চট্টগ্রামে বিএনপির কালো পতাকা গণমিছিলে আমীর খসরু

জনতার এক দাবি শেখ হাসিনার বিদায় আর প্রতিবাদ নয়, এবার প্রতিরোধ

Daily Inqilab চট্টগ্রাম ব্যুরো

২৬ আগস্ট ২০২৩, ১১:১৪ পিএম | আপডেট: ২৭ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম

এক দফা দাবিতে চট্টগ্রাম নগরীতে গতকাল শনিবার বিএনপির কালো পতাকা গণমিছিলে মানুষের ঢল নামে। প্রায় আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ গণমিছিলটি নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। নগরীর কাজির দেউড়ী মোড়ে গণমিছিলপূর্ব বিশাল সমাবেশে প্রধান অতিথি দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, চলমান আন্দোলনে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও জুলুম নির্যাতন করা হলে আর কোন প্রতিবাদ নয় এখন থেকে প্রতিরোধ করা হবে। কতিপয় অতি উৎসাহী সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, একটি দল ও এক ব্যক্তিকে ক্ষমতায় রাখার জন্য অন্যায় করলে রেহাই পাবেন না। এখানে বাংলাদেশের জনগণের অধিকার আছে। কেউ যদি কোনো নাগরিকের নাগরিক, সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নেয় তাহলে সেই নাগরিকের অধিকার আছে সেটা প্রতিরোধ করা। আবারও বলছি দেওয়ালের লিখন পড়তে শেখেন। দেওয়ালের লিখন হচ্ছে শেখ হাসিনার বিদায়। এখনও যারা যারা পড়েননি, পড়ে নেন।

আমীর খসরু বলেন, শেখ হাসিনা দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়েছেন বাংলাদেশের মানুষের করের টাকা দিয়ে। দলবল, পরিবারসহ দক্ষিণ আফ্রিকায় উপস্থিত হয়েছেন। ব্রিকসের নাকি সদস্য হবে। ওখানে যে ওদের অফিশিয়াল ফটোগ্রাফার আছে। যারাই ওখানে অতিথি হিসেবে গিয়েছেন বা উপস্থিত ছিলেন তাদের ছবিতেও শেখ হাসিনা নেই। তাহলে শেখ হাসিনা কোথায় ছিলেন? ওই বাংলাদেশী কিছু আওয়ামী লীগের লোকজন ওখানে আছে। দক্ষিণ আফ্রিকাতে যত বাঙালি থাকে তার ৯০ শতাংশ হচ্ছে বিএনপি। আমি জেনে বলছি। ১০ শতাংশ হচ্ছে তারা, যাদের পরিবার এখানকার লুটপাটের ভাগ পাচ্ছে এই দুর্নীতিবাজ সরকার থেকে। এদেরকে নিয়ে উনি একটি সভা করেছেন ওখানে। গেছেন কোন কাজে, করছেন কি। গেছে ওখানে সদস্যপদের জন্য। ওখান থেকে বঞ্চিত হয়ে এদের সাথে গিয়ে সভা করছে। ওখানে কি বলছেন? নৌকায় ভোট দিতে বলছেন। ওরা কেউ কিন্তু ভোটার না? ওরা তো দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকেন। বাংলাদেশের করের টাকা খরচ করে আপনি দক্ষিণ আফ্রিকায় গেছেন কি নৌকায় ভোট চাইতে?

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম আহবায়ক ইয়াছিন চৌধুরী লিটনের পরিচালনায় গণমিছিল পূর্ব সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন দলের শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান।
আমীর খসরু বলেন, আওয়ামী লীগের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। শুধু কয়েকটি জায়গায় যেতে পারবে। একটি হচ্ছে প্রতিদিন টাকা দিয়ে বিরিয়ানী খাইয়ে শান্তি কমিটির মিটিং করা। আবার টাকা নিয়ে, বিরানী খেয়েও বিএনপির মিছিলেও চলে আসে অনেকে। এটা আমি সত্যি কথা বলছি। এই হলো জনগণের সাথে আওয়ামী লীগের অবস্থা। আরেকটা হচ্ছে কিছু আওয়ামী পুলিশ আছে, তাদেরকে ব্যবহার করে মিথ্যা মামলা, গায়েবী মামলা দেবে। আর বিএনপির প্রতিটি কর্মসূচির আগে পরে গ্রেফতার করবে। শতবছরের পুরনো অস্ত্র দিয়ে বলে তারা নাকি অস্ত্র নিয়ে ধরা পড়েছে। এটা হচ্ছে আওয়ামী লীগের নির্ভরশীলতা। এরপর বিচারবিভাগকে ব্যবহার করে মিথ্যা মামলা ও গায়েবী মামলাকে ব্যবহার করে বিএনপির নেতাকর্মীদের দ্রুতগতিতে জেলে পাঠানোর একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমি আগে বলেছিলাম বাংলাদেশ আওয়ামী বিচারক লীগ ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এরা আওয়ামী লীগের আরেকটি অঙ্গ সংগঠন। এই যে মিথ্যা মামলা, ফৌজদারি মামলা ও গায়েবী মামলা দিয়ে বিএনপি এবং বিরোধী দলীয় ও ভিন্নমতের লোকজনের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, এগুলো কিছু পুলিশ ও কিছু আওয়ামী দলীয় লোকজন দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যে আইনে এসব মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে সে আইনেও এইটাও বলা আছে যদি মামলা মিথ্যা হয় তাহলে সেটা শাস্তিযোগ্য ও দন্ডনীয় অপরাধ। এটার শাস্তি আজীবন কারাদন্ড হতে পারে। আপনার যারা এসব কাজ করছেন ভেবে দেখেন সারাজীবন কি জেলখানায় চান নাকি সংবিধান আপনাকে যে দায়িত্ব দিয়েছে জনগণের সুরক্ষার জন্য পালন করবেন। একটি দলকে ক্ষমতায় রাখার জন্য, একটি ব্যক্তিকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য যদি জনগণের বিরুদ্ধে এই ধরণের অবস্থান নেন তাহলে আজীবন জেলে কাটাতে হবে। জরিমানা দিতে হবে।

তিনি বলেন, আগামীদিনে যে নির্বাচন আসছে সেটা বাঁধাগ্রস্থ করার জন্য যারা ভূমিকা পালন করবে, তাদের আমেরিকার ভিসা তো বাতিল হবেই। সেটা সমস্যা নেই। ছেলেমেয়ে নিয়ে থাকতে পারবে না। চলে আসতে হবে। চুরি করে যে বাড়িঘর করে সেসব আমেরিকান সরকার নিয়ে নেবে। তাদেরকে বিতাড়িত করবে। তাদের ছেলেমেয়েরা কেউ পড়তে যেতে পারবে না। যেগুলো আছে পাঠিয়ে দেবে। আর তারা তো যেতেই পারবে না। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ যে স্যাংশন দেবে এখান থেকে কেউ মুক্তি পাবে না।

তিনি বলেন, যারা গ্রেফতার করতে আসে রাতের অন্ধকারে তাদের ছবি তুলবেন। বিএনপি ভদ্রলোকের দল। এখনও কিন্তু সুশৃঙ্খলভাবে, অহিংসভাবে জনগণকে সাথে নিয়ে আমরা আন্দোলন করছি। আমরা প্রতিবাদ করছি। কিন্তু বাসায় বাসায় গিয়ে সন্ত্রাসী, গ্রেফতার, গায়েবী ও মিথ্যা মামলা এই ধারা যদি চলতে থাকে এখন তো প্রতিবাদ করছি তখন প্রতিরোধ করবো। প্রতিরোধ কি জিনিস তখন বুঝতে পারবেন।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

উৎসব মুখর পরিবেশে পালিত হলো জাবির ৫৪ তম দিবস

উৎসব মুখর পরিবেশে পালিত হলো জাবির ৫৪ তম দিবস

কুষ্টিয়ায়  স্কুল কমিটি নিয়ে বিএনপি-জামায়াত সংঘর্ষ, আহত ৩০

কুষ্টিয়ায় স্কুল কমিটি নিয়ে বিএনপি-জামায়াত সংঘর্ষ, আহত ৩০

জুলাই বিপ্লবে ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ির চাকার পিষ্ট হয়ে নিহত মাহবুব আলমের পরিবারের পাশে তারেক রহমান

জুলাই বিপ্লবে ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ির চাকার পিষ্ট হয়ে নিহত মাহবুব আলমের পরিবারের পাশে তারেক রহমান

ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোন ষড়যন্ত্রকারী বিএনপির  ক্ষতি করতে পারবে না : আমিনুল হক

ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোন ষড়যন্ত্রকারী বিএনপির  ক্ষতি করতে পারবে না : আমিনুল হক

যায়যায়দিন পত্রিকায় নির্বাহী সম্পাদক হলেন খুরশীদ আলম

যায়যায়দিন পত্রিকায় নির্বাহী সম্পাদক হলেন খুরশীদ আলম

বিধ্বংসী শতকে লিটনের জবাব, ঝড়ো সেঞ্চুরি তানজিদেরও, বিপিএলে রেকর্ড

বিধ্বংসী শতকে লিটনের জবাব, ঝড়ো সেঞ্চুরি তানজিদেরও, বিপিএলে রেকর্ড

ফরিদপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন দিনে মোট ১১ জন নিহত, আহত ৩৫

ফরিদপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন দিনে মোট ১১ জন নিহত, আহত ৩৫

চলমান সংস্কার গতিশীল করতে হবে, যাতে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে : মান্না

চলমান সংস্কার গতিশীল করতে হবে, যাতে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে : মান্না

ওয়ান টাইম প্লাস্টিক বন্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৬ হাজার প্রতিষ্ঠান: বিপিজিএমইএ

ওয়ান টাইম প্লাস্টিক বন্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৬ হাজার প্রতিষ্ঠান: বিপিজিএমইএ

পাটগ্রাম সীমান্তে বাংলাদেশিকে লক্ষ্য করে বিএসএফের গুলি, আহত ১

পাটগ্রাম সীমান্তে বাংলাদেশিকে লক্ষ্য করে বিএসএফের গুলি, আহত ১

ওসি মুহিবুল্লাহকে বাঁচাতে স্বজনদের মানববন্ধন

ওসি মুহিবুল্লাহকে বাঁচাতে স্বজনদের মানববন্ধন

ব্র্যাক ব্যাংকের টপ টেন রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড জয় ২০২৪ সালে ১.৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স সংগ্রহ

ব্র্যাক ব্যাংকের টপ টেন রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড জয় ২০২৪ সালে ১.৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স সংগ্রহ

শেখ হাসিনা ভারতের সাথে বৈষম্যমৃলক চূক্তি করেছিলেন-মৌলভীবাজারে সারজিস আলম

শেখ হাসিনা ভারতের সাথে বৈষম্যমৃলক চূক্তি করেছিলেন-মৌলভীবাজারে সারজিস আলম

শেখ হাসিনার চোখ ছিল শুধু ঢাকা থেকে টুঙ্গীপাড়া পর্যন্ত : সারজিস

শেখ হাসিনার চোখ ছিল শুধু ঢাকা থেকে টুঙ্গীপাড়া পর্যন্ত : সারজিস

স্বাধীন সামরিক বাহিনী সংস্কার কমিশন গঠনের প্রস্তাব

স্বাধীন সামরিক বাহিনী সংস্কার কমিশন গঠনের প্রস্তাব

চকরিয়ায় পুলিশ-সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলি: বসতবাতিতে আগুন, ওয়ার্ড মেম্বারসহ আহত ২

চকরিয়ায় পুলিশ-সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলি: বসতবাতিতে আগুন, ওয়ার্ড মেম্বারসহ আহত ২

শাহজালাল বিমানবন্দরে বিমান বাহিনীর সদস্যদের অপসারণে আইনি নোটিশ

শাহজালাল বিমানবন্দরে বিমান বাহিনীর সদস্যদের অপসারণে আইনি নোটিশ

সউদী-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক হজ চুক্তি স্বাক্ষরিত

সউদী-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক হজ চুক্তি স্বাক্ষরিত

ব্যবসা গুটিয়ে নিতে এক্সিট পলিসি চান ব্যবসায়ীরা

ব্যবসা গুটিয়ে নিতে এক্সিট পলিসি চান ব্যবসায়ীরা

ভ্যাট বাড়লেও সাধারণ মানুষের উপরে খুব প্রভাব পড়বে না: প্রেস সচিব

ভ্যাট বাড়লেও সাধারণ মানুষের উপরে খুব প্রভাব পড়বে না: প্রেস সচিব