ইসলামী সভ্যতায় অশ্লীলতা নিষিদ্ধ
০৯ আগস্ট ২০২৩, ০৮:১৩ পিএম | আপডেট: ১০ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম
ইসলাম শালীনতা, নির্মলতা, পরিচ্ছন্নতা ও পূত-পবিত্রতার ধর্ম। এই ধর্মে অবাধ যৌনতা, নগ্নতা, অশ্লীলতা, জঘন্যতা, বেহায়াপনা ও বেলেল্লাপনার কোন স্থান নেই। ইসলাম কুৎসিত, কুরুচিপূর্ণ, অশালীন ও জঘন্য সব অপকর্ম ও কুকর্মকে হারাম ঘোষণা করেছে। দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান সর্বপ্রকার নির্লজ্জতা, অশ্লীলতা ও বেহায়াপনাকে নিষেধ করে দিয়েছে। মহাগ্রন্থ আল কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘আপনি বলে দিন, আমার পালনকর্তা কেবল অশ্লীল বিষয়সমূহ হারাম করেছেন যা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ৩৩) অন্য এক আয়াতে সর্বপ্রকার অশ্লীলতাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ এবং আত্মীয়-স্বজনকে দান করার আদেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অসঙ্গত কাজ ও অবাধ্যতা করতে বারণ করেন।’ (সুরা নাহল, আয়াত : ৯০)
যদি কোন ব্যক্তি আগুনের কাছে যায়, তাহলে তার আগুনের তাপে দগ্ধ হওয়ার ভয় থাকে। অনুরূপভাবে কোন ব্যক্তি যদি কুয়ার কিনারায় দাঁড়ায়, তাহলে তার কুয়ার অভ্যন্তরে পতিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ঠিক তেমনিভাবে কোন ব্যক্তি যদি অশ্লীলতার উপায় উপকরণের কাছে যায়, তাহলে তার অশ্লীলতায় লিপ্ত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। তাই মানুষ যেন অশ্লীলতা থেকে সহজে বাঁচতে পারে সেজন্য মহান আল্লাহ অশ্লীলতার উপায় উপকরণকেও বর্জন করার নির্দেশ দিয়েছেন। অশ্লীলতা, নির্লজ্জতা, বেহায়াপনা ও বেলেল্লাপনা তো দূরের কথা অশ্লীলতার নিকটে যেতেও মহামহিম আল্লাহ তার বান্দাদের বারণ করে অশ্লীলতার পথ রুদ্ধ করার প্রয়াস চালিয়েছেন। অশালীনতার নিকটবর্তী না হওয়ার নির্দেশ দিয়ে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘অশ্লীলতার কাছেও যেয়ো না, প্রকাশ্য হোক কিংবা অপ্রকাশ্য।’ (সুরা আনআম, আয়াত : ১৫১)
আগুনের সংস্পর্শে গেলে মোম যেমন গলে যায় ঠিক তেমনিভাবে প্রাপ্তবয়স্ক নর যদি পরনারীর কাছে এবং প্রাপ্তবয়স্ক নারী যদি পর পুরুষের কাছে যায়, তা হলে তারও গলে যাওয়ার তথা আকৃষ্ট হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ পরনারীর প্রতি দুর্বল হওয়া এবং প্রাপ্তবয়স্ক নারী পর পুরুষের প্রতি দুর্বল হওয়া স্বাভাবিক। এজন্য তারা যদি একে অপরের কাছে অবাধে ও পর্দাহীনভাবে গমনাগমন করে, তাহলে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য মহান আল্লাহ ব্যভিচারের পথ রুদ্ধ করার নিমিত্তে পরনারীর কাছে পরপুরুষ এবং পরপুরুষের কাছে পরনারী গমন করতে নিষেধ করে দিয়েছেন। ব্যভিচার তো দূরের কথা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হতেও বারণ করেছেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ ও মন্দ পথ।’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩২) পর্দাহীনভাবে চলাফেরা করা ব্যভিচারের পথকে উন্মুক্ত করে। ব্যভিচারের ছিদ্রপথ বন্ধ করার লক্ষ্যে প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের পর্দাহীনভাবে চলাফেরা করতে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। যেসব নারী পর্দাহীনভাবে চলাফেরা করে তারা বেহেশতের ঘ্রাণও পাবে না মর্মে হাদিস শরিফে হুঁশিয়ারী উচ্চারিত হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, কাপড় পরিহিতা উলঙ্গিনী এবং পুরুষদেরকে নিজের প্রতি আকৃষ্টকারিনী স্ত্রীলোকেরা বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না, বরং তারা বেহেশতের সুগন্ধও পাবে না। অথচ ঐ সুগন্ধ পাঁচশত বছরের দূরত্ব হতেও অনুভ‚ত হয়।’ (মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হাদিস : ১৬৩৬) যিনা ও ব্যভিচার ঈমানের শক্তিকে দুর্বল করে দেয়। পূর্ণাঙ্গ ঈমানের অধিকারী ব্যক্তি কখনো ব্যভিচারের মতো কুকর্মে লিপ্ত হতে পারে না। যখন কোন ব্যক্তি ব্যভিচারে লিপ্ত হয় তখন তার ঈমান নিতান্ত দুর্বল হয়ে যায়। হজরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন ব্যভিচারী মুমিন অবস্থায় ব্যভিচার করে না’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৪৭৫) ব্যভিচারের দিকে নিয়ে যায় এমন ছোট ছোট পদক্ষেপগুলোও ব্যভিচার বলে গণ্য। ব্যভিচার করার পূর্বে ব্যভিচারকারী পুরুষ ও ব্যভিচারকারী নারী একজন আরেকজনের দিকে তাকায়। একজন অপরজনের কথা শুনে। একজন আরেকজনের সঙ্গে প্রেমালাপ করে। একজন আরেকজনকে স্পর্শ করে।একজন অপরজনের দিকে এগিয়ে যায়। একজন আরেকজনকে নিয়ে জল্পনা কল্পনা করে। এভাবে ব্যভিচারের পূর্বে ব্যভিচারের জন্য সহায়ক যে কাজগুলো করা হয় সেগুলোর সবই ব্যভিচার বলে গণ্য। হজরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আদম সন্তানের উপর ব্যভিচারের যে অংশ লিখিত রয়েছে তা অবশ্যই সে প্রাপ্ত হবে। নিঃসন্দেহে দু’চোখের ব্যভিচার হলো তাকানো, দু’কানের ব্যভিচার হলো শোনা, জিহŸার ব্যভিচার হলো কথোপকথন করা, হাতের ব্যভিচার হলো শক্ত করে ধরা, পায়ের ব্যভিচার হলো হেঁটে যাওয়া, হৃদয়ের ব্যভিচার হচ্ছে কামনা-বাসনা করা। আর লজ্জাস্থান তা সত্যায়িত করে বা মিথ্যা সাব্যস্ত করে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৬৪৭)
পুরুষের সঙ্গে পুরুষ এবং নারীর সঙ্গে নারী নিজের যৌন চাহিদা চরিতার্থ করার নাম সমকাম। সমকাম এমন অশিষ্ট, জঘন্য, কুৎসিত ও কুরুচিপূর্ণ কুকর্ম যে, জন্তু-জানোয়ারদের মধ্যেও সমশ্রেণীর সঙ্গে যৌন চাহিদা চরিতার্থ করার অভ্যাস নেই। ইসলাম অত্যন্ত কঠোর ভাষায় স্বভাব বহির্ভূত বিকৃত যৌনাচার সমকামকে হারাম ঘোষণা করেছে। (অসমাপ্ত)
লেখক: শিক্ষক, জামিয়া ইসলামিয়া ইসলামবাগ, চকবাজার, ঢাকা-১২১১
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
দিল্লিতে দূষণ-কুয়াশার কারণে ভ্রমণ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত ,যাত্রীদের ভোগান্তি
বাগেরহাটে লখপুর গ্রুপের কর্মহীন শ্রমিকদের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ
নিকলীতে দশ কিলোমিটার ম্যারাথন দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত
‘গণঅভ্যুত্থানে আহত ১১ জনকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হয়েছে, আরও যাবেন ২৮ জন’
১০ কোটিতে মাল্টার পাসপোর্ট নেওয়ার চেষ্টা টিউলিপের চাচীর
জামিন বাতিল করে সাদপন্থিদের কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবি
পাকিস্তানকে ছেড়ে ভারতের দিকে ঝুঁকছে তালেবান?
টাঙ্গাইলে জিয়া মঞ্চে ৩১ দফা নিয়ে লিফলেট বিতরণ
পলাতক ওসিকে গ্রেপ্তারে রেড অ্যালার্ট জারি, অভিযানে সেনাবাহিনী-পুলিশ-র্যাব
কানাডার লিবারেল পার্টি ৯ মার্চ নতুন নেতা নির্বাচন করবে
স্বৈরাচারের সহযোগীদের রাজনৈতিক দলে ঢোকালে প্রতিরোধ করা হবে : ড. রিপন
দশ বছর পর ফের পুরষ্কৃত মালালা, ফিরছেন পাকিস্তান
ভারতে এক মাসে এক গ্রাহক পেলেন ২১০ কোটির বিদ্যুৎ বিলের কপি
সাতক্ষীরায় ইজিবাইকের চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে কিশোরী নিহত
সীমান্তে অতন্দ্র প্রহরী জনগণ, রাজনৈতিক দলের কোনো ভূমিকা নেই
চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস, মৃদু শৈত্য প্রবাহের কবলে গোট জেলা
খলনায়ক এআই, একধাক্কায় বেকার হতে চলেছেন ২ লাখ কর্মী
মক্কায় বন্যার পানিতে ভেসে গেল গাড়ি, ৪ জনের মৃত্যু
পাকিস্তানে অস্ত্রের মুখে ১৭ সরকারি কর্মীকে অপহরণ
যুক্তরাষ্ট্রে দাবানল নেভানোর কাজে এবার নামানো হলো কারাবন্দিদের