প্লাস্টিকে পরিবেশের সর্বনাশ
৩০ আগস্ট ২০২৩, ১১:০২ পিএম | আপডেট: ৩১ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম
প্লাস্টিক গিলে খাচ্ছে নদী, মাটি বায়ূ সব কিছু। অর্থাৎ এই প্লাস্টিক এখন পরিবেশের সর্বনাশ ডেকে আনছে। এর অপব্যবহার এবং অপর্যাপ্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ফলে বিশ্বব্যাপী বাস্তুতন্ত্রের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তাই পরিবেশ বিপর্যয় রোধে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ওপর নিষেধাজ্ঞার আহবান জানিয়েছেন পরিবেশবাদীরা।
ঢাকায় গতকাল এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো) আয়োজিত ‘প্লাস্টিক পল্যুশন টুওয়ার্ডস প্লাস্টিক ট্রিটি নেগোসিয়েশন’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ আহবান জানান। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, প্লাস্টিক দূষণ মানব এবং পরিবেশ উভয়ের জন্য মারাত্মক সমস্যা। এই দূষণ কমানোর জন্য সরকার ও জনগণকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। যা বৈশ্বিক প্লাস্টিক চুক্তির পথ সুগম করবে। আমাদের যত দ্রুত সম্ভব একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। কারণ এটি জলবায়ু পরিবর্তনে আরও বেশি অবদান রাখে।
প্লাস্টিকের জীবনচক্রের প্রথম ধাপ শুরু হয়ে জীবাশ্ম জালানি, অপরিশোধিত তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস নিষ্কাশনের মধ্য দিয়ে। এই অনবায়নযোগ্য শক্তি উৎসগুলোকে প্লাস্টিক উৎপাদনের কাঁচামাল, যেমন, ইথিলিন ও প্রোপিলিন পেতে ব্যবহার করা হয়। এই নিষ্কাশন প্রক্রিয়ার ফলে বায়ু ও পানি দূষণ হয় এবং এর ফলে নির্গত গ্রিনহাউজ গ্যাসের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বড়সড় ঘটনা ঘটে। সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল এনভায়রেনমেন্টাল ল বা আন্তর্জাতিক পরিবেশ আইন কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী, প্রায় ৯৯ শতাংশ প্লাস্টিকই আসে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে। শুধু ২০২০ সালেই বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক শিল্প থেকে ১.৮ বিলিয়ন টন কার্বন-ডাই-অক্সাইডের সমপরিমাণ গ্যাস বের হয়েছে, যা কি না ৩৮০টি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ও প্যাকেটজাতকরণের সমান।
প্লাস্টিক বর্জ্যরে ফলে মাটি দূষিত হয় এবং এতে থাকা ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের কারণে জীবজগৎ ও উদ্ভিদকূল উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া প্লাস্টিক দূষণের কারণে মাটির উর্ব্বরতা ব্যাহত হয়, কৃষি উৎপাদনশীলতা বাধাগ্রস্ত হয় এবং বাস্তুতন্ত্রের সুস্থতা বিঘিœত হয়। প্লাাস্টিক বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলার ফলে পরিবেশে বিভিন্ন বিষাক্ত পদার্থ মিশে যায়, যার ফলে বায়ু দূষণ ঘটে এবং পরবর্তীতে শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত রোগব্যাধির মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
প্লাস্টিক দূষণের সবচেয়ে ভয়ের দিকটি হচ্ছে এর দীর্ঘস্থায়িতা। প্লাস্টিকের পচনে বহু বহু বছর কেটে যায় এবং বহু বছর পরও এটি ভেঙে গিয়ে মাইক্রো প্লাস্টিক নামের ক্ষুদ্রাংশে পরিণত হয়। মাইক্রো প্লাস্টিকের আকার ৫ মিলিমিটারের চেয়েও কম এবং সমুদ্রের তলদেশ থেকে শুরু করে যে বাতাসে আমরা শ্বাস নিই, তার সবখানেই এখন মাইক্রো প্লাস্টিক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। এই ছোট ছোট কণাগুলো খাদ্যশৃঙ্খলের মাধ্যমে মানব দেহে প্রবেশ করে এবং বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকির জন্ম দেয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এসডোর চেয়ারপারসন ও বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ। তিনি বলেন, এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক যে, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্লাস্টিকদূষিত দেশ। তিনি বলেন, প্লাস্টিক পরিবেশের ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। আমরা পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার বন্ধ করেছি। আমাদের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, প্লাস্টিক দূষণ এমন একটি সমস্যা যা আমরা সমাধান করতে পারি নাই। আমরা প্লাস্টিক দূষণের সমস্যা মোকাবিলা করতে পিছিয়ে আছি। বিশ্বব্যাপী পলিথিনের ব্যাগ নিষিদ্ধ করা প্রথম দেশ হিসেবে আমাদের ভাবমূর্তি বজায় রাখতে প্লাস্টিক দূষণের অবসান ঘটাতে হবে। এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি সাবেক সচিব ড. মাহফুজুল হক বলেন, আমরা প্রত্যেকেই যদি পরিবেশ রক্ষার পদক্ষেপ গ্রহণ করি, তাহলে পরিবেশের ওপর উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক প্রভাব যোগ করে। একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার হ্রাস করা, বিকল্প পণ্য ব্যবহার করা এবং রিফিল সিস্টেম বেছে নেওয়ার মতো ছোট পদক্ষেপ সম্মিলিতভাবে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে পারে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইম্পোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্টসের চিফ কন্ট্রোলার এস কে রফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ, এই নদীগুলো আমাদের দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বহন করে। অথচ নদীগুলোর বেশিরভাগই প্লাস্টিক দ্বারা দূষিত। প্রকৃতি রক্ষার জন্য, এখনই এই সমস্যার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
গোলরক্ষক বীরত্বে ১০ জনের ইউনাইটেড হারাল আর্সেনালকে
৯ দফা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ কতদূর?
মর্গের দুই লাশের দাবিদার দুই পরিবার,
আইনজীবীকে হত্যার হত্যাচেষ্টা: শেখ হাসিনা-জয়সহ ৯৩ জনের মামলা এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ
তথ্য থাকলেও সন্দেহজনক লেনদেনে দেরিতে ব্যবস্থা নিচ্ছে বিএফআইইউ!
সাবেক এমপি হেনরীর ৫৬ কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ,
গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগে উৎকণ্ঠায় নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীরা
দেশে এইচএমপি ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত
শাহজালাল বিমানবন্দরে বিমান বাহিনীর সদস্যদের অপসারণে আইনি নোটিশ
চকরিয়ায় পুলিশ-সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলি: বসতবাতিতে আগুন, ওয়ার্ড মেম্বারসহ আহত ২
স্বাধীন সামরিক বাহিনী সংস্কার কমিশন গঠনের প্রস্তাব
শেখ হাসিনার চোখ ছিল শুধু ঢাকা থেকে টুঙ্গীপাড়া পর্যন্ত : সারজিস
শেখ হাসিনা ভারতের সাথে বৈষম্যমৃলক চূক্তি করেছিলেন-মৌলভীবাজারে সারজিস আলম
ব্র্যাক ব্যাংকের টপ টেন রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড জয় ২০২৪ সালে ১.৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স সংগ্রহ
ওসি মুহিবুল্লাহকে বাঁচাতে স্বজনদের মানববন্ধন
পাটগ্রাম সীমান্তে বাংলাদেশিকে লক্ষ্য করে বিএসএফের গুলি, আহত ১
ওয়ান টাইম প্লাস্টিক বন্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৬ হাজার প্রতিষ্ঠান: বিপিজিএমইএ
চলমান সংস্কার গতিশীল করতে হবে, যাতে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে : মান্না
ফরিদপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন দিনে মোট ১১ জন নিহত, আহত ৩৫
বিধ্বংসী শতকে লিটনের জবাব, ঝড়ো সেঞ্চুরি তানজিদেরও, বিপিএলে রেকর্ড