একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায় :বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত

যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত উভয়েই একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায় :বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত

অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে ইরানে অস্থিরতা বাড়ছে

অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে ইরানে অস্থিরতা বাড়ছে

দ্রুত নির্বাচন হলে সৃষ্ট সংকট দূর হবে : মির্জা ফখরুল

দ্রুত নির্বাচন হলে সৃষ্ট সংকট দূর হবে : মির্জা ফখরুল

গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহত আরও ২১

গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহত আরও ২১

নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাবে

নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাবে

অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট বাসভবনকে ‘দুর্গে’ পরিণত করেছেন

অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট বাসভবনকে ‘দুর্গে’ পরিণত করেছেন

ভারতের সঙ্গে করা জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিলের দাবি আনু মুহাম্মদের

ভারতের সঙ্গে করা জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিলের দাবি আনু মুহাম্মদের

পাকিস্তানিদের জন্য ভিসার শর্ত শিথিল করল বাংলাদেশ

পাকিস্তানিদের জন্য ভিসার শর্ত শিথিল করল বাংলাদেশ

মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের ঐক্যবদ্ধ কার্যকরী ভূমিকা সময়ের অপরিহার্য দাবি

মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের ঐক্যবদ্ধ কার্যকরী ভূমিকা সময়ের অপরিহার্য দাবি

রাজনীতি হওয়া উচিত জনমানুষের কল্যাণে -বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরী

রাজনীতি হওয়া উচিত জনমানুষের কল্যাণে -বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরী

বিএনপির সাথে জামায়াতের দূরত্ব নয় বরং সুসম্পর্ক রয়েছে -চাঁদপুরে ডা. তাহের

বিএনপির সাথে জামায়াতের দূরত্ব নয় বরং সুসম্পর্ক রয়েছে -চাঁদপুরে ডা. তাহের

আদমদীঘিতে খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া

আদমদীঘিতে খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া

ছাত্রাবাস থেকে রুয়েট শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার

ছাত্রাবাস থেকে রুয়েট শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার

দেশীয় চোলাই মদের ট্রানজিট বোয়ালখালী

দেশীয় চোলাই মদের ট্রানজিট বোয়ালখালী

সোনারগাঁওয়ে বিনামূল্যে চক্ষু শিবির

সোনারগাঁওয়ে বিনামূল্যে চক্ষু শিবির

রূপগঞ্জ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভা, সংবর্ধনা ও বার্ষিক মিলনমেলা অনুষ্ঠিত

রূপগঞ্জ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভা, সংবর্ধনা ও বার্ষিক মিলনমেলা অনুষ্ঠিত

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মীরাও ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়নের শিকার : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মীরাও ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়নের শিকার : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

সাম্প্রদায়িক হামলার অভিযোগে ১১৫টি মামলা, ১০০ জন গ্রেফতার

সাম্প্রদায়িক হামলার অভিযোগে ১১৫টি মামলা, ১০০ জন গ্রেফতার

উন্মুক্ত মঞ্চে তরুণদের উচ্ছ্বাস

উন্মুক্ত মঞ্চে তরুণদের উচ্ছ্বাস