সাইবার নিরাপত্তা আইনও ‘কালো আইন’ ঝুঁকি টিআইবি
৩০ আগস্ট ২০২৩, ১১:৪৪ পিএম | আপডেট: ৩১ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, সাইবার নিরাপত্তা আইনের খসড়া পাস হলে এটিও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো কালো আইনে পরিণত হওয়ার এবং এর ফলে মানুষের মৌলিক অধিকার ভূলুণ্ঠিত হওয়ার ব্যাপক ঝুঁকি সৃষ্টি হবে। গতকাল বুধবার টিআইবি কার্যালয়ে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও খসড়া সাইবার নিরাপত্তা আইন: একটি তুলনামূলক পর্যালোচনা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
টিআইবি বলছে, সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ এর খসড়ায় নির্বতনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর বিতর্কিত ধারাগুলোর সন্নিবেশ ঘটেছে, যদিও শাস্তি ও অ-আমলযোগ্য ধারার ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে খসড়া আইনের বিষয়ে টিআইবির উপস্থাপনা তুলে ধরেন সংস্থাটির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক শেখ মঞ্জুর-ই-আলম। উপস্থাপনায় বলা হয়, প্রস্তাবিত আইনের ধারা ৮, ৯, ১০, ও ১১ অনুযায়ী সাইবার নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়লে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ডেটা বা ইনফরমেশন দুটোই অপসারণের জন্য বিটিআরসিকে বলবেন এবং ৮ (২) ধারায় বলা হয়েছে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী মনে করলে কোনো তথ্য-উপাত্ত দেশের অর্থনৈতিক কর্মকা-, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, ধর্মীয় মূল্যবোধ কিংবা জনশৃংখলা বিষয়ক্ষুন্ন করে বা জাতিগত বিদ্বেষ বা ঘৃণা সঞ্চার করে, তা হলে আইনশৃংখলা বাহিনী ব্যবস্থা নিতে পারবে।
টিআইবি বলছে, এসব বিষয়ের কোনো সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা এই আইনে নেই। এ কারণে এখানে ব্যাখ্যা ও অপব্যাখ্যা করার যথেষ্ট সুযোগ আছে। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাখ্যার ওপর নির্ভর করতে হবে, যা খুবই বিপদজনক।
উপস্থাপনায় বলা হয়, ক্ষতিকর কন্টেন্ট অপসারণ করার প্রয়োজন আছে, তবে তা সীমিত পরিধির মধ্যে থাকতে হবে, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন, ইন্টারন্যাশনাল কভেনেন্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিকাল রাইটসের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। সর্বোপরি প্রস্তাবিত আইনের বিভিন্ন ধারার মাধ্যমে মতপ্রকাশ, কথা বলা কিংবা তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপনের স্বাধীনতাকে অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে কারাদ- বাদ দিয়ে অর্থদ-ের কথা বলা হয়েছে, যা সাংবিধানিক অধিকারকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এই আইনে অপরাধ তদন্ত এবং আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে পুলিশকে ঢালাও ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত কারিগরি জ্ঞান বা বিশেষায়িত সক্ষমতা আইনশৃংখলা বাহিনীর আছে কি না, সেটি পর্যালোচনা করা দরকার।
এছাড়া খসড়ায় বিচারিক নজরদারির কথা বলা হয়নি উল্লেখ করে টিআইবি জানায়, আমল অযোগ্য কিংবা জামিনযোগ্য ধারা হলেও আমাদের চিন্তার অনেক বিষয় আছে। কারণ পুলিশের অ্যারেস্ট করার অনুমতি থেকেই যাচ্ছে। জামিন নিতে হবে উচ্চ আদালত থেকে। এক্ষেত্রে ধারার বিধান পরিবর্তন করলেও আমরা একই জায়গায় আছি, কারণ পুলিশ মনে করবে এবং অ্যারেস্ট করবে।
অধিকন্তু বিচারিক নজরদারি করার ক্ষেত্রে যে সক্ষমতা দরকার তা আছে কি না, সেটিও বিবেচনায় নিতে হবে। কারণ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দক্ষতা ও পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকলে তারা কীসের ওপর ভিত্তি করে ওয়ারেন্ট ইস্যু করবেন? সেটিও গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে হবে।
টিআইবি জানায়, আমাদের সাইবার নিরাপত্তা নীতিমালা অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে সাইবার স্পেসে নিরাপত্তার কথা বলা হয়েছিল। তবে এখন পর্যন্ত দেশে যে সাইবার ক্রাইম হয়েছে, তা থেকে বোঝা যায় আমাদের কারিগরি দক্ষতা বাড়েনি এবং আমরা সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছি।
উপস্থাপনায় বলা হয়, প্রস্তাবিত আইনটির নাম সাইবার নিরাপত্তা দেওয়ায় কিছুটা আশার সঞ্চার করলেও, খসড়া প্রকাশিত হওয়ার পর দেখা গেলো মূলত শিরোনামের পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু উদ্বেগের জায়গাগুলোতে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি, যা খুবই হতাশার। খসড়া আইনের সাইবার নিরাপত্তা আইনের কোনো কোনো ক্ষেত্রে কারাদ-ের বিধান বাড়ানো বা কমানো হয়েছে। কিছু কিছু অপরাধকে জামিনযোগ্য ও অ-আমলযোগ্য বলা হয়েছে।
খসড়া সাইবার নিরাপত্তা আইন জাতীয় সংসদে পাস হলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো কালো আইনে পরিণত হওয়ার এবং এর ফলে সংবিধানপ্রদত্ত মানুষের মৌলিক অধিকার ভূলুণ্ঠিত হওয়ার ব্যাপক ঝুঁকি সৃষ্টি হবে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মৌলিক দুর্বলতা খসড়া সাইবার নিরাপত্তা আইনেও রয়ে গেছে ও উদ্বেগের সৃষ্টি করছে। খসড়া আইনে মানুষের মৌলিক অধিকার অর্থাৎ মত প্রকাশের অধিকার, বাকস্বাধীনতা, বিবেক, চিন্তা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে খর্ব করার মতো উপাদানগুলো বাস্তবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অনুরূপ রয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, আইনের মূল উদ্দেশ্য ও বিষয়বস্তু যদি হয় সাইবার নিরাপত্তা, সেখানে মানুষের মত প্রকাশ, বাক ও চিন্তার স্বাধীনতা খর্ব করে এমন উপাদান থাকার সুযোগ নেই। যদি ডিজিটাল মাধ্যমে মত বা তথ্য প্রকাশের কারণে কারো মানহানি হয় বা যদি প্রতারণা, জালিয়াতি ও অর্থপাচার ইত্যাদি অপরাধ সংঘটিত হয়, তার জন্য প্রচলিত আইনে বিচারের ব্যবস্থা আছে। সাইবার নিরাপত্তা আইনে এর বিচার করার পেছনে কোনো গ্রহণযোগ্য যুক্তি আছে বলে আমরা মনে করি না। সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞ, নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমসহ সকল অংশীজনকে সম্পৃক্ত করে আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতার আলোকে খসড়া আইনটি ঢেলে সাজাতে হবে। ##
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বরিশালে ক্যান্সার চিকিৎসা ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়ে আছে
সেবা বঞ্চিত হলে অভিযোগ করা যাবে ইসির বিরুদ্ধে
এমপিওভুক্ত হচ্ছেন আরও ৩ হাজার শিক্ষক
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের নবনিযুক্ত সচিব ছাগলনাইয়ার সন্তান সামছু উদ্দিন
বাংলাদেশে শনাক্ত হলো 'রিওভাইরাস’, রোগটি সম্পর্কে যা জানা যায়
আন্দোলনের মুখে পাঠ্যবই থেকে বাদ পড়লো ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত গ্রাফিতি
মাসের শেষে আবারো আসছে শৈত্যপ্রবাহ
বর্ষসেরা ফটোগ্রাফার হিসাবে পুরস্কার পেলেন, আলোকচিত্রী ও সাংবাদিক মুগনিউর রহমান মনি
রাজশাহীর সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ
বেড়া কৈটোলা নির্মাণ বিভাগের অফিসিয়াল ও উন্নয়ন কাজে স্থবিরতা
গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বাইডেন-নেতানিয়াহুর ফোনালাপ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা
না ফেরার দেশে নির্মাতা রায়হান রাফির বাবা
এলিফ্যান্ট রোডে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা চেষ্টা, গ্রেপ্তার ২
ছাগলনাইয়ায় খালে ভাসছিল নারীর অর্ধগলিত লাশ
ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরতায় ৫ দিনে গাজায় নিহত ৭০ শিশু
ঘরে বসে মাত্র ১০ দিনেই মিলবে থাইল্যান্ডের ভিসা
মিয়ানমারের কাচিনে জান্তার বিমান হামলা, শিশুসহ নিহত ১৫
আজ বায়ুদূষণে শীর্ষে ঢাকা
দাবানলে পুড়ছে লস অ্যাঞ্জেলেস, এবার পাশে দাঁড়াল কানাডা